somewhere in... blog

কুচি কুচি করে কাটা সময়(গল্প)

১৪ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা ঘরে দুইজন মানুষ ছিলো। আর কিছু আসবাবপত্র।আর বিশেষভাবে জীবন্ত একটা টেলিভিশন। আর ছিলো বিক্ষত সময়। একটা ঘরে দশ বছর দুইজন কাটিয়ে দিলে অনেকখানি সময় কাটে।সময়ের কায়াহীন দেহেও রক্ত ঝরে। রক্তাক্ত সময়ের আলিঙ্গনে আবদ্ধ দুই নর নারী। সাবরিনা আর ফারুক।সমাজ ওদেরকে দম্পতি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। দশ বছর আগের পুরোনো যুগল রঙিন ছবি ঝুলছে ওদের ঘরের ড্রয়িংরুমে।আর চলছে একটা রঙিন টেলিভিশন। আর সবকিছুই ফ্যাকাশে।সম্পর্কের রং ফ্যাকাশে।চুম্বনের কোন রং নেই এখন আর।

মানুষের কতরকম অদ্ভুৎ ইচ্ছে জাগে! সাবরিনার হঠাৎ ইচ্ছে করল নিজেকে সাজাতে।গালে একটু রুজ,ঠোঁটে লিপস্টিক।

ফারুক নিবিষ্টমনে টেলিভিশন দেখছে। অথবা টেলিভিশন তাকে দেখছে।অথবা কেউ কাউকে দেখছেনা। কে জানে!

ঘরের মধ্যে মানবিক নীরবতা,আর যন্ত্রের অবাধ বাচালতা।

সাবরিনা এখন সাজছে। নিরাসক্ত সঙ্গীকে হয়তোবা আবার জাগিয়ে তুলতে চায়। সাবরিনা গালে রুজ মাখে।সাবরিনা ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়।সে নতুন কেনা ঝলমলে পোষাক পড়ে।
নিজের মধ্যবয়সি ঘুনে ধরা অবয়বটাকে যথাসম্ভব কোমল করা সম্ভব হয়েছে মনে করলে সে ফারুকের সামনে দাঁড়ায়।
"আমাকে কেমন লাগছে বলত?" কিশোরীর চপলতা প্রকাশ করার চেষ্টা তার হাসিতে।
ফারুক নির্বিকার তাকিয়ে থাকে।
"এখন বিজ্ঞাপন বিরতি।বিরতির পরে আমরা আবার ফিরে আসব ভিউয়ার্স.."
টেলিভিশন নীরবতা ভাঙে ঘরের।সময় কেটে যায়। সময়ের বুক থেকে রক্ত ঝরে।সময় দুই হাতে চেপে ধরে দুজনের চোখ। কেউ আর কাউকে দেখতে পায়না।
"বিরতির পরে আমরা আবার ফিরে আসলাম অনুষ্ঠানে...."
সাবরিনা ফিরে যায়।ফারুক অনুষ্ঠান দেখে। নির্লিপ্ত মাছের চোখ হঠাৎ জ্বলে ওঠে উপস্থাপিকার স্ফিত বক্ষ দেখে।
সাবরিনা ফিরে যায়।অন্য ঘরে। অন্য সময়ের আশ্রয়ে।ধারালো ব্লেড তুলে নেয় হাতে। অথবা সময়ই তাকে তুলে দেয়।সে সময়কে কাটে।অথবা নিজেকেই। চুম্বনের স্মৃতিহীন ঠোঁটে আঁচর কাটে।রক্ত বের হয় এক চমৎকার প্রবাহে।
সাবরিনা আবার ফিরে আসে। রক্তাক্ত সাবরিনা। কিন্তু এবার তার হাসিটা আগের চেয়েও প্রানোচ্ছল। ফারুকের চোখে এবার বিস্ময় প্রকাশ পায়।অথবা ভালবাসা। অথবা সে কামাতুর হয়।
সাবরিনা তার হাতে তুলে দেয় সময়ের কঠিন করাত। সময় ভীষণভাবে কায়াপূর্ণ হয়ে ওঠে যেন এবার।
অবশেষে ওরা কাটতে থাকে নিজেদের। অথবা সময়কে।যে সময় হয়ে গিয়েছিলো বিবর্ণ আর ফ্যাকাশে সেই সময় এবার লাল রঙে রন্জিত হয়।
সময়ের ধারালো করাত দিয়ে ফারুক নিজের ঠোঁট কাটে।
তারপর তারা চুম্বন করে একে অপরকে।
তারা আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়।তারা আবার বিযুক্ত হয় পরস্পর থেকে।
তারা কর্তন করে তাদের হাত,বুক,নাভীমূল।
সময় কেটে যায়।অথবা তারাই সময়কে কাটে। কুচি কুচি করে..

#"কাটিং মোমেন্টস" নামের একটা শর্ট ফিল্মের ছায়া অবলম্বনে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৩৭
৪৫৬ বার পঠিত
১০৬টি মন্তব্য ১০৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এক্স লইয়া কি করিব

লিখেছেন আনু মোল্লাহ, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫১

যাচ্ছিলাম সেগুনবাগিচা। রিকশাওয়ালার সিট কভারটা খুব চমৎকার। হাতে সেলাইকরা কাঁথা মোড়ানো। সুন্দর নকশা-টকশা করা। নর্মালি এররকম দেখা যায় না। শৈল্পিক একটা ব্যাপার। শুধু সিটকভার দেইখাই তার-সাথে কোন দামাদামি না কইরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইলিশনামা~ ১

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


১৯৮৫ সালে ডক্টর মোকাম্মেল হোসাইন ‘ ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে যেই রিসার্চ পেপারটা( থিসিস – এম এস এর জন্য) জমা দিয়েছিলেন সেটা এখানে মিলবে;
[link|https://open.library.ubc.ca/cIRcle/collections/ubctheses/831/items/1.0096089|Spawning times and early life history of... ...বাকিটুকু পড়ুন

৯০% মুসলমানের এই দেশ? ভারতে কতগুলো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করা হয়েছে? গতকালও ভারতে মসজিদের পক্ষে থাকায় ৩ জন মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪২

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার | SAD

লিখেছেন আজব লিংকন, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩



শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি

লিখেছেন শান্তনু চৌধুরী শান্তু, ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮



আজ চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা নানান গুজব ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এড়াতে প্রকৃত ঘটনাটি নিরপেক্ষভাবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখছি।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×