এক হাতে মম বাঁশের বাঁশরী
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। দ্রোহ-সাম্য-মানবতা-প্রেম ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী। ব্রিটিশ-ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের আজকের এই দিনে (২৪ মে ১৮৯৯) জন্ম নিয়েছিলেন বিশ শতকে উপমহাদেশ কাঁপানো বাঙালির এই প্রিয় কবি। অসাম্য, অসুন্দর, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বিদ্রোহী_ চির উন্নত শির। রবীন্দ্র সাহিত্যের বিপুল জোয়ারের যুগেও সম্পূর্ণ নতুন কাব্যভাষা নিয়ে তার আর্বিভাব। বিদ্রোহে, প্রেমে, শ্রেষ্ঠতম অগি্নপুরুষ কবি নজরুল বাঙালির মানসপটে এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্য জীবনে নজরুলের বিপুল সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। কাজী নজরুল ইসলামের যেমন ঘটনাবহুল কর্মময় জীবন, তেমনি বিচিত্র তার সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন-শোষণ থেকে উপমহাদেশের মুক্তির আন্দোলন এবং একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুলের কবিতা ও গান ছিল অফুরল্পস্ন প্রেরণার উৎস। সংকট ও সম্ভাবনায় নজরুলের সৃষ্টিকর্ম এখনও বাঙালি জীবনে নিরন্তর প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। তাই তো তিনি বাঙালি তথা বাংলাদেশের জাতীয় কবি। সাম্যের প্রবক্তা নজরুল ধনী-নির্ধন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ সবার সমান অধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন ব্যঙ্ময় হয়ে উঠেছে সকল সৃষ্টিকর্মে।
কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকালে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। বাংলা একাডেমী, নজরুল একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারসহ দেশের বেসরকারি সব টেলিভিশন ও এফএম ব্যান্ড রেডিও দিবসটি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা।
পরাধীন ভারতবর্ষ তথা এ উপমহাদেশের মানুষকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির স্বপ্নই ছিল নজরুলের সাহিত্য সাধনার মূল লক্ষ্য। সৌন্দর্যের সঙ্গে কঠিন বাস্তবের এক আশ্চর্য সম্মিলন ঘটিয়ে এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর অন্য হাতে রণতূর্য নিয়ে প্রেমে আর দ্রোহে এক নতুন সাহিত্য ও সঙ্গীত ভুবনের স্রষ্টা তিনি। তার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। মুক্তির স্বপ্নে মহাবিদ্রোহকে সঞ্চারিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন সর্বত্র, সবার মাঝে, বিশেষত তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে। সে জন্য প্রয়োজন প্রত্যেকের মন ও মগজে 'আমিত্ব' জাগিয়ে তোলা। তিনি যখন বলেন_
'বল বীর_/বল উন্নত মম শির!/শির নেহারি, আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'/চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি'/উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!'_(বিদ্রোহী, অগি্নবীণা)
তখন এই বিদ্রোহ ঘোষণাকে নিছক তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ভাবলে চলে না, এ হচ্ছে হৃদয় ও মননের সুদৃঢ় প্রতীতি যা পাঠকের মাঝে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করে। এই বিদ্রোহ মানবতার মুক্তির জন্যই :
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না_
বিদ্রোহী রণ-ক্লাল্পস্ন/ আমি সেই দিন হব শাল্পস্ন।
(বিদ্রোহী : অগি্নবীণা)
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। ১৯৭৪ সালে ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে কবিকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা : সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ১১৩তম নজরুলজয়ন্তী উদযাপন। সরকারি ও বেসসরকারি পর্যায়ে রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
নজরুল স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে নজরুলজয়ন্তী। দেশের সব জেলায় সরকারি পর্যায়ে উদযাপিত হবে জাতীয় কবির জন্মদিন। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
'বিদ্রোহী' কবিতার ৯০ বছর ও ১১৩তম জয়ন্তী যৌথভাবে উদযাপন করবে বাংলাদেশ-ভারত। দু'দিনের এ অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের আইনমন্ত্রী সালমান খুরশিদ সে দেশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কাজী নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতা করবেন প্রফেসর ইমেরিটাস রফিকুল ইসলাম। কাজী সব্যসাচী পুরস্কার দেওয়া হবে কাজী আবু জাফর সিদ্দিকীকে। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীরা এতে নজরুলের সৃষ্টি তুলে ধরবেন। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এখানেও বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা অংশ নেবেন। শিল্পকলা একাডেমীতে নজরুলের গান ও কবিতা পরিবেশন করবেন দু'দেশের শিল্পীরা।
দু'দিনের নজরুল উৎসবের আয়োজন করেছে ছায়ানট। ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে বরেণ্য শিল্পীরা পরিবেশন করবেন নজরুলের গান, কবিতার আবৃত্তি ও নাচ।
নজরুল মেলার আয়োজন করেছে চ্যানেল আই। তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই ভবনের খোলা চত্বরে সকাল ১১টায় শুরু হবে দিনব্যাপী এ মেলা। এতে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হবে নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরাকে। মেলার ২০টি স্টলে প্রদর্শিত হবে নজরুলগ্রন্থ, নজরুলকে নিয়ে লেখা বই, চিত্রকলা ও নজরুলসঙ্গীতের রেকর্ড কাভারের প্রদর্শনী, নজরুল সংক্রান্ত ভিডিও সিডি ও চলচ্চিত্র। চ্যানেল আই এ মেলা সরাসরি সম্প্র্রচার করবে।
কাল শুরু হবে নজরুলসঙ্গীত পরিষদের দু'দিনের অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থা ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
......... (এসএম মুন্না)
তুমি আমার দূরে থাকা ভীষণ কাছের কেউ
তুমি আমার দূরে থাকা ভীষণ কাছের কেউ,
তুমি আছো বলেই মনে খেলছে সুখের ঢেউ।
তোমার দেখা পাইনা যেন মেঘ লুকানো চাঁদ
তুমি আছো বলেই মনে ভাংছে সুখের বাঁধ।
তুমি যেন গভীর রাতের শব্দহীন এক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিরোনামহীন পঙক্তিমালা- ০৯
সব ছুঁয়ে দেখেছি—
শিউলি ফুলের গন্ধ, শিশির ভেজা ঘাস,
নদীর ওপার থেকে ভেসে আসা গান,
সময়ের থালায় জমা পুরোনো স্বপ্ন,
ভুলে যাওয়া প্রতিশ্রুতির ছায়া।
তবুও বসে আছি—
বুকের মধ্যে এক পাহাড় আশা নিয়ে,
শুধু এক ফোঁটা বৃষ্টির... ...বাকিটুকু পড়ুন
ম্যাডাম খালেদা জিয়া....
ম্যাডাম খালেদা জিয়া....
তিনি গৃহবধু থেকে রাজনীতিবিদ। আপোষহীন দেশনেত্রী! তার দেশ প্রেমিক সত্ত্বার কতটুকু আমরা জানি? একটি বিকৃতরুচীর বিরোধী দলের নেত্রীর কুৎসা শুনতে শুনতে জাতি প্রকৃত এক জননেত্রীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
লোভী বেগম জিয়া, ক্লাব-বধু থেকে ডোডো ডাকাত
জিয়াকে হত্যা করার সুযোগ করে দিয়েছিলো জিয়ার চয়েসের সেনাপ্রধান জে: এরশাদ ( পাকী ফেরত ); ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা জেনারেলকে ডিংগায়ে জিয়া এই কাজ করেছিলো। জিয়া হত্যায় অংশ নেয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন
বেগম খালেদা জিয়া মুলত তার সৌন্দর্যের জন্য এবং সংযত কথার জন্য জনপ্রিয়
মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। তাই তো গান রচিত হয়েছে ‘ যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম। ' বেগম খালেদা জিয়া জনপ্রিয় একজন নেত্রী। কিন্তু আমার ধারণা... ...বাকিটুকু পড়ুন