somewhere in... blog

ওয়ান্টেড

০২ রা জুন, ২০১১ সকাল ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বৃহস্পতিবার রাতে

বৃহস্পতিবার রাতে, তা সে যেকোন বৃহস্পতিবার হোকনা কেন, ২০০৯/১০/১১/১২/১৩ অথবা ১৪ সাল, আমি জানি এরকম হয়ে এসেছে এবং এরকমই হবে, আমার মধ্যে একটা আলগা ফূর্তির ভাব চলে আসে। মনে হয়, এইতো জীবন! উপভোগ কর। খাও, দাও, উন্মত্ত হও। প্রায়ান্ধকার কোন পাবে/বারে অথবা শহরের পুরোতন অংশের জনাকীর্ণ রেস্তোরায়, অথবা কোন ডিজে পার্টিতে। আজকেও বৃহস্পতিবার, কোথায় যাবো ভাবছিলাম। শেষতক সিদ্ধান্ত নিলাম, সারা সপ্তাহের ক্লান্তিকে স্রেফ একটা ভ্রান্তি বানানোর জন্যে মদ্যপানের জুড়ি নেই। সুতরাঙ চলো গ্যালাক্সি বারের আলো আঁধারিতে। সঙ্গী কেউ নেই। তাতে কী! ময়ূর রঙা পাজামা পড়লে গেঁয়ো বারটেন্ডার যুবককেও চুমু খেতে-না আমি সমকামী না, জড়িয়ে ধরে দুটো আবেগের কথা বলতে ইচ্ছে করবে, আশেপাশের হল্লারত কাস্টমারদের মনে হবে অনেকদিন পর পূনর্মিলনীতে আসা সাবেক বন্ধুর দল। যেতে হলে তাড়াতাড়ি করতে হবে। নতুন এক হ্যাপা, কে বা কারা যেন আমার ছবি দেয়ালে দেয়ালে টাঙিয়ে ওয়ান্টেড লিখে দিয়েছে। কত টাকা যেন পুরস্কারও দেবে বলেছে। এসবের কোন মানে হয়? বৃহস্পতিবারের মৌজমাস্তিটাও কি একটু শান্তিতে করতে দেবেনা ওরা? সপ্তাহান্তের এই আমোদের কোন তুলনা হয়? এইতো জীবন! আমি তৃষ্ণার্ত! আজকে কমপক্ষে ছয় পেগ পেটে না পড়লেই না।

(১)
আমাকে প্রথম এখানে নিয়ে এসেছিলো এক ছোটভাই। আমরা সেদিন হুইস্কি, ভদকা আর কেরুর ককটেল খেয়ে টালমাটাল হয়ে টিএসসির নতুন মাঠটায় উপুর হয়ে শুয়ে এরোপ্লেন চালিয়েছিলাম। সেদিন মুখ ফসকে ওকে অনেক গোপন কথা বলে ফেলেছিলাম। এজন্যে না যে, আমি মাতাল হয়ে গিয়েছিলাম, পেপসি আর বরফের সাথে মিশিয়ে ছয় পেগ খেয়ে আমার বরঙ পেচ্ছাপ চেপেছিলো। দুইবার পেচ্ছাপ করে আসার পরে যখন তলপেটের অস্বস্তিটা নেমে গেলো, তখন আমার মনে হল যে পয়সা উসুল করার জন্যে কিছুটা মাতলামি করা যায়।
-ছোডভাই!
-কন!
-তুমি প্রেম কয়ডা করছো জীবনে?
-আরে ভাই প্রেম ট্রেম কপালে নাই।
-Poor boy! At your age I dated with three different girls. Kissed them, touched them...
-আর কিছু করেননাই?


(২)
-আর কিছু লাগবো স্যার?
-না, তুমি ফুটো। আর টেলিভিশনে যে বালের হিন্দী নাচ দেখাইতাসে ঐটা পাল্টায় অন্যকিছু দাও।
-কিন্তু স্যার, ঐ টেবিলে যে ছয়জন দেখতাসেন বইছে তাগো চিনেন? তারা এইগুলা ভালা পায়।
-আইচ্ছা বুঝলাম। কানে ইয়ারফোন লাগাইতে হৈবো। তুমি ফুটোতো, ফুটো, ফুটো!
-ওকে স্যার!

I'm leaving on a jet plane, don't know when I'll be back again. Oh babe! I hate to go!
জন ডেনভার বুড়োটা নিজের প্লেনে ক্র্যাশ করে মারা গিয়ে এই গানটাকে আরো জনপ্রিয় করে দিয়েছে। অবশ্য এমনিতেই এটা অনেক হৃদয় ছোঁয়া গান।
I hate to wake you up, to say goodbye...

হ্যাঁ, গুডবাই বলতে আমার ভালো লাগেনা। কানে এঁটে থাকা এমপিথ্রি প্লেয়ারটার সাথে আমিও একমত হই। তারপরেও গুডবাই বলতে হয়েছে প্রেমিকা অথবা শয্যাসঙ্গিনীদের অথবা বেশ্যাদের। কাকে বলেছিলাম ঠিক মনে পড়ছেনা এই মুহূর্তে স্পেসিফিকলি, কাউকে হবে নিশ্চয়ই। ভাবনার সূতোগুলো কখন যে কোনটার সাথে প্যাঁচ খায়, এ বড় জ্বালা! বিদায় বলতেই মনে পড়ল প্রস্থান, আর প্রস্থান থেকে পলায়ন। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে কে বা কারা দেয়ালে আমার নামে পোস্টার টানায়

'ওয়ান্টেড! ডেড অর এলাইভ'

(৩)
আমি নিজেকে ভীষণভাবে জীবিত মনে করি। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার এবং বিশেষ করে 'বার' এ। স্বচ্ছ বরফগুলোর ওপর হালকা হলুদ আলো পড়ায় ওদের কেমন যেন রহস্যময় লাগে। আমি এক টুকরো তুলে নিয়ে আমার গেলাশে ফেলি টুপ করে। মনে হয় যেন আমিই ডুবে গেলাম...মনে হয়...মনে হয় যেন-অদক্ষ সাঁতারু আমি সুগভীর কোন জলরাজ্যে গিয়ে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে সাগরের অতল রহস্য আর অননুমেয় বিপদের সম্মুখীন হতে হতে খুঁজে ফিরি রঙচঙে জেলিফিশ, পালাই হাঙ্গরের শুভ্র দন্তাস্ত্র থেকে।

-হা হা হা!
-কী হল এমন করে হাসছো কেন বত্রিশটা দাঁত দেখিয়ে? খুব অন্যায্য কিছু কী বলেছি?
-হা হা হা!
-প্রশ্নের জবাব দাওনা কেন? বল!
-হা হা হা!
-আমার আর কী করার ছিলো?
-হা হা হা!

নাহ খুব বিচ্ছিরীভাবে হাঙ্গর বা বরফ বা মেয়েমানুষ যা হোক, কিছু একটা হাসছে, বরফের টুকরোটা গলে গেছে এতক্ষণে। আমি পান করি। চিয়ার্স ফর লাইফ! টোস্ট টু মাই প্রেজেন্ট প্লিজেন্ট কন্ডিশন!

জীবিত অথবা মৃত, কে চায় আমাকে? হুহ, মৃত্যু এবং সেই শত্রু 'কেউ'কে পরোয়া করিনা। জীবিত আছি, ফুর্তি করছি, এটাই বড় কথা। দিস্ ইজ থার্সডে নাইট! কোথাকার কোন গ্রেপ্তারী পরোয়ানা, চোখের সামনে পেলে এখনি ছিড়ে ফেলতাম!

(৪)
সেদিন বেশ্যালয়ে নতুন আসা বিদেশী পটু গণিকা অতি উত্তেজিত হয়ে আমার শার্ট ছিড়ে ফেলেছিলো। শেষে আমার বলতে ইচ্ছে করছিলো, "তোমাকে আমি কী টাকা দিবো, তুমি আমি দুজনই সমান পরিতৃপ্ত, কাটাকাটি!"
এসব গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী কথা দরকারের সময় বলা হয়ে ওঠেনা। তাকে ঠিকই গুনে গুনে কচকচে কয়েকটা নোট দিতে হয়েছিলো। আহা, আনন্দময় সময়! সুন্দর জীবন। সুখী জীবন। হাহা এসব নামে মনে হয় লুতফর রহমান নামক এক শূচিবায়ূগ্রস্থ লোক বই লিখেছিলো। তাকে পেলে সোজা ধরে নিয়ে আসতাম শুঁড়িখানায়, অথবা ড্যান্সক্লাবে অথবা পতিতালয়ে, বলতাম, "দোস্ত, এই দেকখো! এটাই হল জীবন"। অবশ্য তার নৈতিক আবহাওয়াতে গোলযোগ তৈরী হতে পারতো এতে, সেই আমার নামে ওয়ারেন্টি ছাপিয়েছে নাকি? ছোটবেলায় তার গোটাকতক বই পড়েছিলাম, অনেক বড় এবং মূর্খবেলা পর্যন্ত তা মানতেও চেষ্টা করেছিলাম, ভাবতেই হাসি পায়!

(৫)
হাহাহা! হাহাহা! হোহোহো! খিক! উফ! হাসতে হাসতে গলায় আটকে যাবে দম! গ্যালাক্সি বার এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে আকাঙ্খিত স্থান। চারিপাশে আমার দোস্তরা। "হ্যাল্লো থেবরামুখো!", চাইলেই দিয়ে দেবে সিগারেট জ্বালানোর জন্যে দিয়াশলাই। মাই বাডিজ। মাই গুড নিউ বাডিজ। এতসব বন্ধু থাকতে আমাকে ধরতে ওয়ারেন্টি নিয়ে আসবে কোন শালা? এই বন্ধুত্বময় সম্মেলনে আবছা লাল-হলদে আলোয় আমি সুখী জীবনের শব্দাবলি পড়তে পাই দেয়ালের ব্ল্যাকবোর্ডে। বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। ইচ্ছেমত পান কর, আর...

(৬)
-হ্যাললললো?
-আপনের কথামত সব ঠিকঠাক কৈরা রাখসি।
-এর আগেরবারের মত ঝামেলা হবে নাতো?
-আরে এইটা এক্কেরে যেমনে খুশী তেমন করবেন।
-ব্লো জব? ডগি? এভরিথিং?
-আরে কৈলাম কি, যেমনে চান তেমন!

ইয়েহ! ফোন রেখে উল্লাসে চিৎকার করে উঠি। বেরুতে হবে। একটা জ্বলন্ত সন্ধ্যা যেন সিগারেটের ছাই এর মত উড়ে গেল! আমার আরো আগুন চাই আরো! আরো উড়তে হবে। অবগাহন করতে হবে, মসৃন জঙ্ঘার নারীরা আমার জন্যে গোলাপ ফুল আর কনডম নিয়ে অপেক্ষা করে আছে। আমি কী সে নেমন্তন্ন ফিরিয়ে দিতে পারি? আমার জীবনকে সুন্দর করার জন্যে এত উপকরণ, সবার এত উপযাজকতা দেখে তীব্র আনন্দ হয়। বারটেন্ডারকে টিপস দিয়ে বেরুবো তখনই কে যেন আমার কাঁধে হাত রেখে খুব শীতল কন্ঠে বলে ওঠে,
"থামো! কোন আনন্দনিকেতনে যাওয়া হবেনা। এটা কোর্ট কাচারির ব্যাপার। চল!"
শালার এটা কোন কথা হল! আমার বৃহস্পতিবারের আনন্দ নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে কে? তবে আমার অপরিচিত নতুন বন্ধুরা, বারমেইটরা নিশ্চয়ই এই অন্যায়ের কোন প্রতিকার করবে। রেগেমেগে কেউ বোতল ভেঙে উটকো লোকটার গলায়ও ঢুকিয়ে দিতে পারে! আমি আয়েশ করে সিগারেটে একটা টান দেই।

বৃহস্পতিবার রাতে

বৃহস্পতিবারের সাথে কী বিষণ্ণতার কোন সংযোগ আছে? দুটোরই শুরু ব দিয়ে। অবশ্য একজন মৃত মানুষের কি এসে যায় ব দিয়ে শুরু শব্দগুলোর আপেক্ষিক বিষাদোলচনা করতে? নিজেকে মৃতই মনে হয় আজকাল। বিশেষ করে বৃহস্পতিবারে। সপ্তাহের শেষদিনে আলোয় সাজে শহর নিজেকে মনে হয় সেই আলোর কঙ্কাল। দ্রুতগতিতে ছুটে যায় যানবহন, মনে হয় কোন একটার নিচে লাফ দিয়ে পড়ি। কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই। যদি কবরস্থানগুলোতে আবাসনের ব্যবস্থা থাকতো, ঠিকই সেঁধিয়ে যেতাম কোন একটায়। সপ্তাহান্তে কাজ শেষে আগামী দুটো দিনের ছুটির কথা ভেবে মানুষের মন প্রফুল্ল থাকে এদিন, কিন্তু আমার ভেতর বিষাদ বাসা বাঁধে, সবকিছু বিস্বাদ লাগে। নাহ, আমি ওয়ার্কএ্যাহোলিক না, আমার শুধু কোথাও যাবার একটা যায়গা থাকতো যদি? কোথায় যাবো? বন্ধুবান্ধব,আত্মীয়-স্বজনের বাসায়? কেউ নেই সেরকম। যেতে চাইলে অনেক যায়গাতেই যাওয়া যায়, কিন্তু কোত্থাও স্বস্তি পাইনা আমি। কী একটা যেন হারিয়ে ফেলেছি। বিষণ্ণ রাজপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল সেই পোস্টারটা, কদিন ধরেই দেখছি। "ওয়ান্টেড, জীবিত অথবা মৃত"। আমার ছবি দেয়া সেখানে। কী এসে যায়! ধরুক, নিয়ে যাক, গলা কেটে ফেলুক। অন্তত চিৎকার তো করতে পারবো তখন! আমার খুব চিৎকার করতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে চিৎকারে ঘুমন্ত অথবা মৃত জীবনটাকে জাগিয়ে তুলি। কিন্তু কেউ যেন মুখে ঠুলি এঁটে দিয়েছে। কাউকে বলতে পারিনা, নক্ষত্ররাজ্যে পরিভ্রমণের অবাস্তব পরিকল্পনা, অথবা শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে মৃদু রোদে শুয়ে থাকতে ঘন্টার পর ঘন্টা। কোথায় যাবো আমি আনন্দের জন্যে? মদ, মেয়েমানুষ, ড্যান্সক্লাব সবই এখন একঘেয়ে লাগে। মনের গভীরে লুকোনো ইচ্ছের চারাগাছের বৃক্ষ হওয়া হবেনা কোনদিন, আমি জানি। ফিরে পাবোনা পুরোনো সেই অনুভূতিগুলো।
I miss the old me!

কোথাও যাব বা কোথাও যাবনা এই দোনোমোনার ভেতরে কখন যেন গ্যালাক্সি বারে এসে বসলাম টেরই পাইনি। খুব ভালো সিদ্ধান্ত হল কি এটা? জানিনা। কিছুই এসে যায়না। কিচ্ছুতে কিচ্ছু এসে যায়না।
-ছয় পেগ হুইস্কি দাও
বারটেন্ডারকে হুকুম দিয়ে আমি একটা সিগারেট ধরাই। মনে পড়ে, প্রথম এখানে এসেছিলাম এক ছোটভাইয়ের সাথে। নিছক এ্যাডভেঞ্চারের জন্যে। সারাদিন কী উত্তেজনা আমার! পরে খেয়ে টেয়ে ওকে অনেক গোপন কথা বলে ফেলেছিলাম টিএসসির মাঠে, অন্ধকারে। কী অনুভূতিময় দিন ছিলো সেগুলো! এখন কিছু নেই, কিচ্ছু নেই। অনুভূতির মৃত্যু হলে আর বেঁচে থেকে লাভ কী? মসৃণ জঙ্ঘার নারীরা গোলাপ হাতে করে উরু দেখিয়ে আমার কাছে এলে আমি নির্বিকারভাবে প্রত্যাখ্যান করব। এরচেয়ে কাজল চোখের কোন ভীতু মেয়ে যদি আমার হাতটা আঁকড়ে ধরত একবার? আর একবার! আপাতত এটা হলেও আমি সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাই। আমার খুব আকুলতা জাগে সবুজ পারের শাড়ি পরা কোন মেয়ের কোলে মাথা রেখে তার শ্যামল নয়নে তাকাতে। খুব খুব! আর এজন্যেই রাস্তায় টাঙানো সেই পোস্টারটা, যেখানে আমাকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে বলা হয়েছে, সেটা ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আমি এত তাড়াতাড়ি ধরা পড়তে চাইনা। নাহ মিথ্যে সান্তনা দিচ্ছি নিজেকে। কাজল চোখের মায়া আর সবুজ পারের স্নেহ কোনটাতেই কিছু যায় আসেনা আমার, ভালো করেই জানি। হুইস্কি শেষ হয়ে গেছে। আমার মত। হাহা! উঠতে হবে। কিন্তু ঠিক তখনই, কে যেন আমার কাঁধে হাত রেখে খুব শীতল কন্ঠে বলে ওঠে,
"থামো! কোন বিষাদনিকেতনে যাওয়া হবেনা। এটা কোর্ট কাচারির ব্যাপার। চল!"
বেশ শক্তপোক্ত থাবা, ছাড়িয়ে নিতে পারবোনা বুঝে হাল ছেড়ে দেই। বারভর্তি লোকজন, হৈ হল্লা, কেউ কী পারেনা আমাকে এই দুস্কৃতিকারীর হাত থেকে বাঁচাতে? আমি জানি কেউ এগিয়ে আসবেনা। এটাই নিয়ম।

কোর্ট-কাচারির ব্যাপার

এ এক অন্যরকম আদালত। জুরি অথবা এ্যাডভোকেটরা নিদৃষ্ট পোষাক পরে নেই। সবাই কেমন যেন অনানুষ্ঠানিক বেশে আছে। বেশ লাগছে অবশ্য! মনে হচ্ছে পারিবারিক শালিস আর উচ্চ আদালতের মাঝামাঝি কিছু একটা। ওদের দুজনকে ধরে নিয়ে আসার সময় পুলিস অফিসার আমার সাহস এবং দক্ষতার বেশ প্রশংসা করলেন। হুহ! নিজেরা কিছু করবেনা, পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকবে আর আমি তন্নতন্ন করে খুঁজে ঘেমে হাঁপিয়ে এসে কিছু সস্তা বাহবা পাবো! বাহবা না, আমার চাই বিচার।

ওদের সবাইকে খুব ভালো করেই চেনা আছে আমার। খুব ভালো করে।

একটু পরেই আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। ওখানে ঐ দুজনের সব কুকীর্তির কথা আমি ফাঁস করে দেবো। জীবিত এবং মৃত দুই ব্যাটাই আচ্ছা নচ্ছার! আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে। ওরা আমাকে কাঠগড়ায় তুললো,
-কী অভিযোগ ওদের বিপক্ষে বর্ণনা করুন।
এখানে "যাহা বলিব সত্য বলিব" অথবা পবিত্র গ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করার আদিখ্যেতা নেই, অবশ্য থাকবেওনা,

ওদের সবাইকে খুব ভালো করেই চেনা আছে আমার। খুব ভালো করে।

-ওরা দুজন-আর আমি একসাথে ছিলাম। এক আত্মা, একই শরীর। তারপর ওরা আমাকে ছেড়ে গেছে। এদের একজন জীবনের প্রতি ভীষণভাবে মোহগ্রস্থ আরেকজন বিকর্ষিত। রিপালসড। ওরা যত দূরে সরে গেলে আমার নিজেকে মনে হয় আমাকে নিয়ে রশি টানাটানি হচ্ছে, ভীষণ কষ্ট হয়। আর খুব বেশি কাছে এলে একজনের হতাশা আর আরেকজনের অর্থহীন চাকচিক্যময় অগভীর জীবন আমাকে প্রভাবিত করে। আমি কুঁকড়ে যাই। আমার কাজে ব্যাঘাৎ ঘটে।
-হু! কী কাজ করেন আপনি?
-আমি রক্ত সরবরাহ করি, আমি স্পন্দিত হই।
-ও! এইবার বুঝলাম কিসের এত টান ওদের জন্যে! আপনিই কি পোস্টারগুলো ছাপিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ!
-ওতে একজনের কথা লেখা ছিলো, দুজন কেন এখন?
-জীবিত অথবা মৃত ধরতে চেয়েছিলাম। 'অথবা'টা শেষ পর্যন্ত 'এবং' হয়ে গেলো। ওদের একজন জীবিত, আরেকজন মৃতবৎ। কিন্তু যে জীবন তার যাপন করার কথা, সে তা করছেনা, আরেকজন এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে, যেন সন্নিকটের রেলস্টেশনে যাচ্ছে, এটা মোটেও কাম্য না। তাই ওদেরকে, অথবা ওকে জীবিত এবং মৃত দুই অবস্থায়ই ধরে ফেললাম!

"কোর্ট আজকের মত মুলতবী ঘোষণা করা হল"- প্রধান বিচারক ঘোষণা করলেন।
-কিন্তু আমি কেবল শুরু করেছিলাম, এত তাড়াতাড়ি...?
-আমাদের এখানকার কোনকিছু জাগতিক নিয়মের সাথে মিলবেনা, এটা ভালো করেই জানেন! আর ওদের সাথে একত্র হতে পেরেছেন কিছু সময়ের জন্যে, এটাই অনেক। আবার কবে এই সুযোগ পান দেখেন!

হু, জানি ওরা এরকমই।

ওদের সবাইকে খুব ভালো করেই চেনা আছে আমার। খুব ভালো করে।

ওয়ান্টেডদের মধ্যে 'জীবিত'জন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
-অনেক হয়েছে তামাশা। এবার বন্ধ করেন। বৃহস্পতিবার শেষ শুক্কুরবারও শেষ। এখানে সময়ের কী বিদিক দশা রে বাবা! কাজে যেতে হবে। বড়সড় একটা বিল পাবার কথা আজকে।
ওয়ান্টডদের মধ্যে 'মৃত'জন বসে বিড়বিড় করে বলল, "আবার ফিরে যেতে হবে একঘেয়ে অফিসের বস্তুবাদী ডেস্কে। আজকে একটা বড় বিল পাবার কথা। কী এসে যায় তাতে!"

ওয়ান্টেড

যাবার পথে রাস্তায় ওদেরকে অথবা ওকে ধরে ফেললাম!
-একটু দাঁড়াও।
-কেন, আবার কী হল? এত হাঙ্গামা করে আবার কথা বলতে আসেন, পাইছেনটা কী?
-কারো জন্যে দাঁড়াতে ইচ্ছে করেনা আমার।
যথাক্রমে দুজন বলল।
-বেশি কিছুনা ছোট্ট একটা অপারেশন মাত্র! এই চাকুটা দিয়ে দুজনের বুকের ভেতর একটা ফোঁকড় করে তাতে আমি ঢুকে যাব, দুইভাগ হয়ে। তাহলেই আবার আমরা একত্রিত হতে পারব আগের মত।
-এক আত্মা!
-হাহ!
-এক শরীর!
-(দীর্ঘশ্বাস)
-একবার চেষ্টা করে দেখোইনা!
-ঠ্যাকা পর্ছে!
-কী আর হবে!
-কোথায় যাও তোমরা অথবা তুমি?

হন্তদন্ত হয়ে দ্রুতপায়ে হেঁটেচলা ওদের পিছু নিতে গিয়ে তাল হারিয়ে ফেলি। ওরা হারিয়ে যাই নিমিষেই। যেন কখনও ছিলোনা এখানে। আবারও পোস্টার ছাপানোর কাজ শুরু করতে হবে আমাকে। খুব সহজ হত যদি ওরা আমাকে খুঁজে বেড়াতো, তাহলে আমরা আবার আগের মত একসাথে এক দেহে বসবাস করতে পারতাম। আমার তরফ থেকে ওদেরকে খুঁজে ফেরা কী কঠিন! কী যে কঠিন! বিশাল শূন্য মাঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করার মত। কেউ শোনেনা অভিশপ্ত আত্মার আর্তচিৎকার। কেউ না।



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১১ বিকাল ৪:৩৪
৪৫৬ বার পঠিত
৬৫টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×