প্রিয় কাজী নজরুল ইসলামের আত্মার মাগফেরাত কমনা করছি । আপনি অমর মনে পড়ে করি আপনাকে জীবনের পরতে পরতে ..
ইতিহাস কেউ কে ছেড়ে কথা বলে না কোন দিন ।
এমন একটা শিরোনামে হয়তো মনোক্ষুন্ন হয়েছেন ।আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । আমি শুধুমাত্র কিছু ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে লিখছি আর কথা বলছে চিরচায়িত ইতিহাস । সেখানে আমি নিতান্তই মূখ্য কেউ নই ।
অাচ্ছা আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের তথা বাঙালির শ্রেষ্ঠ কয়েকজন প্রবাদ পুরুষের নাম বলেন ? উত্তর টা খুব সহজ ।আপনি অর্নগল বলে ফেলবেন ভাসানী কাজী নজরুল ইসলাম ,মুজিব ও জিয়া প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিত্ব । আজ বিষয়টা শেয়ার করতে করতে যাচ্ছি ,সেটা নিশ্চয় আপনাকে অবাক করবে ।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন টা কত টুকু দুঃখ-কষ্টে অতিবাহিত হয়েছে, কম বেশি সকলেই জানি । জীবনের এত রং কোন দিন দেখি নি । এই মানুষ সারা টা জীবন পেয়ে গেছেন অবজ্ঞা ,হেলা -অবহেলা । নজরুল শব্দের অর্থ হওয়া উচিত দুঃখ-কষ্ট,ব্যথা-বেদনা । যাই হোক সে প্রসঙ্গ নিয়ে কথা না বলি ।
নজরুল ইসলাম তার এক চিঠিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখেন
‘‘আমার স্ত্রী আজ প্রায় সাত বছর পঙ্গু হয়ে শয্যাগত হয়ে পড়ে আছে ।ওকে অনেক কষ্টে এখানে এনেছি । ওর অসুখের জন্য সাত হাজার টাকা ঝৃণ আছে । ”
(তথ্যসূত্র-নজরুলের পত্রাবলি ,পৃষ্ঠা নং ১৫)
এ থেকে বোধগম্য হয় যে ,কবি তখন কতটা অর্থনৈতিক সংকটে ছিলেন । এছাড়া কবির শরীর ও ভাল যাচ্ছিল না । পরিকল্পনা মোতাবেক কাজী নজরুল ইসলাম এই টাকা শোধ করার জন্য একটি ফিল্মের মিউজিক হিসাবে সাত হাজার টাকার কনট্রাক্ট পান । যার বর্তমান মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১৭-১৮ লক্ষ্য টাকার ও অধিক । নজরুলের বক্তব্য অনুযারি ফজলুল সাহেব ‘নবযুগ’ এর সম্পাদক হলে কবি কে এই টাকা দিবেন । ফজলুল হক সাহেব প্রতিশ্রুতি ও দেন টাকা দিবেন বলে কিন্তু তিনি এই টাকা টা দেন নি । জাতীয় কবি তাঁর বর্তমান অবস্হান জানিয়ে অনুরোদ করেন প্রতিউত্তরে বাংলার বাঘ খ্যাত ফজলুলর হক সাহেব বলেন
‘‘কিসের টাকা” বাকরুদ্ধ,স্তব্দ,অভিমানী ও অতি আত্মর্মযাদা সম্পন্ন নজরুল , আর কোন বাক্য বিনিময় না করে , সোজা চলে আসেন ।
(তথ্যসূত্র-নজরুলের পত্রাবলি ,পৃষ্ঠা নং ১৫)
অথচ এই নজরুল ই শেরে বাংলা সাহেব কে নানান ভাবে সাহায্য করেছেন । যখন তাকে শহরের ছেলেরা তাঁকে জনসভা করতে দেয় নি । তখন নজরুল কান্ডারি হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন,থামিয়ে ছিলেন সেই সব উগ্র নেতাকর্মী
দের কাছ থেকে ।
আর তার প্রতিদান !!
এই দুই জন ব্যক্তি মধ্যে এমন ঘটনা সত্যিই মর্মাহত করেছে । ভাবা যায় !! আজ যদি তা সাধারণ কোন মানুষের সাথে হত একটা কথা ছিল । আর এমন সময়ে এটা হয়েছে যখন তিনি অর্থ মন্ত্রী । ফজলুল হক সাহেব চাইলেও যে কোন ভাবে সাহয্যে করার ক্ষমতা রাখেন । এভাবে ন্যাক্কার জনক অপমান করা কতটুকু যুক্তিগত হয়েছে আমি জানি না । আর সেই সময়কার শ্রদ্ধেয় কাজী নজরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠত ,সুনাম ,খ্যাতি সবই অর্জিত হয়েছে । সেই হিসাবে বলতে গেলে শেরে বাংলা উঠতি রাজনীতিবিদ ।
এ ঘটনার আরও জোরালো হয় কাজী নজরুল ইসলামের শ্যামাপ্রসাধের কাছে চিঠির মাধ্যমে ।
সুফি জুলফিকারকে সেই অভিমান -ক্ষুব্ধ কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন-
“হক সাহেবের কাছে গিয়ে ভিখারির মত ৬ মাস ধরে দৈনিক ৫/৬ ঘণ্টা বসে থেকে ফিরে এসেছি ”
(নজরুল পত্রাবলি ,বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত )
আহ!!
একজন কবি কতটুকু সমস্যায় থাকলে ,এতটা সময় টাকার জন্য বসে থাকতে পারে বলতে পারেন! সেই টাকা তো তাঁর প্রাপ্য ছিল । এমন তো না ধার !!
তাহলে কেন এমন ব্যবহার পেতে হলো কবিকে ?
এ সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো ইতিহাস দিতে পারবে না । শেষ জীবনে এসে চারদিকে পাওনাধারের টাকার চাপ ,শরীরের অবনতি ,স্ত্রীর চিকিৎসা , ফজিলতের অবজ্ঞা-অবহেলা ,সবশেষ হক সাহেবের এ ব্যবহারে কবি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন খুবই । অর্থনৈতিক সমস্যা টা মিটে যেত যদি হক সাহেব তার কথা টা রাখতেন । এর পর কবির nerves shattered হয়ে যায় । অনেকে ধারনা করেন ফজলুল হক সাহেবের এমন কান্ডে তিনি শেষ ভাল থাকার আশা ঘুরে বালি হয়ে যায় । ইতিহাস বলে মানসিক চেতনা হারানো ,বাকরুদ্ধ হওয়ার পেছনে প্রধান কারন ছিল হক সাহেবের এই অবহেলা ।
এইসবের সত্যতা পাওয়া যায় সূফি জুলফিকার হায়দার রচিত ‘‘নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়’’ নামক বইয়েও ।
এমন বিখ্যাত মানুষের কাছে যদি বিদ্রোহী কবি কি এ সব প্রত্যাশা করেন ? তাই কষ্ট টা বেশি হওয়ার কথা । প্রিয় শ্রদ্ধেয় নজরুল -ফজলুল ভাল থাকবেন আপনারা । আপনাদের অবদান ভুলার নয় ।
আমার ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোদ করছি ..ভুলগুলো বা করণীয় দিকগুলো ধরিয়ে দিবেন আর আমি শিখবো এবং শুধরাবো
নজরুল বিষয়ক আমার লেখা
যখন চিত্রনাট্যকার নজরুল; পরিচালক ও অভিনেতার ভূমিকায় শেখ সাহেব ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৫