somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মিজানুর রহমান মিলন
আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

কোটা ব্যবস্থা মেধাবীদের জন্য প্রহসন ছাড়া কিছু নয় ও দেশকে মেধা শূন্য করার চুড়ান্ত নীল নকশা !!!

১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে ব্লগে একজনের মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংক্রান্ত কমেন্ট পড়লাম এরকম, আপনার বাবার সম্পত্তি কি আপনি ভোগ করবেন না ? নাকি তা দুস্থ জনগণের জন্য দান করে দিবেন ? তার কমেন্টটা পড়ে একটা প্রতি কমেন্টের কয়েক লাইন টাইপ করে মুছে দিলাম । ভাবলাম, শরীরের কোন অংঙ্গে পচন ধরলে তা কেটে ফেললে বা উপযুক্ত চিকিৎসা করলে হয়তো তা ভাল হয়ে যায় কিন্তু সেই পচনটা যদি মস্তিস্কে ধরে তাহলে যতই চিকিৎসা করেন তার সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা আছে বলে মনে হয় না ।এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল, কোন এক শিক্ষক তার এক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার বাবা কি করেন ? ছাত্রের গর্বের সহিত তড়িৎ জবাব, রাজনীতি করেন ! মানে দাড়ালো রাজনীতি কোন দেশ সেবা নয় বরং এটা হল একটা পেশা !

শরীরের মস্তিস্কের সাথে যদি কোন জাতির তুলনা করা যায় তাহলে আমাদের বাঙ্গালী জাতির সাথে কথাটা পুরোপুরি মানানসই । কারণ আমাদের সরকার ব্যবস্থা, সরকার ও জনগণের বৃহত্তর একটা অংশ যারা চাটুকারী ও সুবিধাভোগী তাদের মস্তিস্কে নির্ঘাত পচন ধরেছে । সেখানে এদের থেকে ভাল বক্তব্য ও ভাল কিছু আশা করা বৃথা । তবে কথায় আছে ঠেলার নাম বাবাজী । সেই ঠেলা দিতে পারলে হয়তো কিছুটা পচন রোধ হতে পারে।

আমার এক ফেসবুক বন্ধু একবার এক কমেন্টে বলেছিলেন, ভারত চীনের চেয়ে ১০০ বছর পিছিয়ে আছে কারণ ভারতে আছে কোটা ব্যবস্থা বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের জন্য কিন্তু সাচার প্রতিবেদন থেকে এটা জানা গেছে পশ্চিবঙ্গে যেখানে ৩০% মুসলমান সেখানে কোটা থাকার পরেও সরকারী চাকুরীতে তাদের সংখ্যা ১% । তার মানে দাড়ালো কাগজে কলমে সংখ্যালঘুদের কোটার কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই !

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেন, তাদের প্রধান টার্গেট থাকে বিসিএস। কিন্তু হায়! এখানে তাদের জন্য রয়েছে অমানবিক প্রহসন। বিসিএসে কোটার ছড়াছড়ি। মোট আসনের ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ ভাগ মহিলা কোটা, ১০ ভাগ জেলা কোটা, ৫ ভাগ আদিবাসী কোটা আর ৪৫ ভাগ মেধা কোটা। ভাবতে অবাক লাগে, ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে জন্য রয়েছে ৩০ ভাগ কোটা। আর ১৬ কোটি মানুষের জন্য রয়েছে ৪৫ ভাগ কোটা! এই বাকি ৪৫ ভাগ যা সাধারণের জন্য সেখানে আবার নিয়োগ বানিজ্য ও দুর্নীতে ভরপুর ! তাহলে মেধাবীরা যাবে কোথায় ?

গতকালকে বিসিএসের ফল প্রকাশ হয়েছে । বিসিএসের প্রিলিমিনারী ফলাফলেও কোটার ছড়াছড়ি। ফলাফল পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে সাধারণ মেধাবীদের ৭৫+ পেয়েও টিকেনি অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিপুতিদের ৫০ পেয়েও তাদের টেকানো হয়েছে !!! আমার মনে হয় এটাকে শুধু বৈষম্য বললেও ঠিক হবে না কারণে এটা স্রেফ প্রতারণা, জোচ্চুরী ও দেশকে মেধাশূন্য করার চুড়ান্ত নীল নকশা ছাড়া কিছুই নয় !

শুধু তাই নয়,এর আগে ৩২ তম বিসিএস ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের জন্য ছিল স্পেশাল । রাস্ট্রায়ত্ব সকল ব্যাংক যেমন সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশা্হী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের নাতিপুতিদের জন্য ছিল স্পেশাল নিযোগ !!!

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনেছেন, শহীদ হয়েছেন। তাদের ত্যাগ আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। কিন্তু তাদের জন্য কোটা নিয়ে বাড়াবাড়ি দেখলে দুঃখে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে তারা তাদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা চান সরকারের কাছে। আমার জানতে ইচ্ছে করে, আসলে তারা এসব সুযোগ-সুবিধার জন্য যুদ্ধ করেছেন নাকি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন

এই কোটা সুবিধায় কেউ চাকুরী পাওয়ার পর কি কখনো বলে বা স্বীকার করে যে তিনি ঐ বিশেষ কোটায় চাকুরীটা পেয়েছেন ? আমি এপর্যন্ত কাউকে পাইনি যে গর্বের সাথে বলেছেন যে আমি বিশেষ কোটার কারণে চাকুরী পেয়েছি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছি !!

যেসব ডাক্তাররা কোটার কারণে ডাক্তারী চাকুরী পান তারা কি কখনো তাদের ডাক্তারী সাইনবোর্ডে লিখে রেখেছেন যে , বিশেষ কোটায় ডাক্তারী চাকুরী প্রাপ্ত ?

শুধু কি তারাই এদেশের নাগরিক? আর আমরা কি গৃহপালিত জন্তু? গোটা জনগণের জন্য ০.১৩ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০ ভাগ আর ৯৯.৮৭ ভাগ সাধারণ জনগণের জন্য বরাদ্দ ৪৫ ভাগ আসন। এটা কোন ধরনের প্রহসন! মুক্তিযোদ্ধার কোটা সর্বোচ্চ ১ বা ২ ভাগ হতে পারে। যদি মেধার সঠিক মূল্যায়ন চাই, তাহলে তো কোটা থাকাই উচিত নয়। আমরা সবাই এদেশের নাগরিক। সবার সমান অধিকার। এ অধিকার সংবিধান প্রদত্ত। তাহলে কি আমরা বলতে পারি না যে, সরকার নিজেই জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করছে। সংবিধান প্রদত্ত জনগণের অধিকার থেকে সরকার জনগণকে বঞ্চিত করছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি পুতিদের জন্য পারলে মুক্তিযোদ্ধাদের আলাদাভাবে সম্মানিত করার ও দেওয়ার অনেক উপায় আছে । সরকার সেদিকে না যেয়ে শুধু তাদের সন্তান ও নাতি পুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ! আজকের যুগে কতজন ছেলে মেয়ে বা নাতিপুতি চাকুরী পাওয়া ও বিয়ে থা করার পর তাদের বাবা-মা ও দাদা দাদিদের দেখা শুনা করে ?

আবারো বলছি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়া অবশ্যই গর্বের বিষয় এতে কোন সন্দেহ নেই এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান তাতেও কোন সন্দেহ নেই ,কিন্তু আমার প্রশ্ন হল সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভিন্ন উপায়ে ও এর চেয়ে সম্মানজনক সুবিধা দিতে পারেন যা সবার জন্যই মঙ্গল । তাছাড়া কোটা সুবিধা তখনই দেওয়া যেতে পারে যদি অন্যদের বঞ্চিত না করে বিশেষ কাউকে সুবিধা দেওয়া হয় অর্থাৎ সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ।

যেভাবে তাদের নিয়ে মেতেছেন তাদের সবার চাকুরী দিয়েই যখন ছাড়বেন তখন তাদের পরীক্ষা নেওয়ার দরকার কি ? তাদের সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে বলুন আর চাকুরী দিয়ে দিন ! আর আমাদের জানিয়ে দিন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একজন সদস্যও বাকি থাকা পর্যন্ত আপনাদের কারো চাকুরী দেওয়া হবে না তাহলে সব ঝামেলা চুকে যায় !

তাই বলছি , দেশকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে হয় কোটা প্রথা সম্পূর্ণরুপে উচ্ছেদ করুন আর যদি মনে করেন দেশের উন্নতি, অগ্রগতির দরকার নেই আমাদের শুধু ক্ষমতা ও প্রশাসনে দরকার একটা চাটুকারী প্রজন্ম তাহলে শুধু শরীরের কোন অঙ্গ নয় মস্তিস্কসহ পুরো শরীরে পচন ধরলে সেই পচন হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনারাও পালাবার পথ পাবেন না !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:৩৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×