somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউনূসের ওপর সুদখোর মহাজনদের অভিশাপ (পর্ব-১)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিবেশী দেশ ভারতের অমর্ত্য সেনও নোবেল পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নোবেল পাওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি।
ড. ইউনূস নোবেল পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে দেশে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেলেও বিভিন্ন সময়ে নানা কারনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। ইদানিং আওয়ামী লীগ সরকারও ইউনূসের ওপর সদয় নয় ।
(আওয়ামী লীগ কোনো উদ্দেশ্যে নিয়েও হয়তো তাঁর বিরোধীতা করতে পারে, সেটা আমার এ লেখার মূখ্য বিষয় নয়)।
আমাদের রাজনৈতিক ফালতু সংস্কৃতির কারনে বাছ বিচার ছাড়াই বিএনপি ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিলেও এ ব্যাপারে ব্যপক জনমত গড়ে উঠে নি। ইউনূসের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। কিছুদিন আগে নোরাডের তহবিল অপসারণের খবরটি প্রকাশের পর ইউনূস আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে স্বীকার করেন, কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই তিনি ওই তহবিল স্থানান্তর করেন। কর ফাঁকি দেওয়ার এ উদ্দেশ্যে তাঁর ধূর্ত ব্যবসায়ীক মানসিকতাকেই প্রতিফলিত করে। শান্তিতে নোবেল পাওয়া একজন সম্মানিত লোকের ধূর্ত ব্যবসায়ীক মানসিকতা থাকাটা বাঞ্ছনীয়ও নয় বটে।
ইউনূসের সামাজিক ব্যাবসা সম্পর্কেও পরিস্কার ধারণা ইউনূসবন্দনায় মগ্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকেও পাইনি। যতটুকু বুঝি এই সামাজিক ব্যবসার মূল কথা হলো প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকবে না, কেও লভ্যাংশ নিতে পারবে না। ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। এটা যদি মূল কথা হয় তবে এটা নিয়ে লাফালাফি করার কিছু নেই। পুজিঁবাদী বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়
বিশ্বের সব কোম্পানিই সামাজিক ব্যবসা চালাচ্ছে। কোম্পানিগুলো পুর্নবিনিয়োগ করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেই চলছে। অর্থাৎ মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।
গ্রামীণ ব্যাংকে দরিদ্র ঋণগ্রহিতাদের যে মালিকানার কথা বলা হয়, তাও নিতান্তই লোক দেখানো কেতাবি মালিকানা। ঋণগ্রহিতারা জানেও না যে, তারা ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার।লভ্যংশ কি উপায়ে কাকে বিতরণ করা হয় বা আদৌ হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়, সরকার যদি আজ গ্রামীণ ব্যাংক তুলেও দেয় তবে ঋণগ্রহিতারা তথা কেতাবি মালিকেরা খুশিই হবে। বেজার হবে যারা তথাকথিত সুশীলেরা। যারা জীবনে কোনোদিন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়নি। এই ফালতুরা মিডিয়াতে প্রতিবাদের ঝড় তুলবে। আসলে এই কেতাবি মালিকানা রাখা হয়েছে লোক দেখানোর জন্য।
পাশ্চাত্যের দেশগুলো আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলোর দারিদ্র্যকে জিইয়ে রেখে দারিদ্র্যসৃষ্ট সমস্যা নিয়ে কাজ করে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে।
এনজিওগুলো পুষ্টিহীনতা, প্রতিবন্ধীতা, মাতৃস্বাস্থ্য.....প্রভৃতি নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে। মূল সমস্য হলো দারিদ্র্য। আর দারিদ্র্য থেকেই ওই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি। এনজিও'র কাজগুলো অনেকটা গাছের গোড়া ঠিক না করে পাতায় পাতায় মলম দেওয়ার মতো। যে মলম আসলে কোনো কাজেই আসে না।
পাশ্চাত্যের মহাজনেরা এটাই চায়। তারা চায়, দারিদ্র্যকে জিইয়ে রেখে দারিদ্র্যসৃষ্ট সমস্যা নিয়ে কাজ করতে। যাতে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে কোনো বিদ্রোহ তৈরি না হয়।
যাইহোক, পাতায় পাতায় মলম দেওয়ার মতো ড. ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণের ফর্মুলা (মৌলিক কোনো ধারণা নয়) পশ্চিমা দেশের পুঁজিবাদী ভাবাদর্শের যথার্থ তাবেদারি করতে সক্ষম বলেই তিনি নোবেল পেয়েছেন। আর মলম তত্ত্বের অনুকূলে ক্ষুদ্রঋণ ফর্মুলা দিয়ে পাওয়া এই নোবেলে এখনও দেশের সার্টিফিকেটধারী তথাকথিত সুশীল শিক্ষিত ব্যক্তির কাছে আসমানী কেতাবের মতোই সম্মানীত। ওবামা তথা পাশ্চাত্যের মহাজনেরা কইছে চুদির ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই.....ব্রিটিশ আমলে বপন করা এই দাসবৃত্তির মানসিকতা থেকে আমরা এখনো বের হতে পারি নাই।
শান্তি ও সাহিত্যে নোবেল দীর্ঘদিন থেকেই বিতর্কিত। অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হয় এমন কোনো তত্ত্বের প্রবক্তাকে যার তত্ত্বটি সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী অর্থনীতির পাহাড়া দিতে সক্ষম। পদার্থ রসায়নের মতো অন্যান্য বিষয়গুলোতে সুনির্দিষ্ট গবেষণা থাকে, খুব একটা বিতর্কের অবকাশ থাকে না। উন্নয়নশীল দেশের এমন কোনো ব্যক্তিকে কি আজ পর্যন্ত শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে যে, ওই ব্যক্তির তত্ত্ব বা কর্মকাণ্ড তাঁর দেশের জন্য উপকারী কিন্তু পাশ্চাত্যের স্বার্থের পরিপন্থী?
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামার’ মত উপন্যাসকে কোনদিনই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে না। এইজন্য আমাদের দেশের ডিগ্রিধারী মূর্খদের কাছে খোয়াবনামার কোন মুল্য নেই। তারা চেনে ‘ব্রিক লেন’ (না পড়েই)।
২০১০ সালে লিউ জিয়াবাও শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর চীন নোবেল কমিটিকে ধুয়ে মুছে দেয়। নোবেল কমিটির লোকজনকে ‘ভাঁড়’ হিসেবে উল্লেখ করে। চীন এই মেরুদণ্ড তৈরি করতে পেরেছে বলেই আজ দেশটির অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। আর আমাদের কাছে নোবেল আসমানী কেতাবের মতোই সম্মানিত। পাশ্চাত্যের মহাজনদের স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে দেখেছি, তারা তাদের ঘরের পাশের দরিদ্র কোনো ব্যক্তির অবস্থা নির্ণয় করেন পাশ্চাত্যের করা কোনো গবেষণা থেকে। মূলত শিক্ষকেরাও দেশে মেরুদণ্ডহীন জাতি তৈরি করে যাচ্ছেন।
অনেক বিদেশীর লেখা পড়ে জেনেছি, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে প্রচার চালানো হচ্ছে ড. ইউনূসের পুষ্টি বিস্কুট আর শক্তি দই খেয়ে নাকি দরিদ্রদের পুষ্টি সমস্যা দূর হচ্ছে। মিনা বাজারের মত আধুনিক বিপনি বিতানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয় পুষ্টি বিস্কুট ও শক্তি দই। যেখানে দরিদ্ররা প্রবেশ করে না। অবশ্য এইগুলো খেয়ে নয় দেখেই হয়তো তাঁদের পুষ্টির সমস্যা দূর হচ্ছে!!
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে আরও প্রচার করা হচ্ছে, গ্রামীণ শক্তির সোলার সিস্টেম নাকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের বিদ্যুতের সমস্যা দূর করছে। ওই সোলার সিস্টেমের দাম ৫০ হাজার টাকার ওপরে । দরিদ্ররা আসলে ওটা চোখেও দেখেন না। ওই সোলার সিস্টেম কিনছে আসলে প্রত্যন্ত গ্রামের পয়সাওয়ালা মধ্যবিত্তরা। যদিও পাশ্চাত্যের মহাজনেরা আসলে সবই জানেন, আসলে কি ঘটছে। কিন্তু সে দেশের সাধারন মানুষের কাছে বোঝানো প্রয়োজন, নোবেলটাও জায়েজ করা প্রয়োজন।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করার জন্য বিএনপি ড. ইউনূসকে শহীদ জিয়ার সৈনিক বানিয়ে ফেলেছেন।
‘গু’ জিনিসটা সব সময়ই খারাপ। ধরা যাক, আওয়ামী লীগ কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই হয়তো ‘গু’কে বার বার খারাপ বলতে লাগলো। তখন বিএনপি বলা শুরু করলো, ‘গু’ ভালো। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উন্মত্ত এই ‘গু’ খাওয়া দলগুলোর কারনেই দেশ বার বার পিছিয়ে পড়ছে। ইউনূসও ‘গু’য়ের মতো। আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্য নিয়েই হয়তো গু’কে খারাপ বলছে। তখন বিএনপি বলা শুরু করেছে, না গু’ই ভালো। জামায়াতের সমর্থকদের কাছে এখন গু’ই ভালো।
যাইহোক তারপরও কিছু গণ্ডমূর্খ এবং সুবিধাবাদী সুশীলেরা (সুশীল বললে আর সুবিধাবাদী বলার দরকার হয় না) বাদে আমাদের দেশের সাধারন মানুষ ঠিক দৃঢ়ভাবে ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিতে পারছে না। আবার
অনেক মূর্খের কাছে নোবেল জিনিসটা আসমানী কেতাবের মতোই সম্মানিত। এসব কারনে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্থও। তারপরও ড. ইউনূস ঠিক সম্মানিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছেন না। এতে করে আমার মনের মধ্যে একটা প্রশ্নের উদয় হয়েছে।
তাহলে কি ড. ইউনূসের ওপর গ্রামাঞ্চলের সুদখোর মহাজনদের অভিশাপ রয়েছে? যারা লেখাটি পড়েছেন তারা আমাকে প্রশ্ন করুন, কেন আমার মনে এ প্রশ্নের উদয় হয়েছে?

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ক্ষুদ্রঋণের জাল জাড়িয়ে কিডনি বিক্রির ঘটনা নিয়ে বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি পড়ার আহবান জানাই।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০২
৩৩টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×