------- ১ ----
- মামা চুরি চামারির কাজ আমাকে দিয়ে হবেনা । ( ইনি ক্লাস ফোর এ )
- আরে বেটা চুরি কোথায় দেখলি ? এটা হল প্রতিশোধ বুঝলি প্রতিশোধ । কত বড় সাহস ! আমার ভাইগ্নাকে অপমান করে ? ( ইনি ক্লাস সেভেন এ )
- না না , আমাকে কিসের অপমান করেছে ।
- চড় মেরে সব কটা দাঁত ফেলে দেব , তুই অপমানের বুঝিস কি ?
রিনা তোকে বরই দিয়ে তা আবার কেড়ে নেয় নি ?
পাশের বাড়ীর রিনাপুকে ঝনটূ মামা মনে মনে বড়ই ভালা পায়
। আমাকে দিয়ে রিনাপুর কাছে একটা লাভ লেটার পাঠিয়েছিলেন । আমাদের বাড়ী রিনাপুদের বাড়ী পাশাপাশি , যা প্রায় একই বাড়ীর মত । বিকালে সাইকেল রিং চালাতে চালাতে আপুদের বাড়ী গিয়ে হাজির হলাম । দেখলাম তিনি পুকুর ঘাঁটে বসে বসে বরই খাচ্ছেন । পাশে কলাপাতায় লবন আর গুড়ো মরিচের মিকচার ।
আমাকে দেখেই কাছে ডাকলেন , '' এই লিটু বরই খাবি ?
আমার উত্তরের প্রতিক্ষা না করেই আমার দিকে ৪/৫ টা বরই এগিয়ে ধরলেন । আমি সাইকেল রিঙটা ঘাঁটের সাথে ঠেশ দিয়ে রেখে বরই গুলি হাতে নিলাম । সেকেন্ড কয় পরেই হাফ পেন্টের কোমরে গুঁজে রাখা চিঠিখানা বের করে রিনাপুর হাতে দিলাম । এও বললাম , ঝনটূ মামা দিয়েছে ।
-- কোন ঝনটূ মামা ? ফেইল্লা ঝনটূ ? ঐযে বান্দরের মত চেহারা ?
-- হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই ছাঁৎ করে চিঠিটা পায়ের নিচে দিয়ে ২/৩ টা লাথি মেরে ঝপাং করে আমার হাত থেকে বরই গুলি কেড়ে নিলেন ।
আর যদি কোন দিন এইসব চিঠি ফিঠি নিয়ে যাই তাহলে আমার ঠ্যাঙের কোন কোন ভৌগোলিক অবস্থানে বাড়ি দিয়ে ভাঙ্গবেন তারও এক ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন ।
ভাঙ্গা পা নিয়ে ক্রাচে ভর দিয়ে জলিল চাচার মত হাঁটতে পারবো কিনা তার একটা মানসিক মহড়া দিতে দিতে আমি বাড়ীর দিকে পা বাড়ালাম ।
সব ঘটনা বিতং করে বলার পর ঝনটূ মামার এই প্রতিশোধস্পৃহা , যার ফাইনাল ধকল রিনাপুদের নিরীহ ডাব গাছের উপর দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত ।
দুপুরে খাওয়ার পর আপুরা বিছানায় একটু গড়াগড়ি যায় । এই মোক্ষ সময়টাকেই অপারেশনের জন্য বেছে নিলেন দক্ষ সেনাপতি ঝনটূ মামা ।
পুকুর ঘাঁটের পাশের গাছটাই টার্গেট । ওটার ডাবের পানি নাকি গুড়ের পানির মত মিষ্টি ।
ডাবগুলি অত্যাধিক কচি , গাছ থেকে নিচে পড়লে ফেটে যেতে পারে , তাছাড়া পড়ার শব্দে কেউ টের পেয়ে যেতে পারে তাই গোটা চারেক ডাব লুঙ্গির কোঁচড়ে ভরে নামিয়ে আনার প্লান করে মামা তর তর করে গাছে উঠে গেলেন ।
কোঁচড়ে ডাব নিয়ে মামা সবে গাছের ওয়ান থার্ড নেমেছেন এমন সময় দেখি দু হাতে বরই নিয়ে রিনাপু ঘাঁটের দিকেই আসছেন । চক্ষের পলকে গাছের আড়ালে হিডেন ফাইল হয়ে গেলাম ।
মামাও দেখি মাঝ পথে হার্ড ব্রেক কষেছেন । তবে তিনার দুই পায়ের ঠকঠকানি দেখে বুঝলাম , পদদ্বয়ের নিয়ন্ত্রন এখন আর তাঁর হাতে নাই ।
পানির কাছাকাছি ঘাঁটে আসার পূর্বেই চোর দেখে মানুষ যেমন থমকে দাঁড়ায় তেমনি থমকে দাঁড়ালেন রিনাপু ।
তবে আমি নিশ্চিন্ত । কারন রিনাপু দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন পুকুরের দিকে । চোরের দিকে নয় ।( আসলে দিঘীর টলটলা জলে তিনি দেখছিলেন '' দীঘির জলে কার ছায়া গো '' যা পরে জেনেছিলাম )
তিন সেকেন্ডের ভিতর আপুর ভয়ার্ত চোখ গাছে ঠকঠকায়মান চোরের দিকে স্থির হল । চোর তাৎক্ষনিক পদযুগলের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে শুধু হাত দিয়ে গাছের গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছেন । গাছটা একটু বাঁকা হওয়ায় বেচারা ঘড়ির পেন্ডুলামের মত ঝুলছিলেন ।
আল্লার লিলা বুঝা বড় দায় । ডাবের ভারে লুঙ্গি বেটা বিদ্রোহ করে বসলো । ডাবের সাথে গলাগলি করে লুঙ্গি পুকুরে । ডাবের বিরহে নাকি লুঙ্গীর সাথে বিদ্রোহে হাত বেটারাও যোগ দেয়ায় নাঙ্গু বাবাও ঝপাৎ করে পানিতে ।
ওরে আল্লারে !!! !!!! বলে গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে রিনাপু ছুটলেন বাড়ীর দিকে । উপরের সিঁড়িতে উঠা পর্যন্ত অবশ্য উনার তিন আছাড় হয়ে গিয়েছে ।
নিজে বাঁচলে মামার নাম । সুযোগ বুঝে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে দিলাম দৌড় । নিরাপদ দুরত্যে গিয়ে পিছন ফিরে দেখি দিগম্বর মামাও প্রানপন দৌড়াচ্চেন । তবে পেটের বিঘত খানেক নিচে কি একটা যক্ষের ধন দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছেন তা দূর থেকে ঠাওর করতে পারিনি ।
------- ২ -----
-- লিটু পেন্ট খোল , তাড়াতাড়ি পেন্ট খোল ।
মিশন ইম্পসিবল থেকে দুই বাড়ী উত্তরে দাদা হামিদার বাপের বাড়ী । সেই বাড়ীর পাশে অবশেষে দুই মাসতুতো ভাইয়ের ( রক্ত সম্পর্কে যাই হইনা কেন , আমরা পেশার প্রতি শ্রদ্ধা শীল ) পুনঃমিলন ঘটলো ।
মামা ( পেশাগত দায়িত্বে ফেল তাই আবারো মামা । ) সিম গাছের ঝোপের আড়ালে গিয়ে হাফাতে লাগলেন । মামার গায়ের রঙ শ্যামলা ( আমার নানুর মতে , আসলে আফ্রিকা )আমি তাজ্জব হয়ে দেখছিলাম , লুঙ্গি পরার সেন্টার পয়েন্ট থেকে হাঁটু পর্যন্ত মামার গায়ের রঙ একেবারে ফর্শা ফকফকা । মামাকে মাঝে মাঝে ছোট খালার ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি ক্রিমটা মুখে মাখতে দেখতাম ।
আমাদের দেশে বিবেক বেচা কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন , যারা খান এদেশে ডেকুর ছাড়েন অন্য দেশে । ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি বেটাও মনে হয় বুদ্ধিজীবী , দেহের এই অংশে ঢেকুর তুলেছে ।
গুপ্তধনের উপর তখনো মামার হাত ছিল । জ্যোতিষীরা হাত দেখে অনেক কিছুই বলতে পারে , জ্যোতিষী না হয়েও হাতের অবস্থান দেখে সেখানে কি আছে বুঝতে আমার মোটেও অসুবিধা হয় নি । মামার ধমকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম ।
--- জি মামা !
-- তোকে পেন্ট খুলতে বলছিনা ?
-- কেন মামা ? দিগম্বর র্যালি হবে নাকি ?
-- ফাজলামি করলে লাথি মেরে দাঁত ভেঙ্গে ফেলবো । শু--- বাচ্চা ।
-- মামা তুমি এখন বিরাট বিপদের মধ্যে আছ , এই কারনে মাথা কিছুটা আউলা । তোমার নিজের ইজ্জত গিয়েছে বলে তুমি লেজ কাটা শিয়ালের মত আচরণ করছো , তাছাড়া তুমি ভাল করেই জান আমার পেন্টের ভিতর তোমার এক ঠেঙও ঢুকবেনা ।
-- তাইলে এখন কি করা যায় ? বলতে বলতে মামা ইজ্জতের যথাসম্ভব হেফাজত কল্পে ঝোপের আড়ালে বসে পড়লেন ।
-- মামা চলো , হামিদার বাপের বাড়ীর ভিতর দিয়ে কর্ডন করে তোমাকে নিয়ে যাই ।
হামিদার বাপের এক নাতী নতুন বিয়ে করেছে , নতুন বউয়ের সাথে মামার খুব ভাব । খোশ গল্পাদি ছাড়াও রীতিমত বরই, কাঁচা তেঁতুল আদান প্রদান হয় । মামা রিস্ক নিতে চাইলেন না ।
--- ঠিক আছে মামা , আমি আগে গিয়ে দেখে আসি শেফালী মামী উঠানে নাকি ঘরে ।
আমার কথায় মামা খুশী হয়ে সায় দিলেন । হামিদার বাপের বাড়ীর দিকে সবে কদম বিশেক বাড়িয়েছি ,দেখি বুড়োটা এদিকেই আসছেন । তিনি চোখে ঝাপসা দেখেন , বউ মারা গেছেন অনেক আগে । ইদার্নিং ভীমরতিতে ধরেছে , বিয়ে করতে চান । কেউ বিয়ের কথা বললে শারীরিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে , সপ্তাহ খানেক লাঠি ছাড়া হাঁটেন । এ সপ্তাহে মনে হয় কেউ বিয়ের কথা বলেনি , তাই হাতে লাঠি । সালাম দিয়ে বললাম , দাদা কই যান ?
বললেন , গরু না কি একটা যেন এদিকে দৌড়ে গেল ? দেখি সিম গাছটা না আবার সাবাড় করে দিচ্ছে ।
বাঁধা দিয়ে কোন লাভ হবেনা ভেবে নারিকেল গাছের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে পড়লাম ।
----- ৩ ----
-- শিয়ালরে !! শিয়াল !!! তুউউউউউউউউউ তুউউউউ !!
মামা যে ঝোপে ভাইরাসের মত হাইড হয়ে আছেন , বুড়োটা সেখানে গিয়ে লাঠি দিয়ে ঘুতাঘুতি করছেন । একটা ঘুতা সম্ভবত মামার পিঠে লেগেছে । মামা কুই কুই কোঁক শব্দ করে একটু সরে বসলেন । আর তক্ষনি বুড়োর কর্কশ চিৎকার ।
তুতু ডাক শোনার সাথে সাথে বলশালী কুকুরটা হাজির হয়ে মামার সামনে । মামা ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ালেন । এই বয়সি কাউকে এই পোষাকে দেখে কুকুরটা মনে হয় অভ্যস্থ নয় । তাই কয়েক মুহূর্ত কি যেন চিন্তা করল সারমেয়টি , পরক্ষনেই কুকুরটা ''চিন্তার গুল্লি মারি'' বলেই প্যান্থারের মত মামাকে লক্ষ্য করে লাফ ।
ততোধিক ক্ষিপ্র গতিতে সরেই মামা উত্তর দিকে দিলেন দৌড় । সেকি দৌড় ! উসাইন বোল্ট এখন তৃতীয় পজিশনে ।
উত্তরে কিছু দূর গিয়ে মামা পশ্চিম দিকে মোড় নিলেন । ২০ সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি ইউ টার্ন নিয়ে আবার পিছন দিকে , কুকুরটা কি বুঝে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করছে ।
--কির পুতেরা গার্লস্কুল ছুটি দেয়ার আর সময় পায়নিরে !!!!! বলতে বলতে আমার সামনে । আমাকে দেখে মামা আলোর দিশা পেলেন ।
হাফাতে হাফাতে বললেন , লুঙ্গী দে --
--- লুঙ্গীতো আনিনি বলতে না বলতেই মামা আমাকে ঝেড়ে লাথি মারলেন ।
টার্গেট মিস ।যে তরিকায় মামা কুকুরের প্রাথমিক লম্প থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন সে তরিকা এস্তেমাল করে সরে গেলাম ।
ব্যাস পা ঢুকে গেল মান্দার কাঁটার ঝোপের ভিতর । পা চিরে রক্তারক্তি ।
ওরে আল্লারে ! গেচিরেএএএ বলে মামার চিৎকার আর মাটিতে গড়াগড়ি ।
যেখানে বাঘের ভয় ----। শেফালী মামী মনে হয় উঠানে ভেজা কাপড় মেলে দিচ্ছিলেন । চিৎকার শুনে কি হয়েছে ? কি হয়েছে ? বলতে বলতে দৌড়ে এলেন । আমি তাড়াতাড়ি মামার দেহের আপত্তিকর অংশ আড়াল করার মানসে মামার পাশে বসে পরলাম ।
লাভ হলো না ।
-- হায় ! হায় !! জনটু ভাই ল্যাংটা ক্যা ? ও আল্লা ! খাইছেরে ! কি সব হাবিজাবি বলতে বলতে ঊর্ধ্ব শ্বাসে ঘরের দিকে দৌড় । পায়ে শাড়ি পেঁচিয়ে এক আছাড় । মাটিতে তিনটা গড়াগড়ি দিয়ে আবার দৌড় ।
এই আছাড়টা মামার জন্য একটা সুসংবাদ নিয়ে এলো । মামি খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা , আছাড় খেয়ে মামির ভেজা চুলে বাঁধা গামছাটা খুলে পড়ে গেল । দৌড়ে গিয়ে গামছাটা কুড়িয়ে নিলাম । মামার ইজ্জতের একটা ফয়সালা হলো ।