somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে যেভাবে ফাঁসি কার্যকর হয়:--

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন ফাঁসির আসামী শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করেন কোন দৈব শক্তি এসে তাকে রক্ষা করবে। এমনকি পেছনে হাত বাঁধা, গলায় দড়ি পরানো অবস্থায় এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবীতে যাওয়ার মাঝখানে দেয়াল যখন একটি মাত্র রুমাল; নীরবে দাড়িয়ে তখন সে ভাবতে থাকে এই বুঝি তাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে এলো।

****বাংলাদেশে যেভাবে ফাঁসি কার্যকর হয়****
বাংলাদেশে এক সময়ে মুনিরের ফাঁসি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর এরশাদ শিকদারের ফাঁসি নিয়ে ছিল মানুষের ব্যাপক আগ্রহ।
একজন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী যতই ঘৃণ্য হোক, তার শেষ ইচ্ছা পালনের চেষ্টা করা হয়। চেষ্টা করা হয় তার মৃত্যুটি যথাসম্ভব আরামদায়ক করার।

মৃত্যুদণ্ড আরামদায়ক করার জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এই ধারাবাহিকতায় ইলেকট্রনিক চেয়ার, ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড আবিষ্কার হয়েছে। তবে যত সিস্টেমই আবিষ্কারই হোকনা কেন, মৃত্যু তো মৃত্যুই। আইনানুগ সকল ফর্মালিটি শেষে ফাঁসির আসামীকে নিয়ে আসা হয় কনডেম সেলে। সেখানে শুধু ফাঁসির আসামীরাই থাকে। মাথায় থাকে লাল টুপি। অনেকটা ওয়েটিং রুমের মতো। এখানে কয়েকদিন রাখা হয়। তার সাথে যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করা হয়।

বিদেশ থেকে আনা হয় দড়ি। সাধারণত জার্মানি থেকে বিশেষ এই দড়ি আনা হয়। নিয়ম করে কয়েকবার এতে মাখানো হয় সবরি কলা আর মাখন। জল্লাদ নির্বাচন করা হয় কয়েদিদের মধ্য থেকেই। প্রতিটি ফাঁসি কার্যকরের জন্য ঐ কয়েদির ২ মাস করে সাজা কমে। আসামীর সম-ওজনের বালির বস্তা দিয়ে কয়েকবার ফাঁসির প্র্যাকটিস করা হয় কয়েকদিন আগেই। কনডেম সেলে আসামীর আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করানো হয়। তবে কবে ফাঁসি কার্যকর হবে তা আসামী এবং আত্মীয়-স্বজন কাউকেই বুঝতে দেয়া হয় না।

সাধারণত রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার মসজিদের ইমামকে সাথে নিয়ে জেল সুপার কনডেম সেলে যান। তখন কয়েদি বুঝতে পারেন যে আজই তার জীবনের শেষ রাত। সাড়ে ১১টার মধ্যে তওবা পড়ানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। ১২টার ৫ মিনিট আগে যম টুপি ও গলায় দড়ি পরিয়ে দেয়া হয়। জেল সুপার হাতে রুমাল নিয়ে মঞ্চের পাশে দাড়িয়ে থাকেন। সাথে দাড়িয়ে থাকেন অন্যান্য অতিথিরা। জল্লাদের চোখ তখন রুমালের দিকে। ঐ মুহূর্তে এই রুমালই একজন মানুষকে এপার থেকে ঐ-পাড়ে পাঠিয়ে দেয়ার ভূমিকা পালন করে।

আসামীর চোখে মুখে অন্ধকার। দাঁতে দাঁত খেটে থাকে। গলাটাকে ফোলানোর চেষ্টা করেন যেন ব্যথাটা একটু কম লাগে। কিন্তু বিশাল এই
দেহের ভার কি আর গলা সইতে পারে? ধর্মীয় দোয়া/মন্ত্র পাঠ করতে থাকে আর মনে মনে অপেক্ষায় থাকে কোন দৈব শক্তির। কান খাড়া করে রাখে এই বুঝি কেউ একজন বলে উঠবে, “স্টপ; এই ফাঁসি হবে না”।

ভাসতে থাকে প্রিয় মানুষগুলোর মমতা ভরা মুখ। তাদের মায়া মুখগুলো ভেবে হৃদয় কেঁদে উঠে। মনে হয়, যে কোন কিছুর বিনিময়ে আর ক’টা দিন যদি ওদের সাথে কাটাতে পারতাম। প্রিয় মানুষগুলোকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারতাম। একজন ফাঁসিতে আত্মহত্যাকারী আর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মৃত্যুর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আত্মহত্যাকারী পৃথিবীর প্রতি বিতৃষ্ণার কারণে আত্মহত্যা করে। তাছাড়া সেই মুহূর্তে তার মধ্যে কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আর ফাঁসির আসামী পৃথিবীর মায়ার জন্য অন্যায় করে এবং সে ভাবার মতো যথেষ্ট সময় পায়। আসামী যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অপরাধ করে শেষ সময় তারা কেউ পাশে থাকতে পারে না। যারা থাকে সবগুলো অপরিচিত মুখ। সবাই যার যার
দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত।

স্বজনদের মতো মমতা ভরা কণ্ঠ এখানে নেই। গায়ে হাত বুলিয়ে দেবার কেউ নেই। তার কষ্টে ব্যথা পাওয়ার কেউ নেই। যত বড় দুর্ধর্ষ ব্যক্তিই হোক না কেন, এই সময়টিতে সে সবচেয়ে অসহায় অনুভব করে। একজন মানুষ যখন উত্তেজনায় থাকে তখন ভবিষ্যৎ পরিণতি ভাবার মতো জ্ঞান তার থাকে না। আর সে সময়টিতেই ঘটায় যত অঘটন। আর

এজন্যই মনিষীরা বলে থাকেন, জীবনে দুটো সময় কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। এক খুব রাগান্বিত অবস্থায় এবং খুব আনন্দময় অবস্থায়। এই দুটো সময়ে সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ ভাগ। সর্বশেষ ১২টা পাঁচ মিনিটে পায়ের নিচ থেকে পাটাতন সরে যায়। গলায় আটকে যায়
মোটা দড়ি। শুরু হয় রহস্যময় যাত্রা। ১০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর একজন ডাক্তার এসে ঘাড়ের চামড়া কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে থাকে নিথর দেহ। এরপর থেকে আর প্রয়োজন হয়না কোন খাবার কিংবা পানি। রাতে খাওয়া খাবারগুলো দেহের কোন কাজে আসেনা। পাকস্থলীতে পরে থাকে নীরব হয়ে।

মৃত্যুর আগ মুহূর্তে একজন আসামী ফিরে যেতে চায় তার অতীতে। ভুলগুলো মুছে দিয়ে নতুন করে লিখতে চায় জীবনের অধ্যায়। আমরাও একই পথের যাত্রী। শুধু আমরা জানতে পারিনা আমাদের মৃত্যুর সময়-ক্ষণ। আমাদের যেন শেষ মুহূর্তে পিছনে ফিরে অতীতকে নতুন করে লিখার ইচ্ছে জাগ্রত না হয় সে জন্য প্রতিটি মুহূর্ত- প্রতিটি সেকেন্ড ভেবে চিন্তে সৎ ভাবে অতিবাহিত করতে হবে। কারণ জীবন খাতার অক্ষর মোছার কোন ফ্লুয়িড নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫০
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×