somewhere in... blog

শিয়া-doctrine-এর ফাঁদে পা দেবার আগে নিজের দ্বীনকে জানুন-৪

২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

আস সালামু আলাইকুম!

নব্য "বাঙ্গালী শিয়া” সহ যারা "ঘোলা পানিতে মাছ শিকার” করতে চান, তারা একটা তথ্য দিয়ে থাকেন: কুর’আনে ৬৬৬৬ সংখ্যক আয়াত রয়েছে বা কুর’আনের আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬। আপনি যদি খুঁজে দেখতে চান এই সংখ্যাটা কোথা থেকে আসলো তবে দেখবেন যে, কুর’আনের এই আয়াত সংখ্যা কুর’আনিক বিজ্ঞানের (উলুমুল কুর’আনের) একজন স্কলারও উল্লেখ করেন নি। কুরআনের আয়াত সংখ্যা কত এই নিয়ে ইসলামী বিশ্বের বড় বড় স্কলাররা অনেক বই লিখেছেন, যে গুলোর অন্যতম হচ্ছে:

Adad al-Madani al-Awwal by Nafi' bin Abd al-Rahman al-Madani
Adad al-Thani by same author
al-Adad by 'Ata bin Yisar
al-Adad by Hamza al-Ziyyat
al-Adad by Khalf bin Hisham
al-Adad by Muhammad bin Eisa
al-Adad by al-Kisai
al-Adad by 'Aasim al-Juhdari
al-Adad by Khalid bin Ma'daan
Kitab by Abu Ubaid bin Sallam
Adad Aai al-Quran by Abu Hafs al-Tabari

এদের কেউ কখনো বলেন নি যে, কুর’আনে ৬৬৬৬ সংখ্যক আয়াত রয়েছে। তাহলে কথাটা আসলো কোথা থেকে? এর উত্তর হচ্ছে: খৃষ্টান মিশনারীরা এধরনের কথা, বলতে গেলে, আমাদের মুখে পুরে দিয়ে গেছে - আর আমরা অজ্ঞতাবশত কোন রকম verification ছাড়াই সে কথা মুখ থেকে মুখে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। ভারতবর্ষে তথা আমাদের এই অঞ্চলে এই তথ্যের অন্যতম প্রচারকারী হচ্ছে ঔপনিবেশিক বৃটিশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কোলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার সূত্র। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, কোলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার প্রথম ২৫ জন প্রিন্সিপাল ছিলেন খৃষ্টান মিশনারী বা পাদ্রী। এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার উদ্দেশ্য কি তা বিশ্বাসী মুসলিম মাত্রেরই জানার কথা। খৃষ্টান ধর্মতত্ত্বে ৬৬৬ হচ্ছে শয়তান বা সেই ”দানবের” সংখ্যা (sign of the Anti-Christ) যে কিনা যীশুর বিপরীত সত্তা (অনেকটা ইসলামে দাজ্জাল বলতে যে ভীষণ দুষ্ট, মন্দ ও দানবীয় সত্তার ধারণা রয়েছে তেমন)। আল্লাহর কালাম ও ইসলামের নবী (সা.)-কে শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত করতে, তারা এই বানোয়াট আয়াত সংখ্যা আবিষ্কার করেছে।

এই গ্রুপের এক নব্য ”বাঙ্গালী শিয়া” এক মন্তব্যে হঠাৎ বলে বসলেন যে, কুর’আনে ৬৬৬৬ সংখ্যক আয়াত রয়েছে, কিন্তু, এখন দেখা যায় যে আদি সংখ্যা থেকে ৪৩০টি আয়াত কম রয়েছে - সেগুলো গেলো কোথায়। তিনি সম্ভবত বুঝাতে চেয়েছেন যে, হযরত আবুবকর (রা.) ও উমরের (রা.) মত সাহাবীরা - যাদের আমরা এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ মুসলিম মনে করে থাকি এবং যাদের তারা গালি দিয়ে থাকেন ও জাহান্নামী মনে করে থাকেন - তাঁরা ঐ ৪৩০টি আয়াত সরিয়ে ফেলেছেন (নাউযুবিল্লাহ্)। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম যে, তিনি ৬৬৬৬ সংখ্যাটি কার কাছ থেকে পেলেন, [উপরে খৃষ্টান ধর্মতত্ত্বের আলোচনার আলোকে] শয়তান পূজারীদের কাছ থেকে? তিনি তখন বললেন যে, তার হাতের কাছ ৩টি কুর’আন রয়েছে, যার দু’টি বাংলা অনুবাদ এবং তাতে নাকি ঐ সংখ্যক আয়াত রয়েছে বলে লেখা রয়েছে। আমি অবশ্য কয়েকটা বাংলা অনুবাদ ঘেঁটেও সংখ্যাটা খুঁজে পাইনি, তবে এমন তথ্য থাকা অসম্ভব নয় - কোলকাতা আলীয়া মাদ্রাসাকে সূত্র হিসেবে গ্রহণ করলে এবং কোন বাছ-বিচার ছাড়া তাদের দেয়া তথ্য তুলে দিলে কেউ বলতে বা লিখতেই পারেন যে, কুর’আনে ৬৬৬৬ আয়াত রয়েছে। এখানে বলা আবশ্যক যে আমাদের কথিত সেই নব্য "বাঙ্গালী শিয়া” এই প্রসঙ্গে যে fallacious কথাটি বললেন তা হচ্ছে এই যে, তিনি এমন কুর’আন হাতের কাছে পেয়েছেন [যেমন মৌলানা আশরাফ আলী থানভীর ব্যাখ্যা সমেত সহীহ নূরানী "কোরান শরীফ”] যাতে লেখা আছে যে কুর’আনে ৬৬৬৬ আয়াত রয়েছে - আমার প্রশ্ন হচ্ছে: তাহলে ৪৩০টি আয়াত হারিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন? তাহলে তো ঐ কুর’আনে ৬৬৬৬ আয়াত থাকার কথা। ঐ কুর’আনের কপি এবং অপর কপির ভিতর text যদি হুবহু একই হয় তবে বুঝতে হবে যে, কুর’আনের কোন আয়াত হারিয়ে যায় নি বরং আয়াত সংখ্যা গোনার ব্যাপারে কোন সমস্যা হয়েছে। কষ্ট করে গুনে দেখলেই হয়, সেখানে ৬৬৬৬টি আযাত আছে কিনা - যদি না থাকে তবে বুঝতে হবে সংখ্যাটা উল্লেখ করতে ভুল হয়েছে - ব্যস!

এখন আসুন আমরা দেখি কুর’আনে কত সংখ্যক আয়াত রয়েছে বলে বিভিন্ন ধারার স্কলাররা মনে করেন এবং এব্যাপারে প্রথম যুগ থেকেই স্কলারদের ভিতর কেন মতপার্থক্য দেখা দিল!

প্রথমত: কুর’আনের একটা বাক্য বা বাক্যাংশ পড়তে গিয়ে কোথায় থামতে হবে [যেটাকে আমরা ওয়াকফ করা বলি], তা নিয়ে স্কলারদের ভিতর মত পার্থক্য ছিল। এটা আয়াত সংখ্যা ভিন্ন গণনা করার একটা কারণ।
দ্বিতীয়ত: সূরা ফাতিহা বা অন্যান্য সূরার শুরুতেও যে, "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” রয়েছে - তা কুর’আনের আয়াত হিসেবে গণ্য করা হবে কি হবে না, এ নিয়ে মত পার্থক্য থাকাতে আয়াতের সংখ্যা ভিন্ন হয়েছে।
তৃতীয়ত: কুর’আনের ২৯টি সূরার শুরুতে "আলিফ-লাম-মীম” বা "হা-মীম”-এর মত যে হরফ সমষ্টি রয়েছে [যেগুলোকে আমরা মুক্বাত্তা’আত বলে থাকি] সেগুলোকে কেউ কেউ ভিন্ন আয়াত বলে গণ্য করেছেন - অন্যরা বলেছেন যে, সেগুলো আসলে পরবর্তী আয়াতের অংশ।
এসব কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই হুবহু একই text থাকা সত্ত্বেও আয়াত সংখ্যা ভিন্ন হয়েছে। এব্যাপারে ভিন্ন গণনাগুলো হচ্ছে:

১)কুফার স্কলারদের গণনা অনুযায়ী আয়াত সংখ্যা হচ্ছে ৬২৩৬ - পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতে এই গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
২) বসরার স্কলারদের মত অনুযায়ী এই সংখ্যা হচ্ছে ৬২১৬ - তাঁরা আসীম বিন হাজ্জাজের মত অনুসরণ করেন, যিনি ছিলেন প্রথম পর্যায়ের ধর্মান্তরিতদের একজন।
৩) সিরিয়ার স্কলারদের মতে কুর’আনের আয়াত সংখ্যা হচ্ছে ৬২৫০ - তাঁরা আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমরের(রা.) গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
৪) মক্কার স্কলারদের মতে সংখ্যাটা হচ্ছে ৬২১২।
৫) মদীনার স্কলারদের মতে তা হচ্ছে ৬২১৪।

কেউ রেফারেন্স দেখতে চাইলে নিম্নলিখিত লিংকগুলোতে কিক করতে পারেন:

Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Qur'an
Click This Link

ফি আমানিল্লাহ্!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুমি আমার দূরে থাকা ভীষণ কাছের কেউ

লিখেছেন একাকি উনমন, ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:০৫

তুমি আমার দূরে থাকা ভীষণ কাছের কেউ,
তুমি আছো বলেই মনে খেলছে সুখের ঢেউ।
তোমার দেখা পাইনা যেন মেঘ লুকানো চাঁদ
তুমি আছো বলেই মনে ভাংছে সুখের বাঁধ।

তুমি যেন গভীর রাতের শব্দহীন এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন পঙক্তিমালা- ০৯

লিখেছেন shubh+r, ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৫০

সব ছুঁয়ে দেখেছি—
শিউলি ফুলের গন্ধ, শিশির ভেজা ঘাস,
নদীর ওপার থেকে ভেসে আসা গান,
সময়ের থালায় জমা পুরোনো স্বপ্ন,
ভুলে যাওয়া প্রতিশ্রুতির ছায়া।

তবুও বসে আছি—
বুকের মধ্যে এক পাহাড় আশা নিয়ে,
শুধু এক ফোঁটা বৃষ্টির... ...বাকিটুকু পড়ুন

ম্যাডাম খালেদা জিয়া....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

ম্যাডাম খালেদা জিয়া....



তিনি গৃহবধু থেকে রাজনীতিবিদ। আপোষহীন দেশনেত্রী! তার দেশ প্রেমিক সত্ত্বার কতটুকু আমরা জানি? একটি বিকৃতরুচীর বিরোধী দলের নেত্রীর কুৎসা শুনতে শুনতে জাতি প্রকৃত এক জননেত্রীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

লোভী বেগম জিয়া, ক্লাব-বধু থেকে ডোডো ডাকাত

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০১



জিয়াকে হত্যা করার সুযোগ করে দিয়েছিলো জিয়ার চয়েসের সেনাপ্রধান জে: এরশাদ ( পাকী ফেরত ); ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা জেনারেলকে ডিংগায়ে জিয়া এই কাজ করেছিলো। জিয়া হত্যায় অংশ নেয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়া মুলত তার সৌন্দর্যের জন্য এবং সংযত কথার জন্য জনপ্রিয়

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৭

মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। তাই তো গান রচিত হয়েছে ‘ যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম। ' বেগম খালেদা জিয়া জনপ্রিয় একজন নেত্রী। কিন্তু আমার ধারণা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×