বাঘাইছড়ি ঘটনার নেপথ্যে আসলে কী?
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের একেবারে লাগোয়া বাঘাইছড়ি এলাকাটি নানা কারণে নানা দিক থেকে, এমনকি ভৌগোলিক নিরাপত্তার দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। আমি নিজে দেখেছি, বিশেষ করে সাজেকের দিকে সীমান্ত প্রকৃত অর্থেই খোলা, মিজোরাম থেকে যেমন অবাধে লোক ঢোকে, তেমনি বাংলাদেশের ভেতর থেকেও মিজোরামে যাওয়া-আসা চলে। পাহাড়িদের সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের প্রতাপ এবং অঞ্চলটি দুর্গম হওয়ায় সেখানে সেনা তো দূরের কথা, বিডিআরেরও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে কার্যত ক্ষুদ্র ও ভারী অস্ত্র এবং মাদক পাচারের জন্য এর চেয়ে ভালো প্রবেশদ্বার, আমার জানামতে, দেশে হাতেগোনা। পাহাড়ের বাঙালিরা জাতিগতভাবে 'ছোট লোক' এবং ভয়ানক প্রতিহিংসাপরায়ণ হলেও অস্ত্র কিংবা মাদক পাচারের সঙ্গে পাহাড়িরা, বিশেষ করে ইউপিডিএফই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এমন এক বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে শক্তি বলতে বাঘাইছড়ি সেনা জোন এবং মারিশ্যায় বিডিআরের হেডকোয়ার্টারই সম্বল। তবে বিডিআর সেভাবে নয়, বিডিআরকে উপজাতীয়রা সেভাবে আমলেও নেয় না, মূলত সেনাবাহিনীই তাদের পথের একমাত্র কাঁটা, অনেকদিন ধরে। এখন পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করবেন, বাঘাইছড়ির ঘটনার পর প্রতিটি পাহাড়ি সংগঠনেরই মূল দাবি হচ্ছে বাঘাইহাট সেনা জোন প্রত্যাহার করে নেওয়া। সেনাবাহিনী কোথায় থাকবে কিংবা না থাকবে- সেটা একান্তই জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়। পাহাড়িদের কোনো সংগঠন কোনো অবস্থাতেই সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারে না। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে বারবার ভূমি বিরোধের কথা বলা হচ্ছে, অথচ বাঘাইছড়ির মূল কেন্দ্রে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বাঙালি বসতি থাকলেও বাকি বিশাল অংশে বাঙালি নেই বললেই চলে, অন্তত আমার চোখে পড়েনি। যেখানে বাঙালি বসতি নেই, সেখানে ভূমি নিয়ে বিরোধই বা কোত্থেকে আসে?
পাহাড়িরা কি আমাদের বন্ধু?
আমি বলবো, পাহাড়িরা আমাদের বন্ধু, তবে বিশ্বস্ত বন্ধু নয়। বরং এই জনসংহতি, এই ইউপিডিএফ, এই উপজাতীয়রা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য এমন কোনো উপায় নেই, যা তারা অবলম্বন করেনি। এখনও তারা সেই কাজই করে চলেছে। এমনকি একাত্তরেও এই উপজাতীয়রা পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ হয়েই বাঙালির বিরুদ্ধে লড়েছে। এরা কিভাবে আমাদের বন্ধু হয়?
যে জাতি সান্ত্বনা পায় নিজেদেরই তুচ্ছ করে
বাঘাইছড়ির সহিংসতার সূত্রপাত যে ঘটনা নিয়ে, সেনাবাহিনীর সদস্যকে দায়ের কোপে গুরুতর আহত করা, সেটা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। সেই সেনাসদস্য এখনও জখম গায়ে নিয়ে হাসপাতালে। তার জন্য আমাদের কোনো সমবেদনা নেই। বরং দেখেছি, আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক যে সেনাবাহিনী, তাকে ছোট করা হলে, বাইরের কেউ নয়, খোদ বাংলাদেশীদের অনেকেই আত্মতৃপ্তি পায়, নিজেদের প্রগতিশীলতা জাহির করে একধরনের বিকৃত আনন্দ লাভ করে। এবং সম্ভবত বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা নিজেদের সেনাবাহিনীকে তুচ্ছ প্রতিপন্ন করার জন্য, হেয় করার জন্য নিজের স্ত্রীকে বেচে দিতে পিছপা হয় না। আর আমাদের স্বভাবই তো এই যে, আকাশপথে ১২ হাজার মাইল দূরের মানুষের জন্য আমরা উৎকন্ঠিত হই, অশ্রু ফেলি, কিন্তু ঘরের দিকে ফিরেও তাকাই না একনজর।
প্রতিটি ইঞ্চিই আমার দেশ
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি ইঞ্চি আমার দেশ। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে পশ্চিমা পাল্লায় মাপা মানবাধিকার তুচ্ছ, 'আদিবাসী' 'আদিবাসী' বিলাপ নস্যি, ১০০ কিংবা ১০০০ লাশের বিনিময়ে হলেও চাই যে দেশের প্রতিটি ইঞ্চি নিরাপদ থাকুক, নির্বিঘ্ন থাকুক।
সংযুক্তি
যেভাবে জ্বলেছে বাঘাইহাট
ছবিতে বাঘাইছড়ির বিশাল একটি অংশ, যেখানে প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:৩৪