এইচএসসি পাশের পর কী পড়বে, কেন পড়বে কোথায় পড়বে ?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমি এইচএসসি পাশ করি ১৯৮৪ সালে। তারও আগে, আমাদের পাড়ায় একজন সিনিয়র ভাই ছিলেন, শহিদুল ইসলাম বাদল (প্রকৌশলী, বর্তমানে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী)। বাদল ভাই ছিলেন আমাদের বন্ধু, ফিলসফার এবং গাইড। স্কুলে অঙ্ক নিয়ে কোন ঝামেলা হলে তার কাছে যেতাম, ইন্টারে ম্যাথের প্রাইভেটটাও তাঁর কাছে পড়েছি। তো, বাদল ভাই-এর কাছে জীবনের লক্ষ্য ছিল একটা- বুয়েটে ভর্তি হওয়া। কিন্তু তিনহাজারের গ্যাড়াকলে তিনি বুয়েটে পরীক্ষা দিতে পারেননি, পড়েছেন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সেই থেকে আমরা যারা তার ছোট তাদেরকে দেখা হলেই তিনি একটি মন্ত্র দিতেন – ফার্স্ট ডিভিশন বা স্টার কিংবা স্ট্যান্ড করাটা কোন কাজের কাজ না, যদি তুমি বুয়েটে ভর্তি হতে না পারো!!! আর বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য কেবল দরকার ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি আর ম্যাথ!
বাদল ভাই-এর পাল্লায় পড়ে আমার এমন অবস্থা হল যে, আমি বাংলা আর ইংরেজি পড়া বাদই দিলাম। খালি ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি আর ম্যাথ। এমনকি সাজেশনের তোয়াক্কা না করে বইগুলোর সব কাল কাল অংশ পড়ে ফেলেছি। কাজে আমি যেদিন বুয়েটের লাইব্রেরিতে ভর্তি পরীক্ষা দেই সেদিন সেই হলে আমিই ছিলাম একমাত্র যে বোর্ডে প্লেস করে নাই কিন্তু ফিজিক্স কেমিস্ট্রি ম্যাথে প্রায় ৯০% নম্বর পেয়েছে!
সে যাই হোক। ভর্তি পরীক্ষার ফরম নিতে যখন আসি তখন শুনলাম সবার পছন্দ হলো ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। মানে সেটা হল ফার্স্ট চয়েজ। যেমন মেডিকেল ডিএমসি। কাজে, সবার মত আমিও সেটাই দিলাম। এবং ভর্তিপরীক্ষার মেধা তালিকার সামনে থাকায় সেটাই পেয়েছি। কিন্তু তখন জানতাম না ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপারটা কী?
ডিএমসির ব্যাপারটা বোঝা যায়। কারণ সারা দেশে মেডিকেল কলেজগুলোর সিলেবকস এক। কাজে সবচেয়ে বনেদিটাতে পড়াটা সবার প্রথম পছন্দের হবে সেটা স্বাভাবিক।
কিন্তু সিভির ইঞ্জিনিয়ারিং এর সঙ্গে ইলেকট্রিক্যালের পার্থক্য কে জানে? আমি তো জানি না। আমার চাচা, তখন রেলের বড় প্রকৌশলী, নিজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বললেন ইলেকট্রিক্যালএর তো চাকরি নাই, পড়ে কী হবে! তারপরও অন্যদের থেকে তো পিছায় থাকতে পারি না।
বুয়েটে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর আমরা একটা বিজ্ঞান চেতনা কেন্দ্র বানাই। সেখানে আমরা ব্যপকভাবে ফিজিক্স পড়তে শুরু করি। আমার তখন মনে হত, আহা, ফিজিক্স কেন পড়লাম না!!!
আমাদের ক্লাসের কয়েকজনকে দেখেছি, ওরা পরে আবিস্কার করেছে ওদের পড়া দরকার ছিল সিভিল কিন্ত পড়ছে ইলেকট্রিক্যাল। আমাদের আগের ব্যাচের তুহিন তো, মেকানিক্যাল পড়বে বলে একবছর লস দিয়ে আবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেকানিক্যাল-এ ভর্তি হয়েছে।
আমাদের সময় ভর্তিপরীক্ষা ততটা কঠিন ছিল না, এখন যতটা হয়েছে। ইচ্ছে করলে কয়েকজায়গায় পরীক্ষা দিয়ে ভর্তিও হওয়া যেত একসঙ্গে। কাজে, ক্লাশ করেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। এখন তো সেই সুযোগ নাই।
এখন সকল সিদ্ধান্ত নিয়েই ভর্তি হতে হয়।
আর আমাদের বিভাগ নির্বাচনের পুরোটা হয় পরের মুখে ঝাল খেয়ে!
এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখার যে স্টাইল সেটি এককরম আর অনার্স কোর্স সম্পূর্ণ অন্যরকম। কারণ সেটা বিশেষায়িত। অনেক কিছু পড়ার সুযোগ সেখানে থাকে না। ইন্টারে ম্যাথ করতে ভাল না লাগলে কয়েকদিন ফিজিক্সে ডুব মারা যায়। কিন্তু যে কীনা ম্যাথে অনার্স করবে তারা খাই না খাই ম্যাথই করতে হবে!!!
এমন একটা খাই না খাই-এর সিদ্ধান্ত কী আমাদের শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে নিতে পারে এখন না কি আমাদের মত বাদল ভাই, ইনি চাচা কিংবা মামারা সেটি ঠিক করে দেয়?
পশ্চিমা বিশ্বে তাই এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীকে নিতে দেয়। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো প্রথম বর্ষে সবাই একই জিনিস পড়ে। তারপর ঠিক করে কোনটাতে স্পেশালাইজেশন করবে। আমাদের আর সেখানে ফেরৎ যাওয়ার উপায় নাই।
কাজে, বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় সঠিকভাবে বাছাই করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের কী সব তথ্য থাকে? তারা কি হুজুগে কোন সিদ্ধান্ত নেয়? কেন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে যদিও বা তার পছন্দের বিষয় সে পায় খুবিতে? এ কি কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের জন্য?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে এখন ১০৪টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সে কারণ আমরা ধারণা নিজের পছন্দের বিষয় না হলেও গোটা বিশেক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে। তাহলে সেখান থেকে কোনটা তার পছন্দ করা উচিৎ?
বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের বেলায় কী কেবল না, বাপ-চাচাদের পছন্দ, প্রেমিক/প্রেমিকার বাড়ি বা বিশ্ববিদ্যালয় – এইসব কিছুকেই প্রাধান্য দিতে হবে? নাকি অন্য কোন কিছু আছে?
এইবারে যারা এইচএসসি পাশ করেছে তাদের চিন্তাভাবনার জগতে আমার কোন এন্ট্রি নাই। থাকলে হয়তো বুজতে পারতাম। তবে, এটা বুজি যে, হাতে গুনা কয়েকজন এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোথায় পড়বে এবং তারা সেখানে পড়তে পারবে। কিন্তু বাকীদের অনেকই ব্যাপারটা ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল আর ভাগ্যের হাতে নিজেকে সমর্পন করে রেখেছে। তাদের জন্য কী কোন পরামর্শ দেওয়া যায়?
চার বছর পরে কর্মসংস্থান, দেশ এবং বিদেশের গন্তব্য এবং ডিগ্রীর বাজার মূল্য নির্ধারণ করার কোন প্রক্রিয়া যদি শিক্ষার্থীদের জানা থাকে তাহলে কী সেটা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে?
আমি ঠিক বুঝি না।
আগামী কয়েকদিনে যদি এই বোঝার কাজটা করতে পারি তাহলে চেষ্টা করবো কিছু তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সেটি সংশ্লিষ্টদের জানাতে। আর যদি আলসেমির জন্য সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে নিজগুনে মার্জনা করে দেবেন।
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...
অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা
আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************
যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=
০১।
চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুড়ি শব্দের গল্প
জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!
সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন