somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয়ঙ্কর এক সংখ্যার জন্ম, নিষ্ঠুর এক খুনের গল্প

০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দক্ষিণ ইটালি, বৃহত্তর গ্রিসের (Magna Grecia) ক্রোটন নগর

[১]
৫ম খ্রিস্টপূর্বাব্দের শেষভাগ

"আচ্ছা, সবাই বলে ভ্রাতৃগোষ্ঠির সদস্যরাই তাকে মেরে আইওনিয়ান সাগরে তার লাশ ফেলে দিয়েছিল! গুরু নিজেই নাকি নির্দেশ দিয়েছিলেন এ কাজে?" উদ্বিগ্নতা আর তীব্র কৌতূহলে মেয়েটি জানতে চায় যুবকের কাছে।
"হশ্‌শ্‌..."মুখে তর্জনী রেখে দ্রুত চারদিকে তাকায় যুবক।

অস্তগামী সূর্যের ম্লান আলোয় ভরে গেছে গাঢ় সবুজ জলপাই অরণ্য, খেলা করছে বৃক্ষশাখা আর পত্রপল্লবের ছায়া। মাঝেমাঝে আইওনিয়ান সাগরের বুক থেকে ভেসে আসছে দমকা হাওয়া, তার তোড়ে জায়গা বদল করে আলো-ছায়া। না, কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

তবু অ্যাডোনিয়াকে সাবধান করে ফিলোক্রেটস, "আস্তে কথা বলো, কে কী শুনে ফেলে, বিপদে পড়ব আমরা।"
গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে অ্যাডোনিয়া, "কিন্তু এ কি সত্যি?"
"আরে না, তা হবে কেন?" তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে ফিলোক্রেটস। "সাগরে ঝড় উঠেছিল সেদিন, আর সে দাঁড়িয়ে ছিল জাহাজের খোলা জায়গায়। প্রচণ্ড এক ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাকে।"
"সে একাই কেন দাঁড়াতে গেলো খোলা জায়গায়?" প্রশ্ন করে অ্যাডোনিয়া, সন্দেহ দূর হয় না তার। "আর, বছরের এ সময় ঝড়ের কথা তো কখনো শোনে না কেউ, মাছরাঙা দিন [halcyon days] চলছিল তখন!"

"অ্যাডো, গুরু কেন এ কাজের নির্দেশ দিতে যাবেন? সত্যানুসন্ধানী মানুষ তিনি, কেবল সত্যেরই লেনদেন করেন। একটি সংখ্যা আবিষ্কারের জন্য কেন মানুষ খুন করাবেন তিনি?" ফিলোক্রেটসের গলার স্বর দৃঢ় হয়ে উঠে।
"কারণ গুরুর সারা জীবনের দর্শন আর শিক্ষার ভীত দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল সংখ্যটি। তিনি কঠোরভাবে চেয়েছিলেন তা গুপ্ত থাকুক, কিন্তু সে প্রকাশ করে দিয়েছে।"

"আমি তা বিশ্বাস করি না, অ্যডো। তুমি জানো, তাঁর কাছে বিদ্যাশিক্ষার বিনিময়ে আমাকে প্রতিদিন তিন অবোলি [oboli] করে দিতেন! এরকম অদ্ভুত শিক্ষক, যিনি পড়ানোর বিনিময়ে ছাত্রকেই পারিশ্রমিক দেন, আর একজন খুঁজে পাবে না তুমি। এ ধরণের মানুষ কখনো কাউকে হত্যা করতে পারেন না। আমি তাকে চিনি বলেই, জন্মভূমি সামোস ছেড়ে কেবল তাঁর দর্শন শেখার জন্য ক্রোটন এসেছি।" এক টানে বলতে থাকে ফিলোক্রেটস, একটু উষ্ণ তার গলা।
খানিক পর আর্দ্র হয় যুবকের কণ্ঠ। "অবশ্য তা না হলে তোমাকেও পাওয়া হতো না," অ্যাডোনিয়ার কাঁধে দু'হাত রেখে আলতো করে তার কপোল ঘষে দেয় ফিলোক্রেটস। সোনালি অলকগুচ্ছ নড়ে উঠে মেয়েটির, ভূমধ্যসাগরের গাঢ় নীল জলরাশির মতো চোখ মেলে গভীর ভালোবাসা আর মায়ায় গণিতপাগল স্বামীর দিকে চেয়ে থাকে সে।

[২]
এর এক বছর আগের কথা।

চমৎকার করে কেটে, মসৃণভাবে লেপে দেয়া অর্ধবৃত্তাকার মাটির ঢিবি— সেমিসার্কেল (semicircle)। ব্যাস লাইন বরাবর ঝুলছে ভারী পর্দা। অর্ধবৃত্তের ধার ঘেঁষে ইতোমধ্যেই সমবেত হয়েছে অনেক তরুণ-তরুণী, ভ্রাতৃগোষ্ঠির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শাখা ম্যাথমেটিকোই (Mathematici)'র অন্তর্ভুক্ত তারা, অর্জন করেছে স্বচক্ষে গুরুকে দেখা ও তাঁর ভাষণ শোনার বিরল কৃতিত্ব। এর আগে তারা ছিল ভ্রাতৃগোষ্ঠির আরেকটি শাখা অ্যাকৌজমেটিকোই (Acusmatici)'র সদস্য, তিন বছর তীব্র কৌতূহলে শুধু গুরুর ভাষণই শুনে গিয়েছিল, পর্দার আড়ালের মানুষটি দেখতে পায়নি কখনো, কারণ তার জন্য আগে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।

গভীর উদ্দীপনায় অপেক্ষা করছে ম্যাথমেটিকোইয়ের সদস্যগণ, দিনের পর দিন তারা এভাবেই অপেক্ষা করে আসছে গুরুর আগমনক্ষণটিতে। আজকে কী নিয়ে কথা বলবেন গুরু ভাবতে থাকে তারা, আর পরিকল্পনা করে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে কীভাবে নিজেদের যোগ্যতা মেলে ধরবে।

বাজনা বেজে উঠে অর্ধবৃত্তের অভ্যন্তরে, শোনা যায় জনপ্রিয় গ্রিসীয় সঙ্গীত, পর্দা সরে যায় দু'পাশে। সাদা আলখেল্লা পরিহিত, পায়ে সোনালি পাদুকা, আর মাথায় গ্রিসীয় ফুলের মুকুট, জলপাইয়ের পাতা গোঁজা তাতে, রাজকীয় মহিমায় প্রবেশ করেন সৌম্য চেহারা মানুষটি—পীথাগোরাস, সেমিসার্কেলের শিক্ষক, ভ্রাতৃগোষ্ঠির প্রতিষ্ঠাতা, তাঁর সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনের প্রচারক।

(ক্রমশ...)
__________________
দ্বিতীয় পর্ব: Click This Link
তৃতীয় ও শেষ পর্ব: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ রাত ১:৪৬
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

পেহেলগাম, ছবি গুগল থেকে প্রাপ্ত।

কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসর্জনের ছাই

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৯




একদিন দগ্ধ ঘাসে ভালোবাসা পুড়িয়ে দেব।
সর্বাংগে ওর ছাই মেখে আমি বৈরাগ্য নেব।
রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ফেলব শ্রবন মেঘের জলে।
কায়াটা কে শুকতে দেব তোমার বাড়ির উঠনে।

পায়ের নখে গজিয়ে উঠবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু আশা, কিছু হতাশা, কিছু বাস্তবতা

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



বাংলাদেশ যেন একটা রোলার কোষ্টারে সওয়ার হয়ে চলছে এখন। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে; একটা সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সরকারের কর্মকান্ডে আশান্বিত যেমন হচ্ছি, তেমনি হতাশায়ও নিমজ্জিত হচ্ছি;... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১২


এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।

এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×