আজ রানা প্লাজা ধ্বসের এক বছর পূর্তি। হয়ত আমাদের অনেকের এ ব্যপারে কোন অনুভূতি নেই_এটা অনেকটা যেন মামুলি ব্যাপার।
আসলে এটার অনুভূতি যে কত ভয়াবহ এবং বেদনাদায়ক তা হয়ত এই দূর্ঘটনা থেকে যারা জীবন ফিরে পেয়েছে তারা জানে আর জানে যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদের পরিবার।
সাধারণতঃ কেউই শখ করে গার্মেন্টসে কাজ করেনা। কাজ করে তারা যাদের এছাড়া কোন গতি নেই। আর এ মানুষগুলো বাংলাদেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে বলে আমার মনে হয়। সম্ভবতঃ এদের শ্রমই সবচেয়ে কম মূল্যে বিক্রি হয়। অথচ আমাদের বৈদেশিক আয়ের বড় অংশই আসে গার্মেন্টস তথা তৈরী পোশাক খাত থেকে।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩-র কথা মনে পড়ে। রানা প্লাজায় আগের দিনই ফাঁটল দেখা দিয়েছে। তারপর ও কর্তৃপক্ষ সাধারন শ্রমিকদের ভবনে ঢুকে কাজ করতে বাধ্য করেছে। অসহায় শ্রমিকদের কর্তৃপক্ষের কথা শোনা ছাড়া অন্য কোন গত্যন্তর ছিলনা। তারা কাজে ঢুকল আর কিছুক্ষণ পরই তাসের ঘরের মত হুড়মুড় করে ভবন ধ্বসে পড়ল তাদের মাথার উপর। ১১২৯ জন মারা গেল, ২৫১৫ জন আহত হল, অনেকেই থেকে গেল নিখোঁজ। কোনদিন তাদের আর খোঁজ পাওয়া যাবে না। কোনদিন তারা কাজ করে বেতন পেয়ে হাসিমুখে তাদের অপেক্ষারত পরিবারের কাছেও ফিরে যাবে না। এটা কোন ব্যাপারই না!
আমরা মোটামুটি একবছর আগের সবকাহিনী ভুলে বসে আছি। রানা অন্যায়ভাবে সরকারী দলের মদদপুষ্ট হয়ে ভবন তৈরীর স্টান্ডার্ড না মেনেই এ ভবন তৈরী করেছিল। নিয়ম মেনে করলে তাকে হয়ত আরো বেশী কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে হত।
পুকুর ভরাট করে নাকি ঐ ভবন তৈরী করা হয়েছিল। গার্মেন্টসে ভারী যন্ত্রপাতি থাকে। হয়ত ঐ ভবনটিতে গার্মেন্টস না বানিয়ে অন্য কোন ব্যবসার কাজেও লাগানো যেত বা গার্মেন্টস এর উপযোগী করে ভবনটি তৈরী করা যেত। তাতে তার ব্যবসার খুব বেশী ক্ষতি হত না। সামান্য খামখেয়ালিপনা ও সামান্য লোভের জন্যই সহস্রাধিক মানুষের জীবন গেল। আর বিশ্বদরবারে আমাদের মাথা যে কত উঁচু হল তা নাই বা বললাম।
যা হয়েছে তা অপূরণীয় ক্ষতি। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন সামন্য খামখেয়ালিপনা ও সামান্য লোভের কারনে এ ধরনের আর কোন দূর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য আমরা এবং আমাদের সরকার কতটুকু সচেতন, কতটুকু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০৬