*
*
*
*
কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং টাইফের কিছু আঁকা আঁকি করতাম । তার পরও বন্ধু মহলে আমি ছিলাম বিরাট চিত্রকর ।
এক ক্লাসমেট সাহাব উদ্দিনের অনেক জোরাজুরিতে তার একটা স্কেচ এঁকে দিলাম । দেখলে মনে হয় তার আব্বার স্কেচ ।
এই নিয়ে তার মন খারাপ ।বন্ধু পারভেজের প্ররোচনায় কয়েক রাউনড চা সিঙ্গারার টাকাও ফেরত চায় ।
টাকা দেব কি উল্টা মারলাম ঝাড়ি ,'' শালার পুত ! পোলার ছবি আব্বার মতো হইবনা কি জেঠার মত হইবো ?
--- ছবিটা বাঁধাই করে ঘরে ঝুলানোর পর , তা দেখে ছেলের পিতৃ ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে তার আব্বা তাকে ক্যাশ ৫০ টাকা দিয়েছিল । সে ইতিহাসে যাচ্ছি না ।
বিয়ের মাস ছয়েক পর । আমার ছবি আঁকার বিকট প্রতিভার কথা বউয়ের কর্ণগোচর হল ।
একদিন বলল আমি নাকি তাকে মোটেই পছন্দ করিনা ।বহু কিচ্ছা কাহিনীর পর মোটিভ জানা গেল ।
বউয়ের ছবি আঁকার প্রজেক্ট হাতে নিলাম ।৩ দিনের মধ্যে মনের মাধুরী মিশিয়ে ছবি আঁকলাম । কোন এক শুভ ক্ষণে ছবিটা তিনার হাতে দিলাম । বউ বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবিটা দেখছে । ছবিটা ভাল না খারাপ হয়েছে মুখভঙ্গি দেখে বোজার চেষ্টা করছি ,( এই কর্মে অবশ্য আমার পারফরমেন্স জঘন্য ।)
কিছুক্ষণ পর বলল , '' চোখ গুলি মুক্তার মত হয়েছে ।''
যাক বাবা বাঁচা গেল !এই প্রথম বউয়ের প্রশংসা পেলাম ! তিনির ধারণা জাগতিক কোন কাজই আমাকে দিয়ে সুসমাধা হয়না । মাছ কিনতে গেলে পচা , গোশত কিনতে গিয়ে হাড্ডি নিয়ে আসি । ছবিটা যে ঠিক ভাবে আঁকতে পেরেছি এতেই আমি খুশী । যেই সেই ছবি নয়,চোখ গুলি নাকি একেবারে মুক্তার মত সুন্দর হয়েছে ।
রোম্যান্টিক কিছু একটা বলতে যাওয়ার প্রাক্কালে তিনার দিকে তাকিয়ে দেখি মুখ অন্ধকার । বললাম , কি ব্যাপার ?
বলল,ও এখনো তা হলে ভুলতে পারনি, সারাদিন তো তার চোখই তমার চোখে ভাসে,আমার ছবি আঁকতে গিয়ে তার ছবি এঁকেছ কেন ?
বিয়ের আগে মুক্তার সাথে কি করেছ না করেছ ভেবেছ আমি কিচ্ছু জানিনা । তাকে তুমি প্রেম পত্র দাওনি ? তার ছবি এঁকে বাঁধাই করে তাকে গিফট করনি ?
দলা করে ছবিটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,'' যার ছবি এঁকেছ বাঁধাই করে তাকেই গিফট করগে । ''
কয়েক দিন আগে মামাতো বোন মুক্তা এসেছিল বেড়াতে । বুঝলাম সে তিলকে কাঁঠাল করে গেছে ।
মনে মনে মুক্তাকে গালি দিতে দিতে ভস্ম হওয়ার আগেই অগ্নি দৃষ্টির আড়াল হলাম ।
সেই দিন থেকে জাতী এক মহান(?) চিত্র শিল্পীকে হারালো ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৩