somewhere in... blog

ফিসফাস

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফিসফাস করো না মা। ভাইয়া ভয় পায়। এমন অবুঝ হলে কী করে চলবে বলতো? ভাইয়াকে ভয় দেখিয়ে তুমি কি মজা পাও? অনেক হয়েছে। এবার বন্ধ কর। ফিসফাস বন্ধ করে পিশপাশ বানাও। এই তো লক্ষী মা আমার। আজ সন্ধ্যায় আমরা সবাই পিশপাশ খাবো।

আজ সন্ধ্যায়
পিশপাশ বানাবে মা
দুধে ও মাখনে
নুনে ও পেঁয়াজে
মৃদুআঁচে সবজিকুচির
সুঘ্রাণ ছড়াবে ঘরময়

আত্মহত্যা করিসনা দাদাভাই!


ভাইয়া, গলার কাছ থেকে ছুরিটা নামাও। ফ্যানের ব্লেডে রশি লাগাতে যেয়োনা, পা হড়কে ব্যথা পাবে। আত্মহত্যার সকল সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলো। ড্রয়ারে স্লিপিং পিল রেখেছো নিশ্চয়ই গাদা গাদা? আমাকে দাও সব। এমন করলে কিন্তু মা পিশপাশ বানাবে না। তুমি কাকার দোকান থেকে কিসমিস আর জাফরান রঙ কিনে নিয়ে এসো। পোলাও হবে রাতে। হ্যাঁ, আমিই রাঁধবো। পিশপাশ শুধু মায়েরাই বানাতে পারে। আমি যখন মা হব, আমার ছেলের জন্যে পিশপাশ বানাবো। কি বললে? সব টাকা বাবা নিয়ে গেছে? আরে না বোকা! জানো না, "পৃথিবীতে খারাপ মানুষ আছে অনেক, কিন্তু কোন খারাপ বাবা নেই"? হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন। কোন নাটকে বলতো? হু, কোথাও কেউ নেই তে। সব টাকা বাবা নিয়ে যাবে কেন! আসলে বাবার কাছ থেকে সব টাকা নিয়ে গেছে শয়তানেরা। বাবা আর ঘরে ফেরে নি তো কি হয়েছে? একদিন নিশ্চয়ই ফিরবে। বাবা ফিরে আসবেন রঙিব বল, মিহিদানা আর কমিকস নিয়ে। নন্টে ফন্টে তোমার পছন্দ না? তোমার জন্যে ইয়া বড় একটা ভলিউম কিনে নিয়ে আসবে। আমাদের টাকা নেই বলে তোমাকে উদ্বিগ্ন হতে হবে না। কী না আমার বয়স, এই তোর তো বিয়ের বয়সই হয়নি রে! বাবা ফিরে এলে তোকে এই বয়সেই একটা টিয়াপাখির মত সবুজ মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেব। আমি খুব বড় বড় কথা বলি, না? মেয়েদের ম্যাচুইরিটি লেভেল একটু দ্রুতই ডেভেলপড হয়, আমি স্কুলের লাইব্রেরিতে অবহেলায় পড়ে থাকা রিডার্স ডাইজেস্টে পড়েছি। রিডার্স ডাইজেস্টে অনেক সুন্দর ছবি আর লেখা থাকে জানিস ভাইয়া! কৌতুকও থাকে। তোর পাঠানো কৌতুক ছাপা হলে ১০০ ডলার দেবে। পাঠাবি নাকি? ভাইয়া, প্লিজ থামো। এমন করো না। হাত কেটো না। দাও আমার কাছে ছুরিটা, দাও! মা কিন্তু পিশপাশ বানাবে না। মা তোমাকে ভয় পাবে। জানো না আমাদের মা'টা কত ভীতু? জানো না বাবা চলে যাবার পর থেকে মা একটু পর পর আঁতকে ওঠে কেবল? কী বললে? মা পিশপাশ বানানো ভুলে গেছে? ভুল বললে ভাইয়া। ঝড়ের মত কিছু মিথ্যে হাওয়া আর বিজলীর চমকে স্বাদলবণের কৌটোটা উড়ে গেলেও, পুড়ে গেলেও এখনও তার সৌরভ রয়ে গেছে। আমাদের ভীতু মা এক আশ্চর্য জাদুতে ওখান থেকেই পিশপাশ বানানোর উপকরণ বের করে নিতে পারেন। পাশের ঘর থেকে এত ফিসফাস কেন? মা মন্ত্র পড়ছে। পিশপাশ বানাতে অবশ্য মন্ত্র লাগে না। ধরে নাও এটা মায়ের একটা অদ্ভুত খেয়াল। আমাদের মামনি তো একটু অদ্ভুতই তাই না?

ঘুমাও ভাইয়া। বড্ড ক্লান্ত তুমি। নাওয়া খাওয়ার ঠিক নেই, কিন্তু ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে ঘুমের ওষুধ খাও, অভিমান কর, রেগে দাপিয়ে বেড়াও ঘরময়। সইবে কী করে তোমার এমন হ্যাংলা শরীর? ঘুমাও। কতদিন পর ঘুমের ওষুধ ছাড়া একটা আরামদায়ক ক্লান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছো তুমি! জেগে উঠলে দেখবে কত সতেজ লাগবে! আর ততক্ষণে মা'র পিশপাশ বানানোও শেষ হয়ে যাবে।

মা, ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। হ্যাঁ, খুব হুটোপুটি করছিলো। তোমার জন্যে, হ্যাঁ তোমাকে দেখে ভয় পায় সে। সন্ধ্যে নামলে ফিসফাস, সন্ধ্যে নামলে অন্ধসন্ধি, সন্ধ্যে নামলে গরলআঁধার, সন্ধ্যে নামলে দূর্বিপাক। এই সন্ধ্যে সময়টাই আমাদের জন্যে খারাপ। বাবা চলে গিয়েছিলো এমনই এক সন্ধ্যেয়। এক হাত দিয়ে হাফপ্যান্ট টেনে ধরা সিকনি টানা বোকা বোকা চেহারার পাশের বাড়ির ছেলেটা দলবল নিয়ে এসে পাওনাদারদের তরফ থেকে খিস্তি, ভাংচুর আর অপমান করে গিয়েছিলো এই সন্ধ্যেবেলাতেই। সন্ধ্যের ধন্দে পড়ে ঐ যে তুমি পাশের ঘরে লুকোলে, প্রার্থনা করতে থাকলে ফিসফাস করে, ভুলেই গেলে পিশপাশ বানানোর কথা। পিশপাশ কত ভালো একটা খাবার। ভাইয়ার অম্বলের সমস্যা, কিছু খেতে পায়না ঠিকমত, অম্লীয় তরল উগড়ে দেয়। পিশপাশ খেলে ও ভালো থাকতো। ভালো থাকতো অনেকদিন। তুমি পিশপাশ বানাও না বলে আমাদের বারান্দার গোলাপের স্মৃতি বহন করে চলা টবটায় স্মৃতিস্মর কুঁড়িরা বেঁচে ওঠেনা। কী বললে? ভাইয়া ছাইপাশ খেয়ে লিভারের বারোটা বাজিয়েছে বলে বমি করত? আর তাই তুমি পিশপাশ বানাবে না? কচু জানো তুমি! এইতো সেদিন ল্যাব এইড থেকে এসজিপিটি টেস্টের রেজাল্ট আনলাম। ভাইয়াকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভালোমত বললে ও এখনো কথা শোনে, বুঝেছ? লিমিটের চেয়ে সামান্য বেশি আছে, তবে ওটা তেমন কিছু না। টাকা কোথায় পেলাম? খুব বেশি টাকা তো লাগে নি, ল্যাব এইডে আমার এক পরিচিত বড়ভাই আছেন, ডাক্তার।

চুপ! একদম বাজে কথা বলবে না। একটাও বাজে কথা বলবে না। চিৎকার করো না। বলছি চিৎকার করো না! ভাইয়ার ঘুম ভেঙে যাবে। ভাইয়াকে আমি বলেছি ঘুম ভাঙলে পিশপাশ পাবে। সারা ঘর লেবুপাতা আর কাটারিভোগের সুবাসে মৌ মৌ করবে। ও উঠে এসব কিছু না পেলে আবার হইচই শুরু করে দেবে। তোমার পিশপাশ বানাতে হবে না মা। তুমি ঘুমাও। তুমি ঘুমাও। ঘুমাও তুমি!

*
ওরা ঘুমোয়। ওদের নিঃশ্বাস ফিসফাস করে। নিঃশ্বাসের শব্দ এমন হয় কেন? যেন ঘুমের মধ্যে না বলা কত কথা বলতে চায়। আমার লাজুক ভাইয়া আর ভীতু মা ঘুমের মধ্যে বড্ড বাচাল হয়ে যায়। তাদের ফিসফাসের শব্দে আঁধার পর্যন্ত সচকিত হয়। আমাদের ঘরে আঁধারের ছানাপোনারা স্থায়ী বসত গড়েছে। বেলাজ আত্মীয়ের মত গেড়ে বসেছে, আতিথ্য নিচ্ছে, কিন্তু যাবার কোন নাম নেই। জমাট বাঁধা অন্ধকারের মধ্যে আমি হঠাৎ আঁধারবাতি থেকে উৎসারিত আলোর রঙধনু দেখতে পাই খুব আবছা। খুব আবছাভাবে। তারা চলে যায় নিমিষেই। এই ফিসফাসের রাজ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্কের কীটপটঙ্গেরা মোহগ্রস্থের মত, মাতালের মত ছুটে আসে। কিছু আলোকসংবেদী পোকা থাকে না, টিউবলাইটের ওপর, বা টেবিলল্যাম্পটাকে ছেকে ধরে, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কূপি বা মোমবাতির আগুনে নিজেদের সঁপে দেয়, তেমন। তেমনভাবে অন্ধকারের কীটেরা তাদের রোঁয়াজর্জর পা আর পাখনা নিয়ে সদর্পে ঘুরে বেড়ায় এখানে। আমি তারাদের কাছে আলো ধার চাইলে মেঘেদের দল অপনাক্ষত্রিক সমাবেশে সমবেত হয়। আমি জোনাকের কাছে আলো ধার চাইলে ঝিলের ধার থেকে শুকনো পাতা মরামাছের পিঠে চড়ে এসে আবরণ তৈরি করে। আমি স্মৃতির কাছ থেকে আলো ধার চাইলে তারা অবাধ্য সন্তানের মত ছুটে বেড়ায় ঘরময়, সবশেষে ধরা দেয় ঠিকই, আলোর আল তৈরি করে স্মৃতির প্রাসাদে যাবার পথ সুগম করে দেয়। স্মৃতির প্রাসাদে কী আর এমনি এমনি যাওয়া যায়? এমন বেখাপ্পা পোষাকে? অন্তত মাথায় একটা গোলাপমুকুট তো পরতে হবে! আমি খুঁজতে গিয়ে পথ হারাই। পথ হারাই বারেবার। স্মৃতির সাম্রাজ্যের পতন দেখি, ধ্বসে পড়ে সবকিছু। এক দমকা হাওয়ায় উড়ে যায় বাবার সদ্য আয়রন করা ভালো জামাটা, ভাইয়ার উপহার পাওয়া অর্নবের পোস্টার, মামনির শখ করে আড়ঙ থেকে কেনা নস্টালজিক ডিজাইনের সিন্দুক। দৃশ্যপট থেকে বাবা বিদায় নেন, হয়তোবা চিরদিনের জন্যেই। জানি না বাবা তুমি স্বার্থপর, নাকি ভীতু, নাকি কাপুরুষ। জানিনা তুমি জীবিত না মৃত। মৃতদের সাথে কথা বলতে আমার কোন সমস্যা নেই। মৃতবৎদের সাথে কথা বলা বরং পীড়াদায়ক। এ্যাংজাইটিক ডিজঅর্ডারে ভোগা মানুষদের সাথে সখ্য করতে দেখেছি আকাশ থেকে খসে পড়া জমিন থেকে ঠেলে বের হওয়া বিভ্রমিকাদের। তারা সন্ধ্যে হলে আতঙ্কে কাঁপে, পুরোনো আতরের শিশি থেকে সবজির বুনন দেয়া ঘি-পরোটার গন্ধ নিতে টানে নিঃশ্বাস। তাদের শ্বাসকষ্ট হয়। ইনহেলার কেনার টাকা ফুরিয়ে গেছে। আমার অবশ্য একজন বড়ভাই আছেন পরিচিত। ডাক্তার। ল্যাব এইডে বসেন।

মা চুপ কর, চুপ কর! নিজের মেয়ের সম্পর্কে এমন বাজে কথা বলতে বাঁধেনা তোমার? সংসারটা কীভাবে চলছে একটুও কী ভাবো? সন্ধ্যে হলে ভ্যাম্পায়ারদের মত ভয় তোমার আঁচল থেকে বের হয়। কিসের এত ভয় তোমার মা? আমি আছি না? আমি আছি, ভাইয়া আছে, বাবা আসবে। তুমি পিশপাশ বানাওগে যাও।

সবজিকুচি, মিহিদানা, গোলাপজল আর দুধের ছানা/ কী দিয়ে মা/ বানাও তুমি এমন স্বাদের ঝাঁজপরোটা/ সান্নিধ্য আর সান্ধ্যসুবাস/ হলদে বিকেল, রঙিন উচ্ছাস/ তোমার গোপন এই রেসিপি/ জানতে আমি চাইবো না মা/ জানিই তো খুব/ সব মা জানে/আমিও তো জেনেই যাবো/ যখন আমার বাবু হবে/ যখন তুমি নানু হবে/যখন ভাইয়া মামা হবে/আর হবে না সন্ধ্যেবেলার ভয় ফিসফাস/ রাত্রি হলে প্রদীপ জ্বেলে/ আমরা খাবো সুগন্ধী পিশপাশ!

তুমি ভুলে গেছ? তুমি কেমনে ভুললে? তুমি ভুলো না মা! ভাইয়া আজ আত্মহত্যা করবে বলে বসে আছে সন্ধ্যে থেকে। অনেক সন্ধ্যে ওর হাতের মুঠো, হৃৎপিন্ডের অলিন্দ, ক্ষয়ে যাওয়া দেহ উপকরণ থেকে ক্রল করে বেরিয়ে আসছে। ওরা ঘিরে ধরছে তাকে। কোন ভরসায় তাকে আত্মহত্যা করতে মানা করব বল? হ্যাঁ, ও আজকেই মারা যাবে আমি জানি। আমি তোমাদের চোখের ভাষা বুঝতে পাই মা। ভাইয়া আত্মহত্যার সমস্ত উপকরণ অনেক আগে থেকেই যোগাড় করেছে, পিশপাশ বানাও মা, মৃদু আঁচে, সুবাসে, তোমার গোপন রেসিপি দিয়ে।

ভাইয়া, শান্ত হও! এতদিন পর ঘুমুলে, আরেকটু ঘুমিয়ে নিলে কী হত? বিশ্বাস কর, মা পিশপাশ বানাবে। বিশ্বাস কর আমায়! তোমার ক্ষিধে নেই! তুমি ভুলে গেছ পিশপাশের স্বাদ? ভুলে গেছ!

মা, তোমার আঁচলের ভেতর থেকে জাদুর বল বের কর। রঙীন। জাদুর শিশি। সুবাসিত। জাদুর ঘন্টা, টুংটাং! আমি রান্নাঘরে গিয়ে লাগিয়ে দেব। পশ্চিম দিক থেকে মৃদু হাওয়া বইছে। তুমি পুরোনো দিনের মত মৃদুলয়ে গান গাইতে গাইতে রাঁধবে। ভাইয়া তোমার পেছনে ঘুরঘুর করবে আর বকা খাবে।

ওঠো মা, ওঠো! তোমার ঠান্ডা হাতের রক্তবর্জিত ফ্যাকাশে ছোবল অনেক দেখেছি আর না!

থামো ভাইয়া থামো! চোখের পাঁপড়িতে মাকড়সাদের বসতবাড়ি করতে দিয়েছো কেন? ওরা তোমার চোখ খেয়ে ফেলবে। তোমার সুন্দর চোখ!

মা! ভাইয়া বলেছে পিশপাশের স্বাদ ভুলে গেলে বেঁচে থাকার আর কোন দরকার নেই। তুমি একবার ওঠো, আর একবার, আমাদের জন্যে, আচ্ছা থাক, দুজনের জন্যে বানাতে বড্ড পরিশ্রম হয়ে যাবে তোমার, শুধু ভাইয়ার জন্যেই বানাও। ভাইয়ার চোখের মনি সাদা হয়ে আসছে। চোখ উল্টে আসছে। আমার অজান্তেই ও অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলো। আমাকে লুকিয়ে।

ঠান্ডা! এত ঠান্ডা কেন তোমাদের দেহ? সারা ঘরে আঁশটে সোঁদাগন্ধ বুক থেকে দম কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ কোন ষড়যন্ত্রীরা এসেছে আজ ফিসফাস ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘর থেকে বারান্দা, বারান্দা থেকে রান্নাঘর, রান্নাঘর থেকে স্টোররুমে। আমি কোথাও যেয়ে তিষ্টোতে পারছি না। কোথা থেকে নিঃশ্বাস সঞ্চয় করে প্রবাহিত করব তোমাদের ফুসফুসে? কোথা থেকে উত্তাপ চুরি করে ওম দেব তোমাদের শরীরে? আমার ক্ষিধে পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার ক্ষিধে পাবে কে জানতো! তবে এ ক্ষিধে অন্যরকম। আমিষ কিংবা কোমল পানীয়, রুটিনমাফিক চাগাড় দিয়ে ওঠা ভালো খাবারের জন্যে না। এ ক্ষিধে কিসের তোমরা জানো। আমি জানি কেন ভাইয়া আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। কেন মা নিশ্চল শুয়ে আছে, শীতলতর হচ্ছে। কোথায় রেখেছ মা তোমার গোপন রেসিপি? আমাকে বল মা! আমি পারবো। বিশ্বাস কর, আমি একদিনের জন্যে হলেও তোমাদের মা হয়ে দুজনকেই পিশপাশ বানিয়ে খাওয়াতে পারবো। বলো না মা! বলবে না মা? একদিকে রক্ত আর একদিকে হিম, আমার গা আঁঠালো হয়ে আসে, আঁঠায় মৃত্যুগন্ধা বরফকুচি জমতে থাকে। আমি স্থবির হয়ে যাই। আমার আর কিছু করার নেই। আমার অপারগতাকে চরম অবজ্ঞা করে হেসে ওঠে মা আর ভাইয়া। ভাইয়া পিশপাশ বানানোর জন্যে আবদার করে আর মা ধমকে ওঠেন স্বভাবমত। একটু পর ভাইয়ার খলখল হাসি আর মায়ের মৃদু গুনগুন শব্দে গান গাওয়া আমাকে আশান্বিত করে তোলে ক্ষণিকের জন্যে।

আজ রাতে
পিশপাশ বানাবে মা
দুধে ও মাখনে
নুনে ও পেঁয়াজে
মৃদুআঁচে সবজিকুচির
সুঘ্রাণ ছড়াবে ঘরময়


ধীরে ধীরে সব শব্দ শবদেহতে পরিণত হয়। রেখে যায় ফিসফাস ফিসফাস ফিসফাস। রেখে যায় আমার শরীরে রক্ত আর হিমের আঁঠাল অসমস্বত্ত ভারী মিশ্রণ। আমি সংকুচিত হয়ে যাই। কুঁচকে যাই একটা রোল করা কাগজের মত। চারিদিকের ফিসফাস শব্দ প্রবল থেকে প্রবলতর হয়। আমি প্রাণপনে চেষ্টা করি কান ঢেকে রাখতে। হিমশাব্দিক আতঙ্কের কাঁচ গেঁথে যায় শিরদাঁড়াতে। ওঠার বৃথা চেষ্টা করি আমি।

চোখ বুঁজে আসার পূর্বমুহূর্তে কেউ এসে বলে যায় আমায়, পিশপাশ বানাবার রেসিপিটা আর কোনদিনই জানা হবে না আমার।


#গল্পের শুরুতে ব্যবহৃত "পিশপাশ বানাবে মা" কবিতাটি লিখেছেন নম্রতা। তার এই কবিতাটি পড়ার পরেই গল্পটি লেখার ইচ্ছে জাগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৪
৪৫৬ বার পঠিত
৮৮টি মন্তব্য ৮৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×