নামকে বিকৃতি করে লেখার চর্চা পশ্চিম বাংলায় একটা ফ্যাশন হয়ে উঠেছে । এই নাম বিকৃত করনের মাঝে রয়েছে একটা চরম প্রাদেশিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার ছাপ কারন এই বিকৃত করনে একটা বিশেষ গষ্ঠিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি । যদি এই প্রক্রিয়ার সবার ক্ষেত্রে প্রোযজ্য হোত তাহোলে এটাকে মেনে নাওয়া যেত কিন্তু এর ভিতরে বৈষম্য স্পষ্ঠ । এ ব্যপারে কোলকাতার বিখ্যাত আনন্দবাজার পত্রিকা অগ্রগামী ভুমিকা রাখে এবং এর পর অন্যান মাধ্যম ও পত্র পত্রিকায় এর প্রভাব ছড়িয়ে পরে । এটার বিষয়ে তাদের যুক্তি হোল মানুষ নিজের কথায় যে ভাবে কাউকে ডাকে আমরা সেই উচ্চারনে লিখি এতে দোষের কি আছে!!! (৫) এটা যে একটা অবমাননাকর চর্চা সেটার অবশ্যই জোড়াল প্রতিবাদ হওয়া উচিত এবং তাদের এই নাম বিকৃতির চর্চায় তারা পশ্চিম বাংলার কোন বিখ্যাতদের বেলায় করে না তবে পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের বাদে অন্য ধর্মের মানুষ এই নাম বিকৃতির থেকে রেহাই পায় না । পশ্চিম বাংলার মানুষ কথার ভিতর মিত্র পদবীকে মিত্তির বলে ডাকে যেমন -- এইযে মিত্তির বাবু কিন্তু নাম লিখার সময় মিত্তির লিখে না ,যেমন --- শ্যামল মিত্র , সৌমিত্রকে সৌমিত্তির উচ্চারন করলে ও লিখার সময় সৌমিত্র লিখে ।চট্টোপাধ্যায় কে ডাকে --এই যে চাটুর্জে বাবু কিন্তু লিখার সময়ে চট্টোপাধ্যায় ঠিক ই লিখে বা ইংরেজীতে চ্যাটার্জী লিখে । ঠিক একই ভাবে লিখার সময় লিখে মুখোপাধ্যায় বা মুখার্জী কিন্তু বলার সময় বলে --- ও মুখুর্জী মশাই ।
তারা মারাডোনা কে লিখে মারাদোন (১), নেইমারকে লিখে নেমার , গাভাস্কারকে লিখে গাওস্কর (২) , টেন্ডুলকার কে লিখে টেন্ডুলকর, রোনাল্ডো কে লিখে রোনাল্দো । তাদের নাম বিকৃতির হাত থেকে গান্ধী জী পর্যন্ত রেহাই পায় নি তাকে গাধার স্ত্রী লিঙ্গ গাধী বানিয়ে ফেলেছে । তাদের যুক্তি মানুষ যে ভাবে এদের নাম উচ্চারন করে আমরা সেই ভাবে লিখি !!!!!! সত্যই কি ব্যপারটা ঠিক ? পশ্চিম বাংলার বিখ্যাত যারা হিন্দু ধর্মের মানুষ তারা ছাড়া পশ্চিম বাংলার অন্য ধর্মের মানুষ এই বিকৃতির থেকে রেহাই পায় নি ।
যেমন তারা সৌরভ গাঙ্গুলীকে সরভ গাঙ্গুলী লিখে না , সত্যজিৎ রায় কে ছত্যজিত রায় লিখে না , সুচিত্রা সেন কে ছুচিত্রা সেন লিখে না কিন্তু লিখবে নজরুলের নাম নাজরুল , সৈয়দ মুজতবা আলী কে ছৈয়দ মজতোবা আলী , আবুল কাসেম কে অবুল কসেম , ওয়াশিম আকরাম কে ওয়াশিম আক্রম (৩), ইফফাত কে ইফফত ।
তাদের নাম বিকৃতির হাতে থেকে রক্ষা পেতে পারে যার এই দুটি বৈশিষ্ঠ থাকবে [ কোন একটি থাকলে হবে না দুইটি থাকতে হবে ],,, (ক) বাঙ্গালী হতে হবে ,(খ) হিন্দু ধর্মের হতে হবে । এই দুটোর যে কোন একটি থাকলে হবে না , --- তাহোলে তিনি নাম বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পাবে না । যেমন বাঙ্গালী কিন্তু হিন্দু নহে নজরুল হয়ে গেছে নাজরুল , মুজতাবা হয়ে গেছে মজতবা , ইফফাত আরা হয়ে গেছে ইফফত আরা । হিন্দু কিন্তু বাঙ্গালী নয় গাভাস্কার হয়ে গেছে গওস্কর , গান্ধী হয়ে গেছে গাধী , টেন্ডুলকার হয়ে গেছে টেন্ডুলকর ইত্যাদি ।
মানুষ কথাতে নাম ভিন্ন ভাবে উচ্চারন করে তাই বলে লিখন মাধ্যমে সেটা আসবে কেন ?? শুধু আসতে পারে নাটক বা সিনেমার ডায়লগ হিসাবে আর কোন ভাবে নহে । বাংলাদেশে কথার ভিতর বিভিন্ন ভাবে বিকৃত ভাবে নাম উচ্চারনের সংস্কৃতি বহু আগে থেকে বিদ্যমান । রাজ্জাক কে রেজাক বা রাজ্জাইকা , হারুন কে হাইরা , মতিন কে মতিন্না , ইউনুসকে ইউনুইচা , সাত্তার কে সত্তরিয়া -- এই ভাবে সবার নামকে কিছুটা বা অনেকটা টুইস্ট করে অনেকে ডাকে । এখন পশ্চিম বাংলার অনুসরনে কি আমরা লিখার মাধ্যমে ঐ সব নামে লিখবো ??? পশ্চিম বাংলাতে মারাডোনাকে মারাদোনা লিখে কারন ওখানে নাকি ঐ ভাবে ডাকা হয় অতচ বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ মারাডোনাকে মেরাডোনা বলে কিন্তু বাংলাদেশের কোন লেখার মাধ্যমে তাকে মেরাডোনা নামে লিখা হয় নি ।
পশ্চিম বাংলার এই নামকে বিকৃত করনে একটা সাম্প্রদায়িকতার এবং প্রাদেশিকতার ( হিন্দু+বাঙ্গালী) গন্ধ পাওয়া যায় এবং সেকুলার অসম্প্রদায়িক ব্যক্তি গণ এর থেকে বাহির হতে পারে নি । তারা পশ্চিম বাংলার বিখ্যাত ব্যক্তি বর্গ যারা ধর্মে হিন্দু তাদের ছাড়া পশ্চিম বঙ্গের অন্য ধর্মের মানুষ সহ সারা ভারতের হিন্দু মুসলিম সহ সকল ধর্মের এবং বাকি গোটা দুনিয়ার সব মানুষের নামের বিকৃত করন করে থাকে । বাংলাদেশের মানুষের উচ্চারনকে বলা হয় বাঙ্গাল উচ্চারন কিন্তু তারা কিন্তু গান্ধী নামটা ঠিকই উচ্চারন করে গাধার স্ত্রী লিঙ্গ গাধী উচ্চারন করে না এবং আমার নিজের জানা মতে পশ্চিম বাংলার যাদের চিনি তাদের কেও গাধী উচ্চারন করতে শুনিনি কিন্তু কি অপমান জনক নামে তার নাম গণ মাধ্যম গুলোতে লিখা হয় । গাভাস্কারকে লিখে গওস্কর (২) , টেন্ডুলকারকে লিখে টেন্ডুলকর ।
এই অপসংস্কৃতিটি বন্ধ করতে হলে আমার মনে হয় পশ্চিম বাংলার মানুষ যাদের নাম কখনো বিকৃত ভাবে লিখে না, তাদের নাম গুলোকে বিকৃত ভাবে লিখা শুরু করতে হবে । সত্যজিৎ রায় কে ছত্যজিৎ রায় , সুচিত্রা কে ছুচিত্রা সেন , অপর্ণা সেন কে অহর্ণা সেন , রিতুপর্ণ কে রিত্তা, সৌমিত্র চ্যাটার্জীকে ছৌমিত্ত । ভারতের জাতীর পিতাকে যে ভাবে তারা গাধার স্ত্রী লিঙ্গ গাধী লিখে সেটা একটা চরম ধৃষ্ঠতা । মুখের কথায় কে কি ভাবে উচ্চারন করলো সেটা কেন লিখার মাধ্যমে আসবে !!!!!
কেউ কেউ দাবি করছে --না না গান্ধিকে গাধী বলা হয় নি গাঁধী(৪) বলা হয়েছে। গাধী আর গাঁধী(৪) কি এক? আমি যদি তাদের কে হাঁরামজাদা বলি আর বলি ভাই তোমাকে ত আমি হারামজাদা বলিনি অথবা যদি বলি ছাঁগল অথবা পাঁগল তাহোলে কোন অসুবিধা নাই। গাধীর উপর চন্দ্রবিন্দু বসিয়ে দিয়ে বলা হয় গাধার স্ত্রী লিঙ্গ মিন করিনি তাহোলে যত গালাগালি আছে তার উপর ঁঁ বসিয়ে বলা যাবে আসলে গালি দেওয়া হয় নি।
আমরা কথার ভিতর যে নামে ডাকি সেই নামেই লিখি ---ওনাদের এই যুক্তি বা দাবি আসলে ধোপে টিকেনা কারন ( হিন্দু+ বাঙ্গালী) - এই কম্বিনেশনের মানুষের ক্ষেত্রে কথার ভিতর ডাকা নামকে লিখার সময় লিখা হয় না এবং সঠিক বানানটা লিখা হয় । এ রকমের অনেক উদাহরন দেওয়া যাবে যেমন , কথার ভিতর উচ্চারন করা হয়- মিনাল, মিদুল, জয়শী , রাজশী, নিপেন, নেতাই, উতম, মিত্তির, চাটুর্জে ,রে , মুখুর্জী --- কিন্তু এদের নাম লিখার সময় উচ্চারনের বানান ব্যবহার করা হয় না সঠিক বানানটাই লিখা হয় যেমন -- মৃণাল, মৃদুল, জয়শ্রী, রাজশ্রী, নৃপেন , নিতাই , উত্তম , মিত্র, চট্টপাধ্যায় , রায় , মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি । এই ভাবে অনেক উদাহরন দেওয়া যাবে ( হিন্দু+ বাঙ্গালী) কম্বিনেশনের নাম কখনো উচ্চারিত নামে লিখা হয় না সঠিক নামে লিখা হয় ।
নাম টুইস্ট বা বানান বেঠিক ভাবে কখনো কখনো লিখা হয় যদি অন্য কোন ভাষার নাম স্থানিয় ভাষায় কোন অশ্লিল বা আপত্তিকর শব্দ হয় । যেমন ১৯৭৮ সালে ঢাকাতে ইরাণের সফেদ রুদ ক্লাব আগা খান গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহন করে এবং সে দলের একজন খেলোয়ারের নাম ছিল রসুল হাগাদার তাকে বাধ্য হয়ে রানিং কমেন্ট্রি এবং পত্রিকাতে রসুল হাগদুস্ত বলা এবং লিখা হয় । বেনজির ভুট্টো যখন পাকিস্হানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মালোয়েশিয়াতে সরকারি সফরে আসে তখন মালোয়েশিয়ার গণ মাধ্যমে তার নাম উচ্চারিত ও লিখা হচ্ছিল বেনজির ভাট্ট নামে কারন ভুট্টো শব্দটি মালোয়েশিয়েতে প্রকাশ্যে বলা আপত্তিকর এবং এর অর্থ পুরুষের পুরুষাঙ্গ । বাংলাদেশে একটা নামটা আপত্তিকর তাই বিশ্ব বিখ্যাত ভোডা ফোন কম্পানী বাংলাদেশে ভিন্ন নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে ।
এখন কি পশ্চিম বাংলার দাদা বাবুরা কি ( বাঙ্গালী+ হিন্দু ) -- এই কম্বিনেশনের বাহিরে যারা আছে তাদের নামকে অশ্লিল ও আপত্তিকর মনে করে এবং সে কারনে তাদের নামের উপর যা ইচ্ছে তাই আক্রমণ । তাদের এই যুক্তি ধোপে টিকে না যে -- যে নামে তাদের নাম উচ্চারিত হয় আমরা সে নামে লিখি কারন নিজেদের বেলায় সেটা ব্যতিক্রম !!!!
একটা দেশের ব্যবধানে নামের উচ্চারণ বদলে যায়? এটা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনন্দবাজার পত্রিকার একজন সাংবাদিক নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “আসলে আমাদের এদিকটায় ওই নামগুলো ওভাবে উচ্চারিত হয়, তাই লেখা। এটাতে খুব বেশি সমস্যা আমি দেখি না। তবে যেহেতু বিষয়টা নিয়ে এর আগেও বাংলাদেশের এক পরিচিত সাংবাদিক আমাকে বলেছিল। পরে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। যেহেতু আপত্তি আছে সেহেতু ব্যপারটা এড়িয়ে চলা উচিৎ ছিল।” (৫)
বিশেষ দ্রষ্টব্য ::: এই আরটিকেলে ভিতরে কেউ কেউ যদি সাম্প্রদায়িক ইসু খুজে পান তাহোলে সেটা খুবই ভুল হবে কারন এই প্রতিবেদনে দুটা ইসুকে হাইলাইট করা হয়েছে ক) প্রাদেশিকতা এবং খ) সাম্প্রদায়িকতা । এই প্রতিবেদনে মুলত প্রাদেশিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে । আমরা যে কোন ধরনে চরম সাম্প্রদায়িক আচরন ও চরম প্রাদেশিকতার বিরুধী । কেউ যদি কর্মে ও আচরনে এর বহি:প্রকাশ ঘটায় তাহোলে এর অবশ্যই প্রতিবাদ করা সবার উচিত । কেউ ধর্মে হিন্দু কিন্তু বাঙ্গালী নহে - তাদের যেমন নাম বিকৃত করা হচ্ছে -- এটা যেমন প্রাদেশিকতা , ঠিক তেমনি কেউ বাঙ্গালী কিন্তু হিন্দু ধর্মের নহে -- তাদের তেমনি নাম বিকৃত করা হচ্ছে - এটা তেমনি সাম্প্রদায়িকতা । এটা যে মিথ্যা নহে তার পক্ষে অনেক উদাহরন দেওয়া হয়েছে
রেফারেন্স
১) Link please click here
২) Click This Link target='_blank' >Please click here
৩) Please click here
৪) Click This Link target='_blank' >Please click here
৫) Please click here
Please click here
আরো কিছু রেফারেন্স
ক) কলকাতায় শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জয়া আহসানের নামের বিকৃতি
Link
খ) কলকাতা থেকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হচ্ছে
Link
গ) এপার বাংলার চোখে সৈয়দ শামসুল হক
Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩২