আমার আগের অভিজ্ঞতার সূত্র ধরে আজ আরেকজন সম্পর্কে একটা শোনা গল্প বলবো। যাকে নিয়ে এ গল্প, সে এবং যে আমাকে গল্পটা শুনিয়েছে, তারা উভয়ে আমার অনুজপ্রতিম। বয়সে আমার চেয়ে প্রায় ৮/৯ বছরের ছোট।
ধরা যাক, যার কথা বলছি, তার নাম আনন্দ। আনন্দ যেদিন বিএমএতে গেলো, সেদিন ওর চোখে আর সবার মত অনেক আনন্দ ছিলো, স্বপ্ন ছিলো। সদা হাসিখুশী, পরোপকারী এই ছেলেটি শুরু থেকেই প্রশিক্ষণটাকে খুব সিরিয়াসলী নিয়েছিলো। সবার আগে দৌড়ে আসার চেষ্টা করতো, নিষ্ঠার সাথে প্রশিক্ষকদের সব হুকুম পালন করার চেষ্টা করতো, যদিও শরীর কিছুটা ভারী হবার কারণে ঠিকমত পারতোনা। ড্রিলেও খুব আন্তরিক ছিল। ধুপধাপ পা মেড়ে ড্রিল করতো, ফাঁকি দিতনা। কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত ড্রিল করার পর নিয়মানুযায়ী স্যালুটিং টেস্ট এর পালা এলো। ড্রিলে তার আন্তরিকতা দেখে সবাই ভাবতো, ও সবার আগে প্রথম ব্যাচেই পাশ করে যাবে। কিন্তু বিধি বাম! তা হলোনা।
এর পর পালাক্রমে মাসে মাসে পুনরায় স্যালুটিং টেস্ট এর বৈতরণী সামনে আসতে থাকলো। তার ব্যাচের বাকীরা সবাই একে একে সে বৈতরণী পার হয়ে যেতে থাকলো। তার ভাগ্যে আর শিকে ছিঁড়েনা! একদিন ব্যাচের 'মকড়া মাস্টার' ক্যাডেটটিও শেষ পর্যন্ত পার হয়ে গেলো সে বৈতরণী। শুধু আনন্দ বাকী রয়ে গেলো।
এতটুকু শোনার পর আমি প্রশ্ন করলাম, “কেন সে পাশ করতে পারছিল না, কোথায় তার দোষ ছিলো”? উত্তর শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! আনন্দের ড্রিলের সবকিছুই ঠিক ছিলো, তবে…
আনন্দ যখন অক্লান্ত উদ্দীপনা নিয়ে যথাযথ পা মেড়ে রিভিউইং অফিসারের সামনে এসে স্যালুট দিয়ে তার হাত কপালে ঠেকাতো, তখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে তার ঘর্মাক্ত মুখেও ঠোঁটের কোণা থেকে এক টুকরো হাসি বেরিয়ে পড়তো। অভিব্যক্তিটা এমনই ছিল যে ও না হাসলেও সবাই মনে করতো ও হাসছে! রিভিউইং অফিসার এটাকে তাচ্ছিল্য মনে করতেন আর তাকে ক্রমাগতভাবে ফেল করাতেন। এ ভাবেই আস্তে আস্তে আনন্দের আনন্দ দুঃখে পরিণত হতে থাকলো!
মাটির এ পৃথিবীতে কিছু কিছু অভাগাকে এমনিভাবে কত তুচ্ছ ভুলের কারণে কত বড় মূল্য দিতে হয়! আনন্দের এই শাস্তির তুলনায় আমার সেই “LOV” এর ব্যাপারটা তো ছিল নস্যি মাত্র, যদিও দুটোই ছিল হাসির কারণে....
ঢাকা
২৮ অগাস্ট ২০১৫
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।