somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘রেশমা রহস্যের' নতুন মোড়

৩০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এতোদিন পর মনে হচ্ছে
রেশমার ঘটনা সাজানো নাটক[/sb



রানা প্লাজায় ১৭ দিন পর উদ্ধার হওয়া পোশাক শ্রমিক রেশমাকে নিয়ে বলতে গেলে ‘বোমা’ ফাটিয়ে দিল ব্রিটিশ পত্রিকা মিরর নিউজ। প্রভাবশালী এই পত্রিকার অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, রেশমা উদ্ধার অভিযানকে মনে হচ্ছে একটি মিথ্যা গুজব। রেশমার এক সহকর্মী মিরর নিউজের কাছে দাবি করেছেন, গত এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে পড়ার দিনই রেশমা তার সাথে বেরিয়ে এসেছিল।


সারা বিশ্বের বহু মানুষ ১২ শ’রও বেশি লোক নিহত হওয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে ১৭ দিন পর রেশমাকে উদ্ধারের ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছিলো। তবে, রেশমা উদ্ধার অভিযান হয়তো শেষ পর্যন্ত ধোঁকা বলেই প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। মন্তব্য মিরর নিউজের প্রতিবেদনে।


রেশমার বেঁচে যাওয়া এই সহকর্মী আরো বলেছেন, ''আমি আর রেশমা একসাথে তৃতীয় তলায় কাজ করতাম। আমরা একসাথেই ধ্বংসস্তুপের ভেতরে পড়ে যাই। তবে দু’জনেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই। আমরা দুই দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। আর তখনই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে ১৭তম দিনে ধ্বংসস্তুপ থেকে তাকে টিভিতে উদ্ধার করতে দেখি। উদ্ধারকর্মীরা বলছে এটি অলৌকিক, আসলে এটি মিথ্যা- ধোঁকা।''

মিরর নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক সরকার ও বিরোধী পক্ষের সাথে কথা বলার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলো। বিরোধী পক্ষের দাবি, এই উদ্ধার নাটক আসলে সরকারের তৈরি করা। এটি তারা করেছে রানা প্লাজা ধসের মাধ্যমে বছরে এক বিলিয়ন আয়ের খাত গার্মেন্টস সেক্টর যে আশঙ্কার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে, তা থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে দেয়া।

মিরর নিউজ দাবি করে, তাদের কাছে রেশমার সহকর্মীর কথার ধারণকৃত প্রমাণও রয়েছে। তবে ওই সহকর্মী প্রতিহিংসার ভয়ে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। ওই সহকর্মীর নাটকীয় গুজবের অভিযোগটি ঢাকার ভিন্নমত প্রকাশের দৈনিক আমার দেশের সাংবাদিক অনুসন্ধান করেছেন।

ওই সাংবাদিক রেশমার ভাড়াবাসার মালিকের বরাত দিয়ে জানান, রেশমা ভবন ধসের শিকার হয়েছিলো। তবে তাকে সেদিনই উদ্ধার করে কাছের এনাম ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

রেশমা বেগমের মা জোবায়দা বেগম এবং বোন আসমা বেগমের সঙ্গে সাংবাদিক সাইমন রাইট

রানা প্লাজার পাশে বসবাসকারী লোকজন আরো রহস্যময় কিছু তথ্য জানান।


তারা জানান, কিভাবে রেশমাকে উদ্ধারের আগের দিন তাদেরকে জোরপূর্বক তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এবং কোনো কারণ ব্যাখ্যা না করেই ২৪ ঘন্টা পর আবার ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হয়। আর ওই ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রেশমা উদ্ধার অভিযানের ঘটনাটি ঘটানো হয়। উদ্ধারের পরপর রেশমার শারীরিক অবস্থা ও তার পোশাক দেখেও আর নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে।

বাংলাদেশি প্রতিবেদকের বরাত দিয়ে মিরর নিউজ জানায়, “রেশমার মধ্যে পুরো ১৭ দিন ধ্বংসস্তুপে পড়ে থাকার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। সে বলেছে যে ইট-সুড়কির ফাঁক ফোঁকরে হাতড়িয়ে খুঁজে সে পরিত্যক্ত খাবার ও পানীয় পেয়েছিল।”

তবে তার হাতের নখে ১৭ দিন ধরে না কাটার কোনো প্রমাণ দেখা যায়নি। এখন রেশমা ধ্বংসস্তুপেও তার হাতের নখ কেটেছিলো কিনা সে প্রশ্নও জেগেছে জনমনে। ওই প্রতিবেদক আরো জানান, উদ্ধারের পর রেশমার চোখ স্বাভাবিক খোলা ছিলো। হঠাৎ সূর্যের আলো এলে যে জড়তা দেখা যাওয়ার কথা, তা হয়নি। আর পরিহিত পোশাকও দেখা যাচ্ছিলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।

প্রতিবেদক জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে লোকজন সন্দিহান ছিলো। তবে সরকার এটি আয়োজন করে অলৌকিক বলে প্রচার করেছে। আর বহুলোক এটি বিশ্বাস করে বোকা বনে গেছে।

কিছুদিন আগে রেশমার জন্য সরকারি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে নতুন চাকরির কথা জানানো হয়। যেখানে রেশমা ঢাকার এক হোটেলের এরিয়া অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ৩৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করবে। রেশমাকে ওই সংবাদ সম্মেলনেই তার গড় বেতনের দশ কিস্তি অগ্রিম দেয়া হয়।

