মায়ের শাড়ির পছন্দের তালিকায় যে জামদানি শাড়ি ছিল তা ঠিক ঠাক মনে পড়ে। মনে পড়ে ফুফী, চাচী, খালা, মামীদেরও জামদানি প্রতীর কথা।
বিদেশে আছি প্রায় আট বছরের বেশী তাই মাঝে মধ্যে অনলাইনেও জামদানি শাড়ির খোঁজ করেছি বিদেশী বন্ধুদের কাছে এর চাহিদা দেখে।
অনলাইনে জামদানি শাড়ির খোঁজ করতে যেয়ে এর ইতিহাসও জানতে মন চাইতো, সেই মনের ক্ষুধাটা অনেকাংশে মেটে ইমন জুবায়ের এর ব্লগটি পড়ে । পেয়ে যাই প্রয়োজনের থেকেও বেশী তথ্য।
সেই লেখা থেকে জানতে পারি '' কোনওই সন্দেহ নেই যে-পূর্ববাংলায় জামদানি শাড়ির উৎকর্ষতা তুঙ্গে উঠেছিল মুগল আমলেই। মিহিন কাপড়ের ওপরের চমৎকার নকশাগুলি ছিল আসলে মুগল-পারসিক শিল্পরীতিরই প্রভাব। জামদানির উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল ঢাকা জেলার আশেপাশেই।
গবেষক ফোরবেস ওয়াটসন, ‘টেক্সটাইল মেনুফ্যাকচারাস্ অ্যান্ড কসটিউমস অভ দ্য পিপল অভ ইন্ডিয়া’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। সে বইয়ে ওয়াটসন লিখেছেন,‘নকশাদার মসলিন, জটিল ছাপচিত্রের কারণে, ঢাকার বস্ত্রপন্যের মধ্যে সবচে দামী ছিল।’ তখন ঢাকার জেলায় এমন কোনও গ্রাম ছিল না যে গ্রামে একটিও তাঁত ছিল না । গ্রামের তাঁতীরা ইউরোপ, ইরান, আর্মেনিয়া আর মুগল-পাঠান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করত । মুগল সম্রাট, বাংলার নবাবরা ও অন্যান্য অভিজাতরা এজেন্ট নিয়োগ করতেন এসব ঢাকাই মসলিন ও জামদানি পন্য কেনার জন্য। মুগল শাসনের সময় থেকেই ঢাকার মসলিনের স্বর্ণযুগ সূচিত হয়। তারপর থেকে দেশে-বিদেশে জামদানি ও মসলিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এভাবে মসলিন ও জামদানি নির্মাতার উন্নতি হয়।’
ঢাকা সোনার গাঁও, ধামরাই, বাজিতপুর ছিল জামদানি ও মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।''
গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে ১০৬ জন সফর সঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে জান। সেখানে যে উপহার সামগ্রী তিনি নিয়ে যান তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জামদানী শাড়ি, ইলিশ মাছ ও নকশী কাঁথা। এমনকি রাষ্ট্রপতি তো মনমোহন সিং এর স্ত্রীকেও জামদানী শাড়ি উপহার দিয়ে এসেছেন। সরকারে ভারতপ্রীতি নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই কারন বরং না থাকলেই বেশী অবাক হতাম কিন্তু ভয় হল এই ভারত প্রেমের সীমা কতটুকু তা নিয়ে । সীমা , পরিসীমা হীন এই ভারতপ্রেম আমি ভারতীয়দের মাঝেও এত দেখিনি।
ভারতই বাংলাদেশের জামদানির অন্যতম ক্রেতা রাষ্ট্র। ২০০৭ সালে ভারত প্রতিটি জামদানি শাড়ির ওপর ৪ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ভারতে জামদানি রফতানি কমতে শুরু করেছে। ভারতের বাজারে জামদানি রফতানি করে বাংলাদেশ প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করলেও চলতি সময়ে তা মাত্র ৭০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে (সমকাল, ১ মে ২০১২)। জামদানি শাড়ির ওপর ভারতের শুল্ক আরোপের পাশাপাশি বাংলাদেশও জামদানি রফতানির প্রণোদনা ২৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। ঐতিহ্য, গুণগত মান, বুননশৈলী ও কাঁচামালের ভারসাম্য বজায় রেখে একটি ভালো মানের জামদানি শাড়ি তৈরিতে প্রায় কয়েক মাস লেগে যায়। চলতি বাজারে ভালো মানের একটি জামদানির মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা পড়ে যায়। কিন্তু ৪০ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের কোনো জামদানি শাড়ি ভারতীয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ থেকে ভারতের বাজারে জামদানি বিক্রি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দিনে দিনে দেশের ডেমরা-রূপসা জামদানি হাটগুলোও নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। জামদানির ন্যায্য বাজার ও বাজারে প্রবেশের জটিলতার কারণে প্রতি বছর জামদানি কারিগররা ঐতিহ্যগত পেশা ছেড়ে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হচ্ছেন। এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশের ৩০ হাজার জামদানি কারিগরের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারে নেমে এসেছে (সমকাল, ১ মে ২০১২)।
উইকিপিডিয়া বলে, '' Jamdani (Bengali: জামদানি) is a hand loom woven fabric made of cotton, which historically was referred to as muslin. The Jamdani weaving tradition is of Bengali origin. It is one of the most time and labor intensive forms of weaving hand loom weaving. In the first half of the nineteenth century, James Taylor described the figured or flowered jamdani; in the late nineteenth century, T. N. Mukharji referred to this fabric as jamdani muslin. Whether figured or flowered, jamdani is a woven fabric in cotton, and it is undoubtedly one of the varieties of the finest muslin. It has been spoken of as the most artistic textile of the Bangladeshi weaver. Traditionally woven around Dhaka, Bangladesh, and created on the loom brocade, jamdani is fabulously rich in motifs ''
এবছর কলকাতাতেই হচ্ছে বাংলাদেশী জামদানি শাড়ি মেলা :
ভারতের শাড়ি প্রেমী নারীরা সবাই জানেন বাংলাদেশের জামদানি শাড়ির কথা। আর ভারতের সাংসদ ও সরকারি কর্মকর্তারাতো জানেনই।
বাংলাদেশের রপ্তানী বাণিজ্যে জামদানি একটি বিশেষ নাম ও বলা যায়।
ভারতে বাংলাদেশী জামদানি শাড়ির মেলা হচ্ছে যার সত্ব আবার নাকি ভারতের।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার জিআইএ আইন ১৯৯৯-এর ২২, ২৩ ও ২৪ ধারার ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট অনুযায়ী, বিশ্বের প্রতিটি দেশের নিজেদের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পণ্য সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে। এ জন্য নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পণ্যকে নিজস্ব জিআইএ আইনের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। কিন্তু শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের কোনো আইনই নেই। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় 'ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ-২০০৮' নামের একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে এতে তিনটি মৎস্য পণ্য, ১২টি ফল, ১১টি প্রক্রিয়াজাত খাবার, আটটি শাকসবজি, ১৪টি কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ৪৮টি খাদ্যপণ্য এবং খাদ্য বাদে ১৮টি পণ্য মিলিয়ে ৬৬টি পণ্যকে বাংলাদেশের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। খসড়া তালিকায় জামদানি শাড়ি, ফজলি আম এবং নকশিকাঁথাকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবেই দেখানো হয়েছে।
হঠাৎ করেই এ খবরটি নজরে আসে মাস খানেক আগে, এর পর নজরে আসতে থাকে একের পর এক খবর
''বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডাব্লিউটিওর ট্রেড রিলেটেড আসপেক্ট অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের (টিআরএআইপিআর) কাছে ভারত সরকারের জমা দেওয়া নিজস্ব পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশি কিছু পণ্যও রয়েছে। এর মধ্যে জামদানি শাড়ির পর সম্প্রতি ফজলি আমের স্বত্ব পেয়েছে তারা। দেশটি ২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১১৭টি পণ্যকে নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য দরখাস্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নকশিকাঁথাও। এর আগে ভারত অন্ধ্র প্রদেশের উপ্পাদা কোথাপল্লি মণ্ডলের বেশ কিছু গ্রামের তাঁতি সমাজ, দুটি নিবন্ধিত তাঁতিদের সংগঠন ২০০৯ সালে 'উপ্পাদা জামদানি' নামের জামদানি শাড়িকে তাদের নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করে। পরে ডাব্লিউটিও থেকে জামদানির মালিকানা স্বত্বও পেয়ে যায় তারা। যদিও বাংলাদেশের জামদানি ও নকশিকাঁথা বিশ্বজুড়ে পরিচিত। অন্যদিকে রাজশাহী ঘেঁষা ভারত সীমান্তের মালদহে ফজলি আম হলেও ফজলি বলতে রাজশাহীর ফজলিকেই বোঝায়।
পেটেন্টের মারপ্যাঁচে হাত ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের স্বত্ব। বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।, কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার কারণে ভারত সুযোগ নিচ্ছে। হাতিয়ে নিচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যের সব পণ্যের প্যাটেন্ট বা জিআই আইন অনুযায়ী মালিকানা স্বত্ব । ঐতিহ্যের বিষয়টি যেখানে জড়িত সেখানে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা এখনিই জরুরী বলে বোদ্ধারা মনে করছেন। ''
মূলত নতুন আবিষ্কৃত পণ্যের ক্ষেত্রে পেটেন্ট (উৎপত্তি বা মালিকানা স্বত্ব) দেয়া হয়। কিন্তু জামদানি বাংলাদেশের নির্দিষ্ট এলাকার ঐতিহ্য বহন করে বিধায় পেটেন্টে-এর পরিবর্তে জিআই আইন অনুযায়ী স্বত্ব পেতে পারে। এই আইনটি এখনো বাংলাদেশে নেই। তবে আইনটির খসড়া বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।কত দিনে আলোর মুখ দেখবে তা তারাই জানে না।
বিশ্বজুড়ে পরিচিতি রাজশাহীর ফজলি আম। কিন্তু এ আমটির পেটেন্ট স্বত্ব নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। জানা গেছে সম্প্রতি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) থেকে ফজলি আমের মালিকানা স্বত্ব ভারতকে দেওয়া হয়েছে । শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কাছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথার মালিকানা স্বত্বও দাবি করে রেখেছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নকশিকাঁথাকেও নিজস্ব পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে জামদানি শাড়ির পর ফজলি আমের স্বত্বও আদায় করে নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ । এর আগে নিমগাছের স্বত্ব নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দেশের স্বত্ব নেওয়া পণ্যগুলো ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন এবং আমদানি-রপ্তানি করতে গেলে স্বত্ব পাওয়া দেশকে রয়্যালটি দিতে হবে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব পণ্য স্বত্ব পাওয়া দেশগুলোর নিজস্ব বলেই বিবেচিত হবে। ( এবিএম সোহেল রশিদ। ৭/৯/২০১২)
কঠোর গোপনীয়তা এর মাধ্যমে জামদানি শাড়ী সহ গ্রাম বাংলার আর ৬৬ টি ঐতিহ্য এর পেটেন্ট নিয়ে যাচ্ছে ভারত। এবং তাতে সফল হলে ভবিষ্যতে ভারতের ঐতিহ্য হিসাবে জামদানি পৃথিবীতে পরিচিত হবে। এবং বাংলাদেশকে জামদানি উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে ।বর্তমানে কোথাপল্লী অঞ্চলের প্রায় ৪০০ পরিবার জামদানি শাড়ি বুননের সঙ্গে জড়িত, যাদের শাড়ি প্রায় ১০৮টি দেশে রপ্তানি হয়। জামদানি শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধন কার্যকর করার ভেতর দিয়ে জামদানি শাড়ি-বাণিজ্যের মাধ্যমে ভারত বছরে প্রায় ছয়শ কোটি ভারতীয় রুপি রাজস্ব আয় করতে সমর্থ হবে।।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অসম বাণিজ্য চুক্তির ছুতোয় বাসমতী চাল, আলফন্সো আম এবং স্কচ হুইস্কির বাণিজ্যিক মালিকানা নিয়ে বিশ্বব্যাপী দেনদরবার শুরু হলে পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশনার প্রসঙ্গটি বাণিজ্য দুনিয়ায় আরেক ঝামেলা নিয়ে হাজির হয়। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ২৩টি অসম ও অন্যায্য চুক্তিতেই বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, যার একটি হচ্ছে 'বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার চুক্তি' বা ট্রিপস। ট্রিপস চুক্তির ২৭.৩(খ) ধারায় দুনিয়ার সব প্রাণ-প্রকৃতি-প্রক্রিয়ার ওপর প্যাটেন্ট করার বৈধ অধিকার রাখা হয়েছে, আবার ২২ ও ২৩ ধারায় ভৌগোলিকভাবে নির্দেশিত পণ্যের জন্য কিছু আইনগত স্বীকৃতির কথাও বলা হয়েছে। ট্রিপস চুক্তির ধারাকে মেনেই ভারত নিজস্ব 'সুই-জেনেরিস' আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যকে নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশনা হিসেবে নিবন্ধিত করছে। এভাবেই জামদানি, নকশি কাঁথা, ফজলি আমের ওপর রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর ফলে পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, দরকষাকষি থেকে শুরু করে পণ্যের মেধাস্বত্ব মালিকানাও লাভ করবে ভারত। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের জামদানি তাঁত শিল্প এবং জামদানি কারিগরদের প্রথাগত জীবনের অধিকার। জামদানি রফতানি করতে গিয়ে যার ভোগান্তি বাংলাদেশ ইতিমধ্যে পোহাতে শুরু করেছে।
সৃজন ও মননশীল শিল্পের মেধাস্বত্ব অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে জাতিসংঘের Berne Convention for the Protection of Literary and Artistic Works (Paris Act 1971) ) নামক আন্তর্জাতিক সনদটির সমর্থক বাংলাদেশ ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই। উভয় রাষ্ট্রই জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (সিবিডি ১৯৯২) স্বাক্ষর ও অনুমোদন করেছে; যেখানে প্রাণসম্পদসহ লোকায়ত জ্ঞান সুরক্ষা অধিকারের প্রসঙ্গটি জোরালোভাবেই আছে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ নিজস্ব ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের সুরক্ষার জন্য 'ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সংরক্ষণ) অধ্যাদেশ ২০০৮' নামের একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করেছিল। এর তালিকায় জামদানি শাড়িকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (পাভেল পার্থ)
যাই হোক, এর পরেও সরকার ও সংস্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যাথা নেই একদম। মাত্র দশদিন আগের খবরে দেখলাম ভিন্ন কিছু।
বেহায়া জাতি হিসেবে বাংলাদেশের সুনামের শেষ নেই। তারপরও মাঝে মাধ্যে অবাক না হয়ে পারা যায় না। দেশের মানুষ অনেক সুখে আছে তাদের কোন ব্যাপারেই মাথা ব্যাথা তেমন নেই কিন্তূ আমরা যারা বিদেশে আছি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত যে বাংলাদেশ ইজ নট ইন্ডিয়া। তো আমাদের বোঝানোটা আরও কঠিন হয়ে যাবে এখন।
মাঝে মাঝে ভাবি ভারতের বদনাম করে পোস্ট লিখবো,''ভারতের কি লজ্জ্বা হয় না সব জেনে শুনেও জামদানি, নকশী কাথাঁ , ফজলি আমের সত্ব দাবী করতে ? '' কিন্তু ভাবী , ওদের কিই বা দোষ। ওরা নিজের দেশের স্বার্থ দেখছে এথিকের বাহিরে হলেও, ওরা ভারতীয়, ভারতকে ভালবাসে, ভারতের স্বার্থ দেখে ওরা তো আর বাংলাদেশী না যে নিজের দেশের মান বিক্রী করে হলেও অন্যের স্বার্থ দেখে যাবে। আর তাছাড়া এমন দেশ আর জনগন আর কোথায় বা পাওয়া যাবে বাংলাদেশ ছাড়া যেখানে ভারত, পাকিস্তানের পতাকা হাতে নিয়ে মানুষ ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যায়।
গত বছরের কিছু খবর দেখি :
ভারতের সরকার পর্যন্ত জামদানি, ইলিশ বাংলাদেশ থেকে আমদানীর কথা বলে তারপরও সব ভারতের। যারা ওয়ার্ল্ড ট্রেডিং সাইটে জামদানি ইমপোর্টার ছিল তারা এখন এক্সপোর্টার। ইন্ডিয়ার পরিকল্পনা আমাদের ক্লপনার থেকেও এগিয়ে। যাইহোক বিচার চেয়ে আবেদন করা যায়, কিন্তু কার কাছে করবো ? সরকারের কাছে আবেদন করলে তো ভারত চাইবার আগেই সব দিয়ে দেবে। জনগনের মাথা ব্যাথা আওয়ামি, বিএনপি, ভারত, পাকিস্তান, জামাত, স্বাধীণতা পর্ষন্ত সীমাবদ্ধ। সুশীলরা ব্যস্ত ইউনুস সাহেব আর পদ্মা সেতু নিয়ে । সাধারনের তো সমস্যার অন্ত নেই। ইমানদার বান্দারা কার্টুন আর মুভি দেখতে ব্যস্ত। সাইট এ্যডমিন ব্যস্ত ব্লগারদের জেনারেল করা নিয়ে। মোট কথা সবাই নিজ নিজ স্বার্থে ব্যস্ত যেখানে সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ কে দেখবে তা আজও জানতে পারলাম না। আগেও বলেছি : Click This Link