ঘটনা-১ দেকপনা
ভাইয়ার এক বন্ধু টুটুল ভাই ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে। তো তাড়াতাড়ি বের হতে গিয়ে সে ঘড়ি পড়তে ভুলে গেছে। বাসে উঠে একটা সিট পেল টুটুল ভাই । তার পাশেই এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক বসেছিল। বাস কিছু দূর এগোনোর পর টুটুল ভাই পাশের লোকটাকে জিজ্ঞেস করল
-আঙ্কেল , কয়টা বাজে?
-লোকটা বিরক্তমুখে তাকাল, কিছু বলল না। আবার টুটুল ভাই জিজ্ঞেস করল
- আঙ্কেল কয়টা বাজে? এবার উত্তর এলো
- দেকপ না । টুটুল ভাই বুজলনা, কেন এই কথা বলল। আবার বলল
- আঙ্কেল দয়া করে একটু দেখেন না।
- রেগে লোকটা বলল বললামতো দেকপনা
-কেন দেখলে আপনার সমস্যা কি? আপনার ঘড়ি কি নষ্ট হয়ে যাবে?
এরপর লোকটা যা উত্তর দিল তাতে টুটুল ভাই একটু লজ্জিত এবং কিছুটা বিরক্ত হল।
-আরে বাবা আমি চশমা ফেলে এসেছি, এখনতো চাইলে আমি দেকপ না বাবা।
- এই কথাটা আঙ্কেল বললেই হত। আমিতো ভাবছিলাম আপনি দেখবেন না। :!> :!>
লোকটা যে দেকপনা বলছিল আসলে সে চোখে দেখবেনা তাই বুঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু সে একবারের জন্যও বলেনি চশমা ছাড়া দেখবনা।
ঘটনা ২ ।
আমার এক ছোট বোন শান্তা(ছদ্ম নাম) হারবাল ডাক্তার। ওর কাছে অনেক মজার মজার ঘটনা শুনতাম রোগী দেখা নিয়ে। আর শান্তা এমনিও খুব মজার মেয়ে এবং খুব ভালো। তো একদিন একটা ইয়াং ছেলে আসল ওর কাছে। ছেলেটার কি সমস্যা তা জিজ্ঞেস করছিল। ছেলে একে একে তার সমস্যা বলছিল। আমার সেই ছোট বোন হিজাব পড়ে, আবার চোখে চশমা পড়ে। (আমার মত) ছেলেটার মনে হয় বেশ খারাপ কিছু হয়েছিল। সে শান্তাকে বলছিল
- আপনি আমার মায়ের মত। প্লিজ আমাকে ভালো করে দেখবেন আন্টি। (শান্তার যদিও বিয়ে হয়নি তখন)
- শান্তা মনে মনে হাসল আর বলল
- বাবা একদম টেনশন করবেনা। আমি তোমার মায়ের মতই। মা ছেলের কি খারাপ চাইতে পারে বল? তোমাকে আমি ভালো মত চিকিৎসা করব।
এই ঘটনা যখন শান্তা বলল আমরাতো শুনে হাসতে হাসতে শেষ। শান্তার উচিত ছিল ছেলেটা কে বলা ‘এই যে মিঃ আমি আপনার প্রেমিকার বয়সি’
শান্তা আসলে পারত বলতে যে সে তার বয়সি হবে। ও খুব ভাল একটা মেয়ে। এরকম আরও অনেক ঘটনাই আছে। কিন্তু কখনই ও কাউকে বলেনি যে ওর বয়স কম। ডাক্তার হয়ে রোগীর চিকিৎসা করাই ওর কাজ ছিল। আজকালকার অল্পবয়স মানুষরা মেয়েদের হিজাব আর চশমা পড়তে দেখলে ভাবে আন্টির বয়সি। এটা ঠিক নয়। (এটা অবশ্য আমার মত, কারন আন্টি ডাক শুনার অভিজ্ঞতা আছেত )
ঘটনা ৩।
কিছু দিন আগে আমাদের বাসায় পুরানো জিনিস গোছানো হচ্ছে। আর গোছানোর কাজটা করছিল আমার বড় বোন। গোছাতে গোছাতে আপা বেশ কিছু চিঠি পেল। আপাতো বেশ এক্সসাইটেড। আমি বললাম এগুলো আমার, রাখ। আমার বড় বোন খুব দুষ্ট । ও বলছিল দাঁড়া আমি আগে দেখে নেই এগুলো কোন প্রেম পত্র কিনা?? কে জানে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম ট্রেম করছিস কিনা! (ঐ চিঠিগুলো আমার ছোট বেলার বান্ধবির লেখা। তখন ক্লাস এইটে পড়তাম। সেই সময়ের চিঠিগুলো) আপাকে রাখতে বলছিলাম বার বার। কারন ও যে দুষ্ট চিঠিতে যদি কিছু পায় তাতে আমাকে সারাদিন খেপাবে। আপা আওয়াজ করে চিঠিটা পড়ছিল। অনেক কথা লিখছে আমার বান্ধবি। আমিও মনোযোগ দিয়ে চিঠির কথাগুলো শুনছিলাম। আমার চিঠি পেয়ে খুব খুশি হয়েছে আমার বান্ধবি। আমি কেন বেড়াতে যাইনা? পড়াশুনা কেমন চলছে আমার , আরও কত কথা। যাক, ভালই ভালই চিঠিটা শেষ হল। এমন কিছু আপা পেলনা যে আমাকে ক্ষেপাবে। আমি নিশ্চিন্ত হইলাম।
বললাম এই বার চিঠিটা দাও। ও আমাকে বলল এই চিঠির এক পাশে যেনো কি লেখা ‘ লাবনী তোর হাতের লেখাটা একটু পরিষ্কার করিস, পড়তে একটু কষ্ট হয়’।
আপা আমাকে সারাটা দিন খেপাল এই কথা বলে। লাবনী তোর হাতের লেখাটা একটু পরিষ্কার করিস, আপা বলছিল দেখছিস তোর লেখা যে খারাপ আমি যে বলি বিশ্বাস করিস না এইবার দেখলিত তোর বান্ধবিই বলছে। আমি বললাম আরে বাবা এটা তো ছোট বেলার চিঠি। এখন তো লেখা ভাল হয়েছে। মনে মনে বান্ধবিকে বকা দিলাম। উফফ! এতো ভাল করে চিঠিটা লিখছিস কেন তোর এই কথাটা লিখতে হল?
ঘটনা ৪ ।
এই ঘটনা আমার কলিগের। কলিগ ভাইয়ের মা অসুস্থ । উত্তরা হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সে তার বউ গেছে দেখতে। দেখা শেষে তার বউকে বাসায় আসার জন্য গাড়িতে উঠিয়ে দিবে। আর সেই ভাই পরে যাবে। তারা দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে টিকিট কেটে ,তো কিছুক্ষন পর বাস আসল। লতিফ ভাই(ছদ্ম নাম) না দেখেই তার বউয়ের হাত ধরে টানছিলেন। বলছিলেন এই আস আস বাস চলে আসছে। হাত ধরে টানছেন কিন্তু তার বউ আসছেনা। তাকিয়ে দেখে লতিফ ভাই অন্য একজন মহিলা কে টানছেন। আর তার বউ দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কখন যে তার বউ দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে টের পাননি। এই অবস্থা দেখে ভাই বলছিল
‘ না না আপনি না । আমি আমার বউকে বলছিলাম। ঐ মহিলা বুঝতে পেরে হাসছিল। আর কলিগ ভাইটা যে কি লজ্জা পেল! :!> :!>
বিবাহিত ভাইদের বলছি সাবধান! বউ বলে অন্য কারো হাত ধরে টানবেন না। নিশ্চিত কপালে মাইর আছে। আর সাথে বউয়ের ঝাড়ি তো থাকছেই।
ঘটনা-৫।
গত রমজান মাসের ঘটনা। আমার কলিগ দাদা সকালে নাস্তা করে আসেনি। তো সে অফিসের সামনে থেকে একটা ফাস্টফুড দোকান থেকে নাস্তা করে আসল। এসে আমাকে বলছিল
-জানেন আজ কি হয়েছে?
- কি হয়েছে দাদা?
-আমার বংশের মান সম্মান সব শেষ করে আসলাম।
- মানে কি দাদা?
- সকালে নাস্তা করিনি বলে সামনের ফাস্টফুড দোকানটাতে নাস্তা করতে গেছি, ওখানে শুধু চপ জাতীয় খাবার ছিল। তাই খেলাম।
- মাটন চপ?
- নারে ভাই, আমি মুখ দিয়ে যখন চাবাচ্ছিলাম তখন দেখি ওটা গরুর গোশতের।
আমিতো শুনে আর হাসি থামাতে পারিনা। বললাম ফেলে দিলেন না কেন?
-কিভাবে ফেলব? সবাই খাচ্ছিল। আর ঐ মুহূর্তে সবার সামনে মুখ থেকে ফেলাটা কঠিন ছিল।
- দাদা শুনেন এই কাজত আপনি ইচ্ছে করে করেননি। সুতরাং মন খারাপ করবেননা।
মানুষের জীবনে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে । যাইহোক আমার খুব মজা লাগছিল ।
আরও মজার কথা হল দাদা আমাকে বলেছিল এমন মজার ঘটনা নিয়ে যাতে আমি লিখি। আজ অনেকদিন পর মনে হল তাই লিখলাম।