থাইল্যান্ডের বিখ্যাত পর্যটক শহর চিয়াং মাই থেকে অনেক অনেক দূরে এক গহীন গ্রাম এই কোভিডের মাঝেও সারা দেশ জুড়ে এক আলোড়ন তুলেছে গত রবিবার থেকে। চারিদিক বনে ঘেরা এক পাড়া, আর এলাকার নাম বান হুয়াই, সেখানে চার বছরের এক ভাই আর মা বাবাকে নিয়ে থাকে পুতুলের মত ছোট্ট নং জিনা। বয়স তাঁর দুইও হয়নি এতই ছোট সে, তো ৫ই সেপ্টেম্বর রবিবার রাতের বেলা বাড়ির উঠোনে বিড়াল নিয়ে খেলছিল জিনা। মা রান্নায় ব্যাস্ত, বাবা ময়লা ফেলতে গিয়েছে আর ভাইটি বোনকে এক পলক দেখে ঘরে ঢুকেছে। একটু পরে তাঁর সাড়াশব্দ না পেয়ে মা এসে দেখে বিড়াল বসে আছে উঠোনে কিন্ত জিনা নেই। নেই নেই তো নেই, বাবাও এসে পরেছে এর মধ্যে । চারিদিকে খুজে না পেয়ে বাবা মা পুলিশের দ্বারস্থ হলেন। জানালেন তাদের মেয়ের ঘরের সামনে থেকে হারিয়ে যাওয়ার কথা, আর তাদের শিশু মেয়েটি পরিচিত ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না।
অপহরনকারী মায়ানমারের নাগরিক সিউ
তৎক্ষনাৎ পুলিশের রেসকিউ ওয়ার্কার, ভলিন্টিয়ার এবং গ্রামবাসী সবাই মিলে খুজতে লাগলো জিনাকে। সারারাত ধরে খুজতে খুজতে ভোর হয়ে আসলো। দুই মাইল জায়গা জুড়ে তন্ন তন্ন করে খোজা হয়েছে কিন্ত জিনার পাত্তা নেই। মেয়েকে হারিয়ে বাবা মা এর চোখের পানি আর থামে না।
৬ তারিখ সোমবার সকাল থেকে আবার নং জিনাকে খোজা শুরু হলো, এবার পুলিশের প্রশিক্ষিত কুকুর, ড্রোন এমনকি জিনার বাবাকে নিয়ে পুলিশের হেলিকপ্টার দিয়ে শুরু হলো জিনাকে খোজা। বার বার নীচু দিয়ে উড়ে যেতে লাগলো হেলিকপ্টার, দিন পেরিয়ে রাত হয়ে আসলো কিন্ত খুজে পাওয়া গেলনা নং জিনাকে। সারা থাইল্যান্ডের মানুষ সেই গুহায় হারিয়ে যাওয়া ক্ষুদে ফুটবলারদের মতই জিনার খোজ পাওয়ার জন্য এক চোখ টিভির খবরে সেই সাথে প্রার্থনা।
৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আবারও ব্যর্থ হলো সব অভিযান। এ দিকে সেই গ্রামের একজনের উপর পুলিশের সন্দেহ হচ্ছিল আর সে ছিল জিনার বাবারই এক বন্ধু নাম সিউ । মায়ানমার থেকে আসা সিউ অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল আরও অনেকের মতই। জিনার মা বলেছে জিনা অপরিচিত কারো সাথে কথা বলে না,কাছে ডাকলে যায়না। কিন্ত সিউ তো জিনার পরিচিত, প্রায়ই তাদের বাসায় আসে, সেদিন রাতেও সে এসেছিল জিনাদের বাসায়। পুলিশের জেরায় সে জানায় ঐ ঘটনার সময় সে পাশের গ্রামের এক দোকানে সাইকেল ঠিক করছিল । পুলিশ সাথে সাথে খোজ নিয়ে জানতে পারে সে সেই দোকানে যায় নি মিথ্যে বলেছে। এতে তাঁর উপর সন্দেহ আর পাকাপাকি হয়।
জঙ্গলের গভীরে পরিত্যাক্ত এক কুটির থেকে নং জিনাকে উদ্ধার এর পর কোলে করে নিয়ে আসছে একজন পুলিশ অফিসার
৮ই সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল থেকে পুলিশ সিউকে বিরতিহীনভাবে জেরা করার এক পর্যায়ে দুপুর বেলা সে বলতে বাধ্য হয় যে সেই জিনাকে অপহরন করেছে । কিন্ত তাকে সে হত্যা করে নি শুধু পাহাড় আর গুহার আত্মার আদেশে সে জিনাকে সেই পাহাড়ের গুহার সামনে তাকে আত্মার কাছে উৎসর্গ করে এসেছে।
তাঁর কথা শুনে তাকে নিয়েই পুলিশ ছুটে যায় সেই যায়গায়। জিনার গ্রাম থেকে তিন কিঃমিঃ দূরে পাহাড়ের এক গুহার সামনে কলাবাগানের ভেতর এক পরিত্যাক্ত কুটিরে জিনাকে পাওয়া যায় । ক্লান্ত বিদ্ধস্ত জিনাকে উদ্ধার করে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে ৪৮ ঘন্টা না খাওয়া জিনাকে ভলিন্টিয়াররা দুধ আর পানি দিয়েছিল খেতে। মলিন জামা পরা বাবা মায়ের চোখের-মনি জিনার ছোট্ট সারা শরীরটি জুড়ে ছিল পোকার কামড় আর কাটা ছেড়ার দাগ।
তবে হাসপাতাল সুত্র জানিয়েছে তাকে আর কোন শারীরিক নির্যাতন করা হয় নি। ।তবে অনেকের সন্দেহ যে এখানে সিউর সাথে আরও কয়েকজন জড়িত ছিল। হয়তো মেয়েটিকে পাচারের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছিল। যাই হোক শেষ পর্যন্ত জিনাকে উদ্ধার করার খবর পেয়ে বাবা মায়ের সাথে সারা থাইবাসীও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, সাথে আমিও
তবে সবচেয়ে অবাক লাগে যখন অনেক শিক্ষিত থাইদের এইসব আত্মা প্রেতাত্মায় গভীর বিশ্বাস করতে দেখি । তাদেরকে সন্তষ্ট করার জন্য তাদের মুর্তি বানিয়ে খাবার দেয়, পুজা করে। মিয়ানমারেও দেখেছি এইসব দুষ্ট আত্মাদের মুর্তি ।
ছবি নেট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২৬