somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আমিই সাইফুল
একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পার করে আজকের এই আমি। ব্লগে আবেগ অনুভূতি শেয়ার করি যেগুলো হয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়না। আমি একজন অনুভূতির ফেরিওয়ালা......

নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩)

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৬৮ কারাংগাহাপি রোডের বাসাটাতে যদি কখনো আসে কেউ বুঝতেই পারবেনা এটা নিউজিল্যান্ডের কোন বাসা। মনে হবে ঢাকায় কোন মেসে বসে আছি। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল অগ্রযাত্রা, এখানেই পরিচয় হয় মেহেদি ভাইয়ের সাথে। ভাইয়া আমাকে সময়মত এমন একটা উপকার করেছিল যেটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে, যাই হোক কে'রোডে বেকার অবস্থায় যখন সিভি বিলাচ্ছি তখন একদিন শুনলাম শহর থেকে দূরে ফার্মিং এর কাজ আছে। ঐ ইন্ডিয়ানকে ফোন দিয়ে ভোর বেলায় রওনা হয়ে গেলাম কাজ করতে সারাদিন কামলা দিয়েছিলম, পেয়েছিলাম ৯২$। জীবনের প্রথম ইনকাম অনেক এক্সাইটেড ছিলাম, কিন্তু আল্লাহ আমাকে সেদিন বুঝিয়েছিলেন যারা দেশে এই কাজ গুলো করে তারা কতটা কষ্ট করতে হয়।

এরই মধ্যে বাসায় ঝামেলা শুরু হয়ে গেল বাসার মালিক অবৈধ লোকদের ঝাটানোর উদ্দেশ্যে নোটিশ দিলেন। হায় আল্লাহ পনের দিনের মধ্যে বাসা পাবো কই? কয়েকজন ভাইকে ধরেছিলাম লাভ হয়নি। নিউজিল্যান্ড এ আমার এক পাতানো মামা ছিল। সে আমার পরে আসলেও তাকে আমি মামা বলে ডাকতে শুরু করলাম শুধুমাত্র বয়সের কারনে। সেই মামা এক ইন্ডিয়ানের বাসায় থাকত, কোনমতে তার বাসায় থাকার ব্যবস্থা করা হলো। সপ্তাহে ৯০$ ভাড়া দিয়ে থাকতে শুরু করলাম ৭২নেলসন স্ট্রিট এ। মামা ভাগিনা এক সাথে কান্না করতাম। আমি করতাম ১০০$ এর জব আর উনি করত ১৩০$ এ।

এরই মধ্যে একটা ভালো জবের জন্য এদিক সেদিক দৌড় ঝাপ দিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে এক ইন্ডিয়ানের সাথে পরিচয় হয় তাকে জবের জন্য প্যারা দিতে লাগলাম। কিছুদিনের মধ্যে একটা সু-খবরো পেলাম। একটা জব পেলাম তাও যে খুব ভালো তা কিন্তু নয়, তিনদিন ৩৬ ঘন্টা কাজ করতাম। তবে তারা একটু ভদ্র ভাবে সরকারকে ট্যাক্স ফাকি দিত। আমি কাজ করতাম ৩৬ ঘন্টা কিন্তু তারা আমাকে মিনিমাম ওয়েজ দিয়ে মাত্র ১৪ ঘন্টার পেমেন্ট দিত। তার মানে আমি ৩৬ ঘন্টা কাজ করলেও ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট জানতো আমি ১৪ ঘন্টা কাজ করছি। নিউজিল্যান্ডে এভাবেই ইন্ডিয়ান বাঙালি আর পাকিরা ছাত্রদের মাথায় কাঠাল ভেঙে খায়; তাও আবার আইনের মধ্যে থেকেই। সরাসরি কেউ অভিযোগ করবেনা কারন তাতে নিজেই ফেসে যাবে।

এরমধ্যে আরো একবার বাসা চেঞ্জ করলাম। ২মাসে বাসাটার জন্য মায়া লেগে গিয়েছিল কিন্তু কি আর করা নিয়তি আমাদের কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় সেটা আমরা কেউই বলতে পারিনা।

২১০ টাকার জব; বাসা ভাড়া, গ্রোসারি আর বাস ভাড়া দিয়ে হাতে ৫০-৬০ ডলারও হাতে রাখা দায়। ভাবতে লাগলাম কিভাবে হবে? ৫০০০ ডলার টিউশন ফী কোথায় পাবো সেই টেনশনে মাথার চুল সব দিনদিন ঝরতে শুরু করলো। মেহেদি ভাইয়ের সাথে থাকতা ৮৩ এনযেক এভেনিউতে, তার সাথে অনেক কথা শেয়ার করতাম। সারাদিন কাজ করতাম রাত ১০টায় বাসায় ফিরে কাউন্টডাউনে যেতাম খাবার কিনতে; খাবার কিনে বাসায় এসে মেহেদি ভাইয়ের সাথে টুংটাং করে রান্না করতাম আর গল্প গুজব করতাম। রান্নাবান্না শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে রাত ২টার দিকে ঘুমোতে গেলেও টেনশনে ঘুম আসতোনা; আবার সকালে উঠেই নতুন দিনের দৌড়াদৌড়ি শুরু।

এরমধ্যে একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হলো; যে হোস্টেলে থাকতাম সেখানে মাউরিরা(মাউরিদের নিয়ে একটা পোস্ট থাকবে) থাকত। এদের দেখলেই ভুতের মত লাগত আমার। সারা শরীরে মুখে ভয়ংকর রকমের সব ট্যাটু আর শালারা যে কতদিন পরপর গোসল করে আল্লাই জানে। তারউপর সবগুলা ড্রাংক থাকতো; আর তাই এদের আমার প্রচন্ড ভয় লাগতো। বুঝতে পারছিলাম এখানে বেশিদিন থাকা সম্ভব না। কিন্তু বাধ্য হয়েই সেখানে থাকছিলাম শুধু বিশটা ডলার বাচাতে।

চলবে.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।

সকল পর্বের লিংক একসাথেঃ
নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১)
নিউজিল্যান্ডে এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৬
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু কবিতা থেকে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২৮

ব্যাংকখাত ধ্বংসের এক মহান (?) কারিগর

লিখেছেন পদ্মপুকুর, ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



০১
ছবির এই ভদ্রলোকের নাম মোঃ নজরুল ইসলাম মজুমদার। পালিয়ে যাওয়া গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার অন্যতম আর্থিক যোগানদার এই লোক বাংলাদেশের ব্যাংকখাত ধ্বংসের প্রধান কারিগর। ব্যাংক পরিচালকদের প্রতিষ্ঠান বিএবি’র চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতা প্রথম দেখেছিলাম তোমায়

লিখেছেন এসো চিন্তা করি, ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭



"প্রথম দেখেছিলাম তোমায় "
এ.কে.এম. রেদওয়ানূল হক (নাসিফ)
আমি দেখেছিলাম সেদিন তোমায় কোনো এক
জনশুন্য রাস্তায় একাকী হেঁটে যেতে ,
আমি দেখেছিলাম সেদিন তোমার মুখের হাসি
যা বিমোহিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে সব কাজ না করলে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫২

সম্প্রতি ইসকন নিয়ে টালমাটাল আমাদের দেশ।ইসকনের নাম প্রথম শুনি ২০১৫ সালে। ঐ সময় বেশ কয়েক মাস চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে আড্ডা দেওয়া হত। সেখানেই ইসকন সম্পর্কে কিছুটা জানা হয়।
এডভোকেট সাইফুলের অপমৃত্যু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত সীমান্ত দিয়ে বোমা তৈরির রাসায়নিক সরঞ্জাম ঢুকাচ্ছে সমীকরণটা আপনারাই মিলিয়ে নেন

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৯


গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ থানা অভিযান পরিচালনা করে ৩৫ বস্তা ( ১৭৫০ কেজি সালফার ) এবং এক বস্তা ভাঙা কাচ উদ্ধার করেছে। তদন্তে জানা যায় এই রাসায়নিক দ্রব্য গুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×