somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-৭

১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্ল্যাটফর্মটার চারদিকে মাঝারি সাইজের রেলিং দেয়া। এর পরেই খাড়া কয়েকশো ফুট নিচে নেমে গেছে। আলোক সল্পতার জন্যে নিচের অন্ধকার গহব্বরকে অন্তহীন মনে হচ্ছে। একে একে স্কাউটশীপ ২ থেকে নেমে এলো অভিযাত্রীরা। সবার শেষে নেমে আসলো লিও। তার দুপাশের দুই হোলস্টারে ঝুলছে দুই এটোমিক ব্লাস্টার। ইবোনি আর আইভোরি… ধ্বংসযজ্ঞের দুই যুগল।

ইবোনি দেখতে ছোট, ভারি আর মোটা ব্যারেল বিশিষ্ট্য, হালকা নীল বর্ণের ব্লাস্ট তৈরি করে। শর্টরেঞ্জের জন্যে মোক্ষম অস্ত্র। আর আইভোরি লম্বা, হালকা… লাল রঙের ব্লাস্টার। একবারে অটো লক করে ব্ল্যাস্টারটার ট্রিগার চাপলে ১০ কিলোমিটার দূরের টার্গেটও ধ্বংস হয়ে যাবে সহজেই।

সতর্কতার জন্যে জিমও সাথে একটা ক্রায়ো ব্লাস্টার নিয়েছে। তার পিঠে ঝুলছে সেটা।

উপরের মৃদু আলোয় পথ চলল অভিযাত্রীরা। প্রায় একশোর মত প্ল্যাটফর্ম একটা প্যাসেজের সাথে সংযোগ স্থাপন করে চলেছে। পেসেজটা দিয়ে হেটে চলছে তারা। তাদের সামনে হাটছে কিরু২, পথ দেখিয়ে নিয়া যাচ্ছে সে। ট্রিনিটি পেছনের লাইটগুলি বন্ধ করে সামনের লাইটগুলি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

আচ্ছা ট্রিনিটি কেন পেছনের লাইটগুলি নিভিয়ে দেচ্ছে? জিমকে জিজ্ঞেস করলো ইরা। জ্বালিয়ে রাখলেই তো পারে।

সোলারেক্সের নিউক্লিয়ার এনার্জি প্রায় শেষের পথে। তাই হঠাৎ করে যেন তার এনার্জি শেষ হয়ে না যায় তাই সে নিভিয়ে দিচ্ছে। স্তব্ধ জায়গায় গমগম করে উঠল জিমের গলা।

সামনে প্যাসেজটা আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকল। একসময় লম্বা প্যাসেজটা পার হয়ে কাচে ঘেরা দরজার সামনে এসে পরল সবাই। নিঃশব্দে দরজাটা খুলে গেল।

যাক এতক্ষণে হ্যাঙ্গারটা শেষ হলো। আপনমনে বলল জিম। কিরু এখান থেকে কন্ট্রোলিং ইউনিটটা কতদূর হবে?

সামনের রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে। কিরু২ একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে তাকালো। এই পথে আটশো মিটার, ও পথে বারোশো মিটার লাগবে।

দীর্ঘশ্বাঃস ফেলল লিও। চলো বায়ের পথেই যাই। পা বাড়ালো সে।

দাঁড়াও! ইরা থেমে গেল। তার পিঠ থেকে একটা টুলকিট বের করে মেঝেতে রাখলো। আগে ভাইরাসের অবস্থা যাচাই করে নেয়া যাক! কিটটা খুলে দুটি প্রোব হাতে নিয়ে বাটন প্রেস করতেই সেগুলো সাইজে প্রায় দ্বিগুন বড় হয়ে মাথার উপর উড়তে থাকল। সামনে লাল লেজার এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে স্ক্যান করে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে দুদিকে প্রোব গোলকদুটো অদৃশ্য হয়ে গেল।

চোখে একটা গগলস পরে নিল ইরা। প্রোবের সংগ্রহ করা ডেটা থেকে ভাইরাসের খবর জানার চেষ্টা করছে সে।

না আপাতত আশেপাশে কিছু নেই। চলো এগুই।

ইরার পেছনে পেছনে লিও আর জিম হাটতে থাকল।

তো এই মিশন শেষে তুমি পৃথিবীতে যাবে? লিওকে জিজ্ঞেস করল জিম। কোথায় ছুটি কাটাতে চাও? রাজধানীতে? সুউচ্চ কোন টাওয়ারে? আন্ডার্গ্রাউন্ড শহরগুলোতে...?

নির্জন কোন দ্বীপে… আনমনা হয়ে লিও উত্তর দিল। যেখানে প্রযুক্তির কোন ছায়া নেই, যেখানে সমুদ্রের মাঝে রক্তিম আকাশ ফেটে সূর্য্য উঠে… সীমাহীন সমুদ্রের ধুধু নোনতা বাতাস মাখবো গায়ে। নরম বালিতে শুয়ে জীবনটা উপভোগ করতে চাই… আর বেস-স্টেশন থেকে বেস-স্টেশনে ডিউটি করতে চাই না… যেখানে রাতদিনের হিশেব নেই, সময় বলতে কম্পিউটারের কতগুলো ডিজিট সেখানে। এখানে সূর্যের কোন উত্তাপ নেই, কেবল হিটারের হিসহিস শব্দে কিত্রিমভাবে উত্তপ্ত করা হয়…

ইসস তুমি আমাকে ঈর্ষান্বিত করে দিচ্ছো! মুচকি হাসল জিম। পৃথিবীতে যাওয়া তোমার অনেক দিনের ইচ্ছে? আমার মাঝে মাঝে মনে হয় একবার দেখে আসি আমাদের উত্তরসুরি গ্রহটিকে।

তোমার জন্মতো পৃথিবীতে হয় নি… তাই না? জিমকে জিজ্ঞেস করল লিও। অবাক ব্যাপার তার মনে হলো এই প্রশ্নটা জিমকে আগেও কখনো করেছে। কিন্তু কোথায় কবে মনে করতে পারছে না।

না। একটু থামল জিম। আইরান সেক্টরে… হোম এ আমার জন্ম। যদিও হোম থেকে খুব ছোট বেলাতেই গ্যালাকটিক স্কুলে চলে এসেছি আমি… ইরার দিকে তাকালো জিম? তুমি পৃথিবীর?

স্ফিত হাসল ইরা। আমি পৃথিবীর। বলতে পারো বিজ্ঞান একাডেমির বায়োটেক ল্যাবে থাকি! হেসে তার দিকে ফিরল সে। পৃথিবী ঘুরে দেখা আমার কখনো হয় নি!

আমিও কিন্তু পৃথিবী থেকেই এসেছি। হেসে বলল কিরু২। এবং পৃথিবীতে অনেক জায়গা ঘুরেও এসেছি। শুনতে চাও নাকি সেসব যায়গার কথা?

পরে কোন দিন শুনব সেসব কথা। লিও বাধা দিল তাদের। আগে রুটিন-কাজটা শেষ করে নেই। সামনের বাকটা পার হতেই অতিকায় একটা কক্ষে প্রবেশ করল তারা। আলোগুলো পাওয়ার পেয়ে জ্বলে উঠলে স্পষ্ট দেখতে পেল তারা পুরো ব্যবস্থাটা। হলোগ্রাফিক ইমেজের বদলে শত শত ছোট বড় ডিসপ্লে একপাশের ওয়ালে আটকানো আছে। এর বিপরীত পাশে কয়েকটা বসার সারি চলে গেছে। প্রত্যেকটা বসার ডেস্কের সামনে আদিম আমলের কম্পিউটার রাখা। সময়ের প্রভাবে কম্পিউটারের পার্টসগুলো এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কয়েকটা পুরোনো আমলের বসার চেয়ার উলটে পরে আছে।

মাদার্স ব্লেসিংস! যাবার আগে সোলারেক্সে কি যুদ্ধ চলছিল নাকি! জিমের সগোতক্তি শোনা গেল কমম লিঙ্কে।

জায়ান্ট সব ডিসপ্লে স্ক্রীনের সামনে গোল একটা ইনফরমেশন মডিউল দেখতে পেল তারা। সামনে এসে দাড়ালো সবাই। ময়লা আবর্জনা সরিয়ে মডিউলটা স্টার্ট করার চেষ্টা করল কিরু২। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।

এভাবে হবে না! কমম লিঙ্কে জেনার কণ্ঠ ভেসে এল। ট্রিনিটি বলছে কন্ট্রোলিং ইউনিটটা পাওয়ার কভারেজের মধ্যে পরছে না। তোমাদেরকে পাওয়ার ইউনিটে যেয়ে ম্যানুয়ালি পাওয়ার কনভার্ট করে আনতে হবে কন্ট্রোলিং ইউনিটে। ট্রিনিটি তোমাদের পথ দেখিয়ে দেবে।

তার দরকার হবে না। কিরু২ এগিয়ে বলল। আমি জানি সেটা কোথায়। পাওয়ার কন্ট্রোল রুমটা নিউক্লিয়ার রিয়েকটরটার দিকে।

এখানে আবার কিটটা বের করে আরো দুটো প্রোব দু’দিকে ছেড়ে দিল ইরা। সেগুলো লেজার ছড়িয়ে প্যাসেজ ধরে অদৃশ্য হয়ে গেল।

সবার যাওয়ার দরকার নেই। প্রস্তাব করল জিম। আমি আর কিরু২ যাই। তোমরা এখানে অপেক্ষা করো। পাওয়ার জেনারেট হলে সিগনাল দিও।

জিম… ইতস্তত করল ইরা। একবার অন্তত স্ক্যানিং রিপোর্টটা আসুক। অন্যদিকের কম্পার্টমেন্টগুলোতে খুব বেশি ভাইরাস সিগনেচার দেখি নি। এদিকে হয়তো বেশি হতে পারে।

এদিকেও হয়তো থাকবে না। হাসল জিম। চিন্তার কিছু নেই কএটা তো আছে! নিজের ক্রায়ো ব্লাস্টারে চাপড় দিল জিম। হেসে অন্ধকার একটা গলিপথ দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল সে আর কিরু২।

এখন অপেক্ষার পালা। একটা ডেস্ক থেকে কম্পিউটার ডিসপ্লে সরিয়ে বসল লিও। দেখি কতক্ষণ সময় লাগায় তারা!

ইরা তার পাশে এসে বসল। জিমের আমার কথা শোনা উচিৎ ছিল। না জেনে ওদিক যাওয়া একদম ঠিক হয় নি।

এই রুমে কেমন ভাইরাস থাকতে পারে? ইরার দিকে তাকালো লিও। আর আমাদের স্যুটের শীল্ডও কি ভেদ করে কোন ক্ষতি করতে পারবে এই ভাইরাস?

এই রুমে তেমন নেই। সিলিঙ্গের উপর আরো ২ ফ্লোরের উপর কিছুটা ভাইরাস সিগনেচার আছে।

লিও মাথা উচু করে সিলিংটা দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু আলোক সল্পতায় অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পেল না।

আর তোমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বলি, ভাইরাসগুলোর জেনেটিক কোড বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্নভাবে ডিজাইন করা হয়। এমনো অর্গানিক ভাইরাস তৈরি হয়েছে যা ভয়ঙ্কর বিষ্ফোরণ তৈরি করতে পারে… এটমিক বিষ্ফোরণের মতো। তাই যদি ভাইরাসটা ডিজাইন করা থাকে যে আমাদের শীল্ড ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকতে পারে তাহলে ভাইরাস তাই করতে পারবে…

চিন্তিতভংগিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকল লিও। মিশনটাকি আসলেই শেষ করতে পারবে তো সে?

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সামনে বিপুল, বিশাল চ্যালেঞ্জঃ মোকাবেলায় কতটুকু সক্ষম বিএনপি?

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



১. ভুল রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, দূরদর্শিতার অভাব

বিএনপি বাংলাদেরশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। লোকবল ও জনপ্রিয়তায় তাঁর ধারেকাছেও নেই অন্যকোনো রাজনৈতিক দল। মধ্যপন্থী গণতান্ত্রিক ধারায় আছে বলেই বাংলাদেশের মধপন্থী ও উদারপন্থী... ...বাকিটুকু পড়ুন

চিঠি।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৩০



চিঠি: এক হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির নাম

চিঠি—শুধু একটুকরো কাগজ নয়, এটি আবেগের স্পর্শ, অপেক্ষার মধুরতা, ভালোবাসার নিঃশব্দ উচ্চারণ। এক সময় মানুষের ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল এই চিঠি। স্বামী লিখতেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ডিফেন্স গ্যালারী Defence gallery

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:০১

মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হেলিকপ্টার যোগে নিয়ে যাওয়া হলো নিজ বাড়িতে
ঢাকা ১৩ মার্চ ২০২৫ (বৃহস্পতিবার): মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ ১৩ মার্চ ২০২৫ তারিখ দুপুর ০১:০০ টায় সম্মিলিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমা করবেন আরেফিন সিদ্দিক স্যার..

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭


আরেফিন সিদ্দিক স্যারের লাশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সাথেই সংযুক্ত হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ রাখা। শহীদ মিনারেও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দেবে না, ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে হবে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাথর চোখের কান্না- ৩

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১

অন্ধকারের ভাবনা.....

চোখের সমস্যার জন্য নানাবিধ টেস্ট করিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম Ophthalmoscopy, Funduscopy, Optic fundus, OCT (Optical Coherence Tomography এছাড়াও যেহেতু মাথায় যন্ত্রণা থাকে সেজন্য CT Scan এবং MRI করতে হয়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×