আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যানজটের মূল কারন কি? আমি ৩টা উত্তর দিব ।
১. ব্যবস্থাপনা ভাল না
২. রাস্তার পরিমান কম এবং
৩. পরিকিল্পনা নাই
এগুলোর প্রত্যেকটিই “এক্সক্লুসিভলি” ইম্পরট্যান্ট। কোনোটা যদি বাদ পড়ে তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না। এক কোটি লোকের শহরে মাত্র তিন/সাড়ে তিন লক্ষ গাড়ি (প্রাইভেট কার, বাস, বেবী ট্যাক্সি ইত্যাদি), এতেই আমাদের নাভিশ্বাস; এরমধ্যে সরকার ২০২১ সালের মাইল ফলক ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। লোকজনের আয় বাড়ছে। বিপরীতে, প্রযুক্তির উৎকর্ষে গাড়ির দাম কমছে। গাড়ির পরিমান বাড়ছে (প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় গড়ে ১৫০-২০০ গাড়ী যোগ হচ্ছে; ৩০০% ট্যাক্স দিয়েও এই বৃদ্ধি আটকানো যাচ্ছে না)। উন্নত দেশের মতো জনপ্রতি একটা গাড়ি হলে গাড়ী কিনে ঘরেই বসে থাকতে হবে। কারন রাস্তা সব অকুপাইড হয়ে থাকবে গাড়িতে।
এখন, যানজটের মুল কারণগুলো আমরা প্রথমে খতিয়ে দেখব।
১. ব্যবস্থাপনা- ব্যবস্থাপনা একটা অত্যন্ত বিস্তৃত ধারনা। এহেন জিনিশ নেই, যা ব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়ে না। তবু আমরা আমাদের সুবিধার্থে এই গল্পটা অল্প কয়েকটা জিনিসের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখবো।
ক. পার্কিং এবং অন্যান্য- পার্কিং ঢাকার যানজটের প্রধানতম কারণ। র্পযাপ্ত পার্কিং-এর জায়গা না থাকা এবং পার্কিং সর্ম্পকে জনগনের উদাসীনতা/অসচতেনতা এর অন্যতম কারন। রাস্তার কোন জায়গায় একটা গাড়ী পার্ক করা হলে পার্ককৃত লেন-টি অকেজো হয়ে যায় [কত মিটার পর্যন্ত, সেটা আমি জানি না, এটা বিভিন্ন ডিজাইন স্পীডের (যে স্পীডে চলার জন্য রাস্তাটা তৈরি করা) জন্য বিভিন্ন হওয়ার কথা]। রাস্তা চলার জায়গা,পার্কিং-এর নয়- এটা বেশিরভাগ লোক বোঝেন কিন্তু মানেন না। সমস্যাটা শুধু গাড়ীচালক বা গাড়ীর মালিকের রয়েছে, তা নয়। আমরা আমাদের (আমজনতার) একটা আচরন বিশ্লেষন করলেই বের হয়ে আসবে আমরা নিজেরা শুধুমাত্র “সুযোগের অভাবে ভদ্র ছেলে”। আমরা বাসে চলাচলের সময় প্রায়ই বাসস্টপ বাদ দিয়ে একেবারে বাড়ীতেই(গন্তব্যে) নামতে চাই।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে “বাস বে” না থাকার সমস্যা। গাড়িগুলোকে যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য রাস্তার উপরে (বামের লেনে) থামতে হয়। আর, স্টপেজের তো কোন হিসাব-ই নেই। যেখানে সেখানে যাত্রী উঠছে নামছে। নগর এলাকায় দুইটা স্টপেজের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড দূরত্ব হচ্ছে কমবেশী ৫০০ মিটার (এটা ওয়েষ্টার্ন হিসাব; কারো এটা নিয়ে সমস্যা থাকলে নিজে একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে নিতে পারেন)। অর্থাৎ, মিরপুর রোড ধরে আমরা যদি নিউমার্কেট থেকে গাবতলী পর্যন্ত যাই, তাহলে আমাদের এই সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তায় স্টপেজ থাকার কথা ১৭ টা (আর, অবশ্যই ১৭টা বাস বে)। আমাদের অফিশিয়াল হিসাবে এখানে ১৭ টা স্টপেজ নেই, আনঅফিশিয়ালি স্টপেজ আছে ১৭০ টা! এই অব্যাবস্থাপনার ভেতর রুট নির্ধারন (শুধু এটা-ই বিরা-----ট একটা বিষয়; বিস্তারিত করার ইচ্ছা ছিলো, সময়ের অভাবে এটা আর করা গেলো না, পরে এক সময় করা যাবে), বাস/রুটের মালিকানা ইত্যাদির বিষয়াদিও জড়িয়ে আছে।
এর মধ্যে বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। যে পথচারীর ফুটপাথে থাকার কথা বা যে যাত্রীর ফুটপাথে নামার কথা, সে দোকানের জন্য ফুটপাথে হাটতে/নামতে পারে না, প্রথম লেনে পানি জমা থাকে বলে (ক্যাম্বারের জন্য; এখানে জলাবদ্ধতার কথা বলা হচ্ছেনা, জলাবদ্ধতা আরেক গল্প) সেখানেও থাকতে/নামতে পারে না, সে চলে আসে (নামে এবং হাঁটে) রাস্তার মাঝখানে। এতে রাস্তার ডিজাউন স্পীড (যে স্পীডের জন্য উক্ত রাস্তা ডিজাইন করা) সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
খ. যথচ্ছে ভূমি ব্যবহার- শুধু ঢাকায় কেন, পুরো দেশে এমন একটা ধারনা তৈরি হয়ে গিয়েছে যে বিপনি বিতান গুলো শহরের মূল রাস্তার পাশেই হবে। এটা আত্মঘাতী। বিপনি বিতান বা দোকান মানেই সেখানে চলমান ট্রাফিক টা থামতে এবং নামতে চাইবে। একটা রাস্তার পাশে এ ধরনের বানিজ্যিক ব্যাবহার মানেই রাস্তার গতি কমিয়ে দেয়া। এই সুযোগে ফুটপাথগুলোও দখল হয়ে গেছে। যেখানে হকার বসে না, সেখানে পাশের বিপনি বিতান মালিক তাঁর দোকানকে ফুটপাথে বাড়িয়ে নিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে পথচারী রাস্তায় নেমেছে (আগের অনুচ্ছেদে উক্ত কিছু গাড়ী তাদের রাস্তায় নামতে আরো সুযোগ করে দিয়েছে)।
পরিকল্পিত শহরে বানিজ্যের বা ব্যাবসার জন্য নির্দিষ্ট এলাকা থাকে। অফিস আদালতের জন্য, শিল্প-কারখানার জন্য আলাদা আলাদা জায়গা থাকে। এটাকে ল্যান্ড জোনিং বলে। বাংলাদেশে এটা পুরোপুরি অনুপুস্থিত। ঢাকার জন্য প্রথম এ ধরনের পরিকল্পনা শেষ হয়েছে (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান এক ধরনের জোনিং-ই হয়েছে; এটা আসলে আক্ষরিক অর্থে ডিটেইল্ড প্ল্যান হয়নি) ২০১০ সালে!
একটা খাটি আবাসিক এলাকা কেমন হওয়ার কথা, বাংলাদেশের ভেতরে সেটা আমি দেখেছিলাম তেতুলিয়ায় (২০১১ সালের মার্চে/এপ্রিলে)। পুরো এলাকাতে কোন দোকান নেই, একটা দিয়াশলাই কিনতে চাইলেও বাজারে যেতে হয় (এটা-ও একটা এক্সট্রীম ব্যাপার; রেঞ্জ অব গুডস বলে একটা শব্দবন্ধ আছে- কোন পন্য কিনতে আমরা কতদূর যাব- সেটা নিয়ে একটা ধারনা। দিয়াশলাই-এর মত ছোট পন্য কেনার জন্য আমি নিশ্চই বাজারে যাবো না; এজন্য পরিকল্পিত আবাসিক এলাকাতেও গ্রোসারী থাকে তবে সেটা নির্দিষ্ট সংখ্যক)। পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন ছাড়াই এই জিনিস আমি দেখতে পাবো, কল্পনাই করিনি। বিপরীতে, ধানমন্ডি এলাকাটা প্ল্যান করা হয়েছিলো আবাসিক হিসাবে। সুতরাং, এখানে সেই হিসাবেই রাস্তাঘাট, অন্যান্য ইউটিলিটির পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। এখন এটা মনে হয় ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় বানিজ্যকেন্দ্র (মুনাফার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলা তো একটা বানিজ্য-ই; তাই না?)। আমি একটা ডেজিগনেটেড রেসিডেনশিয়াল এলাকায় দলবেধে পড়তে/বেড়াতে/শপিং-এ যাবো, আর যানজটে পড়বো না- তা তো হয় না। ধানমন্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়, নিমতলিতে রাসায়নিক, মিরপুরে গার্মেন্টস, গুলশানে অফিস- সব-ই একই ব্যাপার।
গ. অগ্রাধিকার নির্ধারনে সমস্যা- পাবলিক নাকি প্রাইভেট যান, যান্ত্রিক নাকি অযান্ত্রিক যান, পায়ে হাটা নাকি যানবাহনে চড়া, সড়কপথ নাকি জলপথ নাকি রেলপথ- এ ধরনের বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন নীতির সাথে পরিকল্পনাবিদদের বক্তব্য, প্রচলিত এবং বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ সাংঘর্ষিক। যেমন, সরকারের নেয়া সব পদক্ষেপ-ই আলটিমেটলি পথচারীকে নিরুৎসাহিত করে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বিকাশকে বাধা দেয়, বিকল্প উপায় হিসাবে রেলপথ ব্যাবহারকে কোন গুরুত্ব-ই দেয় না। ঢাকা শহরে কোথাও ১০০ মিটার আন-ইন্টারেপ্টেড ফুটপাথ আছে? সম্ভবতঃ নেই [লুই কানের ডিজাইন-সংসদ ভবন বাদে; তিনি পথচারীর প্রয়োজনীয়তা বুঝতেন]। একটু পর পর ফুটপাথ থেকে নীচে নামতে এবং উঠতে হয় (রাস্তার ইন্টারসেকশনের জন্য)। ডিজাইনে আমি কোনটাকে প্রায়োরিটি দিচ্ছি- সেটা বুঝতে হবে। আগে গাড়ীর রাস্তা নাকি আগে পায়ে চলার পথ? ঢাকা শহরের বেশিরভাগ ট্রিপ কিন্তু এখনো মানুষের পায়ের উপরে নির্ভর করে (ট্রান্সপোর্ট সংক্রান্ত সব স্টাডির ফাইন্ডিংস তা-ই বলে)। এটা বুঝতে হবে। তিন-ছয় শতাংশ লোকের জন্য (ট্রিপের জন্য) আমি উড়াল সড়ক, পাতাল রেল- কতকিছু করছি; কোথাও কি আমরা পথচারীবান্ধব ফুটপাথ তৈরি করার চেষ্টা করেছি? হাটার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছি (দুপুরের প্রচন্ড গরমে রাস্তার পাশে গাছের ছায়া থাকা সাপেক্ষে নিরবিচ্ছিন্ন প্রয়োজনানুযায়ী ফুটপাথ থাকলে তখন-ই কেবলমাত্র আমরা বলতে পারবো- হাটার পরিবেশ আছে)? গনপরিবহন (যেগুলো আছে) উন্নয়নের কোন ব্যাবস্থা কি নিয়েছি? অথচ এগুলোই মোট ট্রিপের সিংহভাগ। ১২ বগির ১টা ট্রেন প্রতি আধা ঘন্টা পর পর নারায়নগঞ্জ থেকে টঙ্গী আর টঙ্গী থেকে নারায়নগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে কী পরিমান লোককে আনা-নেয়া করা যেত- কেউ কী ভেবে দেখেছে? এতে বাসের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? হবে না। প্রয়োজনে তাদেরকে বাস রুটের পাশাপাশি ট্রেনের রুট ইজারা দেয়া যেতে পারতো (ট্রেন নিয়ে-ও কারো কারো বিভিন্ন ধরনের আপত্তি আছে, বিশেষতঃ এর অবস্থান নিয়ে কারন বিভিন্ন সময় অনেকের অনেকক্ষন ক্রসিং-এর সিগন্যালে বসে থাকতে হয়। এ সম্পর্কে তৃতীয় পর্বের শেষে কিছু কথা বলা হবে। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন)।
পি.সি.ইউ. (প্যাসেঞ্জার-কার ইউনিট/ইকুইভ্যালেন্ট) নামে একটা টেকনিক্যাল বিষয় আছে। এটা বেশ কিছু ইন্ডিকেটরের সাহায্যে (গাড়ীর আয়তন, ধারনক্ষমতা, গতি ইত্যাদি) তৈরি করা কম্পোজিট একটা ইনডেক্স। 'কার'-এর মানকে ১.০ ধরে বিভিন্ন যানবাহনের মান বের করা হয়েছে এতে। এটা বিভিন্ন রাস্তার, বিভিন্ন কন্ডিশনে বিভিন্ন রকম হয়। একটা স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, বাসের পি.সি.ইউ. ৩.৫, সাইকেলের ০.২, মোটর সাইকেলের ০.৫ ইত্যাদি। সহজে বোঝার জন্য বলা যায় যে এটা একটা রাস্তার উপরে একটা যানের ইমপ্যাক্ট-এর পরিমাপক। অর্থাৎ, একটা প্রাইভেট কার যদি রাস্তায় ১ একক ইমপ্যাক্ট ফেলে, তাহলে একটা বাস ফেলে ৩.৫ একক। এবার হিসাব করি- একটা বাসে তো অবশ্যই ৩.৫ জনের চেয়ে বেশী যাত্রী থাকে। নাকী? তাহলে প্রায়োরিটি দিতে হবে কীসে?
অপরদিকে আমরা উড়াল সড়ক বানাচ্ছি। এ সম্পর্কে পরিকল্পনাবিদদের বক্তব্য পরিকল্পনাবিদ মেহেদী হক অনেক আগেই লিখেছেন, সেটা আর লিখলাম না। লেখাটা খুব-ই গুরুত্বপূর্ন, সহজে বোধগম্য। সেটার লিঙ্কঃ
http://planoroma.blogspot.com/2012/04/blog-post_6669.html
নীচের ছবিটা আমাদের অগ্রাধিকার নির্ধারনের ভূল-টা খুব সহজে বোঝাচ্ছে।
চিত্রঃ একই পরিমান মানুষ, ভিন্ন ভিন্ন যান- কোনটাকে/কোনগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে- সহজেই অনুমেয়। ছবি অন্তর্জাল থেকে নেয়া।
ঘ. তথ্য- কোনো তথ্য ও উপাত্ত ছাড়া ঢাকার ট্রাফিক সিস্টেম কিভাবে বড় ধরনের দূর্যোগ ছাড়া দৈনিক এক্সিকিউট করছে, সেটা আমার কাছে একটা বিস্ময়। আমার ধারনা ঢাকার ট্রাফিক পুলিশরা তাদের কাজে বিশ্বমানের। শুধু “রাশ” এর পরিমান দেখে তারা ১ কোটি লোকের শহরকে গতিশীল রাখছে (ট্রিপের সংখ্যা ২ কোটি ১০ লাখ, প্রতিদিন!)- এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। পৃথিবীর কোথাও এতো বড় শহর নির্দিষ্ট ধরনের তথ্য-উপাত্ত (মানে, ট্রিপের উৎস এবং গন্তব্য) ছাড়া ট্রাফিক কন্ট্রোল করে না। উন্নত বিশ্বে সব-ই এখন তথ্য ভিত্তিক। কোন ভলিউমের যান কোন রাস্তায় কিভাবে তারা ছাড়বে, সব সফটওয়্যারে মডেলিং করা আছে। এর মধ্যেও যে এক্সিডেন্ট ঘটে না, তা না। এর মধ্যেও যে যানজট হয় না তা নয়। তবে এটা আমাদের দেশের মতো (বিশেষ করে ঢাকা শহরে) নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার না।
ঙ. দুর্নীতি- এটার কথা বলতেই চাই না। কোথায় কোথায় কী কী ধরনের ঘটনা ঘটে, চোখ কান খোলা রাখলেই দেখা যায়। এটা সম্পর্কে আমি মনে হয় একটু কম-ই জানি। তাঁর মধ্যে আবার নতুন সংযোজন ৫৭ ধারা। মাফ চাই।
২. রাস্তার পরিমান কম- ঢাকা শহরে যে পরিমান রাস্তা আছে, যে কোন বিচারে তা অপ্রতুল। যদিও শহরের কোন উপাদান কী পরিমানে থাকবে, সেটার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম (থাম্বরূল) নেই, তবুও এই সংখ্যাটা শতকরা বিশভাগের উপরে থাকা ভালো। ঢাকার মতো ঘন্বত্বের শহেরে এটা আরো বেশী হওয়া উচিত। বিভিন্ন গবেষনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, ঢাকায় এই পরিমানটা ২০ ভাগের চেয়ে অনেক কম। কেউ কেউ বলে এই সংখ্যাটা মাত্র ৭-৮ শতাংশ।
কমবেশি ১৩০০০ ফিট অল্টিচিউডের পাশাপাশি তিনটা গুগলের ইমেজ দেখি।
বামে অকল্যান্ড, মাঝে ঢাকা (এতে ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত এলাকার অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে) আর ডানে কুয়ালালামপুর শহরের ইমেজ দেখা যাচ্ছে। ছবিতেই জনঘনত্ব এবং রাস্তার পরিমানের একটা তুলনামূলক ধারনা পাওয়া যায়। তার পরেও সহজে বোঝার জন্য এই টেবিল দেখিঃ
তথ্যসূত্রঃ
১ Click This Link
২ এস্টিমেটেড ফ্রম Click This Link
৩ এটা মেট্রো, লাইট রেল, মনোরেল এবং কমিউটার রেল বাদে। কুয়ালালামপুর পরিকল্পনার সময় রেলের চেয়ে রাস্তায় অনেক কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের ট্রাফিকের একটা বড় অংশ মেট্রো, লাইট রেল, মনোরেল এবং কমিউটার রেল ব্যাবহার করে
৪ Sustainable Urban and Regional Infrastructure Development: Technologies, Applications and Management, ISBN13: 9781615207756, পৃষ্ঠা- ১৫২।
উপরের টেবিলের “শেষ কলাম” আর “তিন নম্বর ফুটনোট” পড়লেই সব ফকফকা (পরিষ্কার) হয়ে যাওয়ার কথা। আমি জনঘনত্ব, রাস্তার কোয়ালিটি, রাস্তার প্রস্থ, যানবাহনের কোয়ালিটি, ব্লা ব্লা ব্লা ... ... ... ইনক্লুড করে বিষয়টা আর লম্বা করতে চাচ্ছি না।
৩. পরিকল্পনা নাই- আমি এটা নিয়ে আর কোন কথা-ই বলবো না। উপরে যা যা পড়েছেন, সব-ই পরিকল্পনা না থাকার ফলে সৃষ্ট সমস্যা। মানে এটাই শেষ কথা। রাস্তায় ধুলা? পরিকল্পনাবিদকে পরিকল্পনা করতে দ্যান। বৃষ্টি হলে পানিতে ডুবে যাচ্ছেন? পরিকল্পনাবিদকে পরিকল্পনা করতে দ্যান। রাস্তায় হাটার অবস্থা নাই? পরিকল্পনাবিদকে পরিকল্পনা করতে দ্যান। আসলে পরিকল্পনা ছাড়া যানজট থেকে নিষ্কৃতির কোন উপায় নেই (পরিকল্পনার পরী উড়ে গেলে চলবে না; বাস্তবায়নটা পরিকল্পনার সমান জরুরী)। আর সেই দায়িত্ব একজন (আসলে- একদল) ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানারকেই দিতে হবে। এটার কোন অল্টারনেটিভ নাই- এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততই মঙ্গল।
আমার বলা বা না বলা সব সমস্যা জেনে, সেগুলোকে বিশ্লেষন করে আর আপনাদের জানা বা না জানা সব অল্টারনেটিভ মাথায় রেখে একটা পরিকল্পনা তৈরি হয়। ইদানিংকালে এর সাথে যুক্ত হয়েছে কম্পিউটারের মডেলিং এর অসাধারন কিছু সফটওয়্যার। যোগাযোগের নিখুত পরিকল্পনা করা এখনো কঠিন কিন্তু অসম্ভব না যেটা আগে অসম্ভব ছিলো।
আজকে অনেক লিখে ফেলেছি; আগামী দিনের জন্য খুব বেশী কিছু রইলো না।
এতোখানি লেখা একসাথে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪২