এই লেখা শুরু করেছিলাম একমাস আগে । লেখার মাঝখানে চলে গিয়েছিলাম খুলনা । ফিরে এসে দেখি সামহয়্যারইনে অলরেডি ফুটবল জ্বর ইনকরেছে আর মাত্রএ কদিন পরেই শুরু হবে বিশ্বকাপ ফুটবল ।বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রিয় কিছু স্মৃতি নিয়ে আজকের লেখা ।
খেলাপাগল এক ফ্যামিলিতে আমার জন্ম ।বিশেষ করে ক্রিকেট ফুটবল । আমার নিজের ক্রিকেট বেশি প্রিয় হলেও বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় আর সবই ভুলে যাই ।হালকাভাবে মনে পরে 1986এর বিশ্বকাপের সময় যখন আমি খুবই ছোট আব্বা আমাদের রাতে ডেকে তুলত খেলা দেখারজন্য ।তখন খেলার কিছুই বুঝিনা শুধু আববা যখন গোল বলে চিৎকার দিত আমরা ভাইবোন মিলে সেই সাথে চিৎকার দিতাম । তখন ঘুম ভেঙ্গে খেলা দেখতে ওঠার অন্যতম কারন ছিল সকালে স্কুলে যেয়ে বলতে পারব আমি রাত জেগে খেলা দেখেছি যদিও উঠে একটু পরেই আবার ঠুস হয়ে যেতাম ঘুমে । যাই হোক এরপর 1990 । এটাও তেমন একটা মনে নেই ।
এলো 1994 । আমার সবচেয়ে স্মরনীয় বিশ্বকাপ । তখন ফুটবল মোটামুটি বুঝতে শিখেছি বিশ্বকাপের শেষেরদি েক ,আমার পরীক্ষা শেষ গেলাম নানাবাড়ি বেড়াতে । আমার নানাবাড়ী খুলনা শহরের খুব কাছে হলেও তখনও ইলেকট্রিসিটি পোঁছায়নি ।মামারা ব্যাটারী দিয়ে টিভি চালিয়ে খেলা দেখে । তাও আবার আমার এক চাচাতো নানার বাড়িতে কারন এতো লোকজনে চিৎকারে নানীর অসুবিধা হতো । গ্রামের মানুষগুলি যে ফুটবলের কি পাগল তা আমি তখন দেখেছি । যাই হোক দিনের খেলাগুলি আমি আমার ছোট খালাকে নিয়ে দুনিয়ার ভিড়ের মধ্যে বসে দেখতে লাগলাম কিন্তু রাতেরগুলি দেখা হচ্ছিলনা । যাই হোক এভাবে ফাইনাল চলে এলো ।তাও আবার রাতে খেলা ।খালাকে বললাম কোনভাবেই মিস দিতে পারবনা কিন্তু । ব্রাজিল ফাইনালে আর আমি খেলা দেখবনা ?তা তো হয়না । ওহ বলে নেই ,আমার সবচেয়ে প্রিয় দল ব্রাজিল তারপরেই ইটালি (যাদের খেলে ায়াড় দেখলেই মাথা ঘুরে ,খেলা তো দূরে থাক ) । যাই হোক খালা বলল চিন্তা করিসনা আমরা ঠিকই দেখব ।যেই কথা সেই কাজ । নানানানী ঘুমালে দুজন গেলাম খেলা দেখতে । ওমা যেয়ে দেখি যেখানে খেলা দেখি সেখানে কেউ নেই ।খালা বলল মনে হয় রাতের বেলা চেঁচামেচি হবে এইজন্য অন্যকেথাও টিভি নিয়ে গেছে । আসলেই তাই ছিল ব্যাপারটা এবং আমরা শেষে সবাইকে খুজে পেলাম ওই নানাদের কাচারী ঘর নামের ঘরে যা কিনা তখন খড় রাখার কাজে ব্যবহার করা হয় ।আমাদের দেখে তো সবাই অবাক ।ঘর ভরা মানুষ হলেও যেহেতু নানাবাড়িতে আমাদের আহ্লাদ সীমাহীন তাই যত্ন সহকারেই আদরের ভাগি্নকে সামনেই বসতে দেয়া হলো ।খেলা চলতে লাগল সেই সাথে চলতে লাগল বিচিত্র সব কমেন্টস । গ্রামে মানুষগুলি যে কি অসাধারন সব কমেন্টস করে শুনলে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যায় । যাই হোক খেলা এগুতে লাগল টেনশন বাড়তে লাগল ।90 মিনিট পার হলো কোন গোল হলোনা ।একস্ট্রা টাইম ও পার হলো । আমার গলা শুকিয়ে মরার অবস্থাতখন । দোয়া ইউনূস পড়তে2 হাত পায়ের বল হারাতে বসেছি ।খালার অবস্থা ও করুণ ।জীবনে মনে হয় কোনদিন আর একসময়ে এতো দোয়া ইউনূস আমি পড়িনি ।আমার অবস্থা দেখে আমার এক চাচাতো মামা যে কিনা আর্জেন্টিনার সাপোর্টার সে ও দোয়া করতে লাগল ব্রাজিল যেন জিতে ।যাই শুরু হলো টাই বেকার ।হঠাৎ করে আমার হার্ট কিছু সময়ের জন্য মনে হলো থেমে গেলো । একএক দলের একএকজন খেলোয়াড় এগিয়ে যেতে লাগল বল নিয়ে আর আমি অসঢ় হয়ে বসে রইলাম তখন আর আল্লল্লাহকে ডাকার অবসথা ও আমার নেই ।গভীর রাত, চারদিকে শুনশান নিরবতা আর ভূতুড়ে অন্ধকার কে ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত দিতে পারলাম আকাশ ফাটানো চিৎকার ।আমার ব্রাজিল জিতল,আমাকে হাসা লো ।
ঐ ফাইনাল আমার কাছে অনেক কারনে স্মরনীয় কারন এর আগে পরে আমি খেলা এভাবে কখনও দেখিনি,আর ওটা ব্রাজিলের আমার দেখা প্রথম বিশ্বকাপ জেতা ।এরপরআমি দুইটা ওয়র্ালড কাপ দেখেছি ।1998এর ফাইনাল আমি ঘুনাক্ষরেও মনে করতে চাইনা । জিদানকে আমার অনেক ভালো লাগে কিন্তু ঐ দিন মনে হয়েছিল জিদানকে খুন করি।আর2002 সে তো হেসে খেলেই জেতা ।তাই এখনও আমার কাছে ঐ ছোট একটা ঘরের মেঝেতে খড় পেতে 16ইঞ্চি সাদা কালো টিভিতে বিশ্বকাপ ই সেরা বিশ্বকাপ । আর এও জানি এবারের বিশ্বকাপ দেখে আমি মোটেও মজা পাবোনা ।
আগেই বলেছি আমরা খেলাপাগল । খেলা নিয়ে চিৎকার ,তকর্, ঝগড়া বাধাতে ওস্তাদ মোটামুটি সবাই ।আর সেইসাথে দোয়াখায়ের তো আছেই ।বাড়ির সবার সাথে খেলা দেখার মজা মিস করব ।আর যে জিনিসটা সারাজীবন মিস করব তা হলো আমাদের বাড়ির একমাত্র আর্জেন্টনার সাপোর্টার আমার একমাত্র চাচা যেকিনা খুবই মাইন্ড করত খেলার সময় আমি (তার সবচেয়ে আদরের ভাতিজি)একবার তার কাছে না গেলে ।তিনিআর কখনও মাইন্ড করবেনা ,ব্রাজিলকে নিয়ে ঝগড়াও বাধাবেনন। কারন তিনি এসবকে ছাড়িয়ে অনেক উপরে চলে গেছেন2004এ । জানিনা আগের মতো খেলা এনজয় করব কিনা । পৃিথবীটা কেন যে সবসময় একরকম থাকেনা!!!হয়ত থাকেনা বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০০৬ রাত ১১:৩৮