ইরাকে খেলাফত প্রতিষ্ঠাকারী ইসলামিস্টদের বর্বরতা !!!
মধ্যপ্রাচ্যে ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গীদের উত্থান, সাফল্য ও জঙ্গীদের নির্মমতা বিশেষ করে শিয়া মুসলিমদের নির্বিচারে গণহত্যা আলোচিত এখন সারা বিশ্ব মিডিয়ায়। তাই হট টপিক হিসাবে স্পিরিচ্যুয়ালিটির দিক দিয়ে এই ইস্যুর মূল পর্ব -পিছনের ইতিহাসে যেতে হল। ইসলামে শিয়া-সুন্নী/ওহাবী দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। অন্তত আমার কাছে এই দ্বন্দ্ব আরবের গোত্রীয়গত বিভেদ -যেখানে দুই গোত্র বনু হাশেম ও বনু উমাইয়ার ক্ষমতার লড়াই। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জন্মেরও পূর্ব থেকে এই দ্বন্দ্ব চলে আসতেছে বংশ থেকে বংশানুক্রমে। তখন ছিল মক্কার দুই প্রধান গোত্র বনু হাশিম ও বনু উমাইয়াদের দ্বন্দ্ব। বনু হাশিম থেকে নবী মোহাম্মদের জন্ম হওয়ার কারণে বনু উমাইয়ারা নিজেদের শক্তি, প্রভাব প্রতিপত্তি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানো ভয়ে নবী মোহাম্মদ (সা) এর নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে।সেই সূত্রে নবী পরিবারকে প্রায় তিন বছরের মত মক্কায় অবরোধ ও অবশেষে মোহাম্মদের (সা) মদিনায় গমন । তারপরেও মক্কার শীর্ষস্থীনীয় উমাইয়ারা থেমে থাকেনি। মোহাম্মদের নেতৃত্বে বনু হাশিমের বিপ্লবের ভয়ে ভীত হয়ে তারা বদর, উহুদ, খন্দক নামে বিভিন্ন অভিযান চালায় মদিনায়। অবশেষে মোহাম্মদের নেতৃত্বে বনু হাশিমের মক্কা জয় অতঃপর ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় বনু উমাইয়াদের দলে দলে ইসলাম গ্রহন।অবশ্য তার আগেই বিশেষ করে হুদাই বিয়া সন্ধির পরপরই অনেক উমাইয়া ক্ষমতার পালা বদল বুঝতে পেরেই ইসলাম গ্রহন করেছিল। আর মক্কা জয়ের পর মোহাম্মদ ও বনু হাশিমের শত্রুদের নেতার নেতা আবু সুফিয়ান ও তার পুত্র মোয়াবিয়া,আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দাও ইসলাম গ্রহন করে! বনু হাশিম ও বনু উমাইয়াদের দ্বন্দ্ব কিরুপ ছিল তা বুঝতে হলে এই উদাহরণটিই যথেষ্ট যে উহুদ যুদ্ধে নবী মোহাম্মদের চাচা আমীর হামজার লাশ কেটে কুটে কলিজা বের করে চিবিয়ে খেয়েছিল আবু সুফিয়ানের স্ত্রী ও মুয়াবিয়ার মাতা হিন্দা !
ইরাকে খেলাফত প্রতিষ্ঠাকারী ইসলামিস্টদের বর্বরতা !!!
বনু হাশিম ও বনু উমাইয়াদের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নবী মোহাম্মদের মৃত্যুর পরপরই নতুন মাত্রা পায়। নবুওয়াত গেলেও রাজনৈতিক নেতৃত্ব যাতে বনু হাশিমের কাছে যেতে না পারে মোহাম্মদের মৃত্যুর পরপরই তার লাশের দাফন কাফন নয় বরং একটানা তিন দিন ধরে বনু সকিফাতে শলাপরামর্শ করে অবশেষে ওমর বিন খাত্তাবের জোর জবরদস্তি মূলক প্রস্তাবে খলিফা হন আবু বকর ! তখন ওমর বলেছিলেন, যে এই নির্দেশ না মানবে তাকে কতল করা হবে !! যাইহোক, প্রথম তিন খলিফার আমলে উমাইয়ারা প্রশাসনের সর্বত্র জায়গা দখল করে ! ওমর ও ওসমানের সময় প্রশাসনের এমন কোনো ক্ষেত্র ছিল না যেখানে উমাইয়াদের বিচরণ ছিল না ! ওসমান নিহত হওয়ার পর সাধারণ মদিনাবাসী আলীকে খলিফা নির্বাচিত করল ও নির্বাচিত খলিফা আলী দুর্নীতিপরায়ন উমাইয়া গভর্ণরদের বরখাস্ত করলেন, কিন্তু সব গভর্ণর মেনে নিলেও মুয়াবিয়া খলিফা আলীর নির্দেশ মানলেন না ! সিরিয়ার গভর্ণর মুয়াবিয়া