অশ্লীলতা ও পর্নোগ্রাফি থেকে মুক্ত থাকার দোয়া
প্রযুক্তির উচ্চতর আবিষ্কারগুলো আল্লাহর একান্ত রহমত ও তার শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। আল্লাহর সৃষ্টির অপার রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তির নানা দিক ও আবিষ্কারগুলোই এর বড় দৃষ্টান্ত।
কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি অপব্যবহারের ফলে মানুষ নানান ধরনের অন্যায়-অপরাধ তথা অশ্লীলতায় নিয়োজিত হচ্ছে। যা উঠতি বয়সী কিশোর যুবক থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধদেরকেও অন্যায় অপরাধের দিকে অনেক বেশি ধাবিত করছে।
হাদিসের বর্ণিত দোয়াটির নিয়মিত আমলের ফলে দুনিয়ার সব নিকৃষ্ট কাজ যেমন- পর্নোগ্রাফি, অশ্লীলতা, চারিত্রিক কামনা-বাসনা, পরনারীর প্রতি কুদৃষ্টিসহ বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দূরে থাকা যাবে। হাদিসে উল্লেখিত দোয়াটি নামাজের সেজদায় বেশি বেশি পড়াই সর্বোত্তম। আর তাহলো-
হজরত যিয়াদ ইবনে ইলাক্বাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)
সুতরাং তথ্য প্রযুক্তিসহ দুনিয়ার যাবতীয় অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থাকতে কুরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা পালনের পাশাপাশি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়া ও আমল অত্যন্ত জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সিজদায় দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। অশ্লীলতা ও বেহায়পনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
জীবনের সব চাহিদা পূরণের বিশেষ দোয়া
দয়া, সঠিক পথ প্রাপ্তি, নিরাপত্তা লাভ, সুস্থতা ও হালাল রিজিক আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামত লাভে আল্লাহর বিধি-বিধান পালনের পাশাপাশি তার কাছে ধরণার দেয়ার বিকল্প নেই। তাই উল্লেখিত নেয়ামতগুলো পেতে হলে সবসময় একটি বিশেষ দোয়ার আমল করা জরুরি।
আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত- দয়া, হেদায়াত, নিরাপত্তা, সুস্থতা ও রিজিক লাভে সব সময় পঠনীয় বিশেষ দোয়াটি হলো-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ [وَعَافِنِيْ] وَارْزُقْنِيْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়াআফিনি, ওয়ারযুক্বনি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমাকে সার্বিক নিরাপত্তা ও সুস্থতা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন।’ (মুসলিম)
- হজরত আবু মালিক আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা হজরত আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উপরের বাক্যগুলোর মাধ্যমে বেশি বেশি দোয়া করতে শেখাতেন।
- আবার প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই সেজদা থেকে সোজা হয়ে বসে এ দোয়াটি পড়তেন।
যেহেতু এ দোয়াটি মানুষের জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া মিটিয়ে দেয়। তাই মুমিনের উচিত দুনিয়ার সব ব্যস্ততার মধ্যেও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। বিশেষ করে দুই সেজদার মাঝে এ দোয়াটি পড়া উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুই সেজদার মধ্যে এবং সেজদার বাইরে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ে তার রহমত, বরকত, মাগফেরাত, হেদায়াত, রিজিক ও সুস্থতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
যে তাসবিহ পাঠে নেকি লাভ ও গোনাহ মাফ হয়
আল্লাহর প্রশংসা বাক্যই হলো তাসবিহ। তার নামের তাসবিহ যে কত মধুর ও শান্তিদায়ক তা আল্লাহ প্রেমিকরাই উপলব্ধি করতে পারে। যে বা যারা ব্যক্তি জীবনে একবার হলেও তার প্রেমে তাসবিহ পড়েছেন কিংবা তার তাসবিহ-এর স্বাদ গ্রহণ করেছেন; তারাই জানেন যে আল্লাহর তাসবিহতে কি স্বাদ বা মহত্ম নিহিত রয়েছে।
আল্লাহ তাআলার তাসবিহ মূলত মানুষের মনের সুখ ও শান্তি লাভের এক অনন্য মহৌষধ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণের (এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, উহা) দ্বারা অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
অন্তরের প্রশান্তি লাভের পাশাপাশি আল্লাহর তাসবিহ আদায়ে দুনিয়া ও পরকালে বান্দার জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। এ সময় তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কেউ কি একদিনে এক হাজার নেকি অর্জন করতে সক্ষম? তাঁর সঙ্গে বসা লোকদের কেউ কেউ বললেন- ‘আমাদের কেউ কিভাবে একদিনে এক হাজার নেকী আদায় করতে সক্ষম হবেন?
তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেউ যদি একদিনে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ (سُبْحَانَ الله) পড়ে তাহলে তার জন্য এক হাজার নেকি লেখা হবে অথবা তার এক হাজার গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে হিব্বান, তারগিব)
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে জিকির বা তার স্মরণকে আত্মার প্রশান্তির কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আবার তার তাসবিহ পাঠের অসামান্য ফজিলত ঘোষণা করেছেন।
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার তাসবিহ তথা প্রশংসা করা। কেননা আল্লাহর প্রশংসায় রয়েছে অসংখ্য নেকি লাভ এবং গোনাহ মাফের হাতছানি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রশান্তি লাভে তার তাসবিহ আদায়ের তাওফিক দান করুন। বিশেষ করে নিয়মিত এ ছোট্ট তাসবিহ (১০০ বার সুবহানাল্লাহ) আদায় করে হাজার নেকি লাভ কিংবা হাজার গোনাহ থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
যে জিকিরে অন্তর্জগত খুলে যায়
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, তোমরা যদি আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। এ কথায় প্রমাণিত হয় যে, জিকিরের গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যাধিক। আল্লাহ তাআলা অনেক আয়াতেই সব সময় তার জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন। সবচেয়ে উত্তম জিকির হলো- (اَللهُ) ‘আল্লাহ’ শব্দের জিকির।
কারণ (اَللهُ) ‘আল্লাহ’ শব্দটি মহান আল্লাহ তাআলার জাতি নাম। এর অর্থ হলো- তিনি সেই জাত যে, ইবাদাতের একমাত্র উপযুক্ত তিনিই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কবিদের কথার মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ কথা হলো, কবি লাবিদের এ কথাটি, তিনি বলেন- ‘আল্লাহ ব্যতিত আর সব কিছু বাতিল।’ (বুখারি)
(اَللهُ) ‘আল্লাহ’ জিকিরের ফজিলত-
>> যে ব্যক্তি (اَللهُ) ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ জিকিরটি প্রতিদিন এক হাজার বার করবে, সে (صَاحِبِ يَقِيْن) ‘সাহেবে ইয়াক্বিন’ বা দৃঢ় বিশ্বাসী ব্যক্তিতে পরিণত হবে।
>> যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের পর একশত বার (اَللهُ) ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ জিকির করবে, তার অন্তর্জগত খুলে যাবে। অর্থাৎ সে (صَاحِبِ كَشْف) ‘সাহেবে কাশ্ফ’ হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ, আল্লাহ জিকিরের মাধ্যমে দৃঢ় বিশ্বাসী ব্যক্তি ও কাশফের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পিতামাতা-সন্তান ও নিজের জন্য সবসময় যে দোয়া আবশ্যক
আল্লাহ তাআলা পূববর্তী যুগের অনেক নবি-রাসুলদের দোয়া ও আহ্বানকে কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন। যাতে মুসলিম উম্মাহ সে সব আহ্বান বা দোয়ার মাধ্যমে নিজেদের জন্য দোয়া করতে পারে।
হজরত ইবরাহিম আলঅইহিস সালাম নিজের সন্তান-সন্তুতি ও বংশধরদের জন্য দোয়া করার পর আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেন, হে আল্লাহ! আমরা যা গোপন করি আর যা প্রকাশ করি নিশ্চয়ই আপনি তা জানেন। হে আল্লাহ! আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই আপনার কাছে গোপন থাকে না।
তাই তিনি নিজের ও বংশধরদের জন্য এবং নিজের পিতা-মাতার জন্য দোয়া করেছিলেন। সে দোয়া আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় হওয়ায় তিনি তা মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরআনে পেশ করেছেন। যাতে মানুষ নিজেদের জন্য এ দোয়ার মাধ্যমে তার কাছে আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করতে পারে।
দোয়াটি হলো-
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ - رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ : রাব্বিঝ্আ’লনি মুক্বিমাস সালাতি ওয়া মিং জুর্রিয়্যাতি; রাব্বানা ওয়া তাক্বাব্বাল দুআ’য়ি; রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও এবং আমার বংশধরদের থেকেও (নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী) বানাও; হে আমাদের প্রতিপালক! আমার দোয়া কবুল কর। হে আমার প্রতিপালক! যে দিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং বিশ্বাসীদেরকে ক্ষমা কর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪০-৪১)
মুসলিম উম্মাহর উচিত, নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরবর্তী বংশধরদেরকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে তৈরি করতে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা। আর এ দোয়াসহ অন্যান্য সব আবেদন-নিবেদন কবুল করার আবেদনও করা।
বিশেষ করে শেষ বিচারের দিনের কল্যাণে পিতামাতা, সন্তান-সন্তুতিসহ নিজেদের মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাদের জাতির পিতার শেখানো কুরআনে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেদের প্রয়োজন পূরণে ধরণা দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
১ম পর্বের লিঙ্ক-
কুড়ানো মানিক-০১: মর্যাদা বৃদ্ধির তিন আমল, গুরুত্বপূর্ন কিছু কাজের সুন্নত