somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারিদিকে নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল .......[ ছবি ও লেখা ব্লগ ]

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চারিদিকে নুয়ে প'ড়ে ফলেছে ফসল ....... [ ছবি ও লেখা ব্লগ ]

[ তৃতীয় পর্ব ]

আকাশের নীলিমা যখোন ফিকে হয়ে আসে ধীরে ধীরে, মাঠের গায়ে তখন আড়মোড়া ভাঙে সোনালী রঙের ঝলমলে দিন । বন্যার গভীর জলের সমাধি থেকে জেগে ওঠে পোয়াতি মাটি । ভর-ভরন্ত শরীরে পলিমাটির ছোঁয়ায় ফসলের কচি কিশলয় মাথা তোলে । আসে ফসলের মধুমাস । হেমন্তের দিন মেলতে শুরু করে তার ফড়িঙ ডানা । মাঠের পর আরও সুদূরের মাঠে দোলা দিয়ে যায় আঘ্রানী বাতাস । মিহি মিহি কুয়াশা ডানায় মেখে নীড়ে ফেরে সব পাখি । বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে যায় ধানের শরীরের মহুয়া গন্ধ । ঘাসের ডগায় জেগে থাকে শিশির বিন্দু । শীতল জলের মুকুরে ছায়া ফেলে হাসে শাপলা –শালুক । হেমন্ত আসে রঙ-বাহারী শাড়ী পড়ে । বসন্ত বাতাসের আগে এ যেন প্রকৃতির পূর্বরাগ ।

প্রথম ফসলের ঘ্রানে ভেজা জলে
ছায়া ফেলে , ভীরু সন্তরনে ভেসে
রৌদ্র ঝিলিমিল হৈমন্তী সকালে
এক নবীন সূর্য্য
এই পৃথিবীর কাছে হেটে আসে ......





কর্ষনে কর্ষনে মাটির বুক চিরে
স্নেহের ফল্গুধারা তুলে আনি ধীরে
তা-ই যোগাবে সংবৎসর
তোমাদের মুখের আহার ।
শ্রমে কাতর আমি সেই জন
সহস্র বছর ধরে এমনি করে
বাঙলার বুকে রই জেগে
তোমাদের ফসলের তরে ।


যেতে হবে ঐ দূর তেপান্তর
যেথায় শ্রান্ত বাজান মোর
ফসলের মাঠে ক্ষুধায় কাতর - শ্রমে
আমারি অপেক্ষায় পথে রেখে আঁখি ।
তারি লাগি দু'মুঠো অন্নজল
নিয়ে পথ ভাঙি -
কুসুমে কুসুমে ভরা পথে
কালের হৈমন্তী রথে
চরণচিহ্ন রাখি .......


এভাবেই শুরু হৈমন্তী দিনের । ফসলের দিন ।
শুরু হয় ফসলের গান ........







ধরার আঁচল ভরে দিলে প্রচুর সোনার ধানে
দিগঙ্গনার অঙ্গন আজ পূর্ণ তোমার দানে ।
( রবীন্দ্রনাথ )





সোনালী ধানের গান ঝরিতেছে
ঝরঝর উঠোনের পরে ,
আঘ্রানের সোমত্ত সময়টুকু ঘিরে
এলোচুলে কৃষকের ঘরে
ধানেরা উলুঝুলু মরিতেছে ........


শরীরে শ্রমের ঘ্রান নিয়ে
ক্লান্তি আসে ঘিরে,
দু’দন্ড জিরোবার ছলে
যাই ফিরে ফিরে
এক স্নেহময় প্রশান্তির কোলে .........





শেষ ধানটুকু ঝেড়ে নেয়া গেছে
উঠোনের কোলাহল নিঃশ্চল , নিঃশ্চুপ,
রহিছে পড়িয়া শুধু সোনালী খড়ের স্তুপ .......








ও ধান ভানি , ভানিরে ঢেঁকিতে পার দিয়া
ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া ।
ধান বেঁচিয়া কইতে নারি
টিয়া রঙের কিনবো শাড়ী .......
নাকের নোলক, চুলের ফিতা
কিনবো গলার মালা
কানের পাশা, রেশমী রুমাল
আরও হাতের বালা ..........
( গান )







হেমন্তের অপরাহ্নে হিজলের তলে
নবান্নের ডালা সেজে ওঠে করকমলে ।
পিঠা-পুলি ঘ্রানে, এই অঘ্রানে
বাংলার মধুকর ডিঙ্গা ভাসে,
নতুন ধানের কোমল উচ্ছাসে .........



সবে কুয়াশা ঘনায়
দূর দিগন্তে সন্ধ্যার গায়,
হেথা হেমন্তের গোধূলি মঞ্জরী
উচ্ছসিত আলোয় গুঞ্জরী
ধেঁয়ে চলে ভীরু পায় .......




ভিজে হয়ে আসে এ হেমন্তের বেলা
নিঃশ্চুপ ফসলের ক্ষেত তারি চোখে উদ্ভাসি
কোন সে বালিকার মনে
একাকী করে যায় খেলা .....


বিজন ঘাসের পরে, শিশিরে
কি হিরন্ময় কনক আভা ফোঁটে
হেমন্তের প্রথম সকালে ,
ভীরু শামুকের খোলে
লাগে তারি ঘ্রান ...


এই পড় পড় , কচুর পাতায়
টলোটলো শিশির বিন্দু ,
কাহারো মনে দোদুল দোল
উথলি ওঠে যে সিন্ধু ......







দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু ........
( রবীন্দ্রনাথ )


চারিদিকে নুয়ে প’ড়ে ফলেছে ফসল
তাদের স্তনের থেকে পড়িতেছে শিশিরের জল
প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে – থেকে আসিতেছে ভেসে
পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রানে আমাদের ভাঁড়ারের দেশে .......
( জীবনানন্দ দাশ )



















স্নিগ্ধ নরম জলে
মাথা তুলে, কি কথা তাহার সাথে
ললিত নৃত্যে কয়ে যাও অনায়াস -
হে চিরন্তন পুষ্পরাজি কবেকার
হেমন্তের ছায়া ফেলে ফেলে
কি নিষ্পাপ কিশোরীর কোলে
হৃদয় মথিয়া জাগাও
শাপলা শালুকের মধুমাস .....


আজ আর পুরোনো দিনের মতো মহাসমারোহে হেমন্ত আসেনা বাংলার মাঠে । সে ফসল আজ আর কৃষকের ঘরে ওঠেনা । মহাজনী গোলায় বাড়ে তার শোভা । ধানের সোঁদা গন্ধে কৃষকের বুক জুড়োয় না আগের মতোন , কেবলি দুঃখের বাতাস হু-হু বয়ে যায় বুকে ।
ফসলের মাঠ ছোট হয়ে আসে দিনে দিনে । সোনালী ধানের শীষে ঢেউ তুলে যায় দুখিনী বাতাস ।
তবুও তারি মাঝে জীবন বয়ে চলে আশা-নিরাশার দোলে ................


চলবে ..........

প্রথম পর্ব - Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব - Click This Link

[ এই ছবি ও লেখা ব্লগটি সাজানো হয়েছে কয়েকটি অধ্যায়ে – বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত আর গ্রীষ্ণ নিয়ে ঋতুচক্র – পালাবদলের দিন, নিঃস্বর্গ, দেশ ও জীবন গাঁথা ; এমন করে। ]


ছবি – ইন্টারনেট থেকে ।
প্রতিটি ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি তাঁদেরই যারা ছবিগুলোর প্রকৃত দাবীদার ।
আর স্বনামধন্য যে সব কবি-লেখকের দু’একটি চরন তুলে এনেছি, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি সেই মহাগুনীজনদের ও ।
এদের সকলের কাছেই ঋনী হয়ে রইলুম ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭
৫৫টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×