সেই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে পাল্টা খলিফা ঘোষণা করলেন ! বরখাস্তকৃত উমাইয়া গভর্ণররা মুয়াবিয়ার পতাকাতলে সমবেত হয়ে খলিফা আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন ! ক্ষমতার লড়াইয়ে নবী মোহাম্মদের কষ্টি পাথরে বাছাই করা সোনার সাহাবারা একে অপরকে হত্যা করা শুরু করল ! এরপরের ইতিহাস সবার জানা ! মুয়াবিয়া তার পুত্র এজিদকে খলিফা মনোনীত, এজিদের মক্কা দখল, কাবায় অগ্নি সংযোগ ও মোহাম্মদের রওজা মোবারককে ঘোরার আস্তাবলে পরিণত করা সবার জানা ! কারবালার করুণ বিষাদময় কাহিনীও সবার জানা ! এরপর উমাইয়ারা যখন রাজতন্ত্র কায়েম করল তখন থেকেই তারা নবী বংশকে নির্বংশ করা শুরু করল ! সেই যে শুরু সেই নবী বংশের অনুসারী শিয়াদেরকে এখনও হত্যা করেই যাচ্ছে উগ্র সুন্নীরা !!! শুরু হয়েছিল আলীকে দিয়ে ! এরপর হাসান, হুসেইনসহ বাদ বাকি সবাইকে। আর এখনও সেই ধারা বর্তমান শিয়া সুন্নী নামে।তবে ক্ষমতার লড়াইয়ে এই শিয়া-সুন্নী বিভাজন শা্সকদের মধ্যে যতটুকু ছিল আপামর জনগণের মধ্যে ততটুকু ছিল না , কিন্তু জনগণের মধ্যে এই বিভাজনের তাত্ত্বিক রুপ দিয়ে এর প্রবল বিকাশ ঘটান সালাফি মতবাদের প্রবক্তা ইবনে তাইয়েমা ! তারই সুযোগ্য অনুসারী আব্দুল ওহাব এই মতবাদকে ব্রিটিশ ও ইবনে সৌদের সহযোগিতায় রাস্ট্রীয় মযার্দা দেন। কোনো মতবাদ রাস্ট্রীয় আনুকল্য ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তা দ্রুত বিস্তার লাভ করে-আজকের খ্রিস্টান, ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্মই তার বাস্তব প্রমান ! মুসলমানরা যেহেতু উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা জয় করতে পারেনি বা যায়নি তাই উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাস্ট্র নেই তেমনি বৌদ্ধরা এশিয়ার বাইরে কোনো দেশ জয় করেনি বলেই এশিয়ার বাইরে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ রাস্ট্র নেই !
এই পথ ও আদর্শ যদি শান্তির হয় তাহলে জাহান্নামের পথ কোনটি ?
যাইহোক, সৌদি পেট্রো ডলারের কল্যানে ঐ ওহাবি মতবাদ এখন দ্রুতগতিতে সমগ্র মুসলিম সমাজের মধ্যে প্রবলভাবে বিস্তার লাভ করেছে ! সমগ্র মুসলিম বিশ্বে জঙ্গী উত্থানের মূল রহস্য এখানেই। এই ওহাবিরা আরবে অবস্থিত ইসলামের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও স্থাপনাগুলোকে বুলডোজার দিয়ে নিয়মিতই ধ্বংস করতেছে ! ঐ যে ক্ষমতার লড়াইয়ের দ্বন্দ্ব বনু হাশিম ও বনু উমাইয়া-শাসকেরা গত হলেও তাদের অনুসারী শিয়া সুন্নী বিভাজন তারা রেখে গেছেন। বনু উমাইয়া শাসকেরা যেমন বনু হাশেমীয়দের মধ্যে যারা ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বি তাদের হত্যা করেছে তেমনি উগ্র সুন্নীরা মানে ওহাবিরা বনু হাশেমীয়দের অনুসারী শিয়াদের হত্যা করতেছে !!! এই দ্বন্দ্বের অপর পৃষ্ঠে শিয়া-সুন্নীর আড়ালে আমরা ইরান-সৌদির দ্বন্দ্বই দেখতে পাব। বনু হাশেমীয় মোহাম্মদ (সা) যেমন মক্কা জয়ের পর কাবা ঘর পুনর্দখল করেছেন ও শিরকের কারণে কাবা ঘর থেকে উমাইয়াদের রক্ষিত সকল দেব-দেবির মুর্তি অপসারণ করেছেন তেমনি সেই বনু উমাইয়াদের অনুসারী ওহাবি/সালাফিরা সেই শিরকের নামে পাথর পুজা নির্মূলের নামে পুনরায় কাবা ঘর দখল ও ধ্বংসের হুমকি দিয়েছে !!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