ঘটনার সূত্রপাত
গতকাল রাতে প্রিয় ব্লগার নেক্সাসের ফেসবুক স্ট্যাটাসে চোখ আটকে গেলো। তিনি জানতে চেয়েছেন ব্লগার সাহসী সন্তান এর কোনো আপডেট কেউ দিতে পারবে কি না। তার স্ট্যাটাসে লেখা ছিলো-
যাই হোক যতদুর জেনেছি প্যারা জাম্পিং সময় প্যারাসুট বিট্রে করায় উনি ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে মাথায় ও মেরুদন্ডে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। বর্তমানে আমেরিকায় চিকিতসাধীন অবস্থায় কোমায় আছে। এই অবস্থায় দেশ মাতৃকার এক সাহসী সৈনিক ও আমাদের পরম প্রিয় বন্ধু ও সহব্লগারের জন্য সকলে প্রাণ খুলে দোয়া করুন।
ব্লগে অনেকদিন ধরে সাহসী সন্তানকে দেখি না। হঠাৎ করে এমন একটা খবর শুনে সেই রাতে বুকটা ধ্বক করে উঠলো। নক করলাম মাহমুদ০০৭কে। সে জানালো সাহসী সন্তান না কি মারা গেছে। বিশ্বাস হতে চাইলো না। নেক্সাসের স্ট্যাটাস ফলো করতে লাগলাম। সেখানে সে মারা গেছে এমন কিছু পেলাম না। তবে সে যে কোনো এক বড় দুর্ঘটনায় পড়ে জীবন সংশয়ে আছে এ ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেলো। মন খারাপ করে ঘুমোতে গেলাম। এত খারাপ খবর চারিদিকে! মেনে নেয়া যায় না।
নতুন আপডেট
উদ্বিগ্ন হয়ে ব্লগার কথাকথিকেথিকথন একটি পোস্ট দিলেন। ব্লগার 'সাহসী সন্তান' প্রসংগে। (সাময়িক পোস্ট) সেখানে আমরা দেখা পেলাম সাহসী সন্তান ওরফে সম্রাট এর একজন কাছের মানুষকে। তিনি সেখানে সাহসী সন্তানের আপডেট জানিয়ে নিম্নোক্ত কমেন্টটি করেন-
সে যে বেঁচে আছে, তা জেনে মনটা কিছুটা ভারমুক্ত হলো। তবে সাথে কিছু প্রশ্নও যোগ হলো।
ফ্ল্যাশব্যাক
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক, সাহসী সন্তানের দুর্ঘটনার খবর কীভাবে এবং কার মাধ্যমে আমরা জানলাম। ঘটনার শুরু Rakhi Rahman এবং অপর্ণা মম্ময়ের ফেসবুকে কথোপকথনের মাধ্যমে। Rakhi Rahman অপর্ণাকে জানান যে একটি মিশনে গিয়ে সাহসী সন্তান মারা গেছে। এটা খুব গোপন ব্যাপার, কাউকে যেন জানানো না হয়। পরবর্তীতে Rakhi Rahman নামক আইডিটা ডিএ্যাক্টিভেট করা হয় এবং আর কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি সেখান থেকে। অপর্ণা এই কথোপকথনের সূত্র ধরে ফেসবুকে পোস্ট দেন, তা থেকে নেক্সাস পোস্ট দেন, এবং এভাবেই কথাটি ছড়ায়। আমাকে ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসা উক্ত কথোপকথনের স্ক্রিনশট দেয় অপর্ণার অনুমতি নিয়ে। আমি সেগুলো এখানে এ্যাড করে দিচ্ছি-
এরপর নেক্সাসের ফেসবুক স্ট্যাটাসে কামরুন্নাহার আপা জানান যে সাহসী সন্তানের সাথে তার শেষ কথা হয়েছে জুলাইয়ের ১ তারিখে এবং তার শেষ কথা ছিলো- কালকের অপারেশন সাক্সেসফুল না হইলে হয়তো খবর নাও পাইতে পারেন। "
নেক্সট অপারেশনের উপর নির্ভর করবে কতদিন কোমায় থাকা লাগবে। "
এই মূহুর্ত্বে আপনাদের দোয়া ছাড়া আর কিছুর দরকার নাই। "
হৃদয়গ্রাহী, তাই না?
কিছু প্রশ্ন
তো উপরোক্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে একটা সামারি করে ফেলা যাক!
