somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাতু মালয়েশিয়া - ১২ ( শেষ )

২২ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব -

Click This Link

সময় গেলো ঘোড়ায় চেপে

ড. এলেন মারের কঠিন কঠিন ক্লাসের ভেতর দিয়ে শেষ সপ্তাহটা দ্রুত শেষ হয়ে গেলো। বুকিত বিনাতাংয়ে ঘুরে, উইণ্ডো শপিং করে আর হানিফা মাইডিন করে কেটেছে সন্ধ্যাগুলো। শুক্রবারে আবার জুম্মা পড়তে গেলাম কে এল সি সি সংলগ্ন মসজিদ আস সায়াকিরিন-এ। সেদিনও আমার পাশে বসলেন এক মালয়ী। বসার পর সালাম দিয়ে হাত মিলালেন। মালয়ীদের বন্ধূ বাৎসল্যের সরল প্রকাশ।


মসজিদ আস সায়াকিরিন-এ নামাজীদের ঢল

সত্যচারীর সাথে আরেক সন্ধ্যা

চলে আসার আগের দিন সত্যচারী সপরিবারে সবান্ধবে এলেন। মাহবুব সাহেবের সাথে আরেকজন এলেন এবার। ড্রাইভিং সিটে সত্যচারী, পাশে ভাবী সাহেবা। পেছনে আমি আর তার দুই বন্ধু। ঘুরে বেড়ালাম শহরে। তারপর শহর থেকে দূরে চললো গাড়ী। একটা ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়ালাম। অপর পাশে দেখি সিগনালে দাঁড়ানো প্রধানমন্ত্রী নাজীব তুন রাজাকের গাড়ী বহর ! অবাক হয়ে দেখলাম দেশের প্রধানমন্ত্রী সিগনালে অপেক্ষা করছেন। কয়েক সপ্তাহ আগের হঠাৎ আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী অফিস শেষে প্রতিদিন জনসাধারণের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। বাজারে গিয়ে, পথে পথে থেমে মানুষের সাথে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী। জানতে চাচ্ছেন মানুষের চাহিদা। ব্যাখ্যা করছেন নিজেদের অবস্থান। টিভি পত্রপত্রিকায় সেসব দেখেছি। দেখলাম তিনি আবার চলেছেন জনতার কথা শুনতে।

সত্যচারী একটা পার্ক দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গিয়ে দেখি সন্ধ্যায় সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। তারপর ফিরে এসে বসলাম এক থাই রেস্তোরাঁয় খাবার জন্য। ভিন্নধর্মী সব খাবারের অর্ডার দিলেন। ভাবী হলেন মূল পছন্দকারী। আমি খাবারের বেলায় নিতান্তই দেশী প্রকৃতির। তাই বেছে বেছে কিছু খেলাম। স্যুপটা বেশ লাগলো।

খেতে খেতে কথা হলো দেশ নিয়ে। প্রবাসীরা দেখেছি সব সময় দেশ নিয়ে ভাবেন। কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকেন। যদিও আমরা একদম মনে রাখি না এই সব প্রবাসীর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করা বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রানভোমরা।

খাবার পর হোটেলের কাছে নামিয়ে দিয়ে গেলেন সত্যচারী। সবার কাছে বিদায় নিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে। জানি না আবার কবে দেখা হবে তাদের সাথে।

সনদ বিতরন ও ডিনার

জে ডাব্লিউ ম্যারিয়টে হলো সনদ বিতরন ও বিদায়ী ডিনার। সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতায় শেষ হলো সব। কানাডিয়ান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট জর্জ সাদারল্যাণ্ড সস্ত্রীক ছিলেন। আর ছিলেন ড. মারে। ডিনার নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। বিদেশী খাবারের প্রতি বিশেষ অনুরাগ নেই বলে তেমন ভালো লাগনো না সেটা। স্যুপ আর ডেজার্টই ভরসা। সবার তাড়া ছিলো রাতই আমাদের ফিরতি ফ্লাইট বলে।

বিদায় কে এল

হোটেলে ফিরে দ্রুত তৈরী হয়ে চেক আউট সারলাম। দুটো মাইক্রোতে চড়ে ছুটলাম কুয়ালা লামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আলো ঝলমল শহর ছেড়ে রাত বারোটার কিছু পরে পৌঁছে গেলাম সেখানে। ফ্লাইট রাত পৌনে তিনটায়। আমার চেক ইন হয়ে গেলো সহজেই। লাগেজ ওয়েট সীমার মধ্যেই ছিলাম। সঙ্গীদের অনেকেই প্রচুর শপিং করেছেন। হৈ চৈ করে টেনশান আর আনন্দে মিলে সবার চেক ইন শেষ হলো। নিরাপত্তা গণ্ডি পার হয়ে শেষ মাথায় গিয়ে বসে থাকলাম বিমানের জন্য।

দেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন

আধ ঘন্টা লেটে বিমান ছাড়লো। ঝকঝকে বিমান। যাত্রী কানায় কানায় ভরা। প্রচুর ভারতীয় আর নেপালী যাত্রী পেলাম। বিমান ওড়ার আগে শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির ভেতরই বিমান ডানা মেললো মেঘ ফুঁড়ে। প্রায় সারা পথেই ঝাঁকি খেতে এলাম। কক্সেজবাজারের কাছাকাছি কোথাও এসে প্রবল ঝাঁকুনি শুরু হলো। খুব দ্রুত কয়েক হাজার ফুট নেমে এলেন পাইলট। তারপর স্বাভাবিক হলো সব। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মহিলা আর শিশুদের কেউ কেউ কেঁদে উঠলেন ভয়ে।

ভোর পৌনে ছটায় নামলাম ঢাকায়। আমার পাশে ছিলেন নারায়নগঞ্জের এক প্রবাসী। সাড়ে তিন বছর পর দেশে ফিরছেন। কেবিন ক্রু যখন বললেন, আমরা আর কিছু ক্ষণের মধ্যে ঢাকার হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করতে যাচ্ছি। শুনে তিনি চমকে উঠে বললেন, এই বিমানবন্দর কোথায় ? এটা কি নতুন হয়েছে ? আমি বললাম, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এটার নাম আগে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ছিলো। শুনে আশ্বস্ত হয়ে চুপ করে গেলেন।

বিমান বন্দরের আনুষ্ঠাকিতা সেরে সকাল সাড়ে সাতটায় ফিরলাম বাসায়। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলাম। সারা মনে শিশ দিয়ে উঠলো স্বস্তি- হোম, সুইট হোম।

(শেষ)

কৃতজ্ঞতা স্বীকার- ব্লগার সত্যচারী ও ভাবীর জন্য কৃতজ্ঞতা। কারণ তারা আমাকে অনেক সময় দিয়েছেন। রাতের পুত্রাজায়া ঘুরিয়েছেন। দারুন দারুন ভোজন করিয়েছেন।

সত্যচারীর বন্ধু মাহবুব সাহেবকে কৃতজ্ঞতা জানাই এবারের ভ্রমনকথার শিরোনামটির জন্য। কি নামে লিখবো এ নিয়ে পড়া ভাবনা দূর করেছেন ''সাতু মালয়েশিয়া'' শিরোনামটি দিয়ে।

সর্বত্রই সাতু (ওয়ান ) মালয়েশিয়ার চিহ্ণ

সর্বশেষ কৃতজ্ঞতা আমার এই ভ্রমনকথার পাঠকদের জানাই। তাঁদের নিরন্তর উৎসাহে শেষ করতে পারলাম এই ক্ষুদ্র ভ্রমনকথা।

৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঈশ্বরের ভুল ছায়া – পর্ব ৩ | ভূমিকা-ব্রীজ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮



"তুমি যদি বাতাসকে ভালোবাসো, তাকে বশ করো না—তার সুর বোঝো। কারণ বাতাস একবার থেমে গেলে, তার কণ্ঠ আর কখনো শোনা যায় না।"

“ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ ভারতে নিহিত ইসরায়েল ও ভারতের ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ ভারতে নিহিত

লিখেছেন ঊণকৌটী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১৩


উভয় বাজারে নেতৃস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটছে। এটি ইসরায়েলকে পশ্চিমাদের উপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করছে, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের যুদ্ধে সমস্যাযুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট জোনে পরিণত করলো ড. ইউনুসের অবৈধ দখলদাররা ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২১



শেষ পর্যন্ত ড.ইউন তার আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেখালেন! উনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কখনোই কোন কাজ করেননি ।আমাদের কোনো দুর্যোগে কখনো পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই । যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×