somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন লাগলো: মন্মথের মেলানকোলিয়া

১৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মেলানকোলিয়া, এর অন‍্য নাম  বিষাদ রোগ বা গভীর ডিপ্রেশন। উপন্যাসের নাম মন্মথের মেলানকোলিয়া- এই নাম বলে দেয় গভীর বিষাদাক্রান্ত কোন মানুষের দেখা পাওয়া যাবে এই উপন্যাসে। পাওয়া গেল, প্রথম অধ্যায়ের প্রথম পৃষ্ঠাতেই; মানুষটির নাম কাজলী। এই কাজলীর মন খারাপ, অথবা কাজলীর মন খারাপ নয়। কাজলীর ভালো লাগে অথবা ভালো লাগে না। এইভাবে কাজলির সাথে পাঠকের প্রথম পরিচয় ঘটে- তাকে কিছু বোঝা যায় কিছু বোঝা যায়না।

গল্প এগোনোর সাথে সাথে কাজলীর সম্পর্কে আরো কিছু জানা যায়। ব্যভিচারী মা চলে গেছে পরপুরুষের সঙ্গে। এই শোকেই- বাবা হার্টফেল করে মারা যায়। বড় বোন বিজলী কোথায় হারিয়ে গেল কাজলী জানেনা।

কাজলী অন্তর্জালের জগতে বিজলীকে খুঁজে বেড়ায়,আর ব্যর্থ হয় খুঁজে পেতে। এই ব্যর্থতা, বাবাকে হারানোর দুঃখ, মায়ের প্রতি তীব্র ঘৃণা কাজলীকে ঘিরে রাখে প্রতিক্ষণ।  কাজলী ক্লান্ত, দিনযাপনের বিষম অবসাদ তাকে ঘিরে রাখে। এমন ক্লান্তিময় দিনে অফিস ফেরত কাজলী কে এক কাপ চা বানিয়ে দেবার জন্য কখনো বুয়াকে পাওয়া যায় কখনো পাওয়া যায় না। তার চায়ের কাপে বিষাদ আর বিস্বাদ মিলেমিশে একাকার হয়ে ঐকতান বুনে চলে ডেভিড লিঞ্চের নীলচে মখমলের কুহক গানের মত । কাজলীর একাকী সংসারে এই বুয়াই তার একমাত্র সঙ্গী। কাজলী চাকরি করছে দুই বছর যাবত্ কিন্তু অফিসে তার কোন বন্ধু আছে বলে জানা যায় না। পুরো গল্প জুড়ে কাজলী নিঃসঙ্গ, কেবল অফিস আর বাসায় মধ্যেই তার সমস্ত সময় কাটে। তার কোন প্রেমিক নেই। অতীতে ছিল তেমনটাও জানা যায়নি, ভবিষ্যতে হবে তেমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পরিচয় হওয়া এক ফ্লা্র্টবাজ লেখক প্রায়শই হানা দেয় কাজলীর মেসেঞ্জারে, কাজলী তাকে তেমন পাত্তা দেয় না।
 
আর দশজনের মতোই কাজলী অফিসে কাজে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু দেখা যায় কখনো অফিসের এসি রুমে বসে কাজলী হঠাৎ ঘামতে থাকে, তার চোখের মনি স্ফিত হয়ে আসে, বুক ধড়ফড় করে, ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ে। একই অভিজ্ঞতা তার মাঝে মাঝে হয় একাকী ঘরে। তখন প্রচণ্ড আতঙ্কের দমকায় উড়ে যেতে চাইছে হৃদপিণ্ড।  এটা প্যানিক অ্যাটাক। প্যানিক অ্যাটাক; the worst thing a human being can experience. এই প্যানিক অ্যাটাক কি কাজলীর সমস্ত ডিপ্রেশনের উৎস? জানা নাই। শুধু দেখতে পাই কাজলী জিওনীল টেবলেট খায়, কখনো খায় নেশা ধরানোর জন্য কফ সিরাপ। কাজলী নানাভাবে চেষ্টা করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের; সেজন্য কাজলী লেখালেখিতে ব‍্যস্ত হতে চায়, আকুল হয়ে খোঁজে  এমন কাউকে যে তাকে একটু বুস্ট দিতে পারে। সে অফিস থেকে ক্রমাগত ছুটি নিতে থাকে; এক সময় অফিসের প্রাপ্য নানা ধরনের ছুটির প্রায় সব তার নেয়া হয়ে যায়। গল্পের শেষে এসে দেখি সে পত্রিকায় একটি পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়েছে এরকম;


আমার বয়স ২৯, বেসরকারি কোম্পানিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত আছি।

হবু পাত্রকে কাজলীর একটা চাহিদা পূরন করতে হবে বলে বিজ্ঞাপনে জানানো হলো। চাহিদাটা বড় অদ্ভুত!

এই বিজ্ঞাপন দেবার ফল যা হল তা চমক জাগানিয়া!!

কাজলীর গল্পের সাথে সাথেই সমান্তরাল ভাবে এগিয়েছে বিট্টুর গল্প। বিট্টু রাস্তার কুকুর- তাকে ভালোবাসে যে খেলুড়ে ছেলেটি তার নাম মিরু। বইয়ের পাতায় পাতায় বিট্টুর নানা আচরণ, বৈশিষ্ট্য ও কাহিনী বলা হয়েছে। একটি বৈশিষ্ট‍্য এমন,বিট্টুর ভোকাবোলারি হাজার শব্দের। আরো নানা বৈশিষ্ট্য আছে যা মিরুর চোখে ধরা পড়ে।

 রাস্তার কুকুর আমার পছন্দ নয় তাই বিট্টুর আচরণের বর্ণনা আর দিলাম না।

বিট্টুর জানার কথা নয়, মাঝে মাঝে দুই জীবনের অসঙ্গত বিন্দুগুলি কিভাবে কেন মিলে যায়, অথবা যায় না।

কার জীবনের সাথে কার জীবন মিলে যাবার কথা বলা হয়েছে তা জানতে হলে মন্মথের মেলানকোলিয়া শেষ অবধি পড়তে হবে।

এবার বলি আমার কেমন লাগলো মন্মথের মেলানকোলিয়া। গল্প বলার ভাষা ও ভঙ্গিমা চমৎকার। আমি এমন পাঠক যে গল্পে  চেনাজানা মানুষের ছায়া দেখতে পেলে সেই গল্প তরতর করে পড়ে ফেলতে পারি। কিন্তু এই গল্প পড়তে আমার দীর্ঘ সময় লেগেছে; প্রথমত কাজলীকে বুঝতে গিয়ে- কাজলী আমার চেনাজানা চরিত্রের মধ্যে পড়ে নাই। দ্বিতীয়তঃ অনেক কিছুই পড়তে ভালো লাগেনি, তাই। যেমন কাজলী বসে মানুষের গলা কাটা ভিডিও দেখছে! অবশ্য গলাকাটার কোন রগরগে বর্ণনা গল্পে দেয়া হয়নি। বেশ কয়েকদিন লাগিয়ে বইটা শেষ করার পর মনে হল-  না পড়লে জানতেই পারতাম না একজন মানুষ কতটা কষ্টের ভিতর ডুবে যেতে যেতে প্রাণপণ চেষ্টা করে ভেসে উঠতে!! মনে পড়ে গেল কয়েক বছর আগে পত্রিকায় আসা রীতা মিতার কাহিনী। আমাদের আশেপাশে মনের অসুখে ভোগা এমন অনেক মানুষ আছেন তাদের আমরা জানতে পারিনা। এই গল্প পড়লে সেই জানার কাজটি সহজ হয়ে যায়।

বোল্ড করা লাইনগুলো মন্মথের মেলানকোলিয়া থেকে কপি পেস্ট।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫২
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে মুসলিম চরিত্রের অনুপস্থিতি: এক অনালোচিত প্রশ্ন?

লিখেছেন মুনতাসির, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০৫

সত্যজিৎ রায়, যিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত, তাঁর চলচ্চিত্র, গল্প এবং গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা বাস্তববাদী চরিত্র, সমাজচিত্র, এবং গভীর দার্শনিকতা নিয়ে আলোচিত। তবে তাঁর কাজের মধ্যে একটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×