দান দান তিন দান ।
সেলিম এবারে আর ব্যর্থ হতে চাইল না । স্যান্ডেল, শার্ট খুলে আমার হাতে ধরিয়ে দিল ।
লুঙ্গীতে কায়দা করে বিশাল এক ''জাইল্লা গোছ'' ।
আমাকে বলল , তুইও গোছ মার ।
বললাম - আমি দূরে দাঁড়িয়ে থাকবো , আমার গোছ মারার দরকার কি ?
সে অনেকটা ধমকের সুরে বলল - কথা বাড়াইছনা , গোছ মারার দরকার আছে, গোছ মার ।
ধমক ধামকের পরে আর কথা চলে না । তাই মারলাম !
সে যেভাবে লুঙ্গীটাকে মেয়েদের প্যানটির মত প্রায় অদৃশ্য করে ''গোছ'' মেরেছে ,
আমারটার কোয়ালিটি তার ধারে কাছেও যায়নি ।
এবার সে আমাকে আমার রোল বুঝিয়ে দিল । ধাক্কা ধাক্কিতে সে যখন লাইন থেকে ছিটকে পড়তে চাইবে , তখন আমি তাকে প্রতিধাক্কা দিয়ে লাইনে স্থির থাকতে সাহায্য করবো ।
আমি আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করছি । চারদিক থেকে গেছিরে ! খাইছেরে ! আল্লারে ! মা'রে ! ইত্যাদি শব্দ আসছে ।
এরকম পরিস্থিতিতে আধা ঘণ্টা পিষ্ট হয়ে অবশেষে সেলিম ''সাপের মাথার মণি'' নিজের হস্তগত করল ।
উপরের বর্ণনা শুনে যারা ধারণা করছেন , আমরা যাকাতের কাপড় নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম , তাদের ধারনা ভুল ।
আমি নাইনটি এইটি সিক্স এর কথা বলছি ।
আমি সিনেমা হলের টিকিটের লাইনের কথা বলছি ।
এক রমজান ঈদের পর জেলা শহরের সুরত মহলে চলছিল আংশিক রঙ্গিন এক ছায়াছবি , নাম মনে নাই ।
সেকালে সিনেমা হলের গেটের এক পাশে এক প্রস্থ খোলা জায়গা থাকতো ।
সেখানে সব সময় দেখতাম ১/২ জন লোক মূর্ছিত হয়ে পড়ে আছে । টিকিট কাটার ধকল সইতে না পেরে যারা ''কাইয়া মরা''(আধমরা) হয়ে যেতো ,তাদের চ্যাংদোলা করে এখানে শুইয়ে দেয়া হতো ।
সেলিমকে চ্যাংদোলা করে আনতে হয়নি । হাফাতে হাফাতে সে নিজে এসেই ওখানে শুয়ে পড়লো ।
তার ডান পাশের মূর্ছিত লোকটার অবস্থা দেখে মনে হল , আজরাইলের সাথে দর কষাকষি চলছে ।
বাম পাশের জনের অবস্থার চেয়েও তার লুঙ্গির অবস্থা ভয়াবহ ! বড় আপত্তিকর ভাবে লুঙ্গিটি বিপদ সীমা অতিক্রম করে আছে ।
বেহুঁশ লোকের হুঁশ ফেরাতে ''মেশিনপত্রে'' খোলা হাওয়া লাগানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা আমার জানা ছিলনা ।
কিছুক্ষণ পর ইয়াহু বলে সেলিম উঠে আমাকে তাড়া দিল - চল চল শো শুরু হয়ে গেছে ।
ভিতরে সরিষা ধারণের ঠাই নাই । ওই অবস্থায় আমাদের দুই জনকে গুদামজাত করা হল ।
ভিতরে ১০৯ ডিগ্রি উত্তাপ , ফ্যান গুলি ফুজিয়ামা থেকে আমদানি করা বাতাস সাপ্লাই দিচ্ছে । ঘামে সবার লুঙ্গি জামা ভিজা ।
রূপালী পর্দার দিকে যেভাবে হা করে আছে , গরমের দিকে কারো ভ্রুক্ষেপ আছে বলে মনে হল না ।
ঈদের পরে দর্শক অত্যাধিক হওয়ায় তখন কোনরূপ বিরতি ছাড়াই শো চলছিল ।
আলফ্রেড হিচকক বলেছিলেন , মুভির দৈর্ঘ্য হতে হবে দর্শকের মূত্রাশয়ের ধারণ ক্ষমতার সমানুপাতিক ।
এই ব্যাটা ইংরেজ । তাই ইংলিশ ছবির দৈর্ঘ্য কম । আমাদের পরিচালকরা হিচকক কে চিনে না ,দর্শকের মূত্রাশয়ের ধারণ ক্ষমতা সম্পর্কেও এদের কোন ধারনা নাই ।
সেলিম কে আমার তারল্যস্ফীতি জনিত নিন্মচাপের কথা বললাম ।
সে বলল এখানে সারিয়ে ফেল !
- এখানে ? হলের ভিতরে ? কস কি ? তাছাড়া দাঁড়াতেই পারছিনা , এখানে বসবো কিভাবে ?
- তোরে বসতে কইছে কে? খাড়াই কাম সারাই দে । সামনে দাঁড়ানো ছাগলা দাঁড়ি ওয়ালা এক হুজুরকে দেখিয়ে বলল এই শালার পুতের লাফ ঝাঁপের জন্য ছবি দেখতে পারছিনা । এর গায়ের উপর ''কাম সারা'' কর ।
- এইটা কি বললি ?
- বলা বলির কিছু নাই ,গানের সিন আসলে ব্যাটা হুম্ম ! হাম্ম! করে লাফ ঝাপ করে বড়ই ডিস্টার্ব করে , তখন কামটা সারাই দিস । এখন দিগদারী করিস না , ছবি দেখতে দে !
- না না ,বলছিলাম যদি টের পেয়ে যায় ?
- টের পাইবো না । দেখছিস না ? ঘামে সবার লুঙ্গী এমনিতেই ভিজা । ছবিতে গান কয়টা গেছে ?
আমি বলি কি আমার সারিন্দায় বলে কি ! মেজাজ খারাপ করে বললাম- দুই টা ।
- ওই দুই গানের সময় আমি ওর গায়ের উপর দুইবার ''কামসারা'' করছি ।
পরবর্তী গান শেষ হওয়ার পূর্বেই আমি উপলব্ধি করলাম , ''ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।''
(আহারে ! সেই যে আমার সোনা রঙের দিনগুলি---- )
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪০