হুম এই অনুভূতি ২০০৬ সালে যেমন ছিলো আজো তেমনি আছে।বরং শংকাটা এখন অনেক বেশী রকম জেকে বসেছে যারা আমরা দীর্ঘদিন ব্লগিং করছি।আমরা যখন ব্লগে প্রবেশ করি তখন ফেইসবুকের জন্ম হয় নি,একটা গোছানো প্লাটফর্মে নিজেদের ভাবনা লিখে যাচ্ছি অনায়াসে,আর তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা –অস্ট্রেলিয়া ,আরো কতো নাম না জানা অচেনা মানুষের অনুভূতি।লেখার শেষে এতো নিকের মন্তব্য পেয়ে আমরা আরো বেশি উতসাহী হয়েছি,কতো রাত ভোর হয়েছে এই ব্লগেই তার হিসেব নেই।
এ যেন সত্যি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।আমরা জানি ,কারো কারো ৫ টা ৬ টা করে নিক আছে,আমরা জানি এ অমুকের শত্রু ,আমরা জানি এ নাস্তিক শ্রেনীর লোক।কিন্তু সব শেষে আমরা জানি আমরা ব্লগার।মাঝে এমন একটা দিন এলো যখন নিজেকে পরিচয় দিতে গেলে ব্লগার বলতে অনেক শংসয় হতো,এটা কেবল আমার ক্ষেত্রে না।কারন ব্যানার করে স্লোগান হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে।হত্যা করা হয়েছে অনেক পরিচিত ব্লগারদের।ইন্টারনেট যারা বোঝে না তারাও হাতে লাঠি তুলেছে-“ব্লগ মানে হচ্ছে ,ওটা দিয়ে ইন্টারনেট চালানো হয়।‘’এমন অদ্ভূত শিক্ষায় শিক্ষিত জাতির কাছে আমরা জিম্মি হয়ে গেছি।কেবল কি ব্লগ,এরপর আসলো ফেইস বুক।ভাবলাম, দেই যা মনে আসছে লিখে।নাহ,ওখানেও কঠোর সব আইন।সরকারকে উদ্দেশ্য করে লিখেছোতো সোজা হাজতে আর কারো মানে আঘাত লেগেছেতো সোজা ব্লক।
আজ এতো বছর পর নিজেকে পুনরায় ব্লগার পরিচয় দিতে খুব ভালো লাগছে।আরটিকেল ১৯ আজ ব্র্যাক ইনে ব্লগারদের যেভাবে সন্মানিত করেছে তাতে নিজেকে একটা প্ল্যাটফর্মে আবিষ্কার করতে পারলাম আবারো,যদিও এই বিষয়ে নিউজ কাভার করা আমার পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাও নিজের ঘরের সংবাদ করতে সবাই নিশ্চই অনেক আরাম অনুভব করবে ,আমারো তাই মনে হচ্ছিল পুরো সেমিনার জুড়ে।সবার বোঝার সুবিধার্তে কিছু প্রেস রিলিজ ও ছবি সংযুক্ত করলাম।-----
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রবিবার রাজধানীর মহাখালীস্থ ব্র্যাক ইন, ব্র্যাক সেন্টারে সকাল ৯টায় মানুষের ‘বাকস্বাধীনতা’ নিশ্চিত বিষয়ক কর্মকান্ডে নিয়োজিত মানবাধিকার সংগঠন ‘আর্টিকেল ১৯, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া’র উদ্যোগে ‘ব্লগারদের অধিকার’ শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উম্মোচন এবং ‘স্পন্দমান ও শঙ্কামুক্ত অনলাইন ক্ষেত্র চাই’ বিষয়ক দিনব্যাপী ওরিয়েনটেশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে তাহমিনা রহমান, পরিচালক, আর্টিকেল ১৯, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়ে এই প্রথম কাজ করছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল ১৯, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন আর্টিকেল ১৯ ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং মুক্তমনা গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার নিয়ে নানামুখি কার্যক্রম শুরু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় টি সার্কেল ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টের অংশগ্রহণে আজকের এই কর্মশালা হয়।ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ, নিরপত্তা, তাদের মেধাস্বত্ত্ব নিয়ে সংগঠনটি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চা চক্রের আয়োজন করেছিল। সেখানে অংশগ্রহণকারী ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের আলোচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠানে নি:শঙ্ক নামক অনলাইন টুল উদ্বোধন করা হয়। যার মাধ্যমে ব্লগাররা তাদের অধিকার লঙ্ঘন হলে তা লিপিবদ্ধ করবেন যা পরবর্তীতে রেকর্ড হিসেবে থেকে যাবে।আর্টিকেল ১৯ কর্তৃক বাংরায় ‘ব্লগারদের অধিকার’ শীর্ষক বইটির প্রকাশনার মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথি জাতীয় সম্প্রচার আইন বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপাসন ড: গোলাম রহমান বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন সোর্স তৈরি হয়েছে। সংবাদ এখন শুধু আর পত্র-পত্রিকা বা টেলিভিশন ও রেডিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। গণমাধ্যমন এখন একটি বড় বিষয়। ব্লগারস, অনলাইন এক্টিভিজম এখন একটি বড় বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। অললাইন, অফলাইন, স্যাটালাইট সব মিলিঅেনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, লক্ষ্মণ দত্ত পান্ট, মিডিয়া যোগাযোগ সমন্বয়কারী, ইউনেসকো-নেপাল, ব্যারিস্টার জ্যোতিময় বড়–য়া, ড: শহীদুল আলম, নির্বাহী পরিচালক, দৃক, মিডিয়াকর্মী নিশাত জাহান রানা, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কমনওয়েলথ’র প্রতিনিধিবৃন্দ। ব্লগারস এবং সিটিজেন জানালিজম এর উপর আলোচনা করেন বিডিনিউজ২৪.