সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে ইসলামের ইজারা নিয়েছে দৈনিক আমার দেশ। কয়েকদিন আগে পত্রিকাটির প্রথম পাতায় একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এ দাবি করেছেন।
বিজ্ঞাপনে তিনি জাতিকে তাঁর সঙ্গে থাকার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'এই ক্রান্তিকালে একমাত্র তারা ইসলামের সঙ্গে রয়েছে। আপনারা সঙ্গে আছেন তো?'
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মাহমুদুর রহমান তরুণদের প্রতি লাল সালুর মজিদের মতো প্রশ্নও ছুড়েছেন 'ওই মিয়া, তোমার দাড়ি কই? এই অবান্তর প্রশ্নে আমাদের দেশের জনগণের বেশ বড় অংশই ভাবতে লাগলো, তাই তো?? এদের দাড়ি কই? এরা কি ইসলাম বিদ্বেষী??
কিন্তু এই আবাল জনতা ভেবে দেখছে না, ইসলামের ইজারাদার মাহমুদুর রহমানেরও কোনো দাড়ি নেই। মাহমুদ আদর্শের যাদের দাড়ি আছে তারাও দাড়ি (ইসলাম) বেঁচে খায়। দাঁড়ি দিয়ে বহু মানুষ পেট চালাচ্ছে। হায়রে বাঙালী!!
আমাদের সমাজের একটা লোকও ধর্ম পালন করে না। অথচ ঈমান এদের ষোলোআনা। ধর্মটাকে তারা শুধুমাত্র ব্যবহার করে ইহজগত ও পরোকালের লোভে। এ নিয়ে গত রমজানে 'হ্যাপি মাহে রমজান, ক্ষুধা ও খাদ্য বিলাস শুভ হোক' শিরোনামে আমি একটি গদ্য রচনা করেছিলাম। (Click This Link)
যাইহোক, ইসলামের ভণ্ড ইজারাদারের কথা পাবলিকও বেশ খাচ্ছে। মুরগির সঙ্গে সহবাস করে হাজী হওয়া আমার দেশে মাহমুদুর রহমানের একটা লেখা পড়লাম কয়েকদিন আগে। লেখায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, 'শাহবাগে তরুণ-তরুণীরা একসঙ্গে রাত কাটাচ্ছে, তাহলে সমাজ কোনদিকে যাচ্ছে??
লাকী নামের মেয়েটিকে দেখে এই নব্য হাজীর লিঙ্গ দাড়িয়ে গেছে। মাহমুদুর রহমানের মতো এই শ্রেণীর সংখ্যা সমাজে বিপুল পরিমাণ। লাকীর মতো নারীদের দেখে এদের লিঙ্গ দাড়িয়ে যায় এবং ভণ্ড ধার্মিকদের লিঙ্গ এরাই জাগিয়ে তোলে। সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট এরাই। এদের দিয়েই আমাদের সমাজটা গঠিত। এই ভণ্ড ধার্মিকদের কথায় জনতা 'হায় হায়' করা শুরু করে দিয়েছে।
যাইহোক, শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে আমি শুরুতেও আশাবাদী ছিলাম না। এখনও নই। কারন একটাই, আমার সমাজের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র কোনো বিশ্বাস নেই। যদিও চাই আন্দোলনটা সফল হোক।
শাহবাগে সমাবেশ শুরু হওয়ার পর সম্ভবত তৃতীয় দিন আমি সেখানে গিয়েছিলাম। শুনলাম এক নারী গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা করছেন, ''আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখানেই বসে থাকবো।'' আমি বুঝলাম আর কয়েকদিন পর আন্দোলনকারীরা বক্তৃতায় বলবে , '' আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখানেই শুয়ে থাকবো''।
শোয়া-বসা জনগণ দিয়ে কি আর আন্দোলন হয়??
জামায়াত-শিবিরের অল্প কিছু লোকের তাণ্ডবে সরকারসহ পুরো জনগণ এখন দিশেহারা। সরকারী বাহিনী সামাল দিতে না পেরে নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ে সমালোচিত হয়েছে। আর মধ্যবিত্ত জনতা ভয়ে দিশেহারা হয়ে ভয়ে বাসা থেকে বের হয়নি। টিভিতে বসে খবর আর টক শো দেখেছে বা অংশ নিয়েছে। আবার কেও কেও ব্লগ ও ফেসবুক মাতিয়েছে। আর কিছু লোকজন অফিস করতে বাধ্য। তাই তাদের বের হতে হয়েছে। আর সন্ধ্যায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে বাসায় ফিরেছে।
একদিন আমিও অফিস করে বাসায় ফিরছি। বাসে ওঠার পর দেখতে পেলাম ভীত মুখগুলোকে। কয়েকজন চাচার বয়সী মানুষ ভয়ে জামায়াত-শিবিরের পক্ষে গিয়ে উল্টো সরকারের সমালোচনা শুরু করলেন।
আমি এক চাচাকে বললাম, আপনি আজ যে ভয়টা পেয়েছেন, আপনি কি চান যে, এই ভয়টা চিরকাল জিইয়ে থাকুক?? তিনি আমার কথা বোঝেননি। সহজ করার জন্য বললাম, বিএনপি বা আওয়ামী লীগ যত বড় কর্মসূচিই দিক, জনগণ তো এতোটা ভয় পায় না, জামায়াত-শিবিরকে যতটা পায়। দেশের জনগণ যতটা ভণ্ডই হোক, পাকিস্তানের মতো সহিংস মানসিকতার নয়। বাংলাদেশে এই একটিমাত্র দলকেই কোনো বিশ্বাস নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় বুদ্ধিজীবিদের হত্যার বিষয়টা কতটা নিকৃষ্ট সেটা কি অনুধাবন করতে পারেন?? তাহলে আপনি চিরকাল এই ভয়টাকে জিইয়ে রাখতে চান কেন??
আমার কথায় তিনি সরকারের সমালোচনা বন্ধ করলেন বটে। তবে ভয় আর তার পিছু ছাড়েনি।
আমাদের সমাজের ভণ্ড ধার্মিকেরা নাস্তিক ভাবাদর্শের ব্যক্তিদের ঘৃণা করে বটে, তবে গায়ে হাত তোলে না। গায়ে হাত তোলে জামায়াতী আদর্শের লোকজন। কারন এরা ধর্ম দিয়ে পেট চালায়। পেট বাঁচানোর তাগিদেই তারা সহিংস হয়ে ওঠে। হিসাবটা খুব সহজ। কিন্তু আমাদের ভণ্ড সমাজ ধর্ম ব্যবসায়ী ও ইসলামের ইজারাদারদের ঘৃণা করে না। ঘৃণা করে নাস্তিকদের!!
এই নিকৃষ্ট সমাজ ভালো হতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হতে হবে হয়তো।
আমি আমার বাপ-চাচার প্রজন্মকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। তারপর ঘৃণা করি আমাকে। অর্থাৎ আমার প্রজন্মকে। আমার বাপ-চাচাদের প্রজন্মটি মারাত্মক রকমের ভণ্ড। এই প্রজন্মটি তাদের সন্তানকে শিখিয়েছে, বাপ চাচাকে সম্মান করো।অর্থাৎ বাপ-চাচা মানুষ হিসেবে কেমন সেটা জানার দরকার নেই। সম্মানটা অবধারিতভাবে করতে হবে।
আবার দেখা যায়, বাপ জানে ছাওয়াল বিড়ি খায়। ছাওয়াল জানে বাপ বিড়ি খায়। কিন্তু কেও কখনো একসঙ্গে বিড়ি খায় না। হা...হা...হা..হা...হা...হা......।
আমার বাপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তিনি চান আমি বিসিএস দিয়ে ফার্স্ট ক্লাস কেরানি হই। অথচ আমি বিসিএস ক্যাডারের চেয়ে বেতন বেশি পাই। অর্থাৎ আমার বাপ মানসিকভাবে দুই নাম্বার। আমার বাপ তাদের প্রজন্মের প্রতিনিধি। মধ্যবিত্ত তথাকথিত শিক্ষিত পরিবারের সন্তানের সব বাবাই ভণ্ড।
ভণ্ডামিমুক্ত প্রজন্ম গড়তে হলে দরকার উপযুক্ত শিক্ষা ।আর শিক্ষার আগে দরকার সবার পেটে ভাত থাকার নিশ্চয়তা। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সমতা। কে করবে এটা ??
চারপাশের সবাইতো পরাজিত মধ্যিবিত্তের একজন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমি আমার সমাজকে তথা সমাজের সবাইকে ভণ্ড বলেছি। এর মানে আমিও নিজেকে সব সময় সাধু বলে ভাবি না। ভণ্ডামিপূর্ণ সমাজে জন্মেছি, কাজেই পুরোপুরি ভণ্ডামিমুক্ত হওয়া আমার পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে আমি সচেতন। ভণ্ডামিটা বুঝতে পারি এবং স্বীকার করি। আর স্বপ্ন দেখি,
''বসতি আবার উঠবে গড়ে
আকাশ আলোয় উঠবে ভরে
জীর্ণ মতবাদ সব ইতিহাস হবে
পৃথিবী আবার শান্ত হবে''
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