প্রায়শই আমরা শুনে থাকি, ফরজ নামাজের পরে কোনো মুনাজাত নেই। সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদআত। যারা করেন তারা বিদআতী। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু এক শ্রেনির ব্যক্তিবর্গ ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত, তাই এর বিধান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখা আবশ্যক। প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন, ফরজ নামাযের পর মুনাজাতের বিষয়টি বুঝতে হলে তিনটি পয়েন্ট ভাল করে বুঝতে হবে। যথা-
১. ফরজ নামাযের পর মুনাজাত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি না?
২. সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত কি না?
৩. ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের হুকুম কী?
এবার চলুন, একে একে প্রতিটি পয়েন্টের উপর কিছুটা বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক। দেখি, হাদিসের আলোকে এর কোনো প্রামান্য তথ্যাদি পাওয়া যায় কি না।
১ নং ক্রমিকে বর্নিত বিষয়: ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা
একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করার বিষয়টি সুপ্রমাণিত। যেমন-
১ নং হাদিস-
وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِذَا صَلَّيْتَ فَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ،
'হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআ'লা বলেন, হে মুহাম্মদ! সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তুমি নামায পড়ে ফেলবে, তখন এ দুআ করবে- হে আল্লাহ! আপনার নিকট ভাল কাজের তাওফিক চাই এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন তথা আল্লাহওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি।' {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩২৩৩}
২ নং হাদিস-
ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন-
عَنْ كاتب المغيرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو في دبر صلاته
হযরত মুগিরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষে দুআ করতেন। {আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০}
৩ নং হাদিস-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ مَقَامِي بَيْنَ كَتِفَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَانَ إِذَا سَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَهُ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَوَاتِيمَ عَمَلِي رِضْوَانَكَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ أَيَّامِى يَوْمَ أَلْقَاكَ»
হযরত আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁধের পাশে। তখন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ জীবনকে সবচে’ সুন্দর কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ আমলকে তোমার সন্তুষ্টি অনুপাতে কর। হে আল্লাহ! তুমি তোমার সাথে আমার সাক্ষাতের দিনকে সর্বোত্তম দিন কর। {আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪১১}
হযরত সাদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন,
وَيَقُولُ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَعَوَّذُ بِهِنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَعَذَابِ الْقَبْرِ»
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই। এবং অভাব থেকে পানাহ চাই এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৪৭৯}
مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَحْيَى، قَالَ: رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَرَأَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ بِدَعَوَاتٍ قَبْلَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ: «إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ
হযরত মুহাম্মদ বিন আবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে দেখলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে নামাযের ভিতরে হাত তুলে দুআ করছেন। যখন লোকটি নামায শেষ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, নিশ্চয় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করার আগে হাত তুলে দুআ করতেন না। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪}
এছাড়া আরো অসংখ্য হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন।
২ নং ক্রমিকে বর্নিত বিষয়: সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত কি না?
পূর্বের আলোচনা দ্বারা পরিস্কার হয়ে গেল যে, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামায শেষে হাত তুলে দুআ করতেন। এখন প্রশ্ন হল, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে সম্মিলিতভাবে দুআ করা প্রমাণিত কি না?
নিচে কয়েকটি হাদীস দেয়া হল। যা পরিস্কারভাবে সম্মিলিত দুআ করা ও সম্মিলিত দুআর প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
এক. أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَى رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ مِنْ أَهْلِ البَدْوِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكَتِ المَاشِيَةُ، هَلَكَ العِيَالُ هَلَكَ النَّاسُ، «فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ، يَدْعُو، وَرَفَعَ النَّاسُ أَيْدِيَهُمْ مَعَهُ يَدْعُونَ»
হযরত আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গ্রাম্য সাহাবী রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন জুমআর দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জিনিস পত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একথা শুনে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত উত্তলোন করলেন দুআর উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে দুআর জন্য হাত উত্তোলন করলেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০২৯}
এ হাদীসে পরিস্কারভাবে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত প্রমানিত। লক্ষ্য করুন। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করেছেন, আর উপস্থিত সাহাবীগণ আমীন আমীন বলে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
দুই. عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ – وَكَانَ مُسْتَجَابًا -: أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرِبَ الدُّرُوبِ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: ” «لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ» “.
ثُمَّ إِنَّهُ حَمِدَ اللَّهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ احْقِنْ دِمَاءَنَا، وَاجْعَلْ أُجُورَنَا أُجُورَ الشُّهَدَاءِ،
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَقَالَ: الْهَنْبَاطُ بِالرُّومِيَّةِ: صَاحِبُ الْجَيْشِ. وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ.
হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”।
এ হাদীস বলার তিনি [হাবীব বিন মাসলামা রাঃ] হামদ ও সানা পড়লেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রাণ রক্ষা কর। আর আমাদের শহীদের সওয়াব দান কর।
{মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬}
আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহের রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। {মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭}
তিন. আরো একটি হাদীস উদ্ধৃত করছি। যা আলবিদায়া ওয়াননিহায়া গ্রন্থে আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ সনদসহ বর্ণনা করেছেন।
যার সারমর্ম হল, আলা বিন হাযরামী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু মুস্তাজাবুদ দাওয়া সাহাবী ছিলেন। একদা বাহরাইনের জিহাদ থেকে ফেরার পথে এক স্থানে যাত্রাবিরতি করলে খাবার দাবার ও তাবুর রসদসহ উটগুলো পালিয়ে যায়। তখন গভীর রাত। সবাই পেরেশান। ফজরের সময় হয়ে গেলে আজান হল। সবাই নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আলা বিন হাযরামী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু সহ সবাই হাত তুলে সূর্য উদিত হওয়ার সূর্যের কিরণ গায়ে লাগা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দুআ করতে থাকেন। {আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৬/৩২৮-৩২৯}
উক্ত ঘটনাটির পূর্ণ বিবরণের আরবী পাঠ
وَقَدْ كَانَ الْعَلَاءُ مِنْ سَادَاتِ الصَّحابة الْعُلَمَاءِ العبَّاد مُجَابِي الدَّعوة، اتَّفق لَهُ فِي هَذِهِ الْغَزْوَةِ أنَّه نَزَلَ مَنْزِلًا فَلَمْ يَسْتَقِرَّ النَّاس عَلَى الْأَرْضِ حَتَّى نَفَرَتِ الْإِبِلُ بِمَا عَلَيْهَا مِنْ زَادِ الْجَيْشِ وَخِيَامِهِمْ وشرابهم، وبقوا على الأرض ليس معهم شئ سِوَى ثِيَابِهِمْ – وَذَلِكَ لَيْلًا – وَلَمْ يَقْدِرُوا مِنْهَا عَلَى بَعِيرٍ وَاحِدٍ، فَرَكِبَ النَّاس مِنَ الهمِّ والغمِّ مالا يُحَدُّ وَلَا يُوَصَفُ، وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يُوصِي إِلَى بَعْضٍ، فَنَادَى مُنَادِي الْعَلَاءِ فَاجْتَمَعَ النَّاس إِلَيْهِ، فَقَالَ: أيُّها النَّاس أَلَسْتُمُ الْمُسْلِمِينَ؟ أَلَسْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟
أَلَسْتُمْ أَنْصَارَ اللَّهِ؟ قَالُوا: بَلَى، قَالَ: فَأَبْشِرُوا فَوَاللَّهِ لَا يَخْذِلُ اللَّهُ مَنْ كَانَ فِي مِثْلِ حَالِكُمْ، وَنُودِيَ بِصَلَاةِ الصُّبح حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ فصلَّى بالنَّاس، فلمَّا قَضَى الصَّلاة جَثَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَجَثَا النَّاس، وَنَصِبَ فِي الدُّعاء وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَفَعَلَ النَّاس مِثْلَهُ حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ، وَجَعَلَ النَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَى سَرَابِ الشَّمْسِ يَلْمَعُ مَرَّةً بَعْدَ أُخْرَى وَهُوَ يَجْتَهِدُ فِي الدُّعَاءِ
চার. عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا
হযরত সালমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৪৫}
আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী। {মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১}
এরকম আরো অসংখ্য বর্ণনা প্রমাণ করে সম্মলিত মুনাজাত এটি দুআ কবুলের আলামত। সেই সাথে উত্তম আমল। যা কিছুতেই বিদআত হতে পারে না। যে সম্মলিত মুনাজাত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে করেছেন সাহাবীদের নিয়ে, সাহাবায়ে কেরাম সাথিবর্গকে নিয়ে যে সম্মলিত মুনাজাত করেছেন, তা কী করে বিদআত হতে পারে?
সুতরাং বুঝা গেল যে, সম্মিলিত মুনাজাত করাও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। সেই সাথে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিস্কার ভাষায় উৎসাহ প্রদান করেছেন।
৩ নং ক্রমিকে বর্নিত বিষয়: ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের হুকুম কী?
আসলে পূর্বের দু’টি বিষয় পরিস্কার হবার পর আপনি নিজেই এর সমাধান বের করে নিতে পারেন। নামাযের পর দুআ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে করেছেন। আর সম্মিলিত দুআ কবুল হয় মর্মে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। তিনি নিজেও সম্মিলিতভাবে দুআ করেছেন।
সুতরাং ফরজ নামাযের পর দুআ করলে সেটি বিদআত হবে কিভাবে?
তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা-
প্রথমত: ফরজ নামাযের পর দুআকে জরুরী মনে করা। দ্বিতীয়ত: দুআকে নামাযের অংশ মনে করা। তৃতীয়ত: এ ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না- এই আকিদা রাখা। এ তিনটির কোনো একটি পাওয়া গেলে উক্ত দুআ বিদআত হবে। কারণ এর কোনো প্রমাণ নেই।
কিন্তু যদি উপরোক্ত কোনো কারণ পাওয়া না যায়। বরং যেহেতু রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামাযের পর দুআ করেছেন, সেই সাথে সম্মিলিতভাবে দুআ করতে উৎসাহ প্রদান করেছেন, সেই সওয়াব পাবার আশায় যদি ইমাম সাহেব সম্মিলিতভাবে দুআ করেন, তাহলে উক্ত সম্মিলিত দুআকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ বলে তাহলে সে হাদীসে নববী সম্পর্কে অজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়।
শেষের কথা: অবশ্যপালনীয় আমল মনে না করে ফরজ নামাজের পরে সম্মিলিতভাবে দুআ মুনাজাত করা যাবে। হাদিসে দুআকে ইবাদাত বলা হয়েছে। বরং, ইবাদাতের মগজ বা মূল আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং, মুনাজাত ও সম্মিলিতভাবে দুআ করার বিষয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত তাদের গুরুত্ব না দিয়ে আপনি আপনার আমল করতে থাকুন। এরা আল্লাহর কাছে নিজেরা প্রার্থনা করবে না, অন্যদেরও ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। এরা আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াবে না, গর্ব কিংবা অহমে, অন্যরা হাত বাড়িয়ে মুঠি মুঠি রহমত কুড়িয়ে ধন্য হোক তাও চাবে না।
তবে, কারও কারও ভেতরে এমন জটিল রোগেরও দেখা মেলে যে, ফরজ নামাজ শেষে সম্মিলিত মুনাজাতে অংশ না নেয়ায় মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের পর্যন্ত করে দেয়া। এই ধরনের জঘন্য কূপমন্ডুকতার স্থান ইসলামে নেই। উদারতা, মানবতা এবং মানবিকতার যে মহান শিক্ষা ইসলাম তুলে ধরে তার কোথাও এ ধরনের আচরনের দূরতম সম্পর্কও নেই।
আল্লাহ পাক আমাদের মূর্খতা দূর করুন। আমাদের আমালে সালেহগুলো কবুল করুন। বেশি বেশি আমালে সালেহ করার তাওফিক দান করুন।
কৈফিয়ত: নিবন্ধের কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় আলোচনা সংক্ষিপ্ত করতে হলো। উপস্থাপিত বিষয়ে পরবর্তীতে কোনো পোস্টে আরও বিস্তারিতভাবে লেখার ইচ্ছে থাকলো। আল্লাহ পাক সকলের কল্যান করুন।
২য় পর্বে যাওয়ার লিঙ্ক-
ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের হুকুম কী? এটি কি আসলেই বিদআত? পর্ব-০২
নিবন্ধটি তৈরিতে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে যেসব সূত্র থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা:
আলবিদায়া ওয়াননিহায়া
আহলে হক মিডিয়া।
মাযমাউয যাওয়ায়েদ।
বুখারি শরিফ।
মুসলিম শরিফ।
তিরমিযি শরিফ।
নাসায়ি শরিফ।
মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন।
আলমুজামুল কাবীর।
আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী।
আততারগীব ওয়াত তারহীব।
কানযুল উম্মাল।
আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী।
আততারীখুল কাবীর।