প্রথম প্রেম !!
ব্লগে অনেকের পোস্টেই তাদের জীবনের প্রথম প্রেম সম্পর্কে পড়ি।
কেউ বলে তাকে জানাতে পারিনি, কেউ বলে সে জানাতে পারলোনা ইত্যাদি।
তবে আমার গল্পের নায়ক নায়িকা উভয়েই এই প্রেমের ব্যপারে সম্পূর্ন ওয়াকিবহাল ছিল ।
যথারীতি গল্পের নায়িকা আমি, আর নায়কের কথায় পরে আসছি।
আমার বাবা তখন ঢাকা থেকে চিটাগাং পোস্টিং। কাজের সুবিধার্থে সীতাকুন্ডকে বেছে নিলেন।
আমাদের তিন ভাই বোনের শিক্ষাজীবন ঐ সীতাকুন্ডেই শুরু। তবে বড় ভাই বোধহয় ঢাকায় বছর খানেক পড়েছিল।
ঘটনার সময়কালে আমার বড় ভাই ফাইভে আমি থ্রীতে পড়ি আর আমার ছোটবোন ওখান কার তিনটা স্কুলেই ইচ্ছামত যাওয়া আসা।
যাক এসব ভূমিকা, এবার নায়কের আবির্ভাব হওয়া উচিৎ।
আমাদের বাসায় চব্বিশ ঘন্টা কাজের জন্য যে সিপাহী ভাইটা ছিল তার নাম ছিল আলী আহাম্মদ। আমরা তাকে আলী ভাই ডাকতাম ।আম্মা তাকে দিয়ে বাজার করানো আর মাঝে মাঝে আমাদেরকে নিয়ে পাহাড়ে ঘুরিয়ে আনা ছাড়া আর কোন কাজ করাতোনা। তার ছিল অখন্ড অবসর আর ছিল প্রচন্ড শিকারের নেশা। তবে সে জীবনে একটা ইদুরও মারতে পেরেছিল কিনা সন্দেহ!
না পারলেই আমি খুশী, শিকার করা আমার ভালো লাগেনা।
এই আলী ভাইয়ের শিকারের সংগী ছিল সেই ছেলেটা আর তারও ছিল অসম্ভব শিকারের নেশা।
আপনাদের সবার নায়িকাই তো ছিল অপরূপ রাজকন্যা, কিন্ত আমার নায়ক ছিল কালো মতন সিড়িংগে টাইপের, চিকন লম্বা, আঠারো থেকে কুড়ি হবে তার বয়স, সে ছিল হিন্দু ধর্মের, তার নাম ছিল গোপেন কিন্ত সবাই তাকে গুপী বলে ডাকতো। আলী ভাই ডাকতো গূপী দাদা, সুতরাং ছোটরাও ডাকতো গুপী দাদা।
গুপী দাদা মাঝে মাঝে আলী ভাইয়ের খোজে আমাদের কমপ্লেকসে আসতো। আমাদের বাসাটা ছিল একতালা সামনেই ছোট একটা মাঠ।পাশেই এক বাসায় থাকতো আলী ভাই।কমপ্লেকসে ঢোকার জন্য একটা সিমেন্টের তৈরী তোরণ ছিল তাতে কোন গেট ছিলনা ।সুতরাং অবারিত দ্বার। সেখানে আরও কয়েকটা বাসা ছিল।বিকালে মাঠে আমরা ছেলে মেয়েরা সবাই খেলতাম।মেয়েরা রুমাল চুরি,ফুল টোকা আর কি কি খেলা, আর ছেলেরা ছেলেদের খেলা।
দেখা যেত যে যেই মুহূর্তে গূপী দাদা আলী ভাইয়ের খোজে তোরন দিয়ে ঢুকছে আর সাথে সাথে সবাই এমনকি তার মধ্যে আমার বড় ভাই পর্যন্ত খেলা ফেলে আমাকে ঘিরে চিৎকার 'জুনের বর গূপী দাদা, জুনের বর গুপী দাদা'। আমার তো সেই বয়সেও মনে হতো মাটিটা ফাক হলে আমি ঢুকে যাই।আমি একদৌড়ে বাসায় চলে আসতাম আর গুপী দাদা মুচকি মুচকি হাসতো আর আলী ভাই আছে কিনা জানতে চাইতো্।
যেই সে আলী ভাইয়ের সাথে কথা শেষ করে গেট পেরিয়ে যেত আবার সবাই যার যার খেলায় মগ্ন হয়ে পড়ত।আমাকেও ডেকে আনতো বান্ধবীরা। এই মাত্র যে কিছু একটা হলো তার কোন রেশই থাকতোনা। এ ঘটনা অনেকবারই ঘটেছে।
একদিন আমি একা একা হেটে হেটে বাসায় আসছি,পথে দেখি গুপী দাদা! আমি তো যথারীতি নার্ভাস।
মনে হচ্ছিল এখনই চারিদিক থেকে সবাই চিৎকার করে উঠবে, 'জুনের বর গুপী দাদা'।
আমাকে দেখে উনি আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে মুচকি হাসি দিয়ে জানতে চাইলেন
কখন গেলে আলী ভাইকে পাওয়া যাবে ?
আমি ঘাড় নেড়ে বল্লাম আমি জানিনা।
এক বছর পড়ে আলী ভাই বদলী হলো অন্যত্র, গুপী দাদার আগমনও শেষ,
আমারও জানে শান্তি। আমরাও ঢাকা চলে আসলাম, কিন্ত এরপর গুপী দাদার কি হলো জানিনা।
এত বছর পরে ঘটনাটা মনে হলে এখনও হাসি পায় আর আমার ভাই বোনকে প্রশ্ন করি,
আচ্ছা তোমরা কি ছিলে !
ওরাও হাসে বলে, আসলেই আমরা কি ছিলাম !
****
ছবি নেট
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৩