রেশমা বেগমওই সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযান গুজব বলে মন্তব্য করলে রেশমা প্রতিবাদ করে বলেন, “আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে আপনারা ছিলেন না। সুতরাং সে বিষয়ে আপনাদের কোনো ধারণা নেই।”

সানডে মিরর রেশমার বাড়ি ঘোড়াঘাটের রানিগঞ্জে গিয়েছিলো। ঢাকা থেকে যে এলাকা ৩০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। সেখানে রেশমার মা জোবেদার সাথে কথা বলে সানডে মিরর। গুজবের বিষয়টি তাকে জানালে তিনি প্রতিবাদ করেন।

এ বিষয়ে আর কিছু না বলে রেশমার মা বলেন, “আমাদের এখন অনেক টাকা। রেশমা নতুন চাকরি পেয়েছে। আমাদের ভবিষ্যত এখন উজ্জ্বল।”

রেশমার মা আরো বলেন, ''রানা প্লাজা ধসের খবর পেয়ে আমরা ঢাকা যাই। রেশমাকে সেখানে না পেয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি আমরা। আর রেশমাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশায় দোয়া করতে থাকি।''

''মে মাসের ১০ তারিখ, উদ্ধার অভিযানের ১৭ তম দিন সকালে লাউড স্পিকারে ঘোষণা দেয়া হয় যে, একজন নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছে। তার নাম রেশমা। এ খবর শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর জ্ঞান ফিরলে আমাকে হাসপাতালে নেয়া হয় রেশমার সাথে কথা বলার জন্য। রেশমা তখন আমার সাথে কথা বলে। সে জানায় যে ভালো আছে।''

জোবেদা আরো বলেন, “হাতে একটু আঘাত পাওয়া ছাড়া রেশমার আর কিছুই হয়নি। আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলামনা সে আসলে কতোটা ভাগ্যবান। আর্মি তার খোঁজ খবর রাখছিলো। সে একটু সুস্থ্য হওয়ার পর তাকে নতুন চাকরি দেয়া হয়েছে। সে আমাদের প্রতি মাসে টাকা পাঠাবে। আর আমরা চাই সে যাতে বছরে অন্তত দুইবার আমাদের দেখতে গ্রামে আসে।”

ভবন ধসের শিকার হওয়া লোকজন দৈনিক মাত্র এক/দেড়শ টাকা মজুরিতে প্রাইমার্ক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য জিনস প্যান্ট সেলাই করতো।

আক্রান্তদের দাবি, এই ধসের কারণ মালিকদের বেখেয়ালী সিদ্ধান্ত। যারা অনুমতি ছাড়াই ভবনটিতে তিন তিনটি তলা যোগ করে। যারা অবৈধভাবে সেই অনুমতি দিয়েছিল তারাও দায়ী। তবে মালিকরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। ভবন নির্মাণের আইন ভঙ্গ করায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বর্তমানে আন্দোলন হচ্ছে। বাংলাদেশি পুরকৌশলীদের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের পাঁচ ভাগের তিন ভাগ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানই ধসের ঝুঁকিতে আছে।

মিরর নিউজের পক্ষ থেকে রেশমা উদ্ধার ও এটির গুজব হওয়া সম্পর্কে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দীককে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। উত্তরে তিনি শুধু বলেছেন, “আমাদের কিছুই বলার নেই।”
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনার অন্তরে ঠিক যা রয়েছে, আপনার জিহবা দিয়ে ঠিক তাই বের হবে।

লিখেছেন রিফাত-, ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:৪১



"আপনার অন্তরে ঠিক যা রয়েছে, আপনার জিহবা দিয়ে ঠিক তাই বের হবে।"

এ কথাটি আমাকে একজন ভাই এশার সালাতের পরে বলছিলেন।

বেশ কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে কাজলার মোড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সে এক ভিন্ন গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০৫



একই বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থেকে সেবা-যত্ন করায় সম্মাননা পেয়েছেন ১২ পুত্রবধূ। ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘পাশে আছি মাদারীপুর’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন।শনিবার (৪ জানুয়ারি)... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিপূরক.......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৫৯

পরিপূরক............

০৩ জানুয়ারী ২০২৪ খৃষ্টাব্দ, আমি ৬৭ বছরে পদার্পণ করেছি। অর্থাৎ আমার বরাদ্দ আয়ু সীমা থেকে ৬৬ বছর চলে গিয়েছে।
জন্মদিন মানেই মৃত্যুর আরও কাছে যাওয়া....
জন্মদিন মানেই জীবন পথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফয়েজ লেক বধ্যভূমি এবং জাতীয় অধ্যাপক ডা নুরুল ইসলামের হঠকারিতা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪


ফয়েজ লেক বধ্যভূমি বাংলাদেশের বড়ো বধ্যভূমি গুলোর একটি। পাহাড়তলীতে অবস্থিত এই বধ্যভূমির একপাশে ছিলো পাঞ্জাবি কলোনী এবং অন্যপাশে বাঙালি কলোনী। ১৯৭১ সালে পাঞ্জাবিরা ফয়েজ লেক বধ্যভূমিতে নিরীহ বাঙালিদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংবিধান বদলাতে হবে; তবে, জালিয়াৎ ড: ইউনুস ও পাকি জল্লাদদের নৈরাজ্যের সময় নয়

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০২



ড: ইউনুস সংবিধান নিয়ে লাগেনি, আসলে লেগেছে পাকি জল্লাদগুলো, ওরা মুক্তিযুদ্ধ ও '৭১'এর জেনারেশনের সকল চিহ্ন মুছে দিতে চায়।

ড: কামালের নেতৃত্ব লিখিত আমাদের ১৯৭২ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×