সামহোয়্যার ইন ব্লগ এবং আমি! বড় শক্ত এ বাঁধন। আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে যাওয়া কত স্মৃতি! রাত জেগে আড্ডা, ছাগু তাড়ানো, যুক্তি-তর্ক-গপ্পো, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, রোমান্স! মতাদর্শের বিরোধে বন্ধু হয়ে যায় শত্রু, চেতনার স্ফুলিঙ্গে আলোকিত হয়ে তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিরোধ ঘুচিয়ে দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রু হয়ে যায় বন্ধু! কত স্মৃতি, কত হাসি গান! লেখালেখি, বই প্রকাশ, বইমেলার লিটল ম্যাগ চত্বরে আড্ডা। আজ এত বছর পরে ব্লগ রিভিউ লিখতে গিয়ে দিশেহারা হবার যোগাড় কোথা থেকে শুরু করবো! স্মৃতির বুদবুদে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া মস্তিষ্কের নিউরনে বহুমাত্রিক অনুভূতির আড়ম্বর। অনেক কিছু ভুলে গিয়েছি, অনেক কিছু আবছা মনে আছে, সবকিছু নিয়ে লিখতে গেলে আস্ত একটা বই হয়ে যাবে। এই পোস্টে চেষ্টা করবো ব্লগের হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির উত্থান-পতনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করতে যার অনেক কিছুই নতুন ব্লগাররা জানে না। সাথে প্রাসঙ্গিক বিধায় থাকবে কিছু ব্যক্তিগত কাসুন্দি, কিছু স্বীকারোক্তি।
ব্লগের কথা প্রথম শুনি রানা ভাইয়ার কাছ থেকে (ব্লগার নস্টালজিক)। সে তখন সচলায়তনে অতিথি লেখক হিসেবে দুয়েকটা পোস্ট দিয়েছে অভ্র নামক বিস্ময়কর সুন্দর সোনার কলম দিয়ে। বাংলা লেখার এই অসাধারণ সফটওয়্যার আমার মনের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলো। তখন আমার সময় কাটতো মূলত We hate pakistan নামক একটা ফেসবুক গ্রুপে। সেখানে অনেক ফাকিস্তানী তরুণ আসতো আমাদের 'ভুল' শোধরানোর জন্যে। তাদের সাথে তর্কাতর্কি করেই দিন গুজরান হতো। এটাকে একটা পবিত্র দায়িত্ব মনে করে আমরা নাওয়া খাওয়া ভুলে সেখানে পড়ে থাকতাম। ঐ গ্রুপে ছিলেন ব্লগার মনির হাসান, নায়েফ আহমেদ চৌধুরি। মনির ভাই সামহো্য়্যারে লিখতেন। তার শেয়ার দেয়া একটা কবিতা পড়ে বাংলা লেখার প্রতি তীব্র আকর্ষণ জন্মে। এর আগে বাংলা লিখতাম Bangla word নামক একটা অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ণ সফটওয়্যার দিয়ে। ফেসবুকে ফাকিস্তানী তাড়াবার সাথে সাথে ইচ্ছে জন্মে আরো বৃহৎ পরিসরে এই কাজটি করার। ব্লগে আমার আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এটাই। কখনও ভাবি নাই ব্লগে সাহিত্যচর্চা করা হবে। অভ্র অবশ্য তখন শেখা হয় নি। সামুর ফোনেটিক কিবোর্ডটাই যুৎসই মনে হতো আমার কাছে। । কয়েকটা ব্লগ ঘুরে অবশেষে সামুতেই গেড়ে বসার পরিকল্পনা করলাম। প্রথম পোস্টটা অবশ্য ছিলো একটি পলিটিক্যাল স্যাটায়ার পদ্য। তখন মেঘাচ্ছন্ন নামক একজন ব্লগার ছিলো, সে প্রতিটি নতুন ব্লগারের প্রথম পোস্টে গিয়ে মন্তব্য করতো, "স্বাগতম.....আপনাকে, আমাদের এই ব্লগ পরিবারে.......।" পরে জানতে পেরেছি সে বছর কুড়ির একটা বাচ্চা মেয়ে। ব্লগ নিয়ে তার দারুণ ফ্যাসিনেশন ছিলো। এখন কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে! তো ব্লগে কমেন্ট এক্সেস পেতে দুই সপ্তাহের মত ওয়াচে থাকতে হলো। এই সময়টায় ব্লগ পড়ার নেশায় পেয়ে বসলো। অনেক পড়াশোনা করে ব্লগের হাল হকিকত বুঝে নিলাম। তখন ব্লগিং করতেন আরিফ জেবতিক, অমি রহমান পিয়াল, ডটু রাসেল, নাফিস ইফতেখার, মনজুরুল হক, ক-খ-গ, তামিম ইরফান, কাঁকন, বিষাক্ত মানুষ, মানুষ, আহমেদ মোস্তফা কামাল,আইরিন সুলতানার মত বাঘা বাঘা ব্লগার এবং লেখকেরা। ছিলেন আলিফ দেওয়ান কাগু; নিজস্ব ভাষারীতিতে প্রচুর পরিমাণ রস এবং উইটের সংযোগে ছাগু , সুশীল এবং ছাগবান্ধবদের তুলোধুনা করতেন তিনি। অনেকে বলে এটা নাকি আরিফ জেবতিকের মাল্টি ছিলো, অবশ্য এটার সত্যাসত্য সম্বন্ধে কোন প্রমাণ ছিলো না। ছিলো ছাগুচিফ আখ্যা পাওয়া টেকমোল্লা, জামাতী সংশ্রব দুষ্ট ত্রিভূজ। তারো আগে ছিলো রাজাকার কামারুজ্জামানের পুত্র ওয়ালি, ওয়ামি। আস্তমেয়ের পো্স্টে ওয়ালি মুক্তিযোদ্ধাপন্থী ব্লগারদের বেসবল ব্যাট দিয়ে পেটানোর আহবান জানায়। এমনই দম্ভ ছিলো তাদের! ছিলো সন্ধ্যাবাতি, ফারজানা মাহবুবা, শর্মি, শাওন, উম্মু আব্দুল্লাহ, ধাঁনসিড়ির মত জামাতপন্থীরা। সময়ের পরিক্রমায় সত্য বিজয়ী হয়, আর নিষিদ্ধ হয় তাদের একে একে প্রায় সবাই। ছিলেন সুশীলের ভেক ধরে থাকা ছাগবান্ধব ব্রাত্য রাইসু এবং মাহবুব মোর্শেদ। ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি বাবুয়া। ব্লগের ইতিহাসে যার একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তার কথায় পরে আসছি।
