'আল্ল-হুম্মা ইন্না লাকা আলাইয়্যা হুক্কূক্কান কাসিরাতান ফীমা বাইনী অবাইনিক। অহুক্কূক্কান কাসি-রাতান ফীমা বাইনী অবাইনা খলক্কিক। আল্ল-হুম্মা মা- কা-না লাকা মিনহা- ফাগফিরহু- লী, ওয়ামা- কা-না লিখলক্কিকা ফাতাহাম্মিলহু- আন্নী। অগনিনী বিহালা-লিকা আন হারা-মিক। অবিত্ব-আ'তিকা আম্মা'ছিয়াতিক। অবিফাদলিকা আম্মান ছিওয়াক। ইয়া অ-ছিআ'ল মাগফিরাহ! আল্ল-হুম্মা ইন্না বাইতিকা আজীম। অঅজহাকা কারীম। অআনতা ইয়া আল্ল-হু হালীমুন কারীমুন আ'জীম। তুহিব্বুল আ'ফওয়া ফা'ফু আন্নী।'
'হে আল্লাহ! আমার এবং আপনার মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের কারনে আমার ওপর আপনার রয়েছে বহু হক্ক, বহু অধিকার। আর আপনার সৃষ্টিজগতেরও রয়েছে আমার প্রতি অনেক হক্ক ও অধিকার। হে আল্লাহ! এর মধ্যে যা আপনার হক্ক দয়া করে তা ক্ষমা করে দিন। আর যেসব হক্ক আপনার সৃষ্টি তথা মাখলূকের তা ক্ষমা করানোর দায়িত্ব আপনি গ্রহন করুন। হালাল রোজগার দিয়ে আমাকে হারাম থেকে বাঁচান। ইবাদাত-আনুগত্যের সামর্থ্য দিয়ে পাপ এবং অন্যায় থেকে রক্ষা করুন। আপনার করুনা দিয়ে অন্যের দ্বারস্থ হওয়া থেকে আমাকে মুক্ত রাখুন। হে অসীম ক্ষমাশীল! হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনার এই ঘর মহামহিমান্বিত! আর আপনার পবিত্র বদন চির সম্মানিত! আর, হে আল্লাহ আপনি চির সহনশীল, মহানুভব, মহামহিম! আপনি ক্ষমা ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।'
আলহামদুলিল্লাহ! সকল শুকরিয়া মহান রবের জন্য, যিনি আবার নতুন পর্ব লেখার এবং তা উপস্থাপনের তাওফিক দিলেন। গত পর্বে বলেছিলাম, এই পর্বটি ষষ্ঠ চক্করের দোআটি দিয়ে শুরু করব। আল্লাহর প্রশংসা, তিনি তাওফিক দিলেন। প্রিয় এবং মর্মস্পর্শী, হৃদয়ে দাগ কেটে যাওয়া দোআটি উপস্থাপন করেছি। সংক্ষিপ্ত অথচ এমন ব্যাপক অর্থবোধক, এমন গভীর উপলব্দির দোআ আর কি থাকতে পারে? যখনই এই দোআটি পড়েছি, এখনও পড়ি, শরীর শিউরে উঠে। হায় হায়! আল্লাহর কত হুকুম অমান্য করেছি! তাঁর কত হক্ক বুঝে না বুঝে নষ্ট করেছি! তাঁর সৃষ্টির কত অনিষ্ট আমার দ্বারা হয়েছে! কত আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আমার দ্বারা লঙ্ঘিত হয়েছে! কত মাখলূকের কষ্টের কারন আমি হয়েছি! জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে! হায় হায়! আমার কি হবে? কি উপায় হবে আমার? আল্লাহ, আপনি আপনার সাথে রিলেটেড ভুলভ্রান্তিগুলো ক্ষমা করে দিন! আপনার বান্দার সাথে, সৃষ্টিকূলের সাথে সংঘটিত আমার অপরাধগুলো ক্ষমা করানোর দায়িত্ব আপনি গ্রহন করে নিন! আয় আল্লাহ, আপনিতো তা পারেন। অনায়াসেই পারেন! আপনারতো কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। হবেও না কখনও! আল্লাহ! আমার দ্বারা আপনার যেসব মাখলূক ঠকেছে, কষ্ট পেয়েছে, আঘাত পেয়েছে, ব্যথা পেয়েছে, দু:খ-লাঞ্চনা পেয়েছে, তাদের থেকে আমাকে ক্ষমা করার দায়িত্ব আপনি গ্রহন করুন। বিনিময়ে আপনার সীমাহীন ভান্ডার থেকে তাদের প্রত্যেককে অগনন দান করুন। আপনার রহমতের খাজানাকে তাদের জন্য অবারিত করুন। হে মার্জনাকারী! হে মহান! হে মহামহিম! হে অসীম-অপরিসীম ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী প্রভূ মহিয়ান!
প্রিয় বন্ধু, বিশ্বাস করুন, এই প্রিয় দোআটি পড়ার সময়ে কেন জানি না, আমি বারবার অশ্রুসজল হয়েছি! বেদনাহত পাখির মত ছটফট করেছি! মালিকের সামনে অবনত মস্তকে নিজেকে সোপর্দ-অর্পন-সমর্পন করতে আরও বেশি উদগ্রীব-উৎকন্ঠিত হয়েছি! মনের কোনে জেগে উঠেছে, অন্যরকম এক অনুভব-অনুভূতি! কেন যেন আমার মালিককে, আমার প্রিয়তম প্রভূকে বার বার প্রান খুলে বলতে ইচ্ছে করেছে- 'প্রভূ হে! পৃথিবীতে অনেকেই দেখি সুন্দর বাড়ি-ঘর সাজিয়ে সংসার পাতেন, আয় আল্লাহ! আমারতো ওরকম তেমন কিছু করা হয় নি! আমারতো গোছানো কোন কিছু নেই! আমি নিজে যেমন অগোছালো আজীবন! আমার পৃথিবীটাও সেরকমই রয়ে গেল! আয় আল্লাহ! বন্ধুরা গাড়ি-বাড়ি-ব্যাংক ব্যালেন্স কত কিসের গল্প শোনান! আয় আল্লাহ! আপনিতো জানেন, আমি কেন সবসময় তাদের সামনে অলক্ষ্যেই-চেতন কিংবা অবচেতনে চেপে যাই! অনেক কিছুতে গুটিয়ে যাই! যার ব্যাংকই নেই, তার আবার ব্যালেন্স! যার আশ্রয়ই নেই, তার আবার আবাস-নিবাস! যার আপন বলতে কেউ নেই, তার আবার সহায়-স্বজন! প্রভূ গো! কষ্ট নেই, কোন দু:খ নেই, কোন আফসোস-হা-পিত্যেস নেই, আপনিতো রয়েছেন! আমার বলতেতো আপনিই কেবল! আায় আল্লাহ! আমার তবে কিসের অভাব? কিসের শুন্যতা? কিসের অপ্রাপ্তি? কিসের অপূর্নতা? আয় রব! আপনি দয়া করে আপনার কৃপা দিয়ে, দয়া দিয়ে, প্রেম-প্রেমানল দিয়ে আমার অন্তরকে পূর্ন-পরিপূর্ন করুন! আপনাকে চেনার-জানার-ভালবাসার তাওফিক দান করুন! আয় আল্লাহ! আয় প্রিয় মালিক আমার! পৃথিবী গোছাতে পারি নি আফসোস নেই। আপনি কি আমার আখেরাতটা একটু গুছিয়ে দেবেন?'
মনের কোনে বারংবার ইচ্ছেরা ডানা মেলেছে। প্রিয় বাইতুল্লাহর চৌকাট ধরে। বিনীত ফরিয়াদ জানাই প্রানখুলে মালিকের দরবারে। নিকৃষ্ট অত্যাচারী ফেরাউনের পূন্যবতী সাধ্বী স্ত্রী হযরত আছিয়া আলাইহাসসালামের মত করে। তারই ভাষায়। কুরআনের অপূর্ব বাচনিকে- 'রব্বিবনি লি ইনদাকা বাইতান ফিল জান্নাহ', 'প্রিয় রব হে! আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মান করে দিয়েন!'
বন্ধুরা, ক্ষমা চাচ্ছি। বার বার ঝাপসা হয়ে আসা চোখকে আর কত ঠেকিয়ে রাখা যায়! এ পর্বে আর নয়। ইনশাআল্লাহ, পরবর্তী পর্বে সামনে যাওয়ার চেষ্টা থাকবে।
আল্লাহ পাক আমার অক্ষমতা ক্ষমা করুন। অপরাধ মার্জনা করুন। সকল ভাই-বোনকে নেককা্র মুত্তাকী হিসেবে কবুল করুন। প্রত্যেককে বাইতুল্লাহর মুসাফির হওয়ার তাওফিক প্রদান করুন। আমীন।
কৈফিয়ত: প্রত্যেক চক্করের জন্য নির্দিষ্ট করে কোন দোআ পড়া জরুরী নয়। তবে মুহাক্কিক আলেম-উলামাদের মাধ্যমে বাছাইকৃত কিছু উত্তম দোআর একটি সংকলন রয়েছে। এক এক চক্করে পড়া যায় দোআগুলো। আর এই সংকলনটিতে প্রত্যেক ভাল বিষয়াদি যা দোআর ভেতরে বান্দা আল্লাহ পাকের নিকট চাইতে পারেন, মোটামুটি উঠে এসেছে। ওখানে গেলে তো সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। মালিকের সামনে দাস! কিছু কি আর মনে থাকে! এইরকম একটি সংকলন কাছে থাকলে সেটি সময়মত কাজে দেয়। তবে, সর্বোপরি আমাদের মনে রাখতে হবে, তাওয়াফের সময় যে কোন দোআ করা যায়। আর রুকনে ইয়ামেনী থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত অংশটুকু অতিক্রমকালে ''রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান না-র " দোআটি বার বার পড়া উত্তম।
এই পর্বেও যুক্ত করা হল প্রিয় বাইতুল্লাহর কিছু চোখ জুড়ানো ছবি। আশা করি ভাল লাগবে প্রত্যেকের।
কা'বা শরীফের ছাদের উপরে তাওয়াফের মনোরম দৃশ্য।
আলো ঝলমলে পবিত্র বাইতুল্লাহর অন্যরকম সৌন্দর্য।
রৌদ্রকরোজ্জ্বল পবিত্র বাইতুল্লাহয় তাওয়াফের দৃশ্য।
১৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারে সউদি বিন লাদেন গ্রুপ নির্মিত ১২০ তলাবিশিষ্ট ৬০১ মিটার উঁচু বিশাল জমজম টাওয়ার। যার প্রতি ফ্লোরে জায়গার পরিমান 3,343,680 স্কয়ার ফিট। এর চূড়ার চার দিকে বসানো হয়েছে সময় দেখার জন্য পৃথিবীর সবচে' বড় সাইজের চারটি বিশাল ঘড়ি। প্রতিটি ঘড়ির আয়তন ১৪১ ফুট x ১৪১ ফুট। দূরে পবিত্র বাইতুল্লাহ।
খুব নিকট থেকে বাইতুল্লাহর সৌন্দর্য্য।
অনন্য! অপরূপ! বাইতুল্লাহ কমপ্লেক্স!
পবিত্র বাইতুল্লাহর ভেতরের বিরল দৃশ্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২১