জয়নব একটি বাবুর জন্য স্বপ্নে বিভোর। চার বছর পর আল্লাহ্ রহমত হল। বিয়ের চার বছর পর এবার সে প্যাগনেট হয়েছে। প্রথম চার মাস কেটে গেছে। সে মোবাইলে সুন্দর সুন্দর বাবুদের ছবি দেখে। আর ভাবে এমন সুন্দর একটা বাবু তার কোল জুড়ে থাকবে। কত মজাইনা হবে।
নাম ঠিক করে ডাইরীতে লিখে রাখছে ছেলে হলে কি কি নাম রাখবে আর মেয়ে হল কেমন নাম রাখবে। দিনগুলো তার কেটে যাচ্ছে ভাল-মন্দ মিলিয়ে। খাওয়া দাওয়া তেমন করতে পারেনা। শুধু গন্ধ লাগে সব কিছুতে গন্ধ-ভাতে, রুটিতে, তরকাড়িতে, ভাতের মাড়ে, মাছ-মাংসে। কি যে খাবে ভাবনায় পরে যায়। যাই একটু খায় অমনি বমি হয়ে বেড়িয়ে আসতে চায়। ফল-ফ্রুট বেশি খাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ফলে কি আর ভাতের কাম দেয়। মাঝ রাতে ক্ষিধায় ঘুম ভেঙ্গে কান্না করে। স্বামীটি তার লক্ষী এটা সেটা এগিয়ে দেয় খাওয়ার জন্য।
শান্তনা দেয়-ধৈর্য ধর আর কয়টা মাস দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে। একটু একটু করে খাও। দুই/এক ঘন্টা পরে পরে খাও। না খাইলে শরীর দুর্বল লাগবে। বাবুও পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।
কিন্তু যত যাই বলুক খেতে সে তেমন পারেনা। কম খাওয়ার অভ্যাস তার ছোটবেলা থেকে। তার উপর আছে বাছ-বিচার।একটু ভাল, একটু ভুনা তরকারী না হলে খেতে পারেনা।
সেদিন দুপুরে খাওয়ার পর এক ঘন্টা বিরতি দিয়ে সেই শুতে গেল এমনি আচমকা মোবাইটা বেজে উঠল। মনিটরে অপরিচিত নাম্বার। একবার, দুইবার রিং হর। জয়নব রিসিভ করলনা। তৃতীয়বারে রিসিভ করে চুপ করে রেইল।
ও প্রান্ত থেকে কথা ভেসে আসছে-হ্যালো। জানু কেমন আছ ? কি করছ ?
তোমারে কাছে পাইতে মন চায়। কাছে পাইলে ইয়ে...করতে মন চায়।
লজ্জা ও এক রকম আতঙ্ক নিয়ে ফোন কেটে দিল জয়নব। কিন্তু তার সুখের দিবানিদ্রা উধাও করতে আবার সেই একই নম্বর থেকে ফোন।
এবার সে সাহসী হয়ে বলল-আপনি কে ? কার কাছে ফোন করেছেন। এসব কি আবল তাবোল বলছেন। সরি। রং নম্বর বলে রেখে দিন মোবাইল।
নারী কন্ঠে কি মধু আছে কে জানে ? সেই মধুমাখা কথা শোনার জন্য বেহায়া পুরুষ বার বার ফোন দিয়ে জ্বালাতন করতে লাগলো।
জয়নব যতই বলে- আপনাকে পুলিশে দেব। জেলে দেব। ততই সেই লোক হাসে আর প্রেমিকের মত কথা বলে। সে কথা বড় ভংকর শোনায় জয়নবের কাছে, বড় অশ্লীল ঠেকে।
শেষ পযন্ত উপায় না দেখে নিজের দেবরকে দিল উ্ক্ত নাম্বারটি। দেবর ব্যবসায় করে। সে কঠিন থ্রেড দিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলনা।এদিকে তার স্বামী অফিসের কাজে ঢাকা গেছে। ফিরবে দু’দিন পর।
শেষ পর্যন্ত উপায় অন্ত না দেখে। নতুন চালু হওয়া 999 হেল্প লেইনে ফোন দিয়ে তার সমস্যার কথা জানাল। তারা বলল-ম্যাডাম আমরাতো এধরনে সমস্যার সমাধান করিনা। জয়নব অনেক মিনতি করল। বলল-দেখুন আমি প্যাগনেট একজন মহিলা। রাত-বিরাতে ঘুমাতে পারছিনা। আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি এসব নোংরা কথা শুনে। দয়া করে একটু ব্যবস্থা নিন।
আচ্ছা দেখি কি করা যায়। আপনি সেই লোকের নাম্বারটা দিন। জয়নব নাম্বার দিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল।
সত্যি এর পর সেই নম্বর থেকে তার কাছে কোন কল আসে নাই। সে তার অনাগত সন্তান নিয়ে মিষ্টি মধুর ভাবনা ভাবতে লাগলো।
একদিন ফোন করে তার আমেরিকা বসবাসকারী খালাতো বোনকে বলল-জানিস আমাদের দেশেও নতুন হেল্প লাইন চালু হয়েছে। 24 ঘন্টা খোলা থাকে। অনেক সমস্যার সমাধান হয়।
খালাতো বোন হেসে বলল-বাহ ! তোরাতো দেখছি এখন দেশেই আমেরিকান সুবিধা পাচ্ছিস।
( প্রথম পর্ব সমাপ্ত)