কম এর সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ড. মাহবুবুর রহমান, সহযোগি অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যারিস্টার জাকির খান, ব্যারিস্টার তারিকুল কবির তানজির, এডভোকেট নাহিদ সুলতানা, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ব্লগার ক্যামেলিয়া কামাল,সাদরিল শাহজাহান, আরিফ নুর, মির্জা মোহম্মাদ ইলিয়াস ওরফে ছোটো মির্জা।
পুরো আলোচনার সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় ছিলো অনলাইন এক্টিভিটিস্টদের জন্যে তৈরি করা কিছু নীতি মালা যা ৫৭ ধারার আওতা ভুক্ত।এখানে উল্লেখ করা হয়েছে কি কি লিখলে তা আইনের চোখে অপরাধ বলে গন্য হবে।এই ধারাতে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যা রাষ্ট্রের হাতের মুঠোয় থাকবে।একদিকে আমরা যদি বাক স্বাধীনতার কথা বলি আবার অন্য দিকে যদি পেছন থেকে লাগাম টেনে ধরি তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো ?তবে এখানে একটু না বললেই নয়,এমন সব ব্লগার আছেন যারা ভুল তথ্য দিয়ে অনেক পাঠককে হয়রানী করেন।একজন সাংবাদিক যখন রিপোর্ট তৈরি করেন তখন তাকে বিষয়টি সম্পর্কে অনেক জেনে লিখতে হয়,কিন্তু ব্লগাররা বেশির ভাগ লিখেন ইমোশনালি যার ইম্প্যাক্ট অন্য জায়গায় পড়ে।ব্লগিং আর সাংবাদিকতা কিন্তু কখনোই এক বিষয় নয়।রিপোর্টারের থাকে দায়বদ্ধতা ,কিন্তু ব্লগারদেরো থাকতে হবে সীমাবদ্ধতা।ওটা আইন প্রয়োগ করে বন্ধ করার বিষয় নয়।
ব্লগারদের লেখা কিভাবে কপি হচ্ছে ,নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।কিভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে প্রতিটি বিষয় আলাদা ভাবেই আলোচনায় এসেছে।কিন্তু ব্লগ কেন হঠাত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এই প্রশ্ন যখন করি তখন উত্তর আসে-আমরা যখন ব্লগিং আরম্ভ করি কর্তাপক্ষের নীতিমালা মেনে নিয়েই শুরু করেছি।অতএব এখানে আইন গত ভাবে কিছু করার নেই,তবে সামাজিক ভাবে অবশ্যই আছে।এই জায়গায় আমি আশা করেছিলাম কিছু ব্লগ ওনারদের ,আমাদের অধিকার যেহেতু তাদের নীতিমালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ সেহেতু দেনা পাওনার হিসেবটা তাদের সাথেই করা উচিত।এই যেমন হঠাত করে যদি দেখি সামু ব্লগ গায়েব হয়ে গেছে তাহলে গত নয় বছরের হিসেব আমি কার সাথেইবা কষবো?
এতো কিছুর পরো আজ চিৎকার করে ধন্যবাদ জানাতে চাই-এই প্রথম আর্টিকেল ১৯ নামে একটি সংগঠন এভাবে ব্লগারদের ব্লগার হওয়াটাকে একটা পর্যায়ে নিয়ে গেলো।ব্লগিং করতে গিয়ে বেশ কয়েকটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছি,সবটাই ছিলো ব্লগ আয়োজকদের।এইবারি প্রথম কোন অর্গানাইজেশন থেকে এভাবে উৎসাহিত করা হলো।এর আগেও আর্টিকেল ১৯ এমন আয়োজন হয়তো করেছে,কিন্তু আমি উপস্থিত হতে পারিনি।তবে সত্যি যদি তারা অনলাইন এক্টিভিটিস্টদের অধিকারের জায়গাটা কিংবা শংকামুক্ত থাকার বিষয়্টা নিয়ে ভাবেন তাহলে নতুন যারা লিখছে তারা অনেক বেশি আগ্রহী হবে লেখার ব্যাপারে।
এবার বই মেলায় গিয়ে দেখলাম তরুন-তরুনীদের হাতে কোন বই নেই।কেবলি স্মার্ট ফোন,কেউ আর বই কিনে পরছেনা।তাতে আমি যে একদম আশা হত তা না ,তারা বই দেখছে,সেলফী তুলছে।মোবাইলে বাংলা লিখছে।এই ভাবেই হয়তো সবাই একদিন অনলাইন পাঠক হয়ে যাবে।আমাদের বইগুলো সেলফে সাজানো থাকবে।কিন্তু লেখাগুলো ভাসতে থাকবে ইথার তরঙ্গে।হাতের অদৃশ্য ছোঁয়ায় আমরা খুঁজে নেবো প্রিয় কোন ব্লগারকে,সেই হবে পরবর্তি প্রজন্মের লেখক।
বি:দ্রঃ আজ খবর পেলাম আমি নাকি খালি প্রেমের কবিতা লিখি।শুনে মনটা খুব খারাপ হলো।আমার লেখার মধ্যে যে নারী জীবনের এতো কান্না আর দ্রোহ মিশে আছে তা সেই পাঠক জানলোনা।কারো একটা লিখা পড়ে সব লেখা সম্পর্কে মন্তব্য করতে নেই।কোন লেখককে জানতে হলে তার প্রায় সব লেখাই পড়ে নেওয়া উচিত।