সিরিয়া হচ্ছে জঙ্গীদের একটি আধুনিক প্রজননক্ষেত্র ! এই প্রজননক্ষেত্র তৈরির মূল হোতা হল পশ্চিমা পুজিবাদী রাস্ট্রগুলো যার নেতৃত্বে আছে যুক্তরাস্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও এদের সঙ্গে যুক্ত আছে কিছু দালাল সৌদি আরব, কাতার, জর্ডানসহ মেরুদন্ডহীন আরব রাজা বাদশাহগণ। এতে কোনো সন্দেহ নেই আরব দেশগুলির মধ্যে সিরিয়া ছিল আধুনিকতায় তুলনামূলক অগ্রগামী, কিন্তু সিরিয়ার ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস আজ সেই সিরিয়া হয়ে গেছে ইসলামিক জঙ্গীদের প্রজননক্ষেত্র আর সেখানে এই জঙ্গীদের উৎপাদনে সহবাসকারীরা হলেন উপরে উল্লেখিত দেশগুলি। প্রাপ্ত রিপোর্টে জানা গেছে সিরিয়ায় লড়াইড়ত যোদ্ধাদের মধ্যে সৌদি আরব, চেচনিয়া, তিউনেসিয়া, ইয়েমেন, মরক্কো, জর্ডান, লেবানন, তুরস্কসহ যুক্তরাস্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা রয়েছেন ।যুক্তরাস্ট্রের সিআইএ ও ব্রিটেনের এমসিক্সটিন গোয়েন্দা সংস্থা হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছে যে অদুর ভবিষ্যতে সিরিয়ায় লড়াইরত ইসলামিক জিহাদিস্টারা আমেরিকা ও ইউরোপে হামলা চালাতে পারে। তারা এ ইঙ্গিত দেন যে, সিরিয়ার এখন নতুন আফগানিস্থানে পরিণত হয়েছে । শুধু ইউরোপ ও আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা নয় সিরিয়ার তথাকথিত বিদ্রোহীদের অন্যতম মিত্র তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল গুলও একই ধরণের আশংকা ব্যক্ত করেছেন। তুরস্কের কুর্দি সমস্যা ছাড়াও চলতি ঘটনার ভবিষ্যত আচ করতে পেরে সিরিয়ার ইস্যুতে তুরস্কের আসাদ বিরোধী কঠোর অবস্থান এখন অনেকটাই পড়তির দিকে। জঙ্গীদের নতুন প্রজননক্ষেত্র সিরিয়ায় যেসব জঙ্গীরা যেতে পারছেন না যদিও অনেকেই হয়তো গেছেন আমার জানা নেই তবে যারা যেতে পারেনিনি তারা কিভাবে জেহাদ করবেন ? ভাই তো শহীদ হয়ে বেহেস্তে গেছেন ! আমাকেও যেতে হবে । কিন্তু ভিসা নেই বা পাওয়া যাচ্ছে না । তাহলে উপায় ? উপায় আছে- দেশের মানুষ মার । বোমা ফাটাও সিনেমা হলে, শিয়াদের মসজিদে বোমা হামলা চালাও । খ্রিস্টানদের গীর্জায় বোমা হামলা কর, হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দাও, প্রতিমা ভেঙ্গে ফেল, বাজারে, মাঠে-ঘাটে যেখানে পাও সেখানে বোমা ফাটাও । স্কুলে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা ফাটাও । একযোগে ৬৪ টা জেলায় বোমা ফাটাও ! মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী !
সিরিয়ার সন্ত্রাসীরা ইউরোপ বা আমেরিকায় ভবিষ্যতে পাল্টা আক্রমন করতে পারে এটা জানার পরেও কেন পশ্চিমারা সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের সমর্থন করতেছে ? এর কারণ আর কিছুই নয়-অস্ত্র বাণিজ্য। তথিাকথিত ইসলামিক জিহাদিরা পশ্চিমা দেশগুলিতে বড় জোড় দু’একটি বোমা হামলা চালাতে পারে এর বেশি কিছু নয় কিন্তু তাদের দ্বারাই পশ্চিমাদের অস্ত্র ব্যবসা আজকে রমরমা অবস্থা। একটু ভাল করে ভাবুন- আল কায়েদা, তালেবান, বোকো হারাম, সেপাহে সাহাবাসহ সিরিয়া ও ইরাকের ইসলামিক নুসরা ফ্রন্ট, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক ও সিরিয়া, পাকিস্থানের তেহরিকই তালেবানসহ আল কায়েদার সমস্ত অঙ্গ সংগঠন যে অস্ত্রগুলো দ্বারা যুদ্ধ করতেছে সেই অস্ত্রগুলো কাদের তৈরি ? আল কায়েদার অধিকাংশ অস্ত্রই আমেরিকারই তৈরি।যে আত্মঘাতি বোমা হামলা তারা চালায় নিরীহ মানুষ হত্যা করতে যেমন মসজিদ, গির্জা, এমনকি কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানেও সেই বোমাগুলো যুক্তরাজ্যেরই তৈরি। যে রকেট লাঞ্চার তারা ব্যবহার করে সেগুলোও জার্মানের তৈরি। এভাবে দেখা যাবে এই সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ব্যবহুত প্রতিটিই অস্ত্রই কোনো না কোনো পশ্চিমা দেশের তৈরি। আর এখন ইসরায়েলেরও অস্ত্রও যোগ হয়েছে আল কায়েদার অস্ত্র ভান্ডারে সিরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। প্রশ্ন হলো এই অস্ত্রগুলি কি পশ্চিমাদেশগুলি সরাসরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে সমর্পন করে ? খুব জরুরী না হলে নয় তবে পশ্চিমাদের অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা হলো তেল কুবের আরব রাজা বাদশাহগণ। এরা প্রতি বছর বা প্রতি মাসে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনে তেলের বিনিময়ে আর এই অস্ত্রগুলো তারা দেধারছে সরবরাহ করতেছে তথাকথিত ইসলামিক জিহাদিস্টদের। উদ্দেশ্য কোনো ইসলামিক রাস্ট্র কায়েম নয়-উদ্দেশ্য হলো ইরান ঠেকাও! আর সেই তথাকথিত ইসলামিক জেহাদিস্টরা মাতালের মত নেশাগ্রস্থ হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে টয়লেট পেপার হিসাবে যেমনটা ব্যবহার হয়েছে ও হচ্ছে পাকিস্থানে, আফগানিস্থানে, লিবিয়ায় ও ইরাকে।রাশিয়াকে বাগে আনতে না পেরে সৌদি আরর তার নিয়ন্ত্রিত আল কায়েদা সন্ত্রাসীদের দ্বারা রাশিয়ায় সন্ত্রাসী আক্রমন পর্যন্ত চালিয়েছে! হ্যাঁ, ইরান হলো এই ধনকুবের ও স্বৈরাচারী আরব রাজা বাদশাহদের প্রধান ভয়। এরা ইসরায়েলের ভয়ে মোটেই ভীত নয় বরং কেউ প্রকাশ্যে বা কেউ গোপনে ইসরায়েলের সাথে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ।
২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় এপর্যন্ত এক লাখেরও বেশি প্রাণহানী হয়েছে সিরিয়ায় আর লক্ষ লক্ষ হয়েছেন উদ্বাস্তু। তবে লড়াইটা মূলত সিরিয়ার সরকার ও কতিপয় বিদ্রোহীদের মধ্যে শুরু হলেও যুদ্ধ শুধু সেখানেই থেমে থাকেনি ।এরসঙ্গে জড়িত হয়েছে সিরিয়ার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শত্রু মিত্র । এখানে লড়াইটা এমন পর্যায় দাড়িয়ে গেছে যেন তা হয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তজার্তিক পরাশক্তিদের শক্তি পরীক্ষার লড়াইও । তবে লড়াইয়ে প্রথম দিকের দিকে সিরিয়া সন্ত্রাসী ও তাদের মিত্ররা এগিয়ে থাকলেও ক্রমান্বয়ে যুদ্ধের মাঠ প্রায় সিরিয়ার ও তার মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।আমি অবশ্য সিরিয়ার সহিংসার শুরুতেই বলেছিলাম যে প্রেসিডেন্ট আসাদের পতন সহজেই হচ্ছে না আর এখন বলতেছি সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পতন আর হবে না । এই ২০১৪ সালেই তার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হচ্ছেন ও জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন হলেও নি:সন্দেহে তিনি নিরুঙ্কুশ ভোট পেয়ে জয়ী হবেন অথচ সিরিয়ার সহিংসতার প্রথম দিকে এটা হওয়া সম্ভব ছিল না । এই ভয় থেকে সিরিয়ার তথাকথিত বিদ্রোহী ও তাদের মিত্র যুক্তরাস্ট্র, সৌদির প্রধান দাবিী হলো সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আসাদ প্রার্থী হতে পারবেন না ! অন্যদিকে সিরিয়ার সরকার ও তার মিত্র রাশিয়া, ইরানের প্রধান দাবি হল সিরিয়ার সমাধান সিরিয়ার দ্বারাই হতে হবে । কে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন আর কে হবেন না এটা বাইরের কোনো শক্তির বলার অধিকার নেই। সিরিয়ানরাই ঠিক করবে তাদের কে শাসন করবে।প্রেসিডেন্ট আসাদের জনপ্রিয়তা না থাকলে ভয় কিসের ? প্রেসিডেন্ট আসাদের ভাগ্য নিয়ে কার্যত ব্যর্থ হয়ে গেছে এই সদ্য সমাপ্ত জেনেভা-দুই সম্মেলন ! সিরিয়ার মিত্র ও শত্রু সবাই স্বীকার করবেন যে সিরিয়ার সমস্যা সমাধানে ইরান একটি অন্যতম আঞ্চলিক শক্তি। অথচ জেনেভা প্রথম সম্মেলনের ন্যায় জেনেভা-দুই সম্মেলনেও ইরানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি! তবে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ইরানকে আমন্ত্রণ জানালেও যুক্তরাস্ট্র, সৌদি ও সিরিয়ার তথাকথতি মোজাহিদদের চাপে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে বান কি মুন ইরানকে দেওয়া আমন্ত্রণপত্র প্রত্যাহার করে নেন যা কুটনৈতিক ইতিহাসে বিরল ! এই ঘটনার মাধ্যমে জাতিসংঘের স্বাধীনসত্তা আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে !
যাইহোক, সিরিয়ার যুদ্ধে প্রথমদিকে তথাকথিত বিদ্রোহীরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ইরান, রাশিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে এখন বিদ্রোহীরা কোনঠাসা হলেও এই যুদ্ধ তিন বছর পরেও সহজেই শেষ হওয়ার নয়-হয়তো লড়াই চলবে আরো কয়েক বছর। কারণ পশ্চিমাদের অস্ত্র বিক্রি যেমন প্রয়োজন তেমনি আরব রাজা বাদশাহগণ ও ইসরায়েলের প্রয়োজন ইরানকে শায়েস্তা করার।তবে খুব দেরীতে হলেও প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তার মিত্ররাই সিরিয়ার এই বহুমুখী যুদ্ধে কার্যত জয়লাভ করতে যাচ্ছেন-তবে এই জয় কোনো সিরিয়ানের নয় তেমনি প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারেরও নয় । প্রকৃতপক্ষে এই জয় হলো ইসরায়েলের যার প্রয়োজন ছিল একটি দুর্বল প্রতিবেশী সিরিয়া। আর জঙ্গীরা ? এরা অতীতে যেমন টয়লেট পেপার হিসাবে ব্যবহার হয়েছে তেমনি ভবিষ্যতেও হতে থাকবে কারণ আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের অস্ত্র বিক্রির জন্য জঙ্গীদের যে খুব বেশি প্রয়োজন !
সিরিয়ার সহিংসতা নিয়ে এর আগে আমার ধারাবাহিক তিন পর্ব আছে। আগ্রহী হলে পড়তে পারেন।
ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে সিরিয়া ( ১ম পর্ব)
ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে সিরিয়া ( ২য় পর্ব)
ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে সিরিয়া ( ৩য় পর্ব)