বইয়ের নাম : 'শেষের কবিতা' ও 'গোরা'
লেখক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
লেখা ও প্রকাশের দিক থেকে শেষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশম উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি লেখেন ১৯২৮ সালে ব্যাঙ্গালোরে, স্বাস্থ্য উদ্ধারের প্রয়াসে সেখানে থাকবার সময়ে। শেষের কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় প্রবাসী’তে, ধারাবাহিকভাবে ভাদ্র থেকে চৈত্র পর্যন্ত। অনেকে একে কবিতার বই ভেবে ভুল করে। আদতে এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম রোমান্টিক উপন্যাস।
শেষের কবিতায় বিলেতফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক যুবক। তর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে সিদ্ধহস্ত। এই অমিত একবার শিলং পাহাড়ে গেল বেড়াতে। আর সেখানেই এক মোটর-দুর্ঘটনায় পরিচয় ঘটল লাবণ্যর সাথে। যার পরিণতিতে এল প্রেম। কিন্তু অচিরেই বাস্তববাদী লাবণ্য বুঝতে পারল অমিত একেবারে রোমান্টিক জগতের মানুষ, যার সঙ্গে প্রতিদিনের সাংসারিক হিসেব-নিকেশ চলে না। ইতিমধ্যে শিলং-এ হাজির হয় কেটি (কেতকী)। হাতে অমিতের দেওয়া আংটি দেখিয়ে তাকে নিজের বলে দাবি করে সে। ভেঙে যায় লাবণ্য-অমিতর বিবাহ-আয়োজন। শেষ পর্যন্ত অমিত স্বীকার করে যে, লাবণ্যের সাথে তাঁর প্রেম যেন ঝরনার জল- প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য নয়। আর কেতকীর সাথে সম্পর্ক ঘড়ায় রাখা জল- প্রতিদিন পানের উদ্দেশ্যে।
আসলে শেষের কবিতা বিংশ শতকের বাংলার নবশিক্ষিত অভিজাত সমাজের জীবনকথা। ব্যক্তি মানুষের মূল্যচেতনার উপাদান যদি অন্তর থেকে শুধুই বার হয়ে আসতে থাকে- যার সমুন্নতি ও দীপ্তি বিদ্যার বৃহৎ পরিমার্জনায়, তারও একটা চরিত্র আছে। বাস্তব চেনাশোনার চলা বাহ্যিক অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে তা একেবারে অন্তর অভিমুখী।
গোরা উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ ও বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম উপন্যাসরূপে স্বীকৃত। এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু মহাকাব্যের আদর্শে পরিকল্পিত। এটি বুদ্ধিবৃত্তিপ্রধান ও বিশ্লেষণধর্মী উপন্যাসের পর্যায়ে পড়ে। গোরা উপন্যাসের নায়কের নামও গোরা। মূলত গোরার পিতা ইংরেজ। সিপাহি বিদ্রোহের সময় এক ব্রাহ্মন পরিবারের গোয়ালে তার জন্ম। জন্মের সময় সে মাকে হারায়। ব্রাহ্মন দম্পতি তাকে মাতা-পিতার পরিচয়ে বড় করে। এই গোরা কালক্রমে বড় হিন্দু নেতা হয়ে যায় এবং ইংরেজ বিরোধী।
গোরা উপন্যাসের চরিত্রগুলো বড় অদ্ভূত! উপন্যাসের শুরুর কয়েকটি চরিত্র সম্পর্কে পড়ার পর মনে হবে যেন ‘মূল চরিত্র’ এর পরিচয় মিলছে। কিন্তু যতই ভেতরে প্রবেশ করতে থাকবেন বিস্মিত হবেন। পরের চরিত্রটিকেই বারবার মূল চরিত্র মনে হবে। অন্তত উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকে পৌঁছে তবেই স্থির হওয়া যাবে যে, আসলে মূল চরিত্র কে বা কারা!
তবে একথা সত্য যে, কবিগুরু এই উপন্যাসের কোন চরিত্র ম্লান থাকেনি। কোন চরিত্রই অকারণ নয়। সব চরিত্রকেই অত্যন্ত দুর্ধর্ষ করে তুলেছেন তিনি। সব চরিত্রই নিজ নিজ জায়গা থেকে কি অসাধারণ, কি নির্মম, কি উজ্জ্বল, চাঞ্চল্য, নিস্পৃহ ভাবতেই শিহরিত হয়ে উঠতে হয়!
পিডিএফ ডাউনলোড ক্লিক করুন : শেষের কবিতা, গোরা