আমার তীব্র কষ্ট হয় যখন দেখি আমার প্রগতিশীল বন্ধুরা ফাঁসির জন্য অধীর উৎসাহে অপেক্ষা করছে। দেশে ফাঁসির চেয়ে বড় চাহিদা আমাদের নেই। বিপক্ষরা আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে। একাত্তরে যারা আমাদের নির্বিচারে নির্মম ও বর্বোচরিতভাবে হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। একাত্তরে রাজাকারদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। সেই সময় যে নারী ধর্ষিতা হয়েছেন, যে মানুষকে খুন করা হয়েছে তার বিচার অবশ্যই হবে তবে সেটা ফাঁসি কেন? আমরা কি সভ্য দুনিয়ার মতো এই ফাঁসির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি না। বলতে পারি না, ব্যক্তি যদি খুন করতে না পারে তাহলে রাষ্ট্রও পারে না। একজন বিচারক একজন অপরাধীকে ফাঁসি দিতে কেন পারবে? একজন বিচারক কি একজন মানুষকে তৈরি করতে পারবে। একজন বিজ্ঞানী যদি একজন মানুষ সৃষ্টি করার সক্ষমতাও অর্জন করে তাহলেও তার ক্ষমতা থাকা উচিত হবে না মানুষকে হত্যা করার।
হত্যার জন্য আমার বিভৎসভাবে চিৎকার করছি। মনে হচ্ছে একজন গ্লডিয়ারকে হত্যা করছে সিংহ। আর সিংহের হিংস্ত্রতায় দর্শকরা চিৎকার করে উঠছে। লাস্ট ডেইজ অফ পম্পেই উপন্যাসেও পড়েছি গ্লডিয়ারদের হত্যার পরবর্তী গগনবিদারী চিৎকারের কথা। আমরা দেখেছি সেই অবস্থাতেই লাভায় চাপা পড়তে থাকে পম্পেই। আমরাও ফাঁসির গগনবিদারী চিৎকারে চাপা পড়ছি।
একজন মানুষকে ফাঁসি চাওয়া কোন সভ্য মানুষের পক্ষে সম্ভব বলে মনে করি না। যারা ফাঁসির জন্য গলা ফাটায় তাদের সেই কণ্ঠস্বরে দেখি দানবতা। আমরা কখনও সভ্য ছিলাম, ইতিহাস সেটা বলে না। বাংলাদেশে মিশরীয়, সিন্ধু বা চৈনিক সভ্যতার মতো কোন সভ্যতাও ছিল না। আজকের আমেরিকা ও ইউরোপের মতোও আমরা সভ্য নই। আমরা এখনও ফাঁসির জন্য চিৎকার করি, এটা কত বছর আগে করেছে আমেরিকা ইউরোপ। যে লোকটি নরওয়েতে বহুলোককে গুলি করে হত্যা করলো তার জন্যকি নরওয়ে ফাঁসি চেয়ে কাতর হয়েছে? হয়নি কারণ ওরা সভ্য। আমরা অসভ্য বলেই বিচারের পরিবর্তে ফাঁসি চাই। আমরা অসভ্য বলেই বিচারের পরিবর্তে ফাঁসি চাই।