আমি যখন কমেন্ট এক্সেস পাই, তখন ব্লগে ছিলো এক ঝঞ্ঝাসংক্ষুদ্ধ পরিবেশ। অমি রহমান পিয়াল যৌবনযাত্রা নামক পর্ন ওয়েবসাইটের ব্যানারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত মুভমেন্ট করার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে ব্লগাররা দুইভাগ হয়ে যায়। আমি ছিলাম পিয়াল ভাইয়ের অবস্থানের বিরুদ্ধে। সেই সময় আরিফ জেবতিক একটি পোস্ট দেন তার পক্ষে, যা শুরু হয়েছিলো এভাবে "প্রবল আর্থিক স্ট্রাগলের সময়ও পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় , চাকুরির অনিশ্চয়তার মাঝে দাড়িয়েও পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় , নিজের সন্তানের জন্মের আনন্দ মুহুর্তেও পিয়াল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় । এই বিচার বিচার করতে করতে লোকটার মাথা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।" এই পোস্টে মন্তব্য করার মাধ্যমেই শুরু হয় আমার ব্লগ পরিক্রমা। প্রথম মন্তব্যটি থেকেই আমার ব্লগ চলা হয়ে ওঠে দুর্যোগপূর্ণ। অমি রহমান পিয়াল এবং তার পক্ষের ব্লগারদের তরফ থেকে তীব্র আক্রমণের শিকার হই। পিয়াল ভাই আমাকে অনেকদিন যাবৎ "সন্দেহজনক" ব্লগার লিস্টে রেখেছিলেন। অর্থাৎ, তার ব্লগে কমেন্ট করতে গেলে সেটা মডারেটেড হয়ে তারপর প্রকাশ পাবে। তিনি সমস্ত ছাগু নিককে তার ব্লগে ব্লক করে রাখতেন। আমাকে ব্লক করেন নি তাও ভালো, তবে ছাগু না ভাবলেও ছাগবান্ধব যে ভেবেছিলেন এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে পরবর্তীতে তার ভুল ভেঙেছিলো। শূণ্য আরণ্যকের একটি গান বিষয়ক আড্ডা পোস্টে সারারাত ধরে ধুমিয়ে আড্ডা দিয়েছিলাম আমরা। শূন্য আরণ্যক আমার প্রথম ব্লগবন্ধু। তাকে নিয়ে বলছি পরে। পিয়াল ভাইয়ের সাথে সম্পর্কটা বেশ আলো পায় এরপর। আমরা যখন সিপিজি (ছাগু পোন্দানি গ্রুপ, এটার কথাও বলছি পরে) গঠন করি, তিনি সেখানে আমাদের বেশ সাহায্য করেছিলেন। নিক শেয়ারিংও করেছিলাম আমরা। তবে দুর্ভাগ্যজনক এই, যে সম্পর্ক পুনঃরাস্থপিত হবার পরেও তা বেশিদিন টেকে নি। ফেসবুকে তিনি আমাকে ব্লক করে রেখেছেন। কেন তা জানি না আজও। এখন আমি জানি ব্লগের সম্পর্কগুলো এমনই হয়। শত্রু হয় বন্ধু, বন্ধু হয় শত্রু। কেন কী কারণে তার যে সবসময় খুব স্পষ্ট কোন কারণ থাকতে হবে এমনও না। হয়তো বা কেউ আপনাকে কানপড়া দিলো যে হাসান মাহবুব তার একটি মাল্টিনিক দিয়ে আপনাকে যা-তা বলেছে, আপনিও তা বিশ্বাস করে সম্পর্কছেদ করলেন, অথবা অন্য কোন আইডি দিয়ে আমাকে আক্রমণ করলেন। ব্লগের বহুল চর্চিত অভ্যাস এটি।
আরো একটু পেছনে চলে যাই; সামুব্লগের প্রসঙ্গে লিখবো আর এ টিমের কথা থাকবে না তা কী করে হয়! এ টিম একটা প্রবল স্পর্ধার নাম। বাংলা ব্লগের অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে আলোক দীশারি ছিলো এ টিমের সদস্যরা। তাদের মূল মন্ত্র ছিলো "যেখানে রাজাকার সেখানেই গদাম"। এ টিমের সদস্যরা রাজাকারবান্ধব বরাহদের সাথে বসবাসের ফতোয়া অস্বীকার করেছিলো। সকল রকম সুশীলতার নিকুচি করে ছাগুদেরকে দৌড়ের ওপর রাখাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো। সংঘবদ্ধ একটি দলের দায়িত্ব বিভাজিত ছিলো বিভিন্ন দিকে। ছাগু পোস্টের ব্যাকআপ এবং স্ক্রিনশট নিয়ে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছিলো তারা। ছিলো অসংখ্য মাল্টি নিক। ছাগুদের বিরুদ্ধে তাদের ভাষায় কোন নমনীয়তা ছিলো না। ছাগুদের প্রতি যিরো টলারেন্স নীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গালিয়ে তাদের ভূত চাড়তো তারা। এটিমের সদস্য হোসেইনের ব্লগ থেকে, "সংক্ষেপে কিছু কই । এ-টিমের সকল সদস্যের পরষ্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য চ্যাটের ব্যবস্থা আছে । যেকোন ইস্যুতে সকলের মতামত দেবার সমান ক্ষমতা , সকলের ভেটো পাওয়ার । তারপরেও অনেকের অনেক দায়িত্ব নির্দিষ্ঠ । যেমন কয়েকজন আছেন হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্ট । এই দায়িত্বে যারা আছে তাগো ক্ষমতার আসলেই তুলনা নাই । এর যেকোন পুরানপাপীর নতুন নিক খুইজা বাইরা কইরা ফালাইতে পারে । ( থেরাপিস্টের তিনটা কমেন্ট পড়ার পরেই এদের একজন আমারে কইল যে এইটা সারোয়ার চৌধুরীর নিক । আমি প্রথম বিশ্বাস করি নাই । কিন্তু এরা বাক্যের গঠন , আরো কী কী জানি দেখাইয়া আমারে আবার একই কথা কইল । কিন্তু আমি মনে কর্লাম , সারোয়ার চৌধুরীর মতো একজন কাব্যানুরাগী এইটা করবে না । পরে যখন থেরাপিস্টের ম্যালফাংশন হইল , তখন দেখি ঘটনা সত্য । ) এর কখনো কারো নয়া নিক খুইজা বাইর করতে গিয়া আজতারি ভুল করছে বইলা আমি দেখি নাই ।
তারপর কেউ আছে আর্কাইভের দায়িত্বে , তারা অনেক মজার মজার কমেন্ট আর পোস্টের স্ক্রিনশট জমাইয়া রাখে ।
কেউ কেউ টেকনিক্যাল বিষয়গুলা দেখে । এ-টিমের কেউ যদি আইপি শুদ্ধা ব্যান খায় তাহলে সেই শহীদকে তারা নতুন নিক নিতে সাহায্য করে । তাছাড়া কম সময়ে করা যায় এরকম অনেক টেকনিক্যাল বিষয় এদের জানা আছে । এদের উপরে সামহোয়্যারের ডেভেলপররা গোস্বা থাকে সবসময় ।
কেউ কেউ যুক্তি আর প্যালরোডিতে একনাম্বার । তারা মাঝে মাঝে প্যা রোডি আর রম্য রচনা লিইখা ছাগুদের ডলা দেয় ।
এইভাবে মিলেমিশে কাজ করার কারনে এ-টিম রাজাকারদের চাইতে অনেক ধাপ আগাইয়া থাকে সবসময় ।"
এর ফলে হয়তো বা গাছ-ফুল-লতা-পাতা জাতীয় নিরীহ পোস্টকারী ব্লগাররা বিপদে পড়ে গিয়েছিলো, তবে তাদের অনেকেই নীরবে এটিমকে সমর্থন করে গেছেন। আর আজকের সামুতে এই যে আমরা একটা লেখালেখির সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি, তার জন্যেও তাদের অবদান অপরিসীম। এ-টিমের জন্ম হয়েছিলো ১৯ মে ২০০৭। আমি ব্লগে আসার পরে এ-টিমকে সেভাবে পাই নি। তবে পরবর্তীতে আমাদের গঠিত সিপিজি গ্রুপের সদস্যরা এ-টিমকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছিলো। এ-টিম নিয়ে আলোচনা শেষ করছি আইজুদ্দিনের লিজেন্ডারি একটা কমেন্ট দিয়ে;
"আমি গুন্ডা, আমি রবিনহুড। আমাকে ব্যান করা হয়েছে দেড় শত বার, ব্যান হবো হাজার বার, তবু আমি গুন্ডামি করবো। যেমন কুকুর তেমন মুগুর হওয়া উচিত। আপনারা সুশীল থাকেন, ব্লগের একই পাতায় শুকুরের বিষ্টার সাথে আপনাদের জ্ঞান গর্ভ আলোচনা, সাহিত্য, আমি সেই বিষ্টা পরিষ্কার করব। আপনি আমাকে ইরিটেটিং গুন্ডা বলুন কোন আপত্তি নেই, আমি বরং জানব যে শুকুরের বিষ্টার সাথে মানুষের খাদ্যের পার্থক্য আপনি ভুলে গেছেন, আর আপনাকে মনে করিয়ে দিয়ে আমি উপকার করছি। আপনার কৃতজ্ঞতা আমার দরকার নেই, বরং আপনাকে যে আমি শুকুরের বিষ্ঠা থেকে পরিষ্কার করেছি সেই আমার আত্মপ্রসাদ।"
অনেক তো ভারী ভারী কথা হলো। এবার আসুন কিছু বিনোদনের সন্ধান করি। সামুতে যখন আসি তখন ব্লগ ভরা ছিলো নানারকম বিচিত্র চরিত্র। বিনোদনের অভাব কখনই ছিলো না। এখন যার প্রবল অভাব অনুভব করি।
প্রথমেই শুরু করা যাক বিশিষ্ট হরর লেখক নাফে মোহাম্মদ এনামকে দিয়ে। ভূতের গল্প লেখার নাম করে ব্লগে বিচিত্র রকম কুখ্যাতি পেয়েছিলো সে। তার অধিকাংশ গল্পেই থাকতো একটা কমন লাইন "আতঙ্কে হাত-পা জমে গেলো"। রসিক ব্লগারগণ লুফে নিয়েছিলো এই লাইনটিকে। কোথাও কোন স্বাভাবিক অবস্থার ব্যত্যয় দেখলেই যথাযথ ইমো সহকারে বলতো "আতঙ্কে হাত পা..."! এই নাফে মোহাম্মদ এনাম তার লেখাকে এক্সপোজ করার জন্যে দুটি নারী ব্লগার সৃষ্টি করেছিলো। তাদের অভিনয় ছিলো হিন্দি সিরিয়ালের ফোর্থক্লাশ অভিনয়ের চেয়েও জঘন্য! একটু খেয়াল করলেই ধরতে পারতো যে কেউ। আলিফ দেওয়ান কাগু তার নাম দিয়েছিলো গাছভুদাই। ২০০৯ এর জানুয়ারির দিকে ব্লগাররা তাদের যাবতীয় প্রতিভা ব্যয় করেছিলো এই হররলেখকের পোস্টের প্যারোডি করে। আহা! সে বড়ই আনন্দমুখর সময় ছিলো!
আলেকজান্ডার ডেনড্রাইটের কথা কি এখনকার ব্লগাররা জানেন? তখন ব্লগে বড় ভালো একটা বাটন ছিলো। মাইনাস বাটন। কোন পোস্ট ভালো না লাগলে ব্লগাররা মাইনাস রেটিং দিতে পারতেন। আলেকজান্ডার ডেনড্রাইটের একটি পোস্ট (জাফর ইকবাল বাঙালি জাতিকে কি দিয়াছেন? ) মাইনাসের রেকর্ড করেছিলো। সম্ভবত হাজার খানেকের মত ছিলো মাইনাস। পোস্টটি সে ড্রাফটে নেয়ার ফলে এই সংখ্যা আর বৃদ্ধি করা যায় নি। নতুন সমস্ত ব্লগারকে পুরোনো ব্লগাররা পোস্টের লিংক দিয়ে বলতো সেখানে একটা মাইনাস দিয়ে আসতে। ঐতিহাসিক সেই পোস্ট সামুর পাতা থেকে হারিয়ে গিয়েছে, তবে বিচক্ষণ ব্লগারেরা এর ব্যাকআপ নিতে ভোলেন নি।
এখান থেকে পড়ে নিন সেই পোস্ট
বানান আফা ওরফে পিংকি- হঠাৎ করে একদিন কোত্থেকে যেন হাজির হলো অতি সুবোধ এক বালিকা। ব্লগারদের নামের মধ্যে সে নানারকম অসঙ্গতি খুঁজে পেলো। এবং সিদ্ধান্ত নিলো "খুঁতগ্রস্ত" সব নামের ব্যবচ্ছেদ করে সেই নাম পাল্টিয়ে কি রাখলে ভালো হবে তার নির্দেশনা দিবে। বড়ই মজার পোস্ট ছিলো সেটি। কিন্তু একদিন কী যেন হলো, সে সুবোধ সুশীল রূপ থেকে বেরিয়ে এসে বিনা কারণে ব্লগারদের গালাগালি করা শুরু করলো। ফলশ্রূতিতে তিনি "সুলেমানি ব্যান" (যে ব্যানের দ্বারা ব্লগারের সমস্ত লেখা মুছে ফেলা হয়) খান। এই ব্লগেরও ব্যাকআপ নিয়ে রাখা হয়েছে। পড়ে নিন এখান থেকে।
মহাকবি মেহদী - রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিদ্যায় পাশ করা মেহদী ছিলেন একজন কবি, মৌলিক কৌতুক রচয়িতা এবং গদ্যকার। যেদিন তার আবেগ উঠতো, তুমুলবেগে কবিতা প্রকাশ করে ব্লগের সবাইকে তটস্থ করে রাখতেন। তার আবেগের প্রকাশ এমনই উদ্ভট রকমের ছন্নছাড়া এবং বোকামির ধোঁয়াশায় পূর্ণ ছিলো, যে সে বোকা সাজা একজন ঝানু রিভার্স প্লেয়ার, নাকি সত্যিই মানসিকভাবে ট্রাবলড একজন লোক সেটা ব্লগের অমিমাংসিত একটি রহস্য হয়ে থাকবে চিরকাল। তার কিছু কবিতার নমুনা-
ধরুন মোবাইল
ধরুন না এই মোবাইল,
টিপে দিন কী করা লাগে যে?
খেলব গেম আমি যে।
এই চাচ্চু ধরুন না মোবাইল
বলব আমি এক কবিতা,
করে নিন রেকর্ডিং,
আমি পারি ওর চেয়েও।
ভাল চাচ্চু চাচ্চু।
ওরা সব ঘিরে আজ বসেছে,
মোবাইল আজ সব, সবে পেয়েছে
পেঁক পেঁক
পেঁক, পেঁক, পেঁক
আমরা সবে চলি,
সারি দিয়ে চলি।
পেঁক, পেঁক, পেঁক
চলি একে বেঁকে
চলি মোরা পুকুরে,
হেঁটে, হেঁটে, হেঁটে
পেঁক, পেঁক, পেঁক
খেলি আমরা সাঁতারে,
পেঁক, পেঁক, পেঁক
ডুব দিয়ে মাছ ধরি,
কেঁক, কেঁক, কেঁক
ছাড়ি আমরা সোনার ডিম।
পেঁক, পেঁক, পেঁক
তুলি ঝিনুক শামুক আর,
কেঁক, কেঁক, কেঁক
মৌলিক কৌতুক- ১.
দুই রুগী এক রিকশায় করে যাচ্ছে
একজন বলল - ঐ দেখ মেহেদী আসলে মনোচিকিৎসক না মানসিক রুগী
আর একজন বলল - কই ওখানে তো মেহেদীকে দেখছিনা
তার মানে তুই অলীক প্রত্যক্ষন করছিস।
২.
জানিস আমি মনে করি সে মানসিক রুগী
-কই আমাদের তো তা মনে হচ্ছেনা
-কিন্তু আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে।
ভালো মানুষের কদর এই ব্লগে নাই! তাই মডুরা অশ্লীলতার অভিযোগে এই অদম্য কাব্য প্রতিভাকে বান মারে!
তার ব্লগ ব্যান খাওয়ার পর নতুন ব্লগ
অনেকেই বলে এটা কৌশিকের নিক। তবে পিয়াল ভাইয়ের দাবী এটা রিয়্যাল নিক। তার একটা সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন নাকি টেলিফোনে।
এই সেই সাক্ষাৎকার
চিকনমিয়া এবং তার মাইনাস - মজার মানুষ ছিলেন এই চিকনমিয়া। তার কাজ ছিলো সব পোস্টে গিয়ে মাইনাস দিয়ে আসা। ভালো লাগলেও মাইনাস, না লাগলেও মাইনাস। অবশ্য তার এই মাইনাস ছিলো শুধুই মুখে মুখে। ভালো পোস্টে তিনি আদতে কখনও মাইনাস দিতেন না। অল্প সময়েই তিনি ব্লগারদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তার সহজ সরল ব্লগিং পলিসি, এবং আন্তরিকতার কারণে। বিশিষ্ট লেখক আহমেদ মোস্তফা কামাল তার একটি প্রবন্ধে ব্লগিংয়ে মিথস্ক্রিয়ার নমুনা হিসেবে চিকন মিয়ার মাইনাসকে উদ্ধৃত করেন। চিকনমিয়াকে নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা ছিলো এটা কার নিক হতে পারে। একসময় একটি নিক ম্যালফাংশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে টেকি ব্লগার সাইফুরের নিক এটি।
প্রিন্স(নাভানার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার)- ব্লগের আরেকটি লিজেন্ডারি চরিত্র। এই নিকের সৃষ্টিই হয়েছিলো বোধহয় সেধে সবার কাছ থেকে ভর্ৎসনা খেতে! নিজের সম্পর্কে বিশাল উচ্চ ধারণা ছিলো তার। তিনি নাভানায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন, ভালো স্যালারি পান, এ নিয়ে তার গর্বের সীমা ছিলো না। তার ব্লগে আগমন ছিলো একটি বিশেষ উদ্দেশ্যমণ্ডিত। তিনি বিয়ে করতে চান। আর পাত্রী যাচাই বাছাইয়ের জন্যে বেছে নিয়েছিলেন এই ব্লগকেই! মেয়েদের পোস্টে গিয়ে তিনি ভুলভাল ইংরেজিতে বলতেন, "+++++ Are you still married? i am unmarried". কোন কোন মেয়ে এতে হেসে গড়িয়ে পড়তো, আবার কেউ কেউ ক্ষেপে গিয়ে গালি দিতো, দুর্ব্যবহার করতো। কিন্তু মেয়েদের তরফ থেকে যতই দুর্ব্যবহার করা হোক না কেন, সে কমেন্ট করেই যেতো বেহায়ার মতো। অল্প দিনের মধ্যেই ব্লগে তার লুলামির জন্যে কুখ্যাত হয়ে ওঠে, আবার কেউ কেউ তাকে ব্যাপক পছন্দ করতো বিনোদনের ভাঁড়ার হিসেবে। তার একরোখা মনোভাব, সমস্ত প্রতিকুলতার বিরূদ্ধে একা বুক চিতিয়ে লড়ে যাওয়া কিছু শুভানুধ্যায়ীও সৃষ্টি করেছিলো। তার পরিণতিও হয়েছিলো নির্মম। মডুরা তাকেও সুলেমানি ব্যান মারে একটি পোস্টে গালাগালির জন্যে।
কে এই বেহায়া প্রিন্স? কীভাবে তার উৎপত্তি? কেন তার এমন পরিণতি? এসবকিছুরই জবাব লেখা আছে ব্লগের খোলা প্রান্তরে। নতুন ব্লগারদের কাছে হোমওয়ার্ক হিসেবে দেয়া হলো তা! তাকে নিয়ে দুটি পোস্ট- এক
দুই
জারীর এবং জাঝা শব্দের উৎপত্তি- ব্লগে আসার পর প্রায়ই দেখতাম পুরোনো ব্লগাররা কোন পোস্ট ভালো লাগলে বলছেন "আপনাকে উত্তম জাঝা প্রদান করা হলো। এই জাঝা শব্দটির মানে কী তাদেরকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেও জানতে পারি নি। অবশেষে জয় হলো অনুসন্ধিৎসু মনের। ব্লগার জারীর এর লেখা এই কবিতায় পেয়ে গেলাম শব্দটির মানে। কালের পরিক্রমায় এক সময়কার অতি জনপ্রিয় এই শব্দটি হারিয়ে যেতে বসেছে। আবার শুরু করলে কেমন হয়?
অনেক তো বিনোদিত হলেন। এবার ফিরে যাওয়া যাক ব্লগ রাজনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্যাচালে। একসময় সামু মানেই ছিলো ক্যাচাল। মডারেটর আর ব্লগারদের মধ্যে ছিলো যোজন যোজন দূরত্ব। সেই সময়টায় মডারেশন ছিলো দুর্বল এবং প্রশ্নসাপেক্ষ। ছিলো স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। কিছুদিন পরপরেই কাউকে ব্যান করা নিয়ে ক্যাচাল ঘোঁট পাকিয়ে উঠতো। ছিলো "রেসিডেন্ট ভাঁড়" নামে একটি হারিয়ে যাওয়া ব্লগার প্রকরণ। রেসিডেন্ট ভাঁড় বলা হতো কিছু প্রভাবশালী ব্লগারকে, হাজার অপরাধ করেও যাদের তেমন কোন শাস্তি হতো না। বড়জোর জেনারেল করা হতো। পুরো ব্যাপারটাই ছিলো ধোঁয়াশাচ্ছন্ন এক অন্ধকার কূহেলিকার মতো। ধারণা করা হতো কৌশিক, সবাক এবং ফিউশন ফাইভ ছিলো রেসিডেন্ট ভাঁড়! প্রথম দিকে আমিও এমন ভাবনার মুখাপেক্ষী হতাম। তাদেরকে শত্রু ভেবে বিভিন্ন সময় আক্রমণ করেছি, শিকার হয়েছি পাল্টা আক্রমণের। কখনও এড়িয়ে গেছি। তবে পরবর্তীতে তাদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যাই হোক, ফিরে যাওয়া যাক কিছু ক্যাচালকালীন সময়ে।
ব্লগার বাবুয়া কাণ্ড- বাবুয়া ছিলেন একজন ধনী ব্লগার। তার সার কারখানা ছিলো। নানারকম বিষয় নিয়ে ব্লগে লিখে থাকতেন। ভ্রমণ, বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ ইত্যাদি। তবে কিছু ব্লগার তার অহমপূর্ণ আচরণে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এক শ্রেণীর ব্লগারদের সাথে তার খিটমিট লেগেই ছিলো। ব্লগাররা মওকা খুঁজছিলেন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার। খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয় নি। ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলায় এক ঘটনার পর থেকে তাকে ব্যান করার দাবীতে উত্তাল হয়ে ওঠে ব্লগ। ঘটনা কী, বইমেলায় এক দেখা হওয়া এক নারীর সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত অশোভন উক্তি করেছিলেন। অবশ্য বলা হয়ে থাকে উক্ত নারীই নাকি তাকে প্রথমে বাজে কমেন্ট করেন। তবে এই দাবী ধোপে টেকেনি। ব্লগাররা একের পর এক প্রতিবাদী পোস্ট দিয়ে ব্যান হতে থাকলেন। তখন আরিফ জেবতিকের নেতৃত্বে এক বিশেষ রকম প্রতিবাদ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তারা ১০০% "নিরাপদ" পোস্ট দিতে থাকেন। যেমন, রাতে কী খেয়েছেন, কী কী তরকারি ছিলো, ঘুম থেকে উঠেছেন কখন, গোসল করেছেন কি না, মুরগীর খোপ ছেড়েছেন কি না ইত্যাদি। আর নিরাপদ কমেন্ট হিসেবে বেছে নেয়া হলো "উঁ"। এই কমেন্ট করলে ব্যান হবার কোন সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যে আন্দোলনরত ব্লগাররা বাবুয়ার ব্লগে গিয়ে থুথু ফেলার ছবি পোস্ট করতে থাকলেন। অবশেষে ব্যান করা হয় বাবুয়াকে। তবে এর জন্যে অনেক ব্লগার তার আইডি হারান। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলো এ-টিমের সদস্য হাসিবের ব্যান। বাবুয়াকে তো ব্যান করা হলো, কিন্তু হাসিবের বেলায় কী হবে? অনেক ব্লগার তাদের প্রোফাইলে "আনব্যান হাসিব" লেখা টাঙিয়ে রাখলেন। কিন্তু হাসিবের ব্যান আর তুলে নেয়া হলো না। বাবুয়া পরে আবার ফেরেন জুলভার্ন নিকে। এবার আর পূর্বে করা ভুলের পুনরাবৃত্তি করলেন না। তারপরেও সেই সময়ের প্রতিবাদী ব্লগারেরা সুযোগ পেয়ে তার অতীত নিয়ে খোঁচাতে ছাড়েন নি।
বাবুয়া কাণ্ডের সময়ে ব্লগে এক অচলাবস্থা দেখা দেয়। অনেকেই পোস্ট বিরতি শুরু করেন। সেই সময়ে তনুজার পুরোনো পোস্টে আড্ডা জমে উঠতে থাকে। সেটাই যেন ছিলো আমাদের ওপেন সিক্রেট বেজ! তনুজা এবং শূন্য আরণ্যকের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আমার। ধীরে ধীরে ব্লগের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তখন আমার হাতে অঢেল সময়। বেকার বসে আছি বাসায়। অপেক্ষা করে থাকতাম কখন তনুজা অথবা শূন্য আরণ্যক পোস্ট দিবে। আমাদের তিনজনের যে কোন একজন পোস্ট দিলেই বাকিরা মিলে শুরু করতাম টক-মিহি-মধু আলাপ-সালাপ। কিন্তু তখন কি আর জানতাম শূন্য আরণ্যক ওরফে ইমতিয়াজ মির্জার সাথে মতের মিল না হওয়ায় আমরা চিরশত্রুতে পরিনত হবো!
ভেবুর মোহভঙ্গ এবং আরো একটি ব্লগ আন্দোলন ততদিনে আমার ব্লগার ভেবে ভেবে বলির সাথে চমৎকার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ২০০৯ এর সেপ্টেম্বরের এক রোজার দিনে ছবির হাটে ব্লগারদের একটা গেট টুগেদার এবং ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। ভেবু (এই নামেই সে পরবর্তীতে পরিচিতি পায়) আমাকে খুব করে ধরলো ওখানে যেতেই হবে! শেষে ওর অনুরোধ রক্ষার্থে গেলাম সেখানে। অনেকের সাথেই দেখা হলো। একরামুল হক শামীম, বৃত্তবন্দি, পারভেজ ভাই, দুর্ভাষী আরো অনেকেই ছিলো সেখানে। ভেবুও চলে এলো যথাসময়ে। ওর সাথে এটাই প্রথম দেখা ছিলো আমার। নানা কথার ফাঁকে সে আমাকে খুব উচ্ছসিত হয়ে বললো,
-জানেন আজকে কে আসবে?
-কে?
-'অমুক'দা।
'অমুক'এর আসাতে এত এক্সাইটেড হবার কী ছিলো আমি খুঁজে পেলাম না। বরং উদ্বিগ্ন হলাম আরো। উক্ত ব্লগার বিশিষ্ট লুল হিসেবে ব্লগে পরিচিত। তিনি আসার পর আমাদের সাথে হাই/হ্যালো করে ভেবুর সাথে গপ্প করা শুরু করলেন। ছবি তুলতে লাগলেন একের পর এক। আমি আর বৃত্তবন্দি (রায়েহাত শুভ) দেখে হাসি। বললাম যে, "দাদা, আমাদেরও ছবি তোলেন!"। কিন্তু কে শোনে কার কথা! যাবার সময় ভেবুর ফোন নাম্বারও নিয়ে গেলেন।
এরপর থেকে শুরু হলো হ্যারাজমেন্ট। ভদ্রলোক সময়ে অসময়ে ভেবুকে ফোন করে, মেসেজ দিয়ে তিতিবিরক্ত করে তুললেন। সেই সাথে ব্লগে ফ্লার্ট করা তো ছিলোই! একদিন তার এক কমেন্ট পেয়ে ভেবুর ধৈর্য্যের সীমা ভেঙে গেলো। কমেন্টটি ছিলো এই,
" তোমার ছবিটা সুন্দর হৈছে। দেইখা দেইখা ভাবতেছি। ভাইবা ভাইবা কিছু বলতে পারতেছিনা। "
ভেবু প্রচণ্ড ক্ষেপে আমাকে ফোন করলো, এর কী জবাব দেয়া যায়। আলোচনা শেষে সে প্রতি মন্তব্যে লিখলো" চাচা, বয়স তো অনেক হইছে, লুলামি করা বাদ দেন। আল্লাবিল্লার নাম লন। বুইড়া ভাম কুনহানকার!" কমেন্টটা হুবহু মনে নেই। মুছে ফেলা হয়েছিলো। তো এই বিস্ফোরক প্রতিমন্তব্যের পর ব্লগে বিশাল একটা টেনশন শুরু হলো। লাজুক দেখতে হাসিখুশী, নির্বিরোধী ভেবু লাইমলাইটে চলে আসলো। অনেক বন্ধু পেলো, অনেকের শত্রুতাও অর্জন করলো। পরবর্তীতে ব্লগের একটি প্রতিবাদী চরিত্র হিসেবে তাকে দেখা গেছে।
সেই মন্তব্যের মাস দুয়েক পরের ঘটনা। ভেবুর দেয়া একটি নির্দোষ ফানপোস্টে কামাল হাওলাদার নামক একটি নিক থেকে খুবই বাজে একটা কমেন্ট করা হলো। অনেকেই রিপোর্ট করলো, কিন্তু মন্তব্যটি মুছতে অনেক দেরি করে ফেললো মডারেটররা। এর ফাঁকে শূন্য আরণ্যক এসে উক্ত নিকের পেছনের ব্যক্তিকে "অমুক" ব্লগার হিসেবে সন্দেহ করলো। আর যায় কোথা! এই কমেন্টের সূত্র ধরে ব্যান করা হলো তাকে। ব্যান করা হলো নির্ভয় নির্ঝরকে। অত্যন্ত ঘনিষ্ট এই দুই ব্লগারের ব্যানে ফুঁসে উঠলাম আমরা। নাওয়া-খাওয়া-চাকরি-বাকরি শিকেয় তুলে শামিল হলাম প্রতিবাদে। একের পর এক পোস্ট আসতে থাকলো। কোনোটা পক্ষে, কোনোটা বিপক্ষের। মডারেটর এবং কথিত "রেসিডেন্ট ভাড়"দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলো। ভেবুকে ব্যান করা হলো চিরতরে। শূন্য আরণ্যক লগইন ব্যান। লগআউট করছিলো না সে। জানে একবার লগআউট করলে আর ফেরত আসা যাবে না। অনলাইনে থাকা ব্লগারদের লিস্টে তার নামটা দেখে আর্দ্র হতো আমাদের মন। অবশেষে এক সপ্তাহ পর সে লগআউট করলো। সেসময় আমিও লগইন ব্যান হয়েছিলাম। তবে এই ব্যান বেশিদিন থাকে নি। চিরতরে নিক হারানো ভেবু ফিরে আসলো "মেঘ বলেছে যাবো যাবো" নিক নিয়ে। বৃত্তবন্দী ওরফে কাকভুষুণ্ডি এলো দ্রীঘাংচু নামে। রোহান এলো ফাগল নিক নিয়ে।
ওদিকে এই ডামাডোলের মধ্যে অন্য একটি ইস্যুতে ব্যান হলো বিষাক্ত মানব। পরবর্তীতে বিষাক্ত মানব ওরফে বিমা, মানুষ, কাঁকন, শওকত হোসেন মাসুম ভাই, নুশেরা আপা, মুক্ত বয়ান; সবাই মিলে যোগ দিলো নতুন ব্লগ "আমরা বন্ধু"তে। আর শূন্য আরণ্যক, ছন্নছাড়ার পেন্সিল, আকাশ অম্বর, সাদা কালো ধূসর মিলে চলে এলো "চতুর্মাত্রিক" ব্লগে।
জিশান শাহ ইকরাম এবং তার সিন্ডিকেট- ইনাকে আমি ভালো বলেই জানতাম। ব্লগ অন্তপ্রাণ মানুষ ছিলেন তিনি। তবে তার একটা জিনিস অনেকেই পছন্দ করতো না, তা হলো তিনি ব্লগে সবার সঙ্গে খাতির জমিয়ে চলতেন। অনলাইনে তো বটেই, অফলাইনেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয় এক ব্লগার। ব্লগের বাইরে অনেক ঘটনা ঘটতে শুরু হয় তার প্রভাবে। অভিযোগ ওঠে নারী ব্লগারদের হ্যারাজ করার। অনেকেই বিরক্ত হতে থাকে ব্লগে একে অপরের পিঠ চুলকানি, হাহা হিহি পিকনিক, ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে। একজন নারী ব্লগার অভিযোগ তোলেন তিনি রাতের বেলা ব্লগে কী করেন এ নিয়ে তার কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। অভিযোগ ওঠে আরো দুই নারী ব্লগারের ওপর অশ্লীল আক্রমণে তার সিন্ডিকেটের ভূমিকা নিয়ে। অবশেষে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন ব্লগার দুর্যোধন। সেই পোস্টটি স্টিকি হয়। শুরু হয় এক কদর্য কাদা ছোড়াছুড়ির লড়াই। পোস্টের কন্টেন্ট ওভারলুক করে ব্লগারেরা নানা উপ-অব-অধি কন্টেন্ট নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। কোথা থেকে কোথায় যে কমেন্ট যাচ্ছে, কে কোনদিক দিয়ে কোন নিক থেকে কার প্রতি ঝাল ঝারছেন সেটা নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে! অবশেষে জিশান শাহ ইকরামকে ব্যান করার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে ওঠে, এবং এখনও তা বজায় রয়েছে বলা যায়। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসের সেই পোস্টটি সকল ব্লগারের জন্যে অবশ্যপাঠ্য হয়ে আছে মূলত সেই কমেন্টগুলির কারণে।
সেই পোস্টের লিংক
ক্যাচাল পর্বের এখানেই সমাপ্তি টানছি। ব্লগ এখন যথেষ্ট স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে বলা যায়। এর জন্যে ব্লগার এবং মডারেটর উভয় পক্ষকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
সিপিজি গঠন, ব্লগে শীর্ষস্থান এবং পতন -এ-টিমের কার্যক্রম ততদিনে ফুরিয়ে গেছে। ছাগুবিরোধী ব্লগারগণ লড়াই চালিয়ে গেছেন নিজেদের মত করে। তবে তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিলো। এটি দূর করতে ২০১০ এর এক শীতের রাতে আমি, স্বপ্নকথক, রাজসোহান, কাঠের খাঁচা, ধ্রুবতারা, পাপতাড়ুয়া,, নাহোল এবং হোসেইন মিলে ঠিক করি আমরা একটি ছাগুবিরোধী গ্রুপ গড়ে তুলবো। পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয় যে হোসেইনের জামাতি কানেকশন আছে। বড় অবাক হয়েছিলাম জেনে। তাকে বহিষ্কার করা হয়। গোপন মিটিংয়ে দলের নাম নির্ধারিত হয় সিপিজি (ছাগু পোন্দানি গ্রুপ)। ছাগু পোস্ট পেলে সবাই মিলে তুলোধুনো করা ছাড়াও রিপোর্ট করতাম যত্ন সহকারে। রিপোর্টে কী লিখতে হবে এটা নিয়ে আমরা বেশ কিছু রিপোর্ট টেমপ্লেট তৈরি করেছিলাম। ফলও ভালো পাচ্ছিলাম। সাধারণ ছাগুদের ব্লগছাড়া করতে খুব একটু ধকল পোহাতে হয় নি। সমস্যা ছিলো কিছু চতুর ছাগবান্ধবদের নিয়ে। যেমন লালসালু, বৃষ্টি ভেজা সকাল, তায়েফ আহমেদ ইত্যাদি। এরা কিছু স্থুল ফানপোস্টের মাধ্যমে ব্লগে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো (তায়েফ আহমেদ বাদে,সে অন্য কেস)। তো এদের আচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত লিংক এবং স্ক্রিনশট সমন্বয়ে পোস্ট করতে থাকলাম আমরা। ব্লগাররা প্রথমে খুব কনফিউজড ছিলো, তবে পরে আমরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এটাই ছিলো সিপিজির মূল সাফল্য।
ততদিনে ব্লগে বেশ হিট হয়ে গেছি। পোস্ট করলেই ৩০০+ কমেন্ট, শতাধিক প্লাস, হাজারবার পঠিত...নিজেকে মনে হতো ভার্চুয়াল জগতের এক রাজা! মুখের কোন লাগাম ছিলো না। এরকম একদিন সিপিজি থেকে পোস্ট এলো কোন এক ছাগুর কীর্তি নিয়ে। সেই পোস্টে ছাগূ ব্লগার ফাহিম আহমেদের ছাগানুভূতি আহত হয়। তাকে গালাগালি করে আমি বলি, "তুই কিভাবে ব্লগে থাকবি সেটা দেখে নিবো"। এই কমেন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে নিলো ছাগবান্ধব স্পেলবাইন্ডার। সেটা নিয়ে পোস্ট দিলো। অনেকেই আমার ব্যান দাবী করলো সেই পোস্টে। এর কয়দিন আগে করেছিলাম আরেক অকাজ। গুরুভাই নামক এক ব্লগারকে মাত্রাছাড়া গালাগালি করি বিভিন্ন নিক থেকে। ফলশ্রূতিতে আমাকে কমেন্ট ব্যান করা হয়। প্রায় ছয় মাস ব্যান ছিলাম। এর মধ্যে আমি প্রতিজ্ঞা করি, মাল্টিনিক দিয়ে গালাগালি আর না। কিছু করতে হলে নিজ নিক থেকেই করবো। সেই প্রতিজ্ঞা এখনো বহাল রাখতে পেরেছি।
বন্ধু যখন শত্রু ২০০৯ এর দিকে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় ডিজিটাল দুষ্টু ছেলের সাথে। নির্দোষ ফানপোস্ট দিতো সে। আমিও তার সাথে নানারকম মজা করতাম। আমরা আড্ডা দিতাম চাপাবাজী ডট কম নামক একটি বাংলায় চ্যাটিং করার ওয়েব পোর্টালে। ধীরে ধীরে তার অন্য একটি চেহারা আবিষ্কৃত হতে থাকে। সে ছিলো কঠিনরকম আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী ব্লগার। তাতে সমস্যা নেই, সমস্যা ছিলো তার ছাগুঘেঁষা মনোবৃত্তি এবং ভাদা ট্যাগ দেওয়াতে। পরবর্তীতে তার শখানেক নিকের সাথে পরিচয় হয়েছে আমার। নিশাচর, লালবাতি, ব্লগ ধামাকা...আরো কত নিক! নিকের মায়া করতো না সে। ভালো চ্যানেল ছিলো, চাইলেই পেয়ে যেতো।তবে তার ব্লগিং পলিসি শুধু ব্লগে সীমাবদ্ধ ছিলো না। ২০১৩ সালে যখন আমার দেশ পত্রিকায় সামু ব্লগের নাস্তিকদের গালাগালির স্ক্রিনশট নিয়ে রিপোর্ট করা হয় এবং শাহবাগ আন্দোলনের জাগরণকে অন্যদিকে বাঁক নেয়ানোর চেষ্টা করা হয়, এর মূল হোতা ছিলো সেই বন্ধু ব্লগার। যার আসল নাম আহমেদ আরিফ।
সবশেষে কিছু স্বীকারোক্তি - গালাগালি করার কু অভ্যাসের কথা আগেই বলেছি। সেই সাথে নতুন নতুন ব্লগে এসে কিছু ইরিটেটিং কাজ করেছিলাম। সবাইকে নিজের পোস্টের লিংক দেয়া, নিজের পোস্টে অন্য নিক থেকে প্লাস দেয়া, ফেসবুকে বন্ধু ব্লগারদের প্লাস দিতে এবং প্রিয়তে নিতে বলা... বড়ই লজ্জাষ্কর সব ব্যাপার স্যাপার! তখন ভালোবাসাময় ন্যাকা ন্যাকা পোস্ট দেখলে মেজাজ চড়ে যেতো। কত ভালো ভালো পোস্টে অযথাই মাইনাস দিয়ে এসেছি নীরবে! ব্লগে লুলামি না করলেও মহিলা ব্লগারদের সাথে ফেসবুকে লুলামি করেছি।
সেই সময় পার করে এসে আজ মোটামুটি সম্মানজনক একটা পর্যায়ে এসেছি। ব্লগ নিয়ে সেই পাগলামী নেই এখন আর, তবে ভালোবাসারও কমতি নেই। এতদিন যখন কোথাও যাইনি, আর কোথাও যাবোো না এত সহজে। এই ব্লগ মিশে আছে আমার অনুভবে, চেতনায়, ভালোবাসায়।
সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা। শুভ হোক সবার ব্লগে পথ চলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫২