somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাম্প কেডস্ ,আমার ঈদ এবং বুবু

২১ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছেলেবেলার ঈদগুলো ছিল অনেক আনন্দের আবার কখনো কখনো বেদনারও। রোজা শুরু হলেই বুকের ভেতর কেমন যেন তোলপাড় শুরু হতো। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ভাবতে ভাবতে ভোর হতো, ভাবনাজুড়ে থাকতো-শার্ট,প্যান্ট আর জুতা। মনে পড়ে প্রতি বছর ঈদের ঠিক আগের দিন বড় ভাইয়া বাড়ি ফিরতো। আর আমাদের জন্য ঈদের জামাকাপড় নিয়ে আসতো। কিন্তু কখনো সবকিছু একসাথে পেতাম না । শার্ট পেলে তালিকা থেকে প্যান্ট বাদ।আবার কখনো একজোড়া সেন্ডেল বা একটি লুঙ্গি পেতাম। সারাবছরে শুধু একবারই ছিল আমাদের জামাকাপড় পাবার উপলক্ষ,আর তা ছিল রমজানের ঈদ। পরিবারে বাবার তেমন আয় ছিল না। বড় ভাইয়ের উপর সবকিছু নির্ভর করতো। অভাবের সংসারে তাই লেখাপড়া ত্যাগ করে তিনি তৃতীয় শ্রেনীর একটি সরকারী চাকরী যোগাড় করেছিলেন। আর তাতে চলত ১০-১২ জন সদস্যার একটি পরিবার। ছোট ছিলাম তাই পরিবারের অভাবটুকু কখনো বুঝতে চেষ্ঠা করি নাই। রোজা এলে তাই মাস জুড়ে মাকে বিরক্ত করতাম। কখনো মা বলতেন তোর ভাইকে বলব বা তোর ভাই আসার সময় নিয়ে আসবে অথবা তোর জামাতো নতুন আছে বোতামটি লাগিয়ে দিলে চলবে,তোর ভাইয়েরটা..........................কিন্তু আমি মেনে নিতে পারতাম না কান্নাকাটি করতাম।
১৯৮৯ সাল ,তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। পাড়ার অনেক ছেলে এবার জাম্প কেডস কিনেছে। জাম্প কেডস পড়তে পারা যেন অনেককিছু । আমার অনেক বন্ধুরা জাম্প কেডস কিনেছে। আমি বায়না ধরলাম জাম্প কেডস আমাকে দিতেই হবে। কিন্তু ক্লাস সিক্সে ভর্তি হওয়ার সময় আমাকে একজোড়া পিটি সু দিয়েছিল তাই আমার আর জাম্প কেডস পরা হয়নি। তবে শর্ত ছিল পরের বছর আমি জাম্প কেডস্ পাবো।

১৯৯০ সালে আমার মেজবুবু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তার- কবিরাজ আর বাদ নাই। রোজা শুরু হয়েছে,বুবু আমার হাসপাতালের বিছানায়। বুবুর ২ মেয়ে এবং ১ ছেলেকে নিয়ে মা প্রতিদিন কত দোয়া-দরুদ পড়েন, নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বুবুর প্রাণ ভিক্ষা চান আর নাতনীদের নিয়ে সারাদিন কান্না করতেন। সেবার ঈদে আমাদের জামাকাপড় পাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকল না। আমাদের পরিবারে অন্যরকম এক পরিবেশ । সবার মনের অবস্থা দেখে আমিও জাম্প কেডস্ পাবার শর্তটি ভুলে গেলাম। ঈদের আর মাত্র কয়দিন বাকী বুবুর অবস্থা আরো খারাপের দিকে। শবই কদরের ঠিক আগের দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল থেকে বুবুর লাশ নিয়ে আসা হল।

সবার চোখে পানি আর পানি। বুবু মারা যাওয়ার পর বাবাকে প্রথম দেখলাম কান্না করতে। সন্তানের জন্য কি বুক ফাটা কান্না। অথচ বাবার আরো ৯জন সন্তান। বুবুর ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে দেখলে আরো বেশী কষ্ট হয়। বুবুকে নিয়ে আমার কত স্মৃতি। আজ বুবু নাই। ঈদের কথা ভুলে গেলাম সবাই।
সেবার ঈদের আগের দিন বড় ভাইয়া আমরা যারা ছোট ছিলাম তাদের বাজারে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন। এবং আমাদের নিয়ে তিনি ঈদের বাজারে গেলেন। এই প্রথম ঈদের জামাক্রয়ে তিনি কোন সীমাবদ্ধতা রাখলেন না, যার যা প্রয়োজন সবকিছু কিনে দিলেন। আমি শার্ট,প্যান্ট,বেল্ট সবকিছু পেলাম। বোন হারানো একভাই অন্যান্য ভাইবোনদের মুখে হাসি ফোটানোর সে কি আপ্রাণ চেষ্ঠা। তিনি আমাদের জুতার দোকানে নিয়ে গেলেন, আমাকে জাম্প কেডস্ কিনে দিবে বলে। আমি বললাম আমার কেডস্ লাগবেনা,গতবছরের পিটি সু জোড়া ভালই আছে। একজোড়া সাদা মুজা কিনলাম।

এখনো ঈদ এলে সে সব স্মৃতি মনে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১০:২৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শ্লোগান কোলাজঃ

* ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’
* ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’
* ‘নাটক কম করো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসসালামু আলাইকুম। ইদ মোবারক।

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:১৯



ঈদ এখন এক নিরানন্দময় উপলক্ষ্য।
কিতাবে আছে ধনী-গরীব অবিভাজনের কথা বরং এদিন আরো প্রকটতা নিয়ে প্রস্ফুটিত হয় বিভেদরেখা কেননা আমরা আমাদের রাষ্ট্র- সমাজব্যবস্থা ও জনগণকে সেভাবে দিয়েছি ঘিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদের শুভেচ্ছা: দূর থেকে হৃদয়ের কাছ

লিখেছেন আমিই সাইফুল, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

আসসালামু আলাইকুম,
আজ ঈদের দিন। চারদিকে উৎসবের আমেজ, হাসি-খুশি, নতুন জামা আর মিষ্টি মুখের আদান-প্রদান। আমি ইউরোপে আমার পরিবারের সাথে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাচ্ছি। কিন্তু আমার হৃদয়ের একটা কোণে একটা ফাঁকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


বাংলা গানের ভাণ্ডারে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সংগীতের এক শক্তিশালী ধারা তৈরি করেছেন। তারই লেখা কালজয়ী গজল "ও মোর রমজানেরও রোজার শেষে এলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই যে আমার নানা রঙের ঈদগুলি ......

লিখেছেন অপ্‌সরা, ৩০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪২


পেছনে ফিরে তাকালে আমি সবার প্রথমে যে ঈদটার কথা স্মরন করতে পারি সেই ঈদটায় আমি পরেছিলাম আমব্রেলা কাট নীলচে বলবল রং একটা জামা এবং জামাটা বানিয়ে দিয়েছিলেন আমার মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×