রাজনৈতিক চেতনাটিকে কবর দেবার।
সেইসব চক্রান্তকারীরা তা করেছিল খুব কৌশলে।
দেখা যাক কীভাবে কী সংশোধনী আনা হয় বাংলাদেশের সংবিধানে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের যেসব বিষয় বদলে ফেলা হয়েছিলো তার মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্রীয় চার মূল নীতি ও সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশ।
সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় সংশোধনী এনে পঞ্চম সংশোধনীতে বলা হয় ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।’ ’৭২-এর মূল প্রস্তাবনায় জাতীয় স্বাধীনতার জায়গায় ছিল জাতীয় মুক্তি কথাটি।
প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এনে ওই সংশোধনীতে আরো বলা হয়, ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদগণকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ সামাজিক সুবিচারের সেইসব আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হবে।
মূল সংবিধানে ছিল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ সংবিধানের মূলনীতি হবে।
অনুচ্ছেদ ৬-এ পরিবর্তন এনে সংশোধনীটিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে।’
মূল সংবিধানে এই কথার সঙ্গে আরো যুক্ত ছিল যে, এই দেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলে গণ্য হবেন।
মূল সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৮-এ ছিল- ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং এই নীতিসমূহ থেকে উদ্ভূত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হবে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যা দেয়ার ক্ষেত্রে এটা নির্দেশক হবে।’
৫ম সংশোধনীতে রাষ্ট্রপরিচালনার এসব মূলনীতিতে পরিবর্তন এনে বলা হয়, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি।’
মূল সংবিধানে ৯ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘ভাষা ও সংস্কৃতিগতভাবে একক সত্তা বিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’
কিন্তু সংশাধনীটিতে অনুচ্ছেদটির এই কথাগুলো বিলুপ্ত করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র স্থানীয় সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহ দেবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কৃষক, শ্রমিক ও নারীদের যথাসম্ভব বিশেষ প্রতিনিধিত্ব দেয়া হবে।’
পঞ্চম সংশোধনীর আগে ১০ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘মানুষের ওপর মানুষের শোষণ হতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করতে সামজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
সংশোধনীতে এ জায়গায় বলা হয়, ‘জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে।’
মূল সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, কোনো বিশেষ ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার ও কোনো বিশেষ ধর্মপালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।’
৫ম সংশোধনীতে পুরো অনুচ্ছেদটিই বাতিল করে দেয়া হয়। এছাড়া ওই সংশোধনীতে ২৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব জোরদার করতে সচেষ্ট হবে।’
মূল সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে ছিল- ‘কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন, ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠন করা যাবে না।’
৫ম সংশোধনীতে এই অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা হয়।
দুই
আমার প্রশ্ন হচ্ছে , এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল তৎকালীন
বিএনপি-জামাতী জোট সরকার। বর্তমান সরকার তা তুলে নিয়েছে।
ফলে ঐ সংশোধনী বাতিল হয়ে যাবার কথা,
তাহলে কী অন্যান্য ধারাগুলো বলবৎ হবে?
'কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন, ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠন করা যাবে না।’ ----এই ধারাটি কী
কার্যকরী হবে ?