somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্বশ্মান

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হটাৎ ঘুম ভাঙল । মনে হল কয়েক ঘন্টা আগে যেই বৃদ্ধ মহিলাকে শ্বশ্মানে পুড়তে দেখেছি সেই বুঝি হাটছে। অনেক ভয় পেলাম। বালিশের কাছেই মোবাইল ছিল তাড়াতাড়ি মোবাইল এর আলো জ্বালিয়ে দেখলাম কোথাও কেউ নেই এবং দেখলাম রাত ৩টা বাজছে।

আর বিশ্রী একটা গন্ধ আমার নাকে লাগছে। শ্বশ্মানে যখন ছিলাম এতো কাছ থেকে লাশ পুড়তে দেখেছি কিন্তু একটুও গন্ধ লাগেনি। অনেকের কাছে শুনতাম যে লাশ পুড়ার নাকি বিশ্রী গন্ধ আছে। সত্যি বলছি আমি একটুও পাইনি।

হিন্দুরা লাশ পুড়িয়ে তার ছাই একটা মাটির হাড়িতে রাখে। গঙ্গায় সেই ছাই ভাসিয়ে দেয়। আমার ঘরে এখন সেই ছাই। ভয়ে আমার দম বের হবার উপক্রম। যত দুয়া জানি পরে বুকে ফু দিলাম। বাসার কাউকে ডাকলাম না। এমন কি আমার পাশে যে দিদি শুয়ে আছে তাকেও না। কারন দিদির উপর দিয়ে বেশ একটা ধকল গেছে।

দিদির বাড়ি বাংলাদেশের একপ্রান্তে ( আমি বলতে চাচ্ছিনা)।
ঢাকা একা থাকেন। তার দূরের আত্মীয় যিনি মারা গেছেন। উনি বৃদ্ধাশ্রম এ ছিলেন। মাত্র ৭ দিন ছিলেন । মারা যাওয়ার পর দিদিকে ফোন করা হল। আসলে সেদিন নাকি দিদির রাত থেকেই খারাপ লাগছিল ওই দিদিমার জন্য ( যিনি মারা গাছেন সম্পর্কে উনি দিদিমা হন)।

সকাল হলেই নাকি উনি যাবেন এমনটিই ভাবছিলেন দিদি। আর তখনি ফোন আসল যে মারা গেছেন। ঢাকা থেকে দিদি আসলেন হুতাপাড়া। কারন তার বাড়ি থেকে আসাটা অসম্ভব ছিল । এই মুহূর্তে কিভাবে আসবে সবাই ? ওই দিদিমার মেয়েরা ইন্ডিয়া থাকে। যাই হোক দিদি একা একাই সব কাজ করলেন। লাশ নিয়ে শ্বশ্মানে আসলেন।

হটাৎ বিকেল বেলা দিদির ফোন। আমি ভাবলাম দিদি প্রায়ই আমার বাসায় আসতে চায় হয়ত উনি এসেছেন। ফোন ধরার পর দিদি আমাকে বললেন আপনি কি একটু শ্বশ্মানে আসতে পারবেন? আমি একটা বিপদে পড়েছি। দিদিমা মারা গেছেন।আমি আগে থেকে কিছু জানতাম দিদিমা সম্পর্কে তাই আমি কোন কিছু জিজ্ঞেস না করে বললাম এক্ষুনি আসছি।

দিদি আমাকে অনেক ভালবাসেন। ঢাকা আসার পর দিদির মন অনেক খারাপ ছিল। কারন ফ্যামিলি ছাড়া থাকাটা খুব কষ্টের। দিদির সাথে আমার পরিচয় গোপন থাক :P। খুব একা ছিলেন দিদি। আমার সাথে মিশার পর দিদি আমাকে বলেছিল ‘ আপনার সাথে মিশে এখন আর নিজেকে একা লাগেনা’।
আমার বেশ ভালো লেগেছিল। অন্তত তার একা থাকার কষ্টটা কিছুটা হলেও আমি দূর করতে পেরেছিলাম।আমিও তাকে শ্রদ্ধা করি।

আমি জানি না কতটা তাকে হেল্প করতে পারব কিন্তু এটুকু জানি এই মুহূর্তে আমার সাপোর্ট খুব প্রয়োজন দিদির। বাসায় সব বললাম । আব্বা-মা আমাকে বাধা দিলনা। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে আমি আমার পরিবার থেকেই শিখেছি।

আমি গেলাম শ্বশ্মানে। চিতা সাজানো হচ্ছে । বেশ কিছু মানুষ দেখছিল। লাশ উঠানো হল চিতায়। এর আগে যা যা করনীয় তা দিদি কে দিয়ে শ্বশ্মানের পুরহিত না ঠাকুর কি যেন বলে যাই হোক সব করিয়ে নিলেন। মুখাগ্নি করলেন দিদি। সাত বার ঘুরে তারপর আগুন দিলেন । দিদি আগুন দিলেন আর বসে কান্না করলেন।

আগুন জ্বলে উঠল পুরো চিতায়। আমি খুব কাছে ছিলাম। একটা মানুষ কে এতো কাছ থেকে পুড়তে আমি দেখিনি কোনদিন। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল এবং বমি বমি লাগছিল। একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেল। মাগরিবের আজান পরল। ঠিক এমনি শীতের দিন ছিল। আমার বাসা থেকে একটু পর পর ফোন আসছিল। আমি ভয় পাচ্ছি কিনা জিজ্ঞাসা করছিল। বিশেষ করে বড় আপা এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবি আমকে দুয়া পড়তে বলল। আমি একদম ভয় পাচ্ছিলাম না । তারপরও ওদের কথা অমান্য করতে পারলাম না। দুয়া পরে ফু দিলাম বুকে।

দিদি -আমি একটা জায়গায় বসলাম। চিতার কাছে আমি, দিদি আর যিনি পুড়াচ্ছেন তিনি এই তিনটি প্রাণী ছিলাম । দিদির পরিবারের মানুষ ফোন দিয়ে বার বার খবর নিচ্ছিলেন। আর উনারা আমার প্রতি বেশ কৃতজ্ঞ হলেন। এই বিপদে দিদির পাশে আমি আছি শুনে খুশি হলেন। চিতা ৮টা ৫০ পর্যন্ত জ্বলল।

শীতের রাত তাই অনেক রাত মনে হচ্ছিল। তারপর আগুন নিভিয়ে তার ছাই একটা মাটির পাত্রে দিয়ে দিলেন। যাতে দিদিমার মেয়েদের নিকট দিতে পারেন। তারা যেন এর সৎকার করতে পারেন। দিদি তখনি ঢাকা চলে আসতে চাইলেন। আমাকে আর কষ্ট দিতে চান না। কিন্তু আমি একদম শুনিনি জোর করে নিয়ে আসছি আমার বাসায়। বাসায় আসতে ১০ টা বেজে গেল। এদিকে আমি আগেই বাসায় দিদির খাবারের ব্যবস্থা করতে বললাম। আব্বা দই, চিঁড়া অনেক রকম ফল এনে রাখলেন। সারাদিন দিদির খাওয়া হয়নি। যাক দুজনে এসে গোসল করে খেলাম। পরদিন সকালে দুজনে অফিসে আসলাম। দিদি কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন। দিদি আমার সাথে দেখা করলেন আর বললেন এখন সব ভেবে উনার ভয় লাগছে। কাল এতো সব একা কিভাবে করলেন অবাক হচ্ছিলেন। আর একটা কথা বলছিলেন বৃদ্ধাশ্রমে যেন আর কাউকে রাখা না হয় :(

ডিসেম্বর মাস ছিল। এক বছর হয়ে গেল। এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। মানুষের জীবনে কতরকম ঘটনা ঘটে! মানুষের জীবনে কখন কি ঘটে যায় কেউ তা বলতে পারেনা।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×