প্রশ্নটা শোনা/পড়া/দেখার পর সংখ্যগরিষ্টের প্রতিক্রিয়া।স্বাভাবিক।
সম্পুর্ণ অবান্তর প্রশ্ন শুনলে মেজাজ খারাপ হবেই।কিন্তু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আপাতদৃষ্টিতে অবান্তর প্রশ্নটা যটেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ।
ভবিষ্যত্,অতীত,বর্তমান এইশব্দগুলো দ্বারা সাধারণত সময় প্রকাশ করা হয়।না ভুল বললাম।সবসময় ই সময় ই প্রকাশ করা হয়।কিন্তু এই সময় জিনিসটা কী?!?এক কথায় বললে শন ক্যারলের এনট্রপির বৃদ্ধি।সহজ ভাষায় দৈনন্দিন জীবনে যা আমাদের নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে পরিবর্তনের অনুভুতি প্রদান করে তাই সময়।
এবার অবান্তর প্রশ্নে আসি।ভবিষৎ-র আগে আমাদের জানা দরকার আমরা কেন অতীত মনে রাখতে পারি।উত্তরটা ও খুবই সোজা।একটি ঘটনা থেকে ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য এবং পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য জমা করে রাখে আমাদের মস্তিস্ক।আর সময়ে সময়ে সেই ঘটনার সাথে কিয়দাংশ মিলে গেলে মস্তিস্ক পুরো ঘটনা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে।এক্ষেত্রে মস্তিস্ক অনেকাংশে সফল হয় বলে আমরা বলি আমরা অতীত মনে রাখতে পারি।তাহলে আমরা ভবিষ্যত্ মনে রাখতে পারিনা কেন???পারি না,কারণ একসাথে অনেকগুলো সম্ভাব্য ঘটনা মনে রাখার মত ক্ষমতা আমাদের মস্তিস্কের নেই।
বর্তমান বিজ্ঞান বলে আমরা প্রতিমুহুর্তেই অনেকগুলো সম্ভাব্য মহাবিশ্বের যে কোন একটিতে প্রবেশ করে যাচ্ছি।এজন্য মুহুর্ত আগেও যে মহাবিশ্বে ছিলাম তার স্মৃতি আমাদের মস্তিস্কে রয়ে গেছে।এই কারণে আমরা অতীত মনে রাখতে পারি।একই কারণে এক মুহুর্ত পরের অসীম সংখ্যক মহাবিশ্বে সবগুলোর স্মৃতি আমাদের মস্তিস্কে ধারণ করা অসম্ভব।এই কারণে আমরা ভবিষ্যত্ মনে রাখতে পারিনা।আবার এর সাথে কিন্তু প্যারালাল ইউনিভার্স ও জড়িত।
আরেকটু ভিতরে যাওয়া যাক।
আমরা কেবলমাত্র অতীতকেই মনে করতে পারি। অতীতে যখনই আমাদের সাথে কোনো ঘটনা ঘটে আমরা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সেটা অনুভব করি।আর সেই অভিজ্ঞতা রাসায়নিকের মাধ্যমে সঞ্চিত থাকে আমাদের মস্তিষ্কের Hippocampus নামের প্রকোষ্ঠে।
যা থেকে পরবর্তী সময়ে আমরা সেটা মনে করতে পারি।পুরো প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত জটিল।ভবিষ্যতের সাথে আমাদের কোনো পরিচয় হয়নি তাই সে ব্যাপারে আমাদের Hippocampus এ কোনো তথ্য নেই।তাই আমরা ভবিষ্যৎ মনে করতে পারি না।সময় একটি ভৌত রাশি ভিন্ন কিছু নয়।এটি প্রকৃতির সৃষ্টি।এতে কারও হাত নেই।আমরা সময়ের আগে যেতে পারিনা বলেই ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে কল্পবিজ্ঞান।আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী,দৈর্ঘ-প্রস্থ-উচ্চতা নামক ৩টি মাত্রা দিয়ে তৈরি,সময় ঠিক সেরকম একটি মাত্রা।বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে দৈর্ঘ্য সংকোচন,কাল দীর্ঘায়নের মত বিচিত্র সব ব্যাপার যখন বের হয়ে আসে,তখন সেসব বিষয়কে ব্যাখ্যা করার জন্য Hermann Mikowski –র Minkowski Space খুব প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়াল।
Minkowski Space হলো চার মাত্রার ইউক্লিডিয়ান স্থান যেখানে সময়কে স্থানের মতই মাত্রা ধরে এক নতুন ধরনের Space গঠন করে যার বিন্দুগুলোকে বলে event।মজার কথা হল এই Minkowski Space বিশেষ আপেক্ষিকতার সব ঘটনাগুলো খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে।আমরা কোন বিন্দুকে যেভাবে x,y,z দ্বারা চিহ্নিত করি Minkowski Space-এও কোন ঘটনাকে x,y,z,t দ্বারা বা সংক্ষেপে (x,t) দ্বারা চিহ্নিত করে।তাই সময়কে একটা প্যারামিটার বলা যায়,যা দিয়ে আমরা কোনো একটা বস্তুর বর্ণনায় ব্যবহার করতে পারি।এটা একটা মাত্রা বৈ আর কিছু নয়!!! বস্তু নেই তো Spaceও নেই,একইভাবে বস্তু নেই তো সময়ও নেই।
আলোর বেগ যেমন আমাদের মহাবিশ্বের একটি fundamental constant, সেরকম ভৌত বিধি হলো তাপগতিবিদ্যার সূত্রগুলো যা থেকে আমরা এনট্রপির ধারণা পাই।তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী মহাবিশ্বের এনট্রপি সবসময় ই বাড়বে বৈ কমবে না।প্রাকৃতিকভাবে বিশৃঙ্খলা কখনই কমবে না,কিন্তু বাড়তে পারে।যেমন ধরেন আপনার হাত থেকে কাচের একটি গ্লাস ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেলতে পারেন।কিন্তু কখনই একটি ভাঙা গ্লাস আপনাআপনি জোড়া লেগে মাটি থেকে আপনার হাতে উঠে আসবেনা বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশৃঙ্খলা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে পারবেনা।
মূলত সময়ের দিক এই বিষয়টিই নির্ণয় করে।সময়ের দিক বলতে এনট্রপির দিক বোঝায়।এনট্রপি যেহেতু বাড়ছে,আমরা সময়ের দিক বলতে ঐ দিকই বুঝি।মহাবিশ্বের শৃঙ্খলা থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে যাওয়াই আমাদের কাছে সময়।তার মানে বিশৃঙ্খলা বাড়ানো হচ্ছে ভবিষ্যতে যাওয়া আর বিশৃঙ্খলা কমানো হচ্ছে অতীতে যাওয়া।তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রানুসারে বিশৃঙ্খলা কমানো নিষিদ্ধ,তাই অতীতে যাওয়া অসম্ভব(অন্যভাবে অবশ্য সম্ভব!!!)।
প্রবাহের কথা আসলে সময়ের কোন প্রবাহ নেই।মহাবিশ্ব শৃঙ্খলা থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু শৃঙ্খলা, বিশৃঙ্খলার স্কেল বা সময়ের স্কেল স্থিরই আছে।
বর্তমান থেকে ভবিষ্যত দেখতে হলে ভবিষ্যত থেকে আপনার কাছে আলো বা কিছু আসতে হবে।যা একটু আগের ব্যাখ্যার জন্য সম্ভব না(Entropy can’t be reduced)।এখন একটু Psychological দিকে আসা যাক।আমাদের মস্তিষ্ক Electrical Signal এর মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করে।কোন তথ্য সংরক্ষণ করার আগে যেটির অনেকগুলো State হতে পারে, কিন্তু তথ্য সংরক্ষণ করার পর তা যেকোন একটি State-এ এসে পড়ে।এই বিশৃঙ্খলা থেকে শৃঙ্খলায় আনার জন্য Electrical Signal গুলোর কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করতে হয় এবং সেটি একটি Irreversible Process।সুতরাং মোট এনট্রপি বাড়ে।তাই Psychological Time এবং Entropy Time আসলে একই।আর এইসব কারণে আমরা ভবিষ্যৎ মনে রাখতে পারিনা।
তাহলে আমরা কেন অতীত মনে রাখতে পারি???কারণ একটা ঘটনা থেকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এবং পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য জমা করে রাখে আমাদের মস্তিষ্ক।আর সময়ে সময়ে সেই ঘটনার সাথে কিয়দাংশ মিলে গেলে মস্তিষ্ক পুরো ঘটনা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে।এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক অনেকাংশে সফল হয় বলে আমরা বলি আমরা অতীত মনে রাখতে পারি।
তাহলে আবার অবান্তর প্রশ্ন,আমরা কেন ভবিষ্যৎ মনে রাখতে পারি না???সহজ উত্তর হলো অনেকগুলো সম্ভাব্যঘটনা একসাথে মনে রাখার মত ক্ষমতা আমাদের মস্তিষ্কের নেই।কিন্তু এই মহাবিশ্বের ভবিষ্যতে যে কোনো ঘটনা ঘটার এত সম্ভাব্যতা কেন,যেখানে অতীতে যে কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা মাত্র একটি???কেন আমরা বলছি ভবিষ্যতে অসীম সংখ্যক উপায়ে যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে।প্রশ্নটার আরো গভীরে যাওয়ার আগে একটি কথা।আমরা নাকি প্রতিমুহুর্তে অনেকগুলো সম্ভাব্য মহাবিশ্বের যে কোন একটিমাত্র মহাবিশ্বেই প্রবেশ করে যাচ্ছি।এখন কথা হচ্ছে এরকম বহুবিশ্ববলতে আসলে কিছু নেই???বর্তমান বিজ্ঞানের মতে বহুবিশ্বের অস্তিত্ব থাকতে পারে এবং আমরা প্রতিমুহুর্তেই অনেকগুলো সম্ভাব্য মহাবিশ্বের এ কোনো একটিতেই প্রবেশ করে যাচ্ছি।এজন্য মুহুর্তখানেক আগেও যে মহাবিশ্বে ছিলাম তার স্মৃতি আমাদের মস্তিষ্কে রয়ে গিয়েছে।এই কারণে আমরা অতীত মনে রাখতে পারি।একই কারণে এক মুহুর্ত পরের অসীম সংখ্যাক মহাবিশ্বের সবগুলোর স্মৃতি আমাদের মত মস্তিষ্কে ধারণ করা অসম্ভব।
তথ্যসুত্র:জিরো টু ইনফিনিটি,বিজ্ঞান ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১:০৫