মা তখন খুব অসু্স্হ্য। মনটা খুত খুত করছিল। আমি থাকি সিলেটে। সিলেট থেকে বগুড়ায় যাবার কোন বাস দিনের বেলায় ছাড়ে না। পরের দিন অবরোধ। রাতে কোন বাস ছাড়বে কিনা ঠিক নেই। মন খারাপ করে অফিসে বসে ছিলাম। তখন ৯.৩৫।
হঠাৎ মাথার ভেতরে পোকা কামড়াল। সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ভাঙ্গা চোড়া বাইক নিয়েই যাব। অফিসকে কোন রকম ম্যানেজ করে বের হলাম। তখন বেলা ঠিক ১১টা। সে সময় কি যে শান্তি লাগছিল বলে বোঝান যাবে না। বাড়ি যাচ্ছি, মা কে দেখতে পাব, মনের মধ্যে তখন এসব ঘুর পাক খাচ্ছে।
যা হোক অনেক কষ্টে ১১ ঘন্টা পরে সিলেট থেকে বগুড়ায় পৌঁছালাম। একটানা চালিয়ে হাত আর পা ঝিমঝিম করছিল। জোরে চালালে এত সময় লাগত না। কিন্তু উপায় ছিল না, আমার ওয়ালটন বাইকের অবস্থা বারটা হয়ে ছিল। ভাল মেকার পাচ্ছিলাম না, তাই ঠিক করা হয়নি।
যা হোক, গড়ে ৬০-৭০কিমি স্পিডে চালিয়েছি। মাঝে তিনবারে মোট দেড় ঘন্টা রেস্ট নিয়েছি। তারপরেও রাত ১০ টায় পৌছেছি। আমার ভাগ্য ভাল কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি।
আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ ইঞ্জিনের ভেতর অন্যরকম সাউন্ড হচ্ছিল। অচেনা রাস্তায় আটকে পড়লে সব শেষ। বাসায় ঢুকে মা কে দেখে সব ক্লান্তি মুছে গেল।
এখন হয়ত ভাবছেন, আমার লেখার হেডিং এর সাথে মিল কই? ঘটনা হল, পরের দিন আমি আবার বগুড়া থেকে দিনাজপুর যাই। সেখান থেকে আবার ব্যাক করি কাজ শেষ করে। রাতের বেলায় যাওয়াই আর কুয়াশা থাকায় খুব একটা জোরে চালাতে পারিনি। সময় অনেক বেশি লেগেছে। যেতেই প্রায় ৪ ঘন্টা।
তারপরেও অবাক করার কথা হল, আমার ওয়ালটনের ফিউশান ১২৫ সিসি বাইকটা আমাকে যে ভাবে সাপর্ট দিল, তা আমার ধারনাও ছিল না। একেতো ইঞ্জিন দিয়ে মোবেল পড়ত। এর আগে ওয়ালটন সার্ভিস সেন্টারে দিয়েছিলাম। এরা আসলে কোন কাজই করেনি। তার উপর ব্যাটারির লাইন সর্টসার্কিট করে ফেলেছিল।
ইঞ্জিনের প্রেসার ছিল না। এত সব প্রবলেম নিয়া আমি যে একটানা এত জার্নি করলাম, আমার নিজেরিই এখন অবাক লাগে।
যা হোক পরে হিসেব করে দেখলাম ১৮ঘন্টায় আমি মাত্র ৭৪০কিমি রান করেছি। এর ভেতর জামে আটকে থাকা + নাস্তা করা + টয়লেট সারা সবই আছে।
শেষে বগুড়ার আমার পরিচিত মেকারের কাছে সার্ভিসিং করালাম। এখন সব ফিট।
একটা ইনফরমেশান হল, ওয়ালটনের এখনকার ইঞ্জিনগুলো চায়না। যে কারনে অনেক ব্যাড রিপোর্ট শুনি। তবে প্রথম দিককার গুলো সম্ভবত কোরিয়ান ছিল। আমি একেবারে শুরুতেই কিনেছিলাম। আমি মানে আমার বাবা কিনেছিল। তাই হয়ত আমার অনেক অনেক রাফ ইউজের পরেও ভাল সার্ভিস দিচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১