১/ সাহসী সন্তানের আসক নাম সম্রাট। সে ডিফেন্সে চাকরি করে। কোনো একটা মিশনে গিয়েছিলো।
২/ সেখানে তার বিশাল কোনো দুর্ঘটনা হয়। সেই দুর্ঘটনার কথা সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কামরুন্নাহার আপাকে জানিয়ে উধাও হয়ে যায়।
৩/ তার অবস্থার অবনতি হয়, এবং তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
৪/ তার দুর্ঘটনার স্পেসিফিক কারণ ছিলো প্যারা জাম্পিং।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সদস্য প্যারাজাম্পিং করতে গিয়ে জীবন সংশয়ে পড়লো সেই জুলাই মাসে, আর এতদিনে সেটা নিয়ে কোনো খবরই এলো না মিডিয়ায়? উল্লেখ্য সাহসী সন্তান নিজেকে কারো কাছে আর্মি এবং কারো কাছে নেভির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করতো। ধরে নিলাম সে আর্মির। তো এই বিশিষ্ট সেনাব্লগার সম্পর্কে জানতে ব্লগার নেক্সাস তার বড় বোনের ছেলের সাথে কথা বলেন যিনি আর্মির প্যারাকমান্ডো স্কুলের ট্রেইনার। তিনি এ ধরনের কোনো ক্যাজুয়ালিটির কথা জানাতে পারলেন না। নেক্সাস শিওর হবার জন্যে জিজ্ঞেস করলেন নেভির কেউ প্যারাজাম্পে অংশগ্রহণ করে কি না। নেক্সাসের ভাগ্নে জানালেন যে নেভির যদি তেমন কোনো প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তাদেরকেও আর্মির প্যারাকমান্ডোর কাছেই আসতে হবে।
তাহলে এত বড় একটা দুর্ঘটনার খবর কি হাওয়াও মিলিয়ে গেলো?
কিছু অসম্ভব রকম বেসম্ভব কাকতালীয় ব্যাপার
চলুন আবার ফিরে যাই কথাকথিকেথিকথন এর জিজ্ঞাসু পোস্টে হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া ব্লগার চি র কু ট এর সাথে সাহসী সন্তানের বানানরীতির কিছু দারুণ মিল নিয়ে।
সাহসী সন্তানের 'সম্ভবত' বানান-
চি র কূ ট এর একই বানান-
'চলাকালিন' -
"শান্তনা"
শুধুমাত্র বানান না, আরো ব্যাপার আছে। এই চি র কূ ট সাহসী সন্তান নিয়মিত যাদের কমেন্ট করতো তাদেরই কমেন্ট করে। তার দেয়া ৬টি কমেন্টের মধ্যে ১টি সাহসী সন্তানের পোস্টে, আরেকটি সাহসী সন্তান সংক্রান্ত পোস্টে, বাকিগুলো হলো জুন, সুখী মানুষ এবং ইতি সামিয়াকে, যাদের সাহসী সন্তানও কমেন্ট করতো। শুধুমাত্র মেঘের সাথীর ব্লগে সাহসী সন্তান কখনও কমেন্ট করে নি।
আরো ঘাপলা
সাহসী সন্তানের সাথে আমাদের মডু কাভার ফোনে কথা হতো একসময়। ফোন নাম্বারটি সে রেখে দিয়েছিলো। তো আজ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফোন নাম্বারটিতে ফোন করে সে পায় খালিদ নামক একজনকে, যে নাকি সাহসী সন্তানের কাজিন। এই একই নাম্বারে অপর্ণা মম্ময়ও ফোন করে। সেখানে আবার নাম বলা হয় জাহিদ। এই খালিদ অথবা জাহিদ আবার একেকসময় একেক কথা বলে। কখনও বলে একসিডেন্ট ৩ মাস আগে হয়েছে, কখনও বলে সম্প্রতি হয়েছে, নানা ঘাপলা! কাভার ভাষ্যমতে তাকে পাশ দিয়ে কে যেন কথা শিখিয়ে দিচ্ছিলো আবার!
জুনিয়র শার্লক
কাভার কাছ থেকে ফোন নাম্বারটা নিয়ে আমি ফেসবুকে সার্চ দেই। সেখানে একটি প্রোফাইল পেয়ে যাই। নাম হলো Junior Sherlock এই শার্লক মহাশয় আবার ধুমিয়ে ফেসবুকিং করে যাচ্ছে। দেশ-কাল-রাজনীতি, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে। তার চেয়েও মজার কথা কি জানেন? এই শার্লক সাহেবের বানান ভুলগুলোও আবার সাহসী সন্তানের ভুল বানান অথবা বানানরীতির সাথে খুব মিলে যায়। যেমন, সাঁজিয়ে, আশানুরুপ, মাঝে-মাঝে (দুজনেই হাইফেন ইউজ করে মাঝে), করবেন্না, সমস্থ ইত্যাদি। আমি স্ক্রিনশট দিয়ে আর পোস্ট ভারাক্রান্ত করতে চাই না। একটু ঘাঁটলেই পেয়ে যাবেন।
শেষ কথা
আমি আপনাদের সামনে কিছু অসঙ্গতি এবং কাকতালীয় (!) মিল তুলে ধরলাম। কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছুই নি। তবে আশা করি সাহসী সন্তান ভালো আছে, এবং আমরা সঠিক লোক মারফত সঠিক খবর পেয়ে যাবো। এই পোস্টের উদ্দেশ্য একজন সহব্লগারের প্রতি উদ্বিগ্নতা থেকেই উৎসারিত, এবং আশা করি এটা সংশ্লিষ্ট সকলে বুঝবেন।
শুভ ব্লগিং!
আপডেট ১- এই পোস্ট দেবার কিছুক্ষণ পর জুনিয়র শার্লক আইডিটি ডিএ্যাকটিভেট হয়ে যায়।
ফাইনাল আপডেট- সাহসী সন্তান সুস্থভাবে ফিরে এসেছে। এসে ফেসবুকে মাহফুজুর রহমানকে নিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত তার ফিরে আসায়।