
‘মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো?
নাকি চেনো না ?
মেয়ে, তুমি কি আকাশ চেনো ?
নাকি চেনো না?
তবে চিনবে কেমন করে
এই আমাকে?
তবে চিনবে কেমন করে
এই আমাকে ?'' ............... প্রিয় আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠের একটি জনপ্রিয় গানের কথাগুলো ছিল উপরের উল্লেখিত কথাগুলো। যে গানটির নামছিল ‘মেয়ে’। আমাদের ফেলে আসা সোনালি দিনের আইয়ুব বাচ্চুর ‘মেয়ে’ গানটি শুনেনি এমন শ্রোতা নেই। এই গানটির শিরোনাম দিয়েই ৯০ দশকের অডিও বাজারে ঝড় তুলেছিল এবং বাংলা ‘ব্যান্ড মিক্সড’ অ্যালবামগুলোর মধ্য চিরস্মরণীয় অ্যালবাম এর স্থান দখল করে নিয়েছে জুয়েল বাবুর
‘মেয়ে’ অ্যালবামটি । অর্থাৎ আইয়ুব বাচ্চুর ‘মেয়ে’ শুধু একটি গানের সুপারহিট গানের নাম নয় ,একটি সুপারহিট অ্যালবামও বটে। এই ‘মেয়ে’ অ্যালবাম দিয়েই আজ থেকে শুরু করলাম আরও একটি নতুন ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘জুয়েল-বাবুর অ্যালবামগুলো ‘ যার মাধ্যমে উঠে আসবে সেই সময়ের জনপ্রিয় প্রিন্স মাহমুদ ও জুয়েল বাবুর তৈরি অ্যালবামগুলোর একটি চিত্র যা বাংলাদেশের অডিও বাজারের একটি স্মরণীয় অধ্যায় ছিল ।।

১৯৯৬ সালের ঈদুল ফিতরে প্রকাশিত অডিও অ্যালবামগুলোর মধ্য একটি দুর্দান্ত অ্যালবাম ছিল জনপ্রিয় তরুন সঙ্গীত পরিচালক জুটি জুয়েল বাবু’র ‘মেয়ে’ । যে অ্যালবামটি প্রকাশ করেছিল অডিও বাজারে মাত্র নতুন আসা ‘প্রাইম অডিও’ প্রযোজনা সংস্থা। সেই ঈদে বাংলা গানের শ্রোতাদের জন্য একটি স্মরণীয় ঈদ। কারন একই ঈদে মুক্তি পেয়েছিল প্রিন্স মাহমুদ এর ব্যান্ড মিক্সড ‘শেষ দেখা’ ব্যান্ড নোভার ‘ স্কুল পলাতক মেয়ে’ ‘আর্ক’ এর ‘তাজমহল’ উইনিং এর ‘অচেনা শহর’ ওয়ারফেইজ এর ‘জীবনধারা’ ও এলআরবি এর ‘স্বপ্ন’ অ্যালবামগুলো। তাহলে বুঝুন আপনি কোন অ্যালবাম রেখে কোনটি কিনবেন? এক মহা মধুর সমস্যায় পড়েছিলাম আমরা সেই সময়ের বাংলা গানের শ্রোতারা। কারন আমরা ঈদের ক্যাসেট কিনতাম ঘর থেকে বরাদ্দ করা আমাদের জন্য নতুন পোশাকের টাকা বাঁচিয়ে। বাজারে একসাথে মাথা নষ্ট করা সব অ্যালবাম যা না কিনলে ঈদের পুরো আনন্দটাই মাটি । যে করেই হোক ছলে বলে কৌশলে কিনতে হবেই। আমার ভাগ্য ভালো যে আমার বড় ভাই ছিলেন এই ব্যাপারে আরও অস্থির। ঈদের আগের দিন রাতেই দেখি সবগুলো অ্যালবাম বড় ভাইয়ের রুমে যা দেখে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেলো মনে। পাড়ার বন্ধুদের শুনিয়ে শুনিয়ে গাইতে লাগলাম একেকটি গান, আমার গানের কথা শুনে জিজ্ঞেস করে কার গান? কোন অ্যালবাম এর গান ? সে ছিল এক চরম মজা।
সেই মাথা নষ্ট করা সব অ্যালবামগুলোর সাথে লড়াই করে জুয়েল বাবু’র মেয়ে’ অ্যালবামটি নিজ যোগ্যতায় সুপারহিট অ্যালবামগুলোর তালিকায় স্থান করে নিলো ।
‘মেয়ে’ অ্যালবাম এর শিল্পীরা ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু, মাকসুদ, জেমস, শাফিন আহমেদ, হাসান, খালিদ, টিপু, পার্থ , বিপ্লব ও এস আই টুটুল। অ্যালবাম এর গানগুলোর কথা, সুর ছিল একেকটি অসাধারন। গানগুলো হলো - আইয়ুব বাচ্চু - মেয়ে, জেমস- দেখে যারে তুই , হাসান - একাকী প্রহর , মাকসুদ - হৃদয়ের অন্তরালে , টিপু - এ মন বোঝে না , খালিদ- সরলতার প্রতিমা, পার্থ- স্বপ্ন সবাই দেখে, বিপ্লব - আমার কণ্ঠস্বরে , টুটুল - নিঃসঙ্গ রাত ও শাফিন আহমেদ - বলে যা গানগুলো।
মেয়ে , বলে যা, একাকী প্রহর ও নিঃসঙ্গ রাত গানগুলোর সুর ও সঙ্গীত করেছিলেন - আইয়ুব বাচ্চু, শাফিন আহমেদ, পঞ্চম ও টুটুল । বাকী সব গানের সুর ও সঙ্গীতে ছিলেন জুয়েল বাবু। ভিন্নধর্মী ও অসাধারন সব কথার গানগুলো লিখেছিলেন - নিয়াজ আহমেদ অংশু - মেয়ে, তরুন - দেখে যারে তুই, হৃদয়ের অন্তরালে ও সরলতার প্রতিমা , আহসান - একাকী প্রহর , জামিউর রহমান রনিম - বলে যা, আশরাফ বাবু - এমন বোঝে না ও স্বপ্ন সবাই দেখে , মিশু- আমার কণ্ঠস্বরে এবং আল মাসুম - নিঃসঙ্গ রাত ।
এই অ্যালবামটির ‘সরলতার প্রতিমা’ গানটি দিয়েই আজকের প্রজন্ম খালিদ কে চিনে ও জানে অথচ জানে যে গানটি আজ থেকে ১৬ বছর আগের গান যা ১৬ টি বছর ধরে ২ টি প্রজন্ম মনে রেখেছে ও আগামীতেও রাখবে। ঠিক এমনি করেই মেয়ে, একাকী প্রহর, দেখে যারে তুই , নিঃসঙ্গ রাত ও হৃদয়ের অন্তরালে গানগুলো যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভালো লাগবেই যা নিয়ে কোন সদেহ নেই । আজকের প্রজন্মের এতো সুপারস্টার সব সঙ্গীত পরিচালক অথচ কেউ আজ পর্যন্ত এমন একটি অ্যালবাম দিতে পারলো না যে অ্যালবামটির মাঝ থেকে নিম্নে ৫/৬ টি গান যুগ যুগান্তর ধরে টিকে থাকবে। আমার সম্বসয়িরা যে কত ভাগ্যবান ছিলাম সেটা আমরা জানি। সেরাদের সেরা যুগটা আমরা দেখে ফেলেছি বহু আগেই তবু আজো সেই যুগটা আমাদের বারবার টানে ...............।বারবার টানে।।
সম্পূর্ণ অ্যালবামটি পাবেন শুধুমাত্র -RaDiO bg24
বিশেষ কৃতজ্ঞতা ঃ ‘RaDiO bg24’ পরিবারের অন্যতম সেরা সদস্য ইমতিয়াজ মাহমুদ তমাল কে ।
********* কবি ও কাব্য (ফজলে এলাহী পাপ্পু)এর ‘বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাস’ এর অধ্যায় ৫ ঃ ব্যান্ড সঙ্গীতের সেরা অ্যালবামগুলো’র ‘মেয়ে’র অংশ থেকে নেয়া ***********