ইরাকে অবস্থিত ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির কবর।
ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রখ্যাত তাবেয়ী। জগতের আলেমকুল শিরোমনি। 'খইরুল কুরূন' তথা, উত্তম জামানাগুলোর শ্রেষ্ঠতম ফকীহ-সিপাহসালার। এ উম্মতের আধ্যাত্ম পথের অপ্রতিদ্বন্ধী রাহবার। সত্যপন্থী মুসলিম জাতির মাথার তাজ তিনি। আজকের যুগের পথচ্যুত এক শ্রেনির মানুষ তাঁকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে উল্লাস করেন। তাঁর নামে অযাচিত অপবাদের নহর বইয়ে মজা লুটে নিতে আনন্দ পান। এদের জন্য দু:খ হয়। আল্লাহ পাকের দরবারে তাদের জন্য নিরন্তর হেদায়েতের দোআ।
স্বার্থান্বেষী এই মহলটির বক্তব্য, তিনি নাকি তাবেয়ী ছিলেন না। কোনো কিতাবাদি নাকি তিনি রচনাও করেননি। তারা আরো প্রচার করে বেড়ান, ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি নাকি হাদিস জানতেন না। হাদিসের উপর তাঁর নাকি তেমন দখল ছিল না। তাঁর ছাত্র, শিষ্য এবং শাগরেদগনই নাকি কিতাবের পর কিতাব রচনা করে তাঁর নামে মাযহাব চালু করেছেন। হায় সেলুকাস! অজ্ঞতার - অন্ধকারের এ কোন্ অমানিশায় নিমগ্ন এরা! অপপ্রচার - মিথ্যাচারের এ কোন্ জিহালতে ডুবন্ত এই ব্যক্তিগন! এদের জন্য সুপথপ্রাপ্তির দোআ।
তবে, এই শ্রেনির বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী জ্ঞানপাপীদের এসব অপপ্রচারে এখন আর আশ্চর্য্য হই না। খোদ রাসূলে মাকবুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে, তাঁর জীবদ্দশায় স্বয়ং আল্লাহর নবীকেও বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ থেকে সম্ভব-অসম্ভব সকল প্রকার অপপ্রচার, অপঘাত, মিথ্যাচার আর অন্যায় আক্রমনের সম্মুখিন হতে হয়েছে। সুতরাং, তাঁর অনুসারীগনের ভেতরে যারা সত্যের পথে অবিচল থাকবেন, তাদেরও কিছু কথা হয়তো শুনে যেতে হবে, কিছু ব্যথা, কিছু আঘাত এভাবেই যুগে যুগে হয়তো আসতে থাকবে- আর এটাইতো ধারাবাহিকতা। এটাইতো স্বাভাবিক। হাদিসেও একথার প্রমান পাওয়া যায়। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'আশাদ্দু বালা-য়িল আমবিয়া, ছুম্মাল আমসালু ফাল আমসাল'। 'নবীদের উপর সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এসেছে। এরপরে পর্যায়ক্রমে অন্যদের প্রতি।'
সুতরাং, যিনি যত উঁচু মর্যাদার হবেন, তাঁর পরীক্ষাও তত কঠিন হবে। ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেহেতু মুসলিম মিল্লাতের সর্বজন স্বীকৃত ফকিহ, হাদিস বিশারদ, মুখলিস, আবিদ, অতএব তাঁর উপরে আক্রমনের মাত্রাও তেমনি কঠিন হওয়া স্বাভাবিক বৈকি। তবু, অপপ্রচার, মিথ্যাচারের ভয়াবহ অবস্থা দর্শনে কেঁপে উঠি। মনের কোনে অজান্তেই প্রশ্ন জেগে ওঠে, জ্ঞানের প্রজ্জ্বলিত মশাল, এই আলোর মিনারকে নিভিয়ে দেয়ার এত চেষ্টা কেন? দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম সাধক, হাদিসের দিকপালের নামে হাদিস না জানার অপবাদ কেন? প্রায় দেড় সহস্র বছর যাবত জগতের স্বীকৃত শ্রেষ্ঠতম ফকিহ, ফিকাহ বিশারদের নামে মিথ্যাচারের এমন হীন প্লাবন কোন্ উদ্দেশ্যে?
ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির বিরুদ্ধে যারা এই অপপ্রচার আর মিথ্যাচারের নিকৃষ্টতম অপকর্মের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাদের পরিচয় দেবার নতুন কিছু নেই। তারা পুরনো ব্যবসায়ী। তারা ঈমান বিকিকিনির ব্যবসা করেন। মুসলিমদের ঈমান কিনে নেন কৌশলে। শত চেষ্টা করেও এদের জন্য অন্তরে শ্রদ্ধার আসনটি ধরে রাখা কঠিন। এরা বর্নচোরা। নিজেদের পরিচয় দিতেও জালিয়াতির আশ্রয় নেন। নিজেদের পরিচয়ে এরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন না, আমরা 'মুসলিম'। কায়দা কানূন করে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, মানুষদের ধোঁকায় ফেলার উদ্দেশ্যে এই ভদ্র সম্প্রদায় নিজেদের পরিচয়ে যুক্ত করেন 'হাদিস' কথাটি। এরা এই জাতীয় আরও কিছু শব্দ তাদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন।
আসুন, এদের চিনে নিই। এদের কৌশল বুঝে নিই। সকলের সচেতনতাই এদের চক্রান্ত রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আল্লাহ পাকই ঈমান এবং আমল হেফাজতের উত্তম অভিভাবক। তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। তাঁরই সকাশে সত্য ইতিহাস জানার তাওফিক প্রার্থনা। মিথ্যার মায়াজাল ছিন্ন করে সত্য-সুন্দরকে আকড়ে ধরার যোগ্যতা বৃদ্ধির সকাতর আবেদনও তাঁর দরবারে।
আসলে ইমামুল মুহাদ্দিসীন উস্তাযুল আসাতিযা ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেমন স্বীয় যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ, মুনাযির, মুতাকাল্লিম, মুফতি, কাযী, রাত জাগরনকারী অাবেদ, আখেরাতমুখী, দুনিয়াবিমুখ, অশ্রুপাতকারী উম্মতের কল্যানকামী, দরদী চিন্তক ছিলেন, তেমনি বিজ্ঞ সূফী সাধক পুরুষ ছিলেন। একই সময়ে ইলম ও ফযল, যুহদ ও পরহেজগারী, তাক্কওয়া ও পবিত্রতা, ইবাদত ও আবদিয়্যাতের উত্তম প্রকাশ, অনুসরনীয় উত্তম আদর্শের বিমলিন চরিত্র মাধুর্য্য, তীক্ষ্ণ মেধা ও বিচক্ষনতাসহ মানবিক যোগ্যতার সকল বিষয়ে উচ্চমার্গতা এবং সীমিত জীবনে সীমাহীন কর্মদক্ষতা দর্শনে ঈর্ষান্বিত না হয়ে পারেন, এমন কে আছেন? এজন্যই বোধ করি, তাঁর সময় থেকে আজ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাযহাবের বিরুদ্ধে ঈর্ষা, হিংসা, গীবত ও মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে আসছে। আল্লাহ পাকের দরবারে মিথ্যাচারের জন্য তাদের অবশ্যই একদিন দাঁড়াতে হবে। আরেকটি বিষয় উল্লেখের দাবি রাখে, মাযহাব বিরোধিতা একটি বড় ধরনের অপরাধ। কারন, এর মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমানহীন ও বিপদগামী করার উদ্দেশ্যই প্রবল থাকে। বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম মাযহাবপন্থী এবং স্বয়ং হাদিস প্রনেতা ইমামগন মাযহাবপন্থী ছিলেন। -হাদিস চর্চায় ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির অবদান বইয়ের ভূমিকার একটি অংশ। কিছুটা পরিমার্জিত।
ইমাম আযম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবনী নিয়ে অসংখ্য কিতাব রচিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত নানা ভাষায়। আলহামদুলিল্লাহ, বাংলা ভাষায়ও রয়েছে তাঁকে নিবেদিত অনেক প্রকাশনা। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্যসহ হাদিস শাস্ত্রে তিনি কতখানি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তার প্রমান পাবেন নিচের সুলিখিত বইটিতে। বিদগ্ধ ব্লগার এবং পাঠক বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক আহবান, আসুন, তাঁর জীবনালেখ্য অধ্যয়ন করে মহান এই জ্ঞানতাপসকে জানার চেষ্টা করি, বিশ্ববাসীর কল্যানের জন্য জ্ঞানের পথে-আলোর পথে তাঁর নিরন্তর এবং আমৃত্যু সাধনা উপলব্ধি করে অপপ্রচারে লিপ্ত ভ্রান্ত শ্রেনির মুখোশ উম্মোচনে সজাগ ভূমিকা রাখি-
হাদিস চর্চায় ইমাম আযম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির অবদান
ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত ইমাম আযম মাসজিদ।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত ইমাম আযম মাসজিদের আরেকটি ভিউ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