পেছনের পর্বগুলো-
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৫)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৬)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব৭)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৮)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-৯)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১০)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১১)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১২)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৩)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৪)
বাইতুল্লাহর মুসাফির (পর্ব-১৫)
রাসূলে মাকবূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর রওজা শরীফ। প্রিয় দুই সহচরের কবর পাশে চিহ্নিত স্থানে।
জান্নাতি ১০ সাহাবির পরিচয়
জান্নাত মুমিনের গন্তব্য। জান্নাতের আশা কে না করে! কিন্তু জান্নাত তো দুনিয়াতে নয়; পরকালে। ঈমানদার নেককার মুমিন মুমিনাগন জান্নাত লাভের মহাসৌভাগ্য পেয়ে ধন্য হবেন। পার্থিব জীবনে যারা ভাল আমল করেন, ন্যায়নিষ্ঠতার সাথে তাকওয়াভিত্তিক জীবন যাপন করেন, তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ স্বয়ং মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনুল কারীমে দিয়েছেন। জান্নাতের নাজ নেআমতের বর্ননাও তিনি আল কুরআনে প্রদান করেছেন। হাদিসেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্য্য-সুষমার বর্ননা দিয়েছেন। কিন্তু রাসূলে মাকবূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কিছু সংখ্যক মহান সাহাবী এমনই ছিলেন যারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকতেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরকম দশজন সম্মানিত সাহাবি দুনিয়াতেই বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিণ্ন সময় বলতেন, তোমরা যদি জান্নাতি লোক দেখতে চাও; তবে এ লোকটিকে দেখো। এসবের হিসাব করলে দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সম্মানিত সাহাবীদের সংখ্যা আরও বেশি। মদিনাতে পৌঁছার পর থেকে মনের ঐকান্তিক ইচ্ছে ছিল- আশারায়ে মুবাশ্বারার দশজন সাহাবীর কবর জিয়ারত করার। সময় সংকীর্নতাসহ নানাবিধ কারনে সকলের কবরের পাশে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তবু যাদের কবরের সন্ধান পেয়েছি, ছুটে গেছি। কবর জিয়ারত করেছি। তাপিত হৃদয়-মন জুড়িয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাকের নিকট সিজদাবনত শুকরিয়া, তিনি তাঁর প্রিয় এসব বান্দা রাসূলে মাকবূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংস্পর্শধন্য মহামানবদের কবরের পাশে এ অধমকে দু'দন্ড দাঁড়ানোর তাওফিক দিয়েছেন। দশজন সম্মানিত সাহাবী, যাদের 'আশারায়ে মুবাশ্বারা', 'সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ জন' নামে অভিহিত করা হয় তাদের পরিচয় তুলে ধরা হলো-
১. ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর আসল নাম আবদুল্লাহ বিন উসমান বিন আমর। তাঁর উপাধি আতিক, সিদ্দিক। পুরুষদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমেই হজরত উসমান বিন আফফান, হজরত যুবাইর, হজরত তালহা, হজরত আবদুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ বড় বড় সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হিজরতের সাথী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অনুরূপ তিনিও ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের পরে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার -এর সম্মতিক্রমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর রওজা শরীফে নবীজীর কবরের ঠিক পাশ ঘেঁষেই দাফন করা হয় তাঁকে। পৃথিবীতে প্রিয়তম নবীজীর সাথে ছায়ার মত যেভাবে নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন পরম মমতায়, মুহূর্তকাল নবীজীর চোখের আড়াল হলে যেমন ব্যাকুল বেকারার হতেন, আল্লাহ পাকের অসীম কুদরত, ইন্তেকালের পরেও সেই অটুঁট বন্ধন রয়ে গেছে অবিচ্ছিন্ন। প্রিয়তমের পাশেই শেষ ঠিকানা হয়েছে এই মহামনবের। আল্লাহ পাক তাঁর কবরকে জান্নাতুল ফিরদাউসের প্রশান্তিতে ভরে দিন।
২. ইসলামে দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনিই সর্বপ্রথম আমিরুল মুমিনীন খেতাবে ভূষিত হন। তার খেলাফতকাল ছিল দশ বছর ছয় মাস চার দিন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করেছেন এবং অর্ধ্ব জাহানব্যাপী ইসলামের পতাকাকে উড্ডীন করেছেন। তিনিও শেষ সয্যায় শায়িত হয়েছেন প্রিয়তম রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর রওজা শরীফের ভেতরে। আবু বকর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
৩. ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান বিন আফফান বিন আবিল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি পর্যায়ক্রমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। এজন্য তিনি 'জিন্নুরাইন', 'দুই নূরের অধিকারী' খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন দানশীল এবং আল্লাহর ভয়ে অধিক ক্রন্দনকারী। মদিনার বিখ্যাত কবরস্থান জান্নাতুল বাকীতে নির্ধারিত হয়েছে তাঁর শেষ বিশ্রামাগার। আল্লাহ পাক তাঁর কবরের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
মদিনার বিখ্যাত কবরগাহ জান্নাতুল বাকীতে অবস্থিত হযরত উসমান বিন আফফান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু -এর কবর। বর্তমানে এই কবরের পাশে কোনো চিহ্ন কিংবা সাইনবোর্ড নেই যাতে এই কবরটি কার তা বুঝা যায়। আপনি যদি এই কবরের স্থানটি চিনতে চান, অবশ্যই জানা কাউকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
৪. ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী বিন আবু তালিব বিন আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু। বালকদের মধ্যে সর্ব প্রথম সাত বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। একমাত্র তাবুক ছাড়া তাঁর সময়কালে সংঘটিত সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কলিজার টুকরা খাতুনে জান্নাত, জান্নাতের নারী নেতৃ মা ফাতিমার জামাতা, জান্নাতের যুবকদের সর্দার ইমাম হাসান এবং হুসাইন রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুমা -এর সম্মানিত পিতা।
৫. হজরত তলহা বিন উবাইদুল্লাহ বিন উসমান বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তিনি অত্যন্ত মজবুতভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং শরীরের চব্বিশ স্থানে আঘাত পেয়েছিলেন। তখন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নাম রেখেছিলেন ত্বালহাতুল খায়র। তিনি জামাল যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।
৬. হজরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর জীবদ্দশায় সংঘটিত ইসলামের সকল যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহর রাহে সর্বপ্রথম তরবারি পরিচালনা করেন এবং হাবশায় হিজরত করেন। তাঁর আকৃতিতেই ফেরেশতাগণ বদর যুদ্ধে অবতরণ করেছিলেন। তিনিও জামাল যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন।
৭. হজরত আবদুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি হাবশায় হিজরত করেছিলেন এবং সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
৮. হজরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহর রাহে তীর নিক্ষেপকারী। উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, তোমার ওপর আমার মা-বাবা কুরবান হোক, তীর নিক্ষেপ কর। তিনি সকল যুদ্ধে শরীক হয়েছেন।
৯. হজরত সাঈদ বিন যায়েদ ইবনে উমর বিন নুফাইল রাদিয়াল্লাহু আনহু। বদর যুদ্ধ ছাড়া অন্য সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
১০. হজরত আবু উবাইদাহ আমের বিন আবদুল্লাহ বিন জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনিই উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চোয়ালে বিঁধে যাওয়া লৌহবর্ম দাঁত দিয়ে বের করেছিলেন। তখন তার সামনের দু'টি দাঁত পড়ে গিয়েছিল।
আল্লাহ তাআ'লা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে সুসংবাদ প্রাপ্ত মহান এসব সাহাবায়ে কেরামের চারিত্রিক জজবা এবং প্রেরণা দান করুন। বাস্তব জীবনে আমলে আখলাকে সাহাবীদের অনুপম আখলাক চরিত্র ধারন করে নিজেদেরকে জান্নাতের মেহমান হওয়ার যোগ্য করে গড়ে তোলার অনুভব-অনুভূতি দান করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৯:১